somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দের বুলেটবিদ্ধ শেখ মুজিবুর রহমান ( যিনি আমাদের জাতির পিতা এবং যিনি বঙ্গবন্ধু)।

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র, আমাদের ইংরেজী সাহিত্য পড়াতেন মকবুল স্যার, প্যাট্রিয়ট কবিতা পড়াতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন। বললেন, যতবার আমি এই কবিতা পড়ি, ততবার আমার চোখের সামনে একজন মানুষের কথা ভেসে ওঠে। তিনি হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান।

স্যার যেন ফিরে গেলেন সময়ের খানিকটা পেছনে।

সময় ১৯৭৪ সাল। তরুণ মকবুল হোসেন দিনাজপুরের বড় ময়দানে দাড়িয়ে আছেন। বিশালতায় নিজের নামকে ছাপিয়ে যাওয়া বড় ময়দান লোকে লোকারন্য। ভিড় ঠেলে তার মাঝে এই তরুণ একদম মঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, নেতাকে এক ঝলক দেখার আশায়। সে সময় নেতা মঞ্চের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের ধমক দিচ্ছেন।

কেন?

কারণ নিরাপত্তা বাহিনী তার সামনে একটা বুলেট প্রুফ কাঁচ রাখার অনুরোধ করছে, আর তিনি তাদের বলছেন, “তোমরা জানো এই জাতি আমার সন্তান, আমার কোন সন্তান আমার গায়ে গুলি করতে পারে না। তোমরা সরাও এই সব জঞ্জাল”।

কোন ধরনের নিরাপত্তা বলয় ছাড়াই তিনি ভাষণ দিলেন, বড় বড় ময়দান যেন ভাষণ আর শেষে হাততালির শব্দে গুঞ্জরিত হয়ে উঠল।

স্যার বললেন, অন্তর থেকে বিশ্বাস না করলে উচ্চারিত শব্দে এত জোর থাকে না। নিজের কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে কেন তিনি এভাবে নিহত হলেন?

এর উত্তর আমার কাছে আছে!


একই কলেজে পড়ার সময় আমার এক বন্ধু যোগ দিল, জাতীয় ছাত্র সমাজে। তার হাতে একটা বই আবিস্কার করলাম, যার নাম বাংলাদেশেঃ এ লিগাসি অফ ব্লাড বা বাংলাদেশের রক্তের ঋণ, লেখকের নাম এন্থনি ম্যাসকারানহাস।

এই বইটি পড়ার পর জানলাম, শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অন্ধকার অধ্যায়। কিন্তু তখনো আবিস্কার করিনি কত সুচারু ভাবে, এই বইয়ের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে শব্দের বুলেট ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উক্ত বইয়ের কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রকে হনন করা হয়েছে তার একটি নমুনা (যেহেতু স্মৃতি থেকে লেখছি, তাই সন এবং স্থানের নাম ঠিক মনে নেই তবে কাহিনীটি মনে আছে)।

সম্ভবত ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের কোন এক এলাকায় সেনাবাহিনীর এক তরুণ অফিসার এক বীভৎস ঘটনার নায়ক, এক অপরাধীকে পাকড়াও করে। এবং এই ঘটনা বাংলাদেশে আলোড়ণ সৃষ্টি করে।

কি ছিল সেই ঘটনা?

বিয়ে করে বউ নিয়ে যাওয়ার সময় এক বরযাত্রীর উপর ডাকাতি হয়, এবং উক্ত ডাকাত বউকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর উক্ত বধূর লাশ নদীতে ভাসতে দেখা যায়।

ডাকাত দলের সদস্যরা কেউ অপরিচিত ছিল না, ডাকাত দলের নেতা ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ভাই। যার ফলে সবাই নিশ্চিত ছিল এই ঘটনায় তার কোন কিছুই হবে না।

কিন্তু উক্ত অসীম সাহসী তরুণ কর্মকর্তা গিয়ে অপরাধী পাকড়াও করে। তবে তিনি কিছুদিন পর বিস্ময়ে আবিস্কার করেন সেই অপরাধী দিব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন তিনি তাকে ধরে জিজ্ঞেস করেন, কার হুকুমে সে ছাড়া পেল। উক্ত ব্যক্তি জবাব আমার নেতা শেখ মুজিবের নির্দেশে।

আমি জানি আপনারা এই কাহিনী শুনে শিউড়ে উঠেছেন। কিন্তু এই কাহিনীর পুরোটা সত্য নয়, কিছুটা সত্য বাকিটা খুব সূক্ষ্ম ভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র কলঙ্কিত হয়। আমিও এই গল্পটা পুরোপুরি বিশ্বাস করতাম, যদি না সাপ্তাহিক আজকের কাগজ নামে একটা পত্রিকা আমার পড়া হত।

এই পত্রিকায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর নাসিরউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, বাংলাদেশের রক্তের ঋণ নামের বইটি আমি পড়েছি এবং এখানে যে তথ্য বিকৃতি ঘটানো হয়েছে আমি তার প্রতিবাদ করতে চাই। আমি চেয়েছিলাম যেন বইয়ে উক্ত অংশটি সংশোধন করা হয়, কিন্তু লন্ডনে এর প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারলাম যে এ্যান্থনি ম্যাসকারানহাস আর ইহ জগতে নাই। তাই এই পত্রিকার আশ্রয় নেওয়া।

উক্ত বইয়ে এক নববধূ অপহরণ এবং খুনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, ঘটনা সত্য, কিন্ত উক্ত ঘটনায় যে ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে উক্ত অপরাধীকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি, বরঞ্চ তার নির্দেশে তাকে ধরা হয়েছিল, আর আমি এক কথাটি জোর দিয়ে বলতে পারি, কারণ আমি উক্ত সেনা কর্মকর্তা নাসিরুদ্দিন।

....................................................................................
এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকার কথা ছিল না, এই বিষয়ে ইতিহাসে কোন ভিন্ন মত থাকার কথা ছিল না, শেখ মজিবুর রহমান নামক ব্যক্তিটি হচ্ছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, তাকে জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হিসেবে মেনে নেই বা না নেই।

তিনি সেক্যুলার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন, কিন্তু সেই রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে নির্বাসিত করেননি। তবুও তাঁকে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে আমাদের যেন খানিকটা কুণ্ঠা, খানিকটা অস্বস্তি রয়ে যাচ্ছে।
কারণ তার শরীরে এই রকম অজস্র মিথ্যাচারের বুলেট বিদ্ধ হয়ে আছে। আর আমরা এর বেশির ভাগ বিশ্বাস করি।

শেখ মুজিবুর রহমান দেবতা ছিলেন না, তিনি দানবও ছিলেন না। তিনি ছিলেন রক্তমাংসের, ভুল ভ্রান্তির মানুষ। তিনি সমালোচনার উর্ধ্বে নন, কিন্তু নিন্দার কালিতে তার সমগ্র সাফল্য ঢেকে যেতে পারে না।

১৯৭৫-এ তার শরীরের মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু তিনি আমাদের কাছে অমর হয়ে থাকবেন আমাদের হাতে স্বাধীনতা মশাল তুলে দেওয়ার জন্য।

পুনশ্চঃ- কিছুদিন আগে আমার এক ছোট ভাই বলে বসলেন “জাতির আব্বা “। আমি তাকে বললাম, আপনার এই কথাটি খুবই আপত্তিকর, বিশেষ করে আপনার মত ব্যক্তির কাছ থেকে এটা আশা করি না। আজ আমরা যে স্বাধীন কণ্ঠে কথা বলছি, অন্তত তার জন্য হলে এই মানুষটির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত।

সে উত্তর করল। ভাই আমি দুঃখিত, আমি এইভাবে বলতে চাইনি, কিন্তু কিছু নেতা এবং কর্মীর কারণে আমার মনে হয় যে, এই দেশটা আসলে আমার না, তাদের। তাই মুখ দিয়ে এই কথা বের হয়ে গেছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দলটির নাম আওয়ামী লীগ, কিন্তু চিন্তায় কি তারা নিজেরা স্বাধীন হয়েছে, আওয়ামী লীগের নিজের কাছে এই প্রশ্নটি খুব জরুরী। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের জন্য এই প্রশ্নটি গুরুত্ব বহন করে।
১৩৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×