আগরে র্পব: Click This Link
আবুল খায়ের
খুব বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অসুস্থ্যতা না থাকলে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ মসজিদে গিয়েই পড়ার চেষ্টা করেন খায়ের সাহেব। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস।
আস সালাতুল খাইরুল মিনাননাউম.. .. .. ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম- মুয়াজ্জিনের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলস্য ঝেড়ে বিছানায় উঠে বসেন। পা বাড়ান মসজিদের দিকে।
কাল রাত থেকেই আকাশে মেঘ, সকালেও এর রেশ রয়ে গেছে।
সদর দরজা খুলে রাস্তায় পা দিতেই একটা দৃশ্য নজর কেড়ে নেয়। বিভৎস এই দৃশ্য থেকে চোখ ফেরানো মুশ্কিল আবার এর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাও সম্ভব নয়। বাড়ির গেটের সামনেই একটি মৃত কুকুর পড়ে আছে। কুকুরটির পেছনের অর্ধেকটা উধাও, মনে হয় কেউ যেন খুবলে খেয়ে নিয়েছে কুকুরের পেছনের দুটো পাসহ অর্ধেকটা। পেটের কাছ থেকে সামনের দুটো পা আর মাথাটা নিয়ে নিথর পড়ে আছে কুকুরটি। নারিভুরি ছড়িয়ে আছে রাস্তায়। পুরো রাস্তা রক্তে মাখামাখি।
দৃশ্যটির মধ্যে এমন এক অমানুষিক ব্যপার রয়েছে যা খায়ের সাহেবের পুরো অস্তিত্বকে কাঁপিয়ে দেয়। ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ বলে রাস্তায় বসে পড়েন তিনি। একটু ধাতস্ত হয়ে টলতে টলতে ঘড়ে ঢুকে ধপ করে সোফায় বসে ঘামতে থাকেন।
ধীরে ধীরে ফর্সা হয়ে আসে চারপাশ। রাস্তায় মানুষের আনাগোনা বাড়ে। শহুরে কোলাহলে থেমে যায় পাখিদের কলরব। তার পরেও স্থাণুর মতো বসে থাকেন আবুল খায়ের। মনের ভেতরটা কু গাইছে।
সারা দিনই শরীরটা ভালো যায় না খায়ের সাহেবের। দুপুর বেলা খেতে বসে একটু ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে পড়েন।
‘আপনি কী কোনো কিছু নিয়া চিন্তা করতেছেন?’
‘না না, এই শরীলটা ঠিক জুত লাগতাছে না।’ স্ত্রীর জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে কেন যেন একটু বিব্রত বোধ করেন তিনি।
তন্ময় কই? খাইবো না?’
‘হে তো দরজা বন্ধ কইরা নিজের রুমে ঘুমাইতাছে। কাইল সারা রাইত ঘুমায়নাই। নিজের ঘরে বইসা কিজানি কি খটর মটর করছে।’
স্ত্রীর এই উত্তর শুনে কেন যেন পুরোনো অস্বস্তিটা আবার ফিরে আসে। গত কয়েক দিনের মধ্যে ছেলের সঙ্গে দেখা হয়েছে কিনা মনে করার চেষ্টা করেন। কি আশ্চর্য, শেষ কবে তন্ময়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে তা কিছুতেই মনে করতে পারেন না আবুল খায়ের।
এ চিন্তা নিয়েই খাবার টেবিল থেকে উঠে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েন তিনি। নিজের অজান্তেই এক সময় ঘুমে ঢলে পড়েন; যদিও দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস তার কোনো কালেই ছিলো না। ঘুম ভাঙ্গে মাগরেবের ওয়াক্তে।
দীর্ঘ দিন পর আসরের নামাজ কাজা হয়ে যায়। (ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৪