ধরুন আপনি অফিসে যাবেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কোন গাড়ি পাচ্ছেন না , চিন্তার কোন কারণ নাই অপেক্ষা করুণ । আপনার হায়াতের জিন্দেগী যদি কয়েক মিলিয়ন বছর হয় তাহলে হয়ত দেখবেন কাকতালীয় ভাবে একটা চাকা নাযিল হয়ে গেছে । ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুণ বেশি না মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যেই হয়ত দেখবেন এই একটি চাকা বিবর্তিত হয়ে চার চাকার আস্ত একটা ব্রান্ড নিউ মার্সিডিজ কারে রুপান্তরিত হয়ে গেছে ! তবে এখানে একটা সমস্যা আছে বিবর্তন তত্ব অনুসারে আপনি হয়ত দেখা যাবে মানুষ থেকে আবার পুনরায় বানরে-মানুষের হাইবিড কোন প্রজাতিতে পরিণীত হয়ে গেছেন !
যাইহোক ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে বলা যাক,ডারউইনের তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবীতে যখন কোন প্রাণের অস্তিত্ব ছিল না তখন সরল এক কোষী জীব থেকে পর্যায়ক্রমে কয়েক বিলিয়ন বছরের ব্যবধানে বিবর্তিত হয়ে বহুকোষী জীব অস্তিত্বে আসে ।সরল ভাষায় তরজমা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় প্রাণহীন বস্তু থেকে কাকতালিয়ভাবে নিখুঁত এককোষী এবং বহুকোষী জীবের উদ্ভব ঘটে । ১৮৫৯ সালে চার্লস ডারউইন তার বিখ্যাত The Origin of Species বইতে বিবর্তনের এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন । তবে ডারউইনই একমাত্র বিজ্ঞানি নন যিনি বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন , তার পূর্বেও আরও অনেকেই বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন । ডারউইনের বিশেষত্ব হল তিনি বিবর্তন তত্ত্ব-এ প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারনা যোগ করেন যা কিনা বিবর্তন তত্ত্বকে নতুন মাত্রা প্রধান করে ।
প্রাকৃতিক নির্বাচন কি ব্যাপারটা নিয়ে একটু সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক । সময়ের পরিক্রমায় পরিবেশে পরিবর্তনের ফলে প্রতিটা জীব অনবরত-ভাবে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত । এখানে যোগ্যরাই টিকে থাকে আর অপেক্ষাকৃত দুর্বল জীবের বিলুপ্তি ঘটে বা হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে । পরিবেশ টিকে থাকার জন্য সে সকল জীবকেই অগ্রাধিকার দেয় যাদের বৈশিষ্টসমুহ তাদেরকে প্রাকৃতিক পরিবেশে সবচেয়ে বেশি খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। খুব কমন একটা উদাহারন দেয়া যাক ব্যাপারটা বুঝানোর জন্য , যে সকল হরিণ সবচেয়ে বেশি দৌড়তে পারে তারাই কেবল শিকারি পশুর হাত থেকে রক্ষা পায়। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে হরিণের পালটিতে শুধু দ্রুতগামী হরিণগুলোই টিকে থাকবে এবং বেশী করে সন্তান উৎপাদন করে রেখে যেতে পারবে অন্যদের তুলনায় ।
অনেকেই মনে করে ডারউইন বানর থেকে মানুষ উৎপত্তি লাব করেছেন বলে তত্ত্ব দিয়েছেন ব্যাপারটা আসলে তা নয় বরং মানুষ , বানর বা বনমানুষ Transitional বা কমন একটা প্রজাতি থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে । সেই হিসেবে বানর আর মানুষ আত্বীয় হবার কথা ! ব্যাপারটা যাইহোক বানরকে আমাদের পূর্বপুরুষ বা কাজিন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আমার আপত্তি আছে । এই স্বীকৃতি দিতে না দিতে চাওয়ার পিছনে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে , এই লেখায় আমি তা তুলে ধরার চেষ্টা করব ।
ডারউইনের পক্ষে যারা ব্যাটিং করেন তাদের দাবি বিবর্তন তত্ত্ব কোন যেনতেন তত্ত্ব নহে এটা আর বেশি কিছু ! কারণ একটা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং কোন পরীক্ষায়ও যদি ডাক মারে তাহলে সেটা বাতিল ! বিবর্তন তত্ত্ব এ সব পরীক্ষায় বিনা হিসেবেই ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট ! বিবর্তন তত্ত্ব-এর প্রতি তাদের এই দিঢ় ঈমান দেখে আমি বিস্মৃত ! ডারউইন সাহেবেরও বিবর্তন তত্ত্ব এর উপর এতটা গাড় ঈমান ছিল কিনা সেটা এক গবেষণার বিষয় ! কারণ তিনি বিবর্তন তত্ত্ব এর প্রমাণের জন্য কিছু কন্ডিশন বা শর্তের কথা উল্লেখ্য করেছেন , সেই শর্ত যদি পূরণ হয় তাহলে বিবর্তন তত্ত্ব প্রমাণিত হওয়া সম্ভব ! ডারউইন The Origin of Species বইয়ের ৬ষ্ট অধ্যায়ে বিবর্তন তত্ত্ব এর বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ্য করেছেন । তার মধ্যে transitional ফসিল বহুল আলোচিত বিজ্ঞান মহলে !
transition যাকে বাংলায় তরজমা করলে অর্থ দাঁড়ায় অন্তবর্তিকালিন । ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব অনুসারে মানুষ, বানর এবং শিম্পাঞ্জী মধ্যবর্তী বা transitional একটা প্রজাতি থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে । এরকমভাবে বলা যায় নেকরে এবং কুকুরও একই প্রজাতি থেকে উৎপাধিত হয়েছে! ডারউইন তার বইয়ে যে বিবর্তন তত্ত্ব তুলে ধেরেছেন তার মুল ভিত্তি হচ্ছে ফসিল। এখন পর্যন্ত হাজার হাজার ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির Transitional ফসিল কেউ উদ্ধার করতে পারেননি। ডারউইন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন ভবিষ্যতে Transitional ফসিল হয়ত পাওয়া যাবে কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি ! পৃথিবী থেকে হাজার হাজার Transitional ফসিল হঠাৎ গায়েব হল কিভাবে এটা বারমুডার ট্রায়াঙ্গাল থেকেও বেশী রহস্যজনক ব্যাপার ! এটাই কি যথেষ্ট নয় বিবর্তন তত্ত্ব এর অসারতা প্রমাণের জন্য !
সম্প্রতি বেশ কিছু প্রজাতির ফসিল পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে কোন বিবর্তন ছাড়াই বেশ কিছু প্রজাতি কোটি কোটি বছর ধরে বহাল তবিয়তে এযাবত টিকে আছে । যার মধ্যে প্রায় ৯২ মিলিয়ন বছরের পুরানো একটা ঘাস ফড়িংয়ের ফসিল এবং ৩৫০ মিলিয়ন বছরের তেলাপোকার ফসিল ব্যাপারটার প্রমাণ দেয় । এই দুইটি প্রজাতি বিবর্তন তত্ত্বকে বৃদ্ধা-আঙ্গুল দেখিয়ে বুক ফুলিয়ে আরামছে বেচে আছে !
যাইহোক এবার ডি এন এর গঠন নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক ! আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে মানুষের ক্রোমোজোম এর সংখ্যা ২৩ জোরা আর শিম্পাঞ্জির ২৪ জোরা । মানুষের Y ক্রোমোজোমের জিন সংখ্যা এবং শিম্পাঞ্জির ক্রোমোজোমে জিনসংখ্যার অমিল স্পষ্ট । মানুষ এক জোরা ক্রোমোজোম হারালে সে আর উৎপাদনেই যেতে পারবে না অন্য প্রজাতিতে রুপান্তরিত হওয়া-তো দূরে থাক ! মানুষ আর শিম্পাঞ্জির ডি এন এর ৯৮ শতাংশ মিল থাকা সত্বেও তার গঠনগত ভিন্নতার কারণে মানুষ আর শিম্পাঞ্জির হাইব্রিড করা যায় না। একে বলে জেনে-টিক বেরিয়ার যা এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে যা কিনা বিবর্তন তত্ত্ব এর সাথে সাংঘর্ষিক!
ডি এন এর চেইনে সামান্য পরিবর্তনকে বলে মিউটেশন । ডারউইন বলে গেছেন মিউটেশনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির নাযিল হয়েছে বিলিয়ন বছরের ব্যবধানে । এই ওহি তিনি কোথা থেকে পেলেন তা তিনি উল্লেখ্য করেননি ! এখন পর্যন্ত এই ধরায় একটি উদাহরণও নেই যে যাতে প্রমাণিত হয় মিউটেশনের এর মাধ্যমে মানুষের থেকে অন্য প্রজাতির রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা জানি ভুলক্রমে মিউটেশন বা জেনে-টিক চেইনে পরিবর্তন ঘটলে সাধারণত বিকলাঙ্গ বাচ্চার জন্ম নেয় নতুন কোন প্রজাতি নয় ।
সর্বশেষে বলব বিবর্তন তত্ত্ব শুধু একটা তত্ত্বই এটা কোন পরিক্ষিত সত্য (fact) নয় । ডারউইনের পক্ষে যারা ব্যাটিং করছেন তাদের দাবি অনুসারে বিবর্তন তত্ত্ব সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষায় পাশ এটা একটা খাটি মিথ্যাচার । বিবর্তন তত্ত্ব এবং সৃষ্টিতত্ত্ব এই দুটো সাংঘর্ষিক বিষয় , আমি সৃষ্টিতত্ত্ব বিশ্বাস করি বলে যে বিবর্তন তত্ত্ব এর বিরোধিতা করছি ব্যাপারটা তা নয়! বিবর্তন তত্ত্ব এর বিরোধিতার কারণ হল এর বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি আমি খুঁজে পাইনি। বরং আমাকে বিস্মিত করে এই ভেবে যে এই মহাবিশ্ব অতি সুশৃঙ্খল এবং নিখুঁতভাবে সৃষ্টি এবং তা একটি কল্পনাতীত নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ । এত নিপুণভাবে কোন সৃষ্টি কাকতালিয়ভাবে হয়ে গেল এটা আমার মস্তিষ্ক মানতে নারাজ যুক্তিসংগত-ভাবেই ।
আগের পর্ব
মহাজগৎ এবং সৃষ্টি ( ১ম পর্ব ): স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল, নাস্তিকেরাই কি অন্ধ বিশ্বাসী নয় !
মহাজগৎ এবং সৃষ্টি ( ২য় পর্ব) : ধর্ম এবং উন্নয়ন কি সাংঘর্ষিক বিষয় !
মহাজগৎ এবং সৃষ্টি ( ৩য় পর্ব ) : মানব মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসছে ! বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি আমাদের পিছনে নিয়ে যাচ্ছে নাতো ?!
মহাজগৎ এবং সৃষ্টি ( ৪র্থ পর্ব ) : বিগ ব্যাং কি আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিতে পারে ? ষ্টিফেন হকিং এর সাথে আমার দ্বিমত
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৫