সামুতে বেশ কিছু পোষ্ট পড়লাম স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে যার বেশীরভাগই নাস্তিকতাকে সাপোর্ট করে লেখা । অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এর উপর একটা লেখা লেখব ব্লগে যদিও এই ধরনের বিষয়ে লেখা দিতে আমার অস্বস্তি লাগে। তারপরও লেখাটা লেখতে বসলাম কারন প্রতিটা লেখাতেই সূক্ষ্মভাবে ইসলাম ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে । আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নাস্তিককে আস্তিকে পরিণত করা নয় বরং তাদেরই এই সকল লেখাগুলো মানুষকে ধর্ম সম্বদ্ধে ভুল বার্তা প্রধান করে , তাই প্রতিবাদ সরূপ এই লেখা।
ছোট ভূমিকা দিয়ে লেখা শুরু করা যাক, মানুষের মেরুদণ্ডের ঠিক দুই পাশে দুটি কিডনি যা কিনা মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে কাজ করতে থাকে। কিডনির সাহায্যে নাইট্রোজেনযুক্ত বর্জ্য পদার্থ বা মূত্র নিষ্কাশিত হয় ।
ফুসফুস নামের যন্ত্র দিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, ত্বকের সাহায্যে ঘর্ম জাতীয় পদার্থ নিষ্কাশিত হয় ।
মানুষের সব চেয়ে আজব যন্ত্রটা হচ্ছে তার মস্তিষ্ক পুরো শরীরটাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে , সারাদিনের স্মৃতিগুলো জমা হয় মস্তিষ্কে , রাতে ঘুমের পরে সেগুলো আবার সুন্দরভাবে সাজায় মস্তিষ্কের আরেক অংশ ।
ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানে ফিডব্যাক লুপ এর কনসেপ্ট আছে যেখানে একটার আউটপুট আবার সেটার ইনপুট হিসেবে ব্যাবহার করা যায় , মানে সার্কুলার। বিজ্ঞান এখনও পারফেক্ট ফিডব্যাক মেশিন ডিজাইন করতে পারে নাই । মানুষ গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সেটা আবার কার্বন ড্রাই অক্সাইড হিসেবে বের করে , এই কার্বন ড্রাই অক্সাইড আবার গাছের খাদ্য বা ইনপুট । দেখেন এটা একটা পারফেক্ট ফিডব্যাক লুপ ।
এত পারফেক্ট ভাবে প্রতিটা জীব তৈরি , আমি শুধু মানুষের উদাহারন দিলাম এখানে । এত লজিকাল একটা বায়ো মেশিন (মানুষ) , এই সৃষ্টি এমনি এমনি হয়ে গেল তাই না ! কত অবাক বিষয় !!
আমি বিশ্বাসী , আমি বিশ্বাস করি মানুষ নামের এই অদ্ভুত মেশিনটা কেউ একজন তৈরি করেছে, এটা এমনি এমনি হয় নাই , এর একজন স্রষ্টা আছেন বলে আমরা আস্তিকেরা বিশ্বাস করি, এই বিশ্বাসটা কিভাবে অন্ধ বিশ্বাস হয় সেটা আমার বোদ্ধগম্য নয় ! নাস্তিকেরা অনেক বড় বিজ্ঞান মনস্ক কারন তারা মনে করে এটা এমনি এমনি তৈরি হয়ে গেল ! ব্যাপারটা হাস্যকর নয় ? আমার মতেই নাস্তিকেরাই অন্ধ কারন তারা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে বসে আছে মানুষ নামের এই বায়ো মেশিনটা এমনি এমনি তৈরি হয়েছে , একে কেউ তৈরি করে নাই (আমি শুধু মানুষের উদাহারন দিলাম মাত্র)।
উপরের আলোচনা থেকে এতটুকু পরিষ্কার হল অন্ধ আস্তিকেরা নয় বরং নাস্তিকেরাই ।
এখন আসুন আপনি আমাকে কমন একটা প্রশ্ন করবেন হয়তো , মানলাম এই মেশিন এমনি এমনি তৈরি হয়নি, তাহলে কে সৃষ্টি করল ? যদি বলি স্রষ্টা , তাহলে আপনি আবার একটা কমন প্রশ্ন করবেন তাহলে স্রষ্টাকে কে তৈরি করল ? তর্কের খাতিরে যদি বলি আরকে স্রষ্টা তাহলে এভাবে চলতেই থাকবে......!
স্রষ্টা যে একজন সেটা প্রমাণ করার জন্য আমি পুরানো কাসুন্দি নতুন করে ঘাটব , খুব কমন একটা উত্তর দিয়ে । গণিতের ভাষায় দুইটা টার্ম আছে এক. অসীম(infinite) দুই. সসীম (finite) । কোন কাজ যদি সম্পাদনের জন্য অসীম (infinite) সময়ের জন্য অপেক্ষা করে তাহলে সেই কাজটাই সম্পাদন হবে না ! এর মানে কোন কিছু সৃষ্টি হবার জন্য একটা ষ্টারটিং বা শুরু দরকার বা সসীম(finite) সময় দরকার । ক্লিয়ার নাতো ? বুঝিয়ে বলছি উদাহারন দিয়ে!
ধরেন আপনি লাইনে বসে আছেন জুম্মার খিচুড়ি খাবার জন্য ! আপনাকে বলা হল আপনি তখনই খাওয়া শুরু করবেন যখন আপনা বাম পাশে বসা লোকটি বলবেন শুরু করেন। ঠিক তেমনিভাবে আপনার বাম পাশের লোকটিও তখনই খাবার শুরু করবেন যখন তার বাম পাশের লোকটি বলবেন শুরু করতে । যদি ধরেন লাইনটির দৈর্ঘ্য একশজনের , আপনার বাম পাশে একশ জন লোক আছে, তাহলে একশজন পরে আপনার খাবার সময় আসবে । লাইনটির দৈর্ঘ্য যদি ১ লক্ষ বা ১ কোটি হয় তারপরও এক সময় না এক সময় আপনার বাম পাশের লোকটি বলবে শুরু করেন ! এর মানে দাঁড়াচ্ছে লাইনটি যদি সসীম(finite) বা নিদিষ্ট সংখ্যার হয় তাহলে আপনি খেতে পারবেন । এখন ধরেন যদি লাইনটি দৈর্ঘ্য অসীম(infinite) হয় মানে যার কোন শেষ নাই বা শুরু নাই, এর মানে আপনাকে অসীম (infinite) সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে জুম্মার খিচুড়ি খাবার জন্য ! যেহেতু অসীম(infinite) সময়ের জন্য অপেক্ষায় করছেন তাই আপনার আর জীবনে খিচুরি খাওয়া হবে নাহ ।
উপরের উদাহারন থেকে বুঝা গেল কোন কাজ সম্পাদনের জন্য সসীম(finite) সময়ের দরকার বা একটা ষ্টারটিং দরকার । নাস্তিকদের কথা মত স্রষ্টাকে আরেক স্রষ্টা তৈরি করেছে, এভাবে চলতেই থাকবে । মানে আপনাকে তৈরি হবার জন্য ততোক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষণ না আপনার স্রষ্টা তৈরি না হোন । উপরের উদাহারনের মত যদি অসীম(infinite) সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন তাহলে আপনি তৈরিই হবেন না । আপনি তৈরি হবার জন্য অসীম(infinite) নয় সসীম(finite) বা ষ্টারটিং স্রষ্টা দরকার । যেহেতু আপনি এই লেখাটা এখন পড়ছেন এর মানে আপনাকে তৈরি করার জন্য একজন স্রষ্টা আছেন বা সংখ্যাটা অসীম(infinite) নয় সসীম (finite)।
এই ষ্টারটিংটাকেই আমরা মানে আস্তিকরা বলছি স্রষ্টা যে কিনা কারো কাছ থেকে সৃষ্টি হয়নি তার থেকেই সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে । স্রষ্টা অনেক গুলো নয় বরং একজন ।
উপরের আলোচনা থেকে অন্তত এতটুকু পরিষ্কার হবার কথা সৃষ্টির জন্য একজন স্রষ্টা আবশ্যক । উদাহারন হয়ত পুরাতন লাগতে পারে কারন উপরে আমি বলেছি পুরানো কাসুন্দি নতুন করে ঘাটব ,পুরোনো উদাহারনটাই আমি আমার মত করে দিলাম।
মুক্তমনার নামে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা সত্য ও সুন্দরের পথে চলে আসুক নয়তবা নিজেরা নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে থাকুন এই আশা করতেই পারি !!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১২