somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?

১৯ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। মৃত্যু উপত্যকা

প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের দূর্ঘটনায় অকালমৃত্যু আমাদের সবার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছে। এটা এমন এক ক্ষতি আমাদের জাতির জন্যে যেটা সহজে পূরণ হবার নয়। এমনিতেই আমাদের চলচ্চিত্রের যাচ্ছেতাই অবস্থা, এর মধ্যে একজন চরম প্রতিভাবান নির্মাতাকে হারানো মানে আসলে আমাদের চলচ্চিত্রের আরো অনেকখানি পিছিয়ে যাওয়া।

সড়ক দূর্ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেও আমাদের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পথে বাসে বাসে সংঘর্ষের পর অল্পের জন্যে বেঁচে গেলেন, যদিও সেই দূর্ঘটনায় ছয়জন হতভাগা মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো।

নৌপথেও আমাদের দেশে প্রায়ই লঞ্চডুবি হয়। বছর বছর শত শত মানুষ মারা যায় তাতে।

কয়দিন পরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে রাস্তায় পড়ে মরে থাকে কিশোরের মৃতদেহ। ইট, রড দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে রাখি তরুণদের, যে আমাদেরই কারো না কারো স্বজন, পরিচিত জন।

আমাদের র‍্যাব-পুলিশ তো মানুষ মারাকে কৌতুকের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। রাত তিনটার সময় র‍্যাবের গাড়ি থেকে পালাতে যেয়ে গুলি খেয়ে মরে যায় কোনো তরুন, তার মৃতদেহের পাশে পড়ে থাকে কোনো দেশীয় অস্ত্র! বিচার বিভাগ নামে যে একটা প্রতিষ্ঠান আছে সেটা মনে হয় আমাদের র‍্যাব-পুলিশের লোকজন কোনোভাবেই মানতে রাজী নন।

২। এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়!

তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর খবরের কাগজে, ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগে মানুষের হাহাকার উঠেছে। সবারই মোটামুটি এক কথা – এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়! এ কোন দেশে আছি আমরা, আমাদের কি সরকার নেই? আমরা কি আফ্রিকার কোন যুদ্ধপীড়িত দেশ? এই লাশের মিছিল থামানোর দায়িত্ব কি কারো নয়?

৩। অযোগ্য রাজনীতিবিদ-আমলা-পুলিশ

রাজনীতিবিদরা আমাদের দেশের চিরকালীন ভিলেন। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে? বানিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজশ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সড়ক দূর্ঘটনায় কেউ মারা গেছে? যোগাযোগ মন্ত্রী করেটা কী? জঙ্গিরা বোমা ফাটিয়েছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজের দলের উপকার ছাড়া আর কোনো কাজে আগ্রহী না। শেয়ার বাজার পড়ে গেছে? অর্থ মন্ত্রী নিজেই এই চক্রের সাথে জড়িত!

হয়তো ব্যাপারটি সত্যি। আমাদের রাজনীতিবিদদের অদক্ষতা এবং অসততা আমরা আমাদের সামনেই দেখে চলেছি।

রাজনীতিবদদের সাথে আমাদের ভিলেনের তালিকায় আছে দুর্নীতিপরায়ণ এবং অদক্ষ আমলা এবং পুলিশ বাহিনী। রাজনীতিবিদদের সাথে তাল মিলিয়ে এই মানুষগুলোর কর্মকান্ডও দিন দিন আমাদের কষ্টের এবং দেশকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন ভঙ্গের পেছনে অনেক অবদান রাখছে।

৪। অযোগ্য আরো অনেকে

শুধু কি রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ নিয়ে আমাদের অভিযোগ?

- আমাদের শিক্ষকদের নিয়েও আমাদের অনেক হতাশা, তারা দিনের পর দিন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে রাজনীতি করে চলেছেন।
- হতাশা আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের নিয়ে যারা আমাদের আশা অনেক উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে বারবার নিরাশ করছে। ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে আমাদের হতাশা তো এমন পর্যায়ে যে আমাদের আর কোনো আশাই নাই ওদের নিয়ে।
-আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব কমই গর্ব করার মতো কিছু আবিষ্কার করতে পেরেছেন এখন পর্যন্ত।
- আমাদের চলচ্চিত্র এমন পর্যায়ে যে আমাদের মধবিত্ত, উচ্চবিত্ত সমাজ চলচ্চিত্র প্রায় বর্জন করে চলেছেন।
- আন্তর্জাতিক কোনো ক্রীড়া প্রতযোগিতায় আমাদের কখনো তেমন কোনো সাফল্য নাই।
- বিজ্ঞান-প্রকৌশলে আমাদের কোনো বড় অর্জন নাই। আমাদের বড় বড় ব্রিজ, বিল্ডিং ইত্যাদি এখনো বিদেশী প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি হয়।
- আমাদের বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা খেয়াল খুশি মতো গাড়ি চালায় আর মানুষ মারে?

এই লিস্ট এর অন্ত নেই। মনের সুখে যোগ করুন আপনার অভিযোগটি।

এবং এর প্রতিটির জন্যে আমরা নিয়ম করে বকাঝকা, গালাগাল করে যাচ্ছি অদক্ষ, অযোগ্য মানুষগুলোকে। আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের যে কী পরিমান গালি খেতে হয় সেটা ফেইসবুক, ব্লগিং না থাকলে মনে হয় আমার জানা হতো না!

৫। আমি ছাড়া আর সবাই খারাপ, অযোগ্য?

এই যে চারদিকে এতো খারাপ মানুষ, অযোগ্য মানুষের দল এরা কোথাকার মানুষ, কোন দেশের মানুষ?

এরাই কি “আমরা” নয়? এরা কি আমাদের পরিবার, স্বজন, বন্ধু, পরিচিত কেউ নয়?

আয়নার সামনে দাঁড়ালে যে মানুষটাকে দেখা যায় সে কতোটুকু ভালো? কতটুকু যোগ্য?

নিজের ভালোত্ব বাড়ানোর জন্যে জীবনে কী করেছি? দক্ষতা, যোগ্যতা বাড়ানোর জন্যে কী করেছি? দেশের ভালোর জন্যে কী করেছি? নাকি নিজেকে অযোগ্য রেখে দিয়ে দেশকে আশা করেছি যোগ্য হতে? দেশ কি পনের কোটি মানুষের বাইরের কিছু? পনের কোটি মানুষ যদি যোগ্য হয়ে না উঠে, তাহলে দেশ কিভাবে যোগ্য হবে?

৬। এই মৃত্য উপত্যকা আসলে আমি, আপনি, এবং আমাদের আগের প্রজন্মের তৈরি!

কিশোর এবং তরুণ বয়সে আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল পড়ালেখা। এর সাথে খেলাধুলা আর কিছু সাংস্কৃতিক কাজে জড়িত হওয়া। আমি এর কোনোটাই ভালোভাবে করতে পারিনি। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে মেরে আলসেমী করে আমার সময় নষ্ট করেছি। সেজন্যেই আজ আমার কাজে দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের না। আমাদের দেশ যে পিছিয়ে আছে অন্য অনেক দেশ থেকে সে ব্যাপারে আমি অবদান রাখছি।

আমার ধারণা একই কথা আপনার ক্ষেত্রেও সত্যি। সেটা না হলে আপনার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনি এখন আমাদের দেশের জন্যে কিছু করুন এবং আমাদেরকেও পথ দেখান।

আমাদের চেয়ে বড় দোষ আমাদের আগের প্রজন্মের। আমাদের বাবা-মা’র। আমি দুঃখিত আপনার অনুভুতিতে আঘাত লাগলে, কিন্তু আমাদের আগের প্রজন্ম আমাদেরকে একটা জঘন্য বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন।

তারা আমাদের একটা স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়েছে সত্যি (সেজন্যে তাদের কাছে সীমাহীন কৃতজ্ঞতা), কিন্তু তারা আমাদের উপহার দিয়েছেন একটা দুর্নীতিতে শ্রেষ্ট দেশ। দেশের প্রতি মায়া-মমতাহীন একদল রাজনীতিবিদ। ছাত্র রাজনীতি নামক ভয়াবহ সন্ত্রাসী এবং পশ্চাদপদ একটা ব্যবস্থা যেটা আমাদের সমাজকে, দেশকে তিলতিল করে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

তারা আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারেন নি। যখনি আমি একটা অযোগ্য বালক-বালিকা কিংবা কিশোর-কিশোরী দেখি, তখনি আমার সেই বালক-বালিকা কিংবা কিশোর-কিশোরীর বাবা-মা’র প্রতি এক ধরনের রাগ কাজ করে। বাবা-মা চাইলে সন্তানদের সঠিকভাবে বড় করে তোলা খুব কঠিন কিছু না। আমাদের সীমিত সম্পদ, কিন্তু এটা দিয়েই আমাদের শুরু করতে হবে। কোনো দেশই প্রথমের উন্নত হয়ে শুরু করেনি!

এই অযোগ্য আমি, আপনি, আর আমাদের আগের প্রজন্ম থেকে তৈরি হয়েছে আমাদের রাজনীতিবিদগন, আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা, আমাদের ফুটবলাররা, চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকারা, ঘাতক বাস ড্রাইভার, খুনী র‍্যাব-পুলিশ।

৭। পরিবর্তন শুরু হতে হবে নিজের থেকে

যে দেশের স্বপ্ন দেখি আমরা (এবং প্রতিনিয়ত সেই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ভুগি) সে দেশ পেতে হলে আগে নিজেকে ভালো, যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

পনের কোটি মানুষের বেশির ভাগ মানুষ যেদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে বলতে পারবে “আমি সত্যিকারভাবে একজন ভালো মানুষ, যোগ্য মানুষ, অন্তত পক্ষে সেরকম হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি” সেদিন শুধুমাত্র আমরা আমাদের স্বপ্নের দেশ পাবো। তার আগ পর্যন্ত কেবল “নিজে ভালো, অন্যরা খারাপ” বলে গলা ফাটিয়ে যাবো, কিংবা বিভিন্ন উন্নত দেশের এম্ব্যাসিতে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কোনোমতে এই মৃত্যু উপত্যকা থেকে পালানোর চেষ্টা করে যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:৫৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×