সাদা বাঘ ও উল্লুক বাংলাদেশের বিরল প্রজাতির প্রাণী। বাংলাদেশের কোন বনে উল্লুক না থাকলেও এ প্রাণীর শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে রয়েছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক। দেশের অন্য কোন স্থানে বা চিড়িয়াখানায় এ প্রজাতির সাদা বাঘ আছে কি না জানা নেই। তবে শ্রীমঙ্গল শহরের প্রাণী ও পরিবেশবিদ সিতেশ দেবের বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে রয়েছে এ বিরল প্রজাতির সাদা বাঘটি।
উল্লুুক বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। বাংলাদেশে প্রাণীটি এখনও টিকে আছে তবে তাদের সংখ্যা অল্প। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ প্রজাতিটি আর বেশিদিন টিকতে পারবে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বন-জঙ্গল উজাড় এবং বনাঞ্চলে ফলজগাছের দুষ্প্রাপ্যতা। উপজাতিদের খাবার হিসেবে গ্রহণের কারণে প্রজাতিটির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে এ প্রাণীর সংখ্যা ২০০-এর কম বলে জানা গেছে। দেশের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুুকের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে রয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক।
আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা এ প্রাণীটিকে প্রায় বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দ্রুত এদের সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে খুব তাড়াতাড়ি এরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সম্প্রতিককালে উল্লুুক নিয়ে দেশে গবেষণা চলছে। শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষক ও ছাত্ররা উল্লুক সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রচারণামূলক সমাবেশ করেন। এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল_ 'উল্লুক সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন'। এখানে কয়েকটি বিলবোর্ডও স্থাপন করা হয়। শ্রীমঙ্গলস্থ নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানান, গত মে মাসে ইংল্যান্ডে অধ্যয়নরত ফিনল্যান্ডের ছাত্রী পেট্টা শ্রীমঙ্গলে এসে লাউয়াছড়ায় উল্লুকের ওপর গবেষণা করেন। তার গবেষণায় দেখা গেছে, লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে ১৪টি উল্লুুক পরিবার বা গ্রুপ বসবাস করছে। এদের প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২ থেকে ৫ এবং লাউয়াছড়ার এখন মোট উল্লুুকের সংখ্যা ৫১।
বাংলাদেশে উল্লুক বিষয়ক গবেষণা অত্যন্ত সীমিত। এ ধরনের গবেষণা ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হলে এবং লাউয়াছড়ার বর্তমানে বসবাসরত উল্লুকগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে এখানে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুুক বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে বলে গবেষকরা মনে করেন। গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের অন্যান্য বনাঞ্চলের চেয়ে উল্লুক বসবাসের জন্য এখনও লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক অনেক বেশি উপযোগী। উল্লুুকরা পরিবার কেন্দ্রীক হয়ে বসবাস করে এবং প্রতিটি পরিবার বা গ্রুপ একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে অবস্থান করে। একেকটি দলে ২ থেকে ৫টি সদস্য থাকে। সাধারণত সকালের দিকে 'হু-হা' শব্দ করে দলগত অবস্থান ঘোষণা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের খাদ্য তালিকায় ৫১ শতাংশ পাকা ফল, ৩৮ শতাংশ ডুমুর, ৫ শতাংশ ফুল এবং ৬ শতাংশ পাতাকুঁড়ি রয়েছে।
উল্লুকের আবাসস্থল ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গাছ কাটা পড়লে এদের টিকে থাকা সম্ভব নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক উল্লুুকের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই এ বনের পরিবেশ রক্ষা করা জরুরি। লাউয়াছড়ায় স্থাপিত একটি বিলবোর্ডে লেখা আছে_ 'উল্লুুক পরিবেশের অতি প্রয়োজনীয় প্রাণীদের একটি। মনে রাখবেন মানুষ হিসেবে আপনার যদি পৃথিবীতে টিকে থাকার অধিকার থাকে তাহলে এদেরও সমান অধিকার রয়েছে। এদের সংরক্ষণে আপনার সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
সাদা বাঘ বিরল প্রজাতির বাঘ। দেশের অন্য কোন স্থানে বা চিড়িয়াখানায় এ প্রজাতির সাদা বাঘ আছে কি না জানা নেই। তবে শ্রীমঙ্গল শহরের রুপসপুরে প্রাণী ও পরিবেশবিদ সিতেশ দেবের সেবা ফাউন্ডেশনে বিরল এ সাদা বাঘটি আপনি দেখতে পাবেন। আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে ৬ মাস বয়সী এ সাদা বাঘটি শ্রীমঙ্গলের হাইল-হাওরে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। সিতেশ দেব খবর পেয়ে সাদা বাঘটি সংগ্রহ করে তার বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে নিয়ে আসেন। বর্তমানে সাদা বাঘটি লম্বায় ৬ ফুট, উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট এবং ওজন ৪৫ কেজি। অত্যন্ত হিংস্র এ সাদা বাঘটি মাংস ছাড়া অন্য কোন খাবার গ্রহণ করে না। প্রতিদিন বাঘটি দেড় কেজি মুরগির মাংস খেয়ে থাকে। এ বাঘের সবচেয়ে আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে_ প্রতি মুহূর্তে এর চোখের রঙ বদলায়। কিছুক্ষণ পর পর এর চোখ লাল, হলুদ, সাদা ও কমলা রঙ ধারণ করে। সাদা বাঘটি দেখতে এখানে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় জমে। ড. মো. আলী রেজা খানের 'বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী' ও 'দ্য বুক অফ ইন্ডিয়ান এনিমেল'সহ বেশকিছু প্রাণী বিষয়ক বই খোজাখুঁজি করে সাদা বাঘ সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।