somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সিকিউরিটি বেলা

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাই বেরাদর বন্ধুগন কেমন আছেন সবাই। মেলাদিন পর আপনাদের মাঝে ফেরত আসলাম হঠাৎ। গত কালকের বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের ম্যাচ চলাকালিন সময় মাঠের মইধ্যে একটা পোলা দৌড়াইয়া ঢুইক্যা ম্যাশ রে জড়ায় ধরার কাহীনি তো সবাই জাইনা গেছেন। এই ঘটনা আমার জীবনে ঘইট্যা যাওয়া একটা ভুইল্যা যাইতে চাওয়া ঘটনা মনে করায় দিতাছে বারংবার। কাউরে কইতে চাই নাই এই লজ্জা ভরা কাহিনী। কিন্তু আজকে মনে হইতেছে আপনাদের বইলাই ফেলি কারন শেয়ারে নাকি দুঃখ কমে।

সময়টা ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। নিউজিল্যান্ডে পা রাখছি বেশিদিন হয়নাই। আইসা জব খুজতেছি, এক ইন্ডিয়ান মামু কইলো ভাইগ্না তুমার যে ফিগার তুমি আমার সিকিউরিটি কোম্পানি তে জয়েন কইরা ফেলাও। আমি কইলাম চলেন দেখি কি অবস্থা। মামু আমারে লইয়া গেল একটা সিকিউরিটি কোম্পানীতে। সিভি দিয়া চইলা আইলাম। ৭ দিন পরে কল কইরা একদিনের একটা ট্রেনিং দিয়া আমারে একটা স্টেডিয়াম পাহাড়া দিতে পাঠায় দিলো। যাইয়া দেখি আমার চেয়ে দামড়া দামড়া কিউয়ি আর মাওরি(নিউজিল্যান্ডের মানুষ রে কিউয়ি কয়, আর আদিবাসিদের মাওরি কয়) বেডা অল রেডি অইখানে খাড়ায় রইছে। আমারে দেইখ্যা একটা বিশাল সাত ফুইট্যা মাওরি কয় হাই মাইট উই অয়্যার অয়েটিং ফর য়ু। এই লও তোমার ওয়াকিটকি এই লও টরচলাইট , যাইয়া গ্যালারি বইসা পিচ পাহাড়া দেও, কাউরে দেখলে খালি আওয়াজ দিবা, যাও। বুঝলাম মামু আপাতত আমার ওস্তাদ। ওস্তাদের কথায় আমি টাস্কি খায়া পিচ পাহাড়া দিতে চইলা আইলাম। এইভাবে দুইদিন পাহাড়া দেওয়ার পরে আমার ওস্তাদ আমারে কইলো ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ, তুমি যেহেতু এতদিন মাঠ পাহাড়া দিসো তোমার একটা আইডিয়া হইছে তাই খেলার দিন তোমারে থাক্তেই হইবো। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম উদ্ভোধনী খেলাও দেখমু আবার টেকাও কামামু, আমার এই অবস্থাডা চিন্তা কইরাই মনীষীরা বহুত আগেই একটা কথা কইয়া গেছেন সেইট্যা হইলো 'রথ দেখা আর কলা বেচা'। প্রথম খেলা শ্রীলংকা বনাম নিউজিল্যান্ডের। খেলার দিন সকালে আমার মাওরি ওস্তাদ একটা গেটে আমারে খাড়া করাইয়া কইলো এই গেট দিয়া যারা আইবো তাগোর সবাইরে ভালো মতন চেক করবা। ঘন্টা দুয়েক চেক কইরা পাব্লিক ঢুকানোর পরে ওস্তাদ আইসা কইলো শিশির যাও মাঠে যাইয়া তোমার পজিশনে খাড়াও, খবরদার কাউরে ঢুকতে দিবানা। আমি ও 'যো বলে সো নিহাল' কইয়া মাঠের বাউন্ডারি তে যাইয়া খাড়াইলাম। মাঠের একটা সাইডে গ্যালারির বদলে একটা ঢাল ছিলো, যাইয়া দেখি পাব্লিক অল রেডি চাদর বিছাইয়া শুইয়া মদ খাওয়া শুরু করছে। ওস্তাদ আগেই কইয়া রাখছিলো শিশির তোমার সাইডে পাব্লিক এক্টু ক্রেজি হইবো, খেয়াল রাইখো যেন কেউ মাঠে না ঢুইকা পড়ে, আর কাউরে যদি বেশি মাতাল মনে হয় তাইলে আমারে আওয়াজ দিও, ঘেডি ধইরা বাইর কইরা দিমু।
কইলাম ওকে ওস্তাদ।

খেলা শুরু হইলো আমি খুব ভাব নিয়া রাউন্ড মারি আর চামে খেলা দেখি। পোলাপাইন বাউন্ডারি তে আইসা ফিল্ডার দের ডাক দেয় অটোগ্রাফের লইগা। ফিল্ডার রা খেলার ফাকে ফাকে আইসা অটোগ্রাফ দেয়, হাই ফাইভ দেয়। আমারো ইচ্ছা করে কিন্তু ওস্তাদে আমারে আগেই কইয়া রাখছিলো খবরদার তুমি কইলাম অটোগ্রাফ আর সেল্ফি লইতে যাইয়ো না। বুঝলাম আমার অই ইচ্ছার কথা চিন্তা কইরাই মনীষিরা বইলা গেছিলো 'রক্ষকই ভক্ষক'। যদিও রক্ষক হইয়া ভক্ষন করি নাই তবুও আমার ছবি তুলার খায়েস যে এমুন ভাবে পুরা হইবো সেইটা জীবনেও ভাবি নাই।

খেলায় ডিউটি দিতে আসার আগে মোবাইলে কল কইরা বাসায় আর শশুড়বাড়িতে ভাব মাইরা বইলা আইছিলাম টিভিতে আমারে দেখবা, আমি টিয়া কালারের ড্রেস পইরা থাকমু। আমারে দেখাইলে ছবি তুইল্যা রাখবা।নগদে সবাই টিভি ছাইড়া গুজা হইয়া খেলা দেখতে বইস্যা পড়ছে। খেলার এক ইনিংস শেষ, দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হইছে বেশিক্ষন হয় নাই। এর মইধ্যে এক বেডা মুহুরতে আমার সামনে আইসা জামা কাপড় খুইল্যা নেংটা হইয়া হাতে গেনজি ঘুরাইতে ঘুরাইতে 'আই লাভ নিউজিল্যান্ড' কইয়া মাঠের ভিতরে ঢুইক্যা দিছে খিইচ্যা দৌড়। আমিও ভ্যাবাচেকা খাইয়া বেডার পিছে দিসি দৌড়। খেয়াল করলাম মাঠের চারিদিক থেকা আরও ৫/৬ জন আইস্যা অই বেডারে ধরতে আইতাছে। কিন্তু তারে আর কে ধরতে পারে। ২ জন পিছলাইয়া পরছে, আর বাকি ৫/৬ জনের লগে কাবাডি খেইল্লা মাঠের এক কোনায় যাইয়া ধরা খাইছে।








ওয়াকিটকি তে আওয়াজ আইলো নেংটারে ঘিরা ধর যাতে কোন ক্যামেরা না শ্যুট করতে পারে। শালার গায় মহিষের শক্তি। কোন মতে তারে ঘিরা ধরলাম, হঠাত মাথায় আইলো আমারে যদি টিভি তে দেখায় তাইলে বাপের বাড়িতে সমস্যা নাই মাগার শশুড় শাশুড়ি যদি দেখে যে জামাই একটা নেংটা চর্বির দোকান লইয়া পাছড়া পাছড়ি করতাছে তাইলে বিষয়টা ক্যামুন না!! কেউ যদি জিগায় জামাই কি করে? শশুড় কইবো জামাই নেংটার পিছে দৌড়ায়। নগদে কান টুপি দিয়া চক্ষু পর্যন্ত ঢাইক্যা ফালাইলাম তারপরেও মনে ডর নিয়া কানে বাইজ্যা উঠলো '' জামাই নেংটার পিছে দৌড়ায়''। ডরে নগদে নাক পর্যন্ত ঢাইক্যা ফেললাম। বাউন্ডারি পর্যন্ত ধইরা আনার লগে লগে পাব্লিক তারে লইয়া চিয়ার্স করা শুরু কইরা দিলো, তারে লইয়া হাতে তালি দেয়া শুরু করলো। ততক্ষনে দুইটা পুলিশ চইলা আইছে। আমার ওস্তাদে আমারে কইলো শিশির যাও তুমি এই হালারে পুলিশের হাওয়ালে কইরা দেও। আমি কইলাম ওকে। পুলিশ আইসা আমারে কইলো তুমি কি এই নেংটারে লইয়া আমাদের গাড়িতে উঠায় দিতে পারবা? না পারলে তুমি ধইরা রাখো আমরা গাড়ি লইয়া আইতাছি। আমি কিছু কওয়ার আগেই ওস্তাদে কইলো আরে নাহ শিশির পারবে, যাও তো শিশির সোনা, চান্দুরে গাড়িতে তুইল্যা দিয়া আসো। কি আর কমু, পাব্লিকের সামনে দিয়া প্রায় আধা মাইল নেংটারে জড়াইয়া ধইরা হাইটা পুলিশের গাড়িতে ভইরা দিলাম। পিছে পিছে দুইটা মাইয়া পুলিশ আমারে রাস্তা দেখাইছে। সারা রাস্তায় পাব্লিক আইসা অই বেডার হোগা থাবড়ায়ে অরে বাহবা দিয়া গেছে। দুই একজন সেল্ফি তুইল্যা গেছে। তখন ও কান্টুপি দিয়া আমার নাক পর্যন্ত ঢাকা।

খেলা শেষ কইরা বাসায় আইসা দুঃখের কথা একটা বন্ধুরে কইলাম। হালায় নগদে অনলাইন ঘাইট্যা নেংটার লগে আমার ছবি আর ভিডিও বাইর কইরা বন্ধুমহলে আপ্লোড কইরা দিলো। দুস্টু বনধুরা আবার নেংটার হোগার লোগে লাইগা থাকা আমার পজিশন লইয়া তামাশাও করছে।





বাসায় আইসা দেখি শালি ইনবক্স করছে 'দুলাভাই ব্যাপক লাগতেছে আপনারে' ।

আপাতত ভিডিও দেখেন

** যারা এরকম খেলার মাঝখানে দৌড়ায় মাঠে ঢুইকা পড়ে তাগোরে স্ট্রীকার কয়।
**নীল তীর চিহ্ন দেয়া লোকটাই আমি অধম

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৫৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×