প্রিয় বন্ধু,
এই শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু নাকি বড়জোর এক বছর।
জানিনা আমিও হয়ত কিছুদিন পরে বিস্মরিত হব তোর
নিভৃতে চলে যাওয়া, ভুলে যাব শেষ হাসি কিংবা প্রিয় ডাক। এখন আর
কারো ডাকে পেছন ফেরার কোন দায় নেই আমার, এখন
আমি আরো বাউন্ডুলে শহরের জনবহুল রাস্তায় কিংবা ফুটপাথে।
জীবনের যোগ,বিয়োগ,গুন,ভাগ আর সরল অঙ্কের হিসেব
মিলাতে মিলাতে আমার দৃষ্টিরা ঝাপসা হয়ে আসে, শহরের
বাতাসে আগের চেয়ে গাঢ় হয়ে আসে কুয়াশার ডানা ঝাপ্টানো। এখন
আমি আরো বেশি সিক্ত হয়ে আসি চৌকাঠে ঝুলানো নি:সঙ্গতার
কাছে। সারা রাত খালি গায়ে শিশির মেখে মেখে কল্পকথার
দোকানে আমিই স্মৃতির বিকি কিনি করি গত জন্মের কড়ি হাতে।
বন্ধু, তুই ও তো ভীষণ একা তাই না রে!
খোলা আকাশের নিচে পরিযায়ী পাখি হয়ে জোস্নার
জগতে ভেসে বেড়াতে এখন তো আর তোকে কষ্ট করতে হয়না!
কিংবা ঘাসফড়িং হয়ে দু' চোখে মেঘের অভিমান
নিয়ে দৌড়াতে হয়না এই শহরের শ্যাওলা মুখি দালানের গ্রাউন্ড
ফ্লোর টু টপ ফ্লোর। বেশ ভাল আছিস!
তোকে সাথে নিয়ে কেনা আমার সার্টের ভাঁজে ভাঁজে কর্পোরেট
সুগন্ধী জমে উঠছে বেশ। হর্তা,কর্তাদের উষ্ণ হ্যান্ডসেকে কিল বিল
করে বেরিয়ে পড়ে স্বৈরিণী সৌজন্যতা বোধের নকল ঘুংগুর। অথচ
এরকম তো কথা ছিলনা!
আমি এখন প্রায়ই একা একা মোখতারের টং এ
চা খেতে খেতে আরো বেশি নিস্পৃহ হয়ে যাওয়ার নিরব ঘোষণা পত্র
পাঠ করে যাই। যেখানে আমাদের অজস্র সন্ধ্যা, রাত
কেটেছে আকাশের ফ্যাকাশে ছায়ার নিচে দাড়িয়ে স্ট্রিট ল্যাম্পের
ভঙ্গুর ম্রিয়মান আলোতে কথার ফেরীওয়ালা হয়ে।
সেখানে আমি আজো দাড়িয়ে, বিকেলের
আলো কমে যেতে যেতে সিগারেটের ছাইয়ের সাথে ঘরে ফেরার
তাগাদা। চার পাশে অজস্র মানুষের মুখে তোর শেষ
হাসিটি আমি আজো খুঁজে বেড়াই। হয়তো কোন একদিন এই সব
নগরীতে কোন এক ফুটপাথে ব্যাস্ত ভংগীতে হেটে যাওয়ার সময় পেছন
থেকে কাধে হাত দিয়ে বলবি " বন্ধু আমি ফিরে আসছি" । আমি বুক
পেতে দাড়িয়ে আছি চৌধুরী, তোকে অনেকদিন
জড়িয়ে ধরা হয়না রে ।
এমন তো কথা ছিলনা বন্ধু।
এমন তো কথা ছিল না।