somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রানজিট : ঋণের জন্য কঠিন শর্ত ভারতের

০৪ ঠা মে, ২০১০ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথের উন্নয়নে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে কঠিন শর্ত দিয়েছে ভারত। প্রতিশ্রুত এ ঋণের জন্য পৌনে ২ শতাংশ হারে সুদ চেয়েছে দেশটি। সুদের বাইরে কমিটমেন্ট ফি নামে অতিরিক্ত সুদও দাবি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ঋণখেলাপি হলে আরো ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে বাংলাদেশকে। সবচেয়ে কঠিন যে শর্তটি আরোপ করা হয়েছে তা হলো, ঋণের টাকার শতভাগ দিয়ে কেবল ভারতের কাছ থেকেই পণ্য ও সেবা কিনতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ।
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ভারতের এসব শর্তের সমালোচনা করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রানজিট বা যেকোনো কারণেই হোক, প্রকল্পগুলোর সুবিধা যদি ভারতের পক্ষে যায়, তবে বিনাশর্তে তাদের অনুদানেই তা বাস্তবায়ন করা উচিত। আর প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়া দাম বেশি হলেও তাদের কাছ থেকে পণ্য কেনার শর্তটি অত্যন্ত অন্যায্য। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলোর সুবিধা যেহেতু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের অনুকূলে, তাই ঋণের কোনো সুদই থাকা উচিত নয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে ভারতের শর্ত সম্পর্কে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আপত্তিকে তাদের মতামত হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, 'ঋণ চুক্তির আগে খসড়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়, সেটাই করছি আমরা।' তবে দেশটি ভারত হওয়ায় বিষয়টি কিছুটা স্পর্শকাতর মনে হতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, খসড়া চুক্তিপত্রটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হওয়ার আগে এর বেশি কিছু জানানো ঠিক হবে না।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে কানেকটিভিটির স্বার্থে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেলপথ এবং সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য এক বিলিয়ন ডলার (প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা) ঋণের যৌথ ইশতেহার সই হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিশ্রুত ঋণের জন্য ভারত একটি খসড়া চুক্তিপত্র তৈরি করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠায় চূড়ান্ত করার জন্য।
ভারতের পাঠানো খসড়া চুক্তিপত্রটির বিষয়ে গত ৭ এপ্রিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারতের চুক্তিপত্রটির নানা অসংগতি ও একপেশে শর্তগুলোর ব্যাপক বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ, পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বৈঠকে ঋণ চুক্তিপত্র চূড়ান্ত করার আগে ভারতের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা এখনো করা সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
খসড়া চুক্তিপত্রে ভারত যেসব কঠিন শর্ত আরোপ করেছে তা হলো, ঋণের মেয়াদ হবে ১৫ বছর। তবে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এর সঙ্গে দিতে হবে আধা শতাংশ (শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ) হারে কমিটমেন্ট ফি। খসড়া চুক্তিপত্রে বলা হয়, ঋণখেলাপ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর ঋণখেলাপি হলে সে ক্ষেত্রে নিয়মিত সুদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ আরো ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে। খসড়ায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশ যে ঋণ পাবে, তা দিয়ে যে কেনাকাটা বা পরামর্শক সেবা ক্রয় করা হবে, এর শতভাগই নিতে হবে ভারত থেকে। এ ছাড়া চুক্তিটি ভারতের নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। আর এটি হবে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এক্সিম ব্যাংক, ইন্ডিয়ার মধ্যে।
ভারতের এসব শর্ত আরোপের ব্যাপারে গত ৭ এপ্রিলের বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি তুলে ধরে বলা হয়, ভারত যেসব শর্ত আরোপ করেছে, তা দাতা সংস্থা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের শর্তের মতোই। কান্ট্রি টু কান্ট্রির ক্ষেত্রে কমিটমেন্ট ফি আরোপ করা বাঞ্ছনীয় নয়, অথচ ভারত তা করতে চাচ্ছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারতের কমিটমেন্ট ফি আরোপের শর্তটি বাতিলের সুপারিশ করেছে।
শর্তের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সুদের হার ও কমিটমেন্ট বেশি বলে অভিমত জানিয়েছে। একই সঙ্গে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় নিয়মিত সুদ ছাড়া অতিরিক্ত সুদ আরোপের ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ ভারতের কাছ থেকে সব পণ্য ও সেবা ক্রয়ের শর্তটিকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। একই সঙ্গে ঋণখেলাপের সুদ বেশি বলে আপত্তি করেছে তারা।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের পক্ষ থেকে আপত্তি প্রকাশ করে বলা হয়, ভারতের কাছ থেকে শতভাগ পণ্য ও সেবা ক্রয় করার শর্তের কারণে এক দিকে কোনো উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা যাবে না; অন্যদিকে যেসব পণ্য বাংলাদেশেও তৈরি হয়, তাও কিনতে হবে ভারত থেকে। এর ফলে শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করাসহ নানা কারণে উন্নয়ন ব্যয় বেড়ে যাবে। তা ছাড়া চুক্তিপত্র পরিচালনায় শুধু ভারতীয় আইন গ্রহণযোগ্য হলে কখনো কোনো সমস্যা দেখা দিলে, তা সমাধানের জন্য ভারতে যেতে হবে- এজাতীয় বিষয়গুলো যৌক্তিক নয় বলেও অভিমত দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুক্তিপত্রটি বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে সই হওয়ার প্রস্তাবটিকে অসম বলে মন্তব্য করেছে। ঢাকা মনে করে, চুক্তিটি হবে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে, ভারতের কোনো সংস্থার সঙ্গে নয়। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, শুল্ক কর ও ভ্যাট পরিশোধ করেই পণ্য ছাড় করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, 'বন্ধুপ্রতিম দেশ থেকে যদি এত কঠিন শর্তে ঋণ নিতে হয়, তবে সেই ঋণ কেন নেওয়া? সাত হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা কি সরকারের জন্য অনেক কঠিন কাজ? আমি তা মনে করি না। এই ঋণের বেশ কিছু শর্ত আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। যদি অনুদান হতো, তবে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা তো শর্তের ওপর শর্ত আরোপ করছে।'
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদও শর্তগুলোকে শুধু ভারতের পক্ষে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, 'ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের ঋণের শর্তগুলো এমন হয়ে থাকে। তাদের স্বার্থটা তারা দেখছে। এখন কথা হচ্ছে, আমরা আমাদের স্বার্থটা ঠিকভাবে দেখছি কি না। যাঁরা বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তি করবেন, তাঁদের উচিত হবে ঋণের শর্তগুলো প্রতিযোগিতামূলক কি না, আমাদের জন্য উপযুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা।'
তবে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, চুক্তিপত্রটি চূড়ান্ত করার আগে ভারতের ঋণের সুদের হার আরো কমানো, কমিটমেন্ট ফি কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করা, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর থেকে বাড়িয়ে (গ্রেস পিরিয়ড সাত বছর) ২৫ বছর করা, ঋণের ৭০ শতাংশ দিয়ে ভারতের পণ্য ও সেবা ক্রয়, বাকি ৩০ শতাংশ দিয়ে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ব্যাপারে ভারতকে জানানো হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, বিষয়টি এখনো বাংলাদেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রেখেছে ।


সূত্র : কালের কন্ঠ ( ০৩.০৫.২০১০)

দেখা যাক কি হয় ! বন্ধুপ্রতিম এই দেশ টার সাথে ।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×