প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেছেন, আমাদের দুই নেত্রী স্বৈরাচারের চেয়েও বেশি। তাদের আচরণ 'মোরদ্যান ডিক্টেটরশিপ'। দলীয় প্রধানদের এমন আচরণের বিরুদ্ধে দলের ভিতর কেউ প্রতিবাদও করতে পারবে না। যিনি করবেন, তার সদস্যপদ থাকবে না। এমনকি দল থেকেও বহিষ্কার করে দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মানবাধিকার সংগঠন মুক্তচিন্তা ফোরাম এই বক্তৃতার আয়োজন করে। সংগঠনটির প্রধান আমীরুল মোমেনিন মানিক এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্ট্রার হক বলেন, দেশের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে দুই নেত্রীর এক জায়গায় বসা দরকার। কিন্তু তাদেরকে এক জায়গায় বসানোর মতো শক্তি ও সামর্থ্য আমার নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতিতে মাইনাস টু নয়, বরং আরেকজন প¬াস হয়ে এটি টু'র জায়গায় থ্রি হতে পারে। এ বিষয়ে পরে ইত্তেফাককে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, রাজনীতিতে মাইনাস টু নয় বরং প্লাস ফোর হতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি সাবেক এই এটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, দুই দলের মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার।
ব্যারিস্টার রফিক বলেন, বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে আরো অনেক দ্রুত উন্নতি হতো। এখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কারণ, এটি বর্তমান সরকারের শেষ বছর। এ অবস্থায় দুই পার্টি একে অপরের প্রতি শ্র্রদ্ধাশীল না হয়ে এগ্রেসিভ কথা বলছে। আসলে একে অপরের প্রতি সহনশীল হওয়া উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশে আর ওয়ান ইলেভেন আসবে না। প্রধানমন্ত্রী বললেও আসবে না। দুই নেত্রী বসে আলোচনা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক। দুই নেত্রী না বসলেও তাদের পরবর্তী নেতারা বসে নির্বাচন কাঠামো তৈরি করতে পারেন, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। ওয়ান ইলেভেনের সরকার সম্পর্কে দুই নেত্রীসহ আমাদের সকলেরই ধারণা ও অভিজ্ঞতা আছে। আমরা আর পচা শামুকে পা কাটতে চাই না। এটি আমাদের ক্ষতি করেছে।
রফিক-উল হক বলেন, নির্বাচনের আগে সরকারের সর্বক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে দেওয়া যেতে পারে। যদিও এটি বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। এই সমস্যা ঠিক করতে হলে দুই নেত্রীকে বসা দরকার। সাংবাদিকদেরও এ নিয়ে চেষ্টা করা দরকার। যে কোনো টেলিভিশন চ্যানেল একবার চেষ্টা করে দেখতে পারে। কারণ নির্বাচনের আর মাত্র ১০ মাস বাকি আছে। দুই নেত্রী যদি টেলিভিশনে বিতর্কে অংশ নেন, তাহলে সমস্যার একটা সমাধান বের হয়ে আসতে পারে। দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসাতে তিনি কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, দুই পার্টিকে এক সঙ্গে বসানোর শক্তি ও সামর্থ্য আমার এখন নেই। অনেক বয়স হয়েছে।
আগামীতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই পক্ষ থেকে পাঁচজন পাঁচজন করে মোট ১০ জনকে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হতে পারে। এ ধরনের একটি সরকারের চিন্তা করা যেতে পারে। তাছাড়া বড় তিন দলের প্রতিনিধি নিয়েও একটি অন্তর্বর্তী সরকার হতে পারে। নির্বাচিত ব্যক্তিকে দিয়েও অন্তর্বর্তী সরকার করা যেতে পারে। বড় দলগুলো থেকে দুইজন দুইজন করে মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে। যদি এটাও না হয়, তাহলে রাজনীতি করেন না - এমন কাউকে দিয়ে সরকার গঠন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক মানেই ওয়ান ইলেভেন হবে এটি ঠিক নয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যদি ফখরুদ্দীন, মইন উ আহমেদরা ভালো কাজ করতেন তাহলে তারা দেশ ছেড়ে পালাতেন না। যদি দেশ ছেড়ে পালাতেই হয় তাহলে তা ভালো কাজের নমুনা নয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রফিক-উল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক মানেই আবার ওয়ান ইলেভেন। তার এই আশঙ্কা ঠিক নয়। আমি মনে করি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।
ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী রফিক-উল হক বলেন, তারা দু'জনই দেশের ভালো চান। দেশের ভালোর জন্যই তারা রাজনীতি করেন। যেহেতু তারা দেশের ভালো চান সেজন্য তাদের বসতে হবে। নির্বাচনে বাকি আর ১০ মাস।
কারাগারে আটক বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন না-মঞ্জুর হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা খুবই দু:খজনক যে, সরকার গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ফখরুলকে জেলে পুরলো। সে চোর না, বাটপার না, তার মতো লোককে পিওরলি পলিটিক্যাল কারণে জামিন মঞ্জুর করছে না। বিচার ব্যবস্থা নাকি স্বাধীন। আমাদের বিচার ব্যবস্থা তো স্বাধীন নয়। যদি স্বাধীনই হয়ে থাকে তাহলে নিম্ন আদালত কিভাবে তার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ?
হরতালের সময় রাজধানীতে ছাত্রলীগ কর্মীদের চাপাতির কোপে নিহত বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চ আদালত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করতে বলেছে। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৫ জনকে। এ বিষয়ে পুলিশ যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, এই হত্যার সঙ্গে এরা জড়িত নয়। আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়। আমরা কোনটা বিশ্বাস করবো।
শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশি নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন না দিয়ে তাদের ওপর গ্যাস স্প্রে করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এভাবে বই দেয়া হয় না। তবে স্বাস্থ্যখাতে তেমন উন্নতি হয়নি।