somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুর্কুমা বাটো মেন্দি বাটো ----- ২

১১ ই জুন, ২০০৯ ভোর ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস শেষে হল রুমের বাইরে এসে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ছোট সাইজের কার্ড বের করলো লীনা। সেটাতে এক রোমান্টিক কবিতার চার লাইন লিখা । আমাকে অর্থ বুঝিয়ে দিলো সেই চার লাইনের , তারপর আমার নাম কার্ডে লিখতে লিখতে আমি বিড়ি ফুঁকি কিনা জানতে চেয়ে তার সাথে একটা বিড়ি খাওয়ার সঙ্গী হতে আমন্ত্রন জানালো ।

কার্ড হাতে নিয়ে জানতে চাইলাম,
- তোমার বিয়ে কোথায় হচ্ছে?
- আমার গ্রামে।
- কদ্দুর এখান থেকে ?
- প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার
দুরত্ব শুনে মনে মনে একটু দমে গেলাম, এমনিতেই প্রচন্ড ব্যাস্ততায় আছি এইখানে কোনভাবেই যাওয়া সম্ভব না আমার জন্য এখন। সিগারেটে হালকা একটা টান দিয়ে বল্লাম,
- আমার প্রচন্ড আগ্রহ হচ্ছে তোমার গ্রামে যেতে, কিন্তু কিছুদিন আগে নিজের ফাইনাল পেপার জমা দিয়ে দিয়েছি আমি , কবে যে প্রফেসরের ডাক আসে বলতে পারছি না । আমার মনে হয় তোমার বিয়েতে যাওয়া সম্ভব হবে না ।
আমার ধারনাই ছিলো , বিষয়টা লীনা স্বাভাবিক ভাবে নেবে । সে সেটাই করলো। শ্রাগ করে বললো - তুমি আসলে খুব খুশি হতাম।
এরমধ্যে তার মোবাইল বেজে উঠলো , আমাকে লাজুক ভঙ্গিতে বললো,
- আমার হবু বর আসছে একটা বই নিয়ে । আমি ভুলে বাসায় ফেলে আসছিলাম । একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি ..
বলেই সে ইউনিভার্সিটির গেটের দিকে ছুটে গেল ।

একটু পরেই একাই ফিরে এসে কপট রাগ দেখিয়ে বললো ,
- তুমি কি বিশ্বাস করবা ! আমার গাধা প্রেমিকটাকে আমি ফোন করে বলেছি আমার বইটা নিয়ে আসার জন্য। এই কারনে তার অফিসেও দেরি হয়ে গেলো । শহরের আরেক প্রান্ত থেকে সে এখানে এসেছে শুধু মাত্র বইটা দেবার জন্য। এখন গিয়ে দেখি সে তার সারা ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বইটা পাচ্ছে না । আবার ঢং করে 'সরি' বলে । শুনেই আমার মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো।

আমি হালকা গলায় বল্লাম ,
- বেচারা বিয়ের চিন্তায় এখনি সব ভুলে যাওয়া শুরু করেছে। তার উপর ব্লাক বেল্ট ধারী হবু বউ ... ভয়ে সারাক্ষন সব তালগোল পাকাবারই কথা।
- তুমি বিষয়টা হালকা ভাবে বললেও আমি কিন্তু আমার বাগদত্তার কাছে একেবারেই সুইট একটা মেয়ে। আমাকে ছোটবেলায় আমার বন্ধুরা কি ডাকতো জানো ? 'দ্যা কিলার' , সেটাই ছিলো আমার নাম । আমি খুব জংলি টাইপ মেয়ে ছিলাম ছোটবেলায়। আমার ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত কোন মেয়ে বন্ধু ছিলো না । সব সময় ছেলেদের সাথেই দৌড়-ঝাপ করতাম। একটা ঘটনা বলি , একবার খেলতে খেলতে এক চারতলা বাড়ির কার্নিশে চড়েছিলাম সবার আগে ছিলাম আমি বাকি বন্ধুরা সব আমার পেছনে আমি খেলনা দুরবিন চোখে লাগিয়ে আমার সাথিদের বলে যাচ্ছি - 'দুরে কোথাও আমাদের শত্রুপক্ষকে দেখা যাচ্ছে না'
কিন্তু পেছনে কারো কোন সারাশব্দ নেই , ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে দেখি মা আমার ঠিক দু'হাত পেছনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে । মা'র হাতে আমি অনেক পিট্টি খেয়েছি ছোট বেলায় জানো !
তোমাদের ছোটবেলা কেমন হয় ? তোমরা কি পিট্টি খাও ? তুমি কি কখনো পিট্টি খেয়েছ ?
আমি সমস্ত দাঁত বের করে জবাব দিলাম - আবার জিগায়!

এরপর লীনার সাথে আর যোগাযোগ হয় নাই । নিজের কাজ আর ক্লাস নিয়ে ত্রাহি অবস্থায় ছিলাম গত মাস পুরোটা। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই লীনার একটা মেইল পেলাম ..

-------------------------------------------------

প্রিয় বন্ধু

আমি জানি তুমি অনেক ব্যস্ত, আমি এখন আমার বাসায় চলে আসছি। সবকিছুর প্রস্ততি চলছে। তুমি কি দুই দিনের সময় বের করতে পারবা না ? আমার ডজন খানেক বন্ধু সেই সাড়ে চারশ কিলোমিটার থেকে আমার বিয়েতে আসছে .. তুমি কোথাকার কোন ব্যস্ত বান্দা ! আজব !
যাই হোক , আমি তোমাকে আমার গ্রামে আসার পথ বাতলে দিচ্ছি বাকিটা তোমার ইচ্ছা।

# প্রথম রাস্তা, গাড়ি
আমি জানি না তোমার গাড়ি আছে কিনা , থাকলে খুবই ভালো। তেল ভরে সোজা বেড়িয়ে পড়ো ম্যাপ হাতে। সাতাত্তর নাম্বার হাইওয়ে ধরে প্রথমে যাবে বিদগস্জ নামক শহরের দিকে, সেখান থেকে কশোলিন। কশোলিন এসেই আমাকে একটা ফোন দিবে , বাকি ব্যাবস্থা আমি করবো ।

# দ্বিতীয় রাস্তা, ট্রেন
উজ কালিস্কা স্টেশন থেকে সকাল ৮:৩৩ ট্রেন ছাড়বে, সেখানে থেকে পোজনান পৌছবে ১৩:২১ , পোজনান এসে তোমাকে ট্রেন বদলাতে হবে সেই ট্রেন ছাড়বে ১৬:৪৫ এবং ২০:৫৩ তে তুমি আমার শহরে হাজির হবে । আমি এসে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো।

# তৃতীয় রাস্তা, বাস (এইটা সবচেয়ে ভালো রাস্তা)
উজ ফেব্রিচ্না থেকে ৭:৩০ এ বাস ছাড়বে এবং ১৬:০৮ এ কোশালিন এসে পৌছবে। এখানে এসে আমাকে শুধু একটা কল দিলেই হবে । আমি এসে নিয়ে যাবো ।

ঠিকানা -
এইটা আমার বাসার ঠিকানা (যেখানে তুমি থাকবা)
জিগ্রাস্কা ৬৩
কোশালিন

এইটা বিয়ের অনুষ্ঠানের ঠিকানা (৬ তারিখ বেলা দুইটা)
দেওভরোভকি ১
কোশালিন

এইটা পার্টি সেন্টারের ঠিকানা (বিকাল তিনটার পর থেকে সারারাত)
পাব পার্কোভি
ভিসেওস্কা ১০৬
কোশালিন

আর যদি আর কিছু প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাকে মেইলে জানাও।




---------------- চলবে
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×