ক্লাস শেষে হল রুমের বাইরে এসে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ছোট সাইজের কার্ড বের করলো লীনা। সেটাতে এক রোমান্টিক কবিতার চার লাইন লিখা । আমাকে অর্থ বুঝিয়ে দিলো সেই চার লাইনের , তারপর আমার নাম কার্ডে লিখতে লিখতে আমি বিড়ি ফুঁকি কিনা জানতে চেয়ে তার সাথে একটা বিড়ি খাওয়ার সঙ্গী হতে আমন্ত্রন জানালো ।
কার্ড হাতে নিয়ে জানতে চাইলাম,
- তোমার বিয়ে কোথায় হচ্ছে?
- আমার গ্রামে।
- কদ্দুর এখান থেকে ?
- প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার
দুরত্ব শুনে মনে মনে একটু দমে গেলাম, এমনিতেই প্রচন্ড ব্যাস্ততায় আছি এইখানে কোনভাবেই যাওয়া সম্ভব না আমার জন্য এখন। সিগারেটে হালকা একটা টান দিয়ে বল্লাম,
- আমার প্রচন্ড আগ্রহ হচ্ছে তোমার গ্রামে যেতে, কিন্তু কিছুদিন আগে নিজের ফাইনাল পেপার জমা দিয়ে দিয়েছি আমি , কবে যে প্রফেসরের ডাক আসে বলতে পারছি না । আমার মনে হয় তোমার বিয়েতে যাওয়া সম্ভব হবে না ।
আমার ধারনাই ছিলো , বিষয়টা লীনা স্বাভাবিক ভাবে নেবে । সে সেটাই করলো। শ্রাগ করে বললো - তুমি আসলে খুব খুশি হতাম।
এরমধ্যে তার মোবাইল বেজে উঠলো , আমাকে লাজুক ভঙ্গিতে বললো,
- আমার হবু বর আসছে একটা বই নিয়ে । আমি ভুলে বাসায় ফেলে আসছিলাম । একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি ..
বলেই সে ইউনিভার্সিটির গেটের দিকে ছুটে গেল ।
একটু পরেই একাই ফিরে এসে কপট রাগ দেখিয়ে বললো ,
- তুমি কি বিশ্বাস করবা ! আমার গাধা প্রেমিকটাকে আমি ফোন করে বলেছি আমার বইটা নিয়ে আসার জন্য। এই কারনে তার অফিসেও দেরি হয়ে গেলো । শহরের আরেক প্রান্ত থেকে সে এখানে এসেছে শুধু মাত্র বইটা দেবার জন্য। এখন গিয়ে দেখি সে তার সারা ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বইটা পাচ্ছে না । আবার ঢং করে 'সরি' বলে । শুনেই আমার মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো।
আমি হালকা গলায় বল্লাম ,
- বেচারা বিয়ের চিন্তায় এখনি সব ভুলে যাওয়া শুরু করেছে। তার উপর ব্লাক বেল্ট ধারী হবু বউ ... ভয়ে সারাক্ষন সব তালগোল পাকাবারই কথা।
- তুমি বিষয়টা হালকা ভাবে বললেও আমি কিন্তু আমার বাগদত্তার কাছে একেবারেই সুইট একটা মেয়ে। আমাকে ছোটবেলায় আমার বন্ধুরা কি ডাকতো জানো ? 'দ্যা কিলার' , সেটাই ছিলো আমার নাম । আমি খুব জংলি টাইপ মেয়ে ছিলাম ছোটবেলায়। আমার ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত কোন মেয়ে বন্ধু ছিলো না । সব সময় ছেলেদের সাথেই দৌড়-ঝাপ করতাম। একটা ঘটনা বলি , একবার খেলতে খেলতে এক চারতলা বাড়ির কার্নিশে চড়েছিলাম সবার আগে ছিলাম আমি বাকি বন্ধুরা সব আমার পেছনে আমি খেলনা দুরবিন চোখে লাগিয়ে আমার সাথিদের বলে যাচ্ছি - 'দুরে কোথাও আমাদের শত্রুপক্ষকে দেখা যাচ্ছে না'
কিন্তু পেছনে কারো কোন সারাশব্দ নেই , ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে দেখি মা আমার ঠিক দু'হাত পেছনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে । মা'র হাতে আমি অনেক পিট্টি খেয়েছি ছোট বেলায় জানো !
তোমাদের ছোটবেলা কেমন হয় ? তোমরা কি পিট্টি খাও ? তুমি কি কখনো পিট্টি খেয়েছ ?
আমি সমস্ত দাঁত বের করে জবাব দিলাম - আবার জিগায়!
এরপর লীনার সাথে আর যোগাযোগ হয় নাই । নিজের কাজ আর ক্লাস নিয়ে ত্রাহি অবস্থায় ছিলাম গত মাস পুরোটা। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই লীনার একটা মেইল পেলাম ..
-------------------------------------------------
প্রিয় বন্ধু
আমি জানি তুমি অনেক ব্যস্ত, আমি এখন আমার বাসায় চলে আসছি। সবকিছুর প্রস্ততি চলছে। তুমি কি দুই দিনের সময় বের করতে পারবা না ? আমার ডজন খানেক বন্ধু সেই সাড়ে চারশ কিলোমিটার থেকে আমার বিয়েতে আসছে .. তুমি কোথাকার কোন ব্যস্ত বান্দা ! আজব !
যাই হোক , আমি তোমাকে আমার গ্রামে আসার পথ বাতলে দিচ্ছি বাকিটা তোমার ইচ্ছা।
# প্রথম রাস্তা, গাড়ি
আমি জানি না তোমার গাড়ি আছে কিনা , থাকলে খুবই ভালো। তেল ভরে সোজা বেড়িয়ে পড়ো ম্যাপ হাতে। সাতাত্তর নাম্বার হাইওয়ে ধরে প্রথমে যাবে বিদগস্জ নামক শহরের দিকে, সেখান থেকে কশোলিন। কশোলিন এসেই আমাকে একটা ফোন দিবে , বাকি ব্যাবস্থা আমি করবো ।
# দ্বিতীয় রাস্তা, ট্রেন
উজ কালিস্কা স্টেশন থেকে সকাল ৮:৩৩ ট্রেন ছাড়বে, সেখানে থেকে পোজনান পৌছবে ১৩:২১ , পোজনান এসে তোমাকে ট্রেন বদলাতে হবে সেই ট্রেন ছাড়বে ১৬:৪৫ এবং ২০:৫৩ তে তুমি আমার শহরে হাজির হবে । আমি এসে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো।
# তৃতীয় রাস্তা, বাস (এইটা সবচেয়ে ভালো রাস্তা)
উজ ফেব্রিচ্না থেকে ৭:৩০ এ বাস ছাড়বে এবং ১৬:০৮ এ কোশালিন এসে পৌছবে। এখানে এসে আমাকে শুধু একটা কল দিলেই হবে । আমি এসে নিয়ে যাবো ।
ঠিকানা -
এইটা আমার বাসার ঠিকানা (যেখানে তুমি থাকবা)
জিগ্রাস্কা ৬৩
কোশালিন
এইটা বিয়ের অনুষ্ঠানের ঠিকানা (৬ তারিখ বেলা দুইটা)
দেওভরোভকি ১
কোশালিন
এইটা পার্টি সেন্টারের ঠিকানা (বিকাল তিনটার পর থেকে সারারাত)
পাব পার্কোভি
ভিসেওস্কা ১০৬
কোশালিন
আর যদি আর কিছু প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাকে মেইলে জানাও।
---------------- চলবে