মানব মস্তিষ্কের আকার দিন দিন ছোট হয়ে আসছে । উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মানুষের কঙ্কাল এবং খুলির উপর গবেষণা করে পেয়েছেন যে বিগত ২০ হাজার বছর ধরে মানুষের মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়ে আসছে । ২০ হাজার বছর আগে মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন ছিল ১৫০০ কিউবিক সেন্টিমিটার সংক্ষেপে সি.সি, বর্তমানে কমে তা ১৩৫০ সি.সিতে দাঁড়িয়েছে (কমেছে ১৫০ সিসি যা আকারে একটা টেনিস বলের সমান) । এর মানে আমরা দিনকে দিন উন্নত জাতের শিম্পাজিতে বা নির্বোধে পরিণত হতে চলেছি!
বিজ্ঞান প্রযুক্তির সাথে মানুষের জ্ঞানের ’ট্রেড-অব’ সম্পর্ক মানে একটা বাড়লে আরেকটা কমবে । এখন আমরা একটা অপ্টিমাম পয়েন্টে আছি যেখানে প্রযুক্তি এবং মানুষের জ্ঞান ব্যালেন্স আছে ! তাই এখন বিজ্ঞান যত প্রযুক্তি আবিষ্কার করবে মানুষ ততই বোদাই হবে ! বিজ্ঞানীদের ধারনা আজ থেকে ২০ হাজার বছর পরে মানব মস্তিষ্কের আয়তন হবে ১১০০ সি.সি যেটা কিনা মানুষের আগের প্রজাতি হোমো ইরেক্ট্রাস এর সমান ! প্রযুক্তি ধরে রাখার মত জ্ঞান মানুষ হারিয়ে ফেলবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ! তাই টাইম মেশিন নিয়ে যদি কয়েক শতাব্দী পরে যাওয়া যায় তাহলে সেখানে হয়ত দেখা যাবে মানুষ আবার তরওয়াল যুদ্ধের যুগে ফিরে গেছে অথবা নিউটনের গতি সূত্র আবিষ্কারে কাজ করছে নতুন করে !
যাই হোক মানব মস্তিষ্কের আকার কেন ছোট হয়ে আসছে তার কিছু উদাহারন দিচ্ছি !
বিজ্ঞান মানুষকে অলস করে দিচ্ছে । জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চাই মানুষকে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত করে তোলে । জ্ঞানের চর্চার অভাবেই মানুষের মস্তিষ্কের অনেক অংশ অকেজো হয়ে পরেছে ! আর অকেজো অংশ বা অব্যাহত অংশ আস্তে আসতে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গহ্বরে , এটা একটা ন্যাচারাল প্রসেস ! এবার উদাহারনে আসা যাক , বিজ্ঞান আমাদের উন্নত প্রযুক্তির কফি মেশিন দিয়েছে , আমাদের কফি খেতে মন চাইলেই মেশিনের নিচে কাপ দিয়ে পছন্দমত কফির বাটন ক্লিক করলে কাপে কফি ঢেলে দিচ্ছে ! কফি কিভাবে তৈরি হচ্ছে আমাদের জানার কোন প্রয়োজন নাই , আজ থেকে ১০০ শত বছর আগে ব্যাপারটা এমন ছিল না । তখন কফি বানাতে হত ম্যানুয়ালি বানাতে হত মানে মানুষের অবধান ছিল বানাতে ! যেহেতু অনেক কিছুতেই আর মাথা খাটাতে হয় না তাই আমাদের ব্রেনের অনেক অংশই বেকার হয়ে বসে থাকে চর্চার অভাবে ! অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন মানুষ যদি চিন্তা বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা না করত তাহলে স্মার্ট ডিভাইস বা উন্নত জাতের মোবাইল, ক্যামেরা কিভাবে বানাল ! সংক্ষেপে উওর দিলে এই চর্চাটা করছে শুধু মাত্র ০.৫ শতাংশ মানুষ আর সাধারণ মানুষ শুধুতা ব্যাবহার করছে!
এর উপর আরেকটা উদাহারণ দিচ্ছি , বর্তমানের শিক্ষিত জনগোষ্টি নিজেরা সন্তান নিচ্ছে না বা কম সন্তান নিচ্ছে কারণ তারা বাচ্চা নেবার আগে চিন্তা করছে বাচ্চাকে ঠিকমত পড়াশুনা করাতে পারবে কিনা, বাচ্চার উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবে কিনা ! আর আমরা যদি আমাদের দেশের অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই তারা পেটে ভাত নাই কিন্তু ধুমায়া বাচ্চা কাচ্চা উৎপাদন করে দেশের চালের দাম বাড়িয়ে চলছে ! এভাবেই শিক্ষিত বা জ্ঞানের চর্চাকারি মানুষের সংখ্যা কমছে !
যেহেতু মানব জাতির মস্তিষ্কের আয়তন সবচেয়ে বড় ছিল প্রায় ২০ হাজার বছর আগে তাই আমরা স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারি সবচেয়ে স্মার্ট এবং বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের প্রজন্ম আমরা রেখে এসেছি আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে । তাহলে প্রশ্ন হল বর্তমানের হাবা হাসমত মানুষগুলো (২০ হাজার বছর আগের তুলনায়) বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে কিভাবে এত উন্নতি সাধন করল ? যৌক্তিক প্রশ্ন , এই প্রশ্নের উত্তর আমি আমার আগের লেখায় দিয়েছি !
লেখার শুরুতেই আমি বলেছিলাম মানব সম্প্রদায় উন্নত জাতের শিম্পাঞ্জিতে পরিণত হতে চলেছে মানে আবার ষ্টোন বা পাথর যুগের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ি ! মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির ডিএনএর মধ্যে মিল প্রায় ৯৯ শতাংশ । পৃথিবীর বুদ্ধিমান প্রাণীর মধ্যে মানুষের পরেই শিম্পাঞ্জির অবস্থান । প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার মত অসাধারণ দক্ষতা আছে তাদের । শিম্পাঞ্জির সবচেয়ে বড় গুন হল এরা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে নিদিষ্ট কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুসারে জ্ঞান এবং দক্ষতার বিচারে মানুষের পরেই এদের অবস্থান ! তাই কয়েক শতাব্দী পর মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের লেবেল শিম্পাঞ্জিদের কাছাকাছি যাবে ভাবলে অবাস্তব কিছু না ! !
এই বিষয়ের উপর হলিউডের একটা ছবি আছে, নাম ইডিওক্রেসি যেখানে দুজন তরুণ তরুণীকে ফ্রিজিং করে রেখে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা যাদের আইও-কিউ এভারেজ । এই তরুণ তরুণ কয়েক শতাব্দী পরে ঘুম থেকে উঠে দেখে মানব জাতি সব উন্নত জাতের বলদ ! আই কিউ লেভেল খুবই নিম্ন মানের তারা দুজনই হল পৃথিবীর সবচেয়ে ইন্টিলিজেন্ট ! কেউ চাইলে মুভিটা দেখতে পারেন মজা পাবেন নিশ্চিত ! ট্রেইলার
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২৭