বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত রোববার। এই মোনাজাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমা মাঠ অভিমুখে মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে।
বেলা সোয়া ১২টার পর বিশ্ব শান্তি কামনায় এই মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে তিন দিনের ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবার আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লির মাওলানা মো. জোবায়রুল হাসান। এরআগে হেদায়তি বয়ান করবেন তাবলীগের মুরুব্বিরা।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষ্যে শনিবার থেকেই মুসল্লিরা আসতে শুরু করে। রোববার সকালে মুসল্লিদের এই আগমন রীতিমতো জনস্রোতে পরিণত হয়েছে। মুসল্লিদের আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে তুরাগ তীর এখন মুথরিত। টঙ্গী থেকে মহাখালী এই সড়কে যানবাহন এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজধানীর অন্যান্য রাস্তার অবস্থাও একই। রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকে ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদেসহ যে যেভাবে পারছেন তুরাগ অভিমুখে আসছেন।
আখেরি মোনাজাত ঘিরে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা পায়ে হেঁটে ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করেছেন।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ইজতেমা মাঠ পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলিতে অবস্থান নিচ্ছেন মুসল্লিরা।
ইজতেমাস্থলে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ও যথাসময়ে পৌঁছাতে না পেরে হাজার হাজার মানুষ খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া আশপাশের ভবনের ছাদেও অবস্থান নিচ্ছেন অনেকে।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রোববার এ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে এবারো তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিরা রেডিও-টিভিতে আখেরি মোনাজাত সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেননি। ক্যামেরায় মুরুব্বিদের ছবি তোলাও বারণ করে দিয়েছে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ।
এবারো ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রোববার প্রথম পর্ব শেষ হয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৮ জানুয়ারি এবং একইভাবে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে তা শেষ হবে ২০ জানুয়ারি।
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতি বছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে। ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশ নেন।
তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে এখান থেকেই দ্বীনের দাওয়াতি কাজে বেরিয়ে যান। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের তাবলিগ অনুসারীরা মিলিত হন এ ইজতেমায়।
আরো ৫ মুসল্লির মৃত্যু
ইজতেমা ময়দানে শনিবার রাতে আরো ৫ মুসল্লি মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হলো। শনিবার রাতে যাদের মৃত্যু হয়- ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার মৈন্দা গ্রামের আলাউদ্দিন শেখ (৫০), যশোরের মনিরামপুর থানার তেতুলিয়া এলাকার সৈয়দ আলী খান (৭০), হবিগঞ্জের লাখাইল থানার সিংহগ্রামের মো. ইব্রাহীম (৫০), চাঁদপুরের উত্তর দাজদি এলাকার আবুল খায়ের (৫৫) ও ভারতের কলকাতার চব্বিশ পরগনার মো. রফিক উদ্দিন (৬৩)।
মাসলেহাল জামাতের জিম্মাদার মো. আদম আলী রোববার ফজরের নামাজের পর এই পাঁচজনের জানাজা হয়।