সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি :
আমি নিজেকে পজিটিভি মানুষ হিসেবেই মনে করি। অর্ধেক গ্লাসের ভরা পানিটুকুই দেখার চেস্টা করি। খালি অংশটুকুতে চোখ বুঝে ভাবি ওইটাও ভরা। তারপরও মাঝে মাঝে অনিচ্ছাসত্বেও চোখ মেলে ওই খালি অংশটুকু দেখতে হয়। যাহোক আমার এবারের বিষয় ওই খালি অংশটুকু। ................. আচ্ছা কথার মারপ্যাচ বন্ধ করলাম, আসল কথা আমার এবারের বিষয় বিদেশে দেশীয় কিছু বদগুন।
এখন কথা হলো কেন লিখতে বসলাম!!!!!!.... সোজা হিসেব, সবসময় দেশীয় পজিটিভ কথা বলি কিন্তু আলোর নীচের ওই অন্ধকার অংশটুকু যদি না বলি তাহলে হয়তো মনে একটু ধাক্কা লাগতে পারে। বিদেশে যেয়েও যে দেশী বদগুনগুলা সযত্নে লালন করছি তাই সেগুলা জানান দিতে চাইলাম। আর যেহেতু আমি প্রবাস জীবন নিয়ে লিখছি তাই মনে করি এর সবদিকই তুলে ধরা উচিত।
-
-
-
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই প্রথম আমি আমার কোন লিখার মন্তব্যে সেন্সর বসিয়েছি। দুটি কারনে,
১) আমি অনেক নেগেটিভ কথা বলবো যার পিছনে অবশ্যই যুক্তি আছে এবং এর বিপরীতে আপনার মত থাকবে, যুক্তি থাকবে... সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি আপনার সেসব যুক্তি খন্ডন ও করতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো আমার হাতে অঢেল সময় নেই। কোন রকমে ব্লগে উকিঁ দেই। তাই আপনার সেসব যুক্তি খন্ডন করার মতো আমার হাতে যথেস্ট সময় নেই বিধায় এই স্বৈরাচারিতা

২) আম জাম কলা বাগান আর স্পার্টাকাস ট্রাম্পাকাস নামের বিশিষ্ট জনরা আজাইরা প্যাচাল লাগাইয়া আমার মহামূল্যবান সময়ের বারোটা বাজায় । তাই তাহাদের থেইকা যতই দূরে থাকা যাইবে ততই আমার মঙ্গল


.............. শুরু করলাম তাইলে, কি বলেন

দলাদলি : ছোট্ট একটা কমিউনিটি আমাদের। ভারত বা চায়না বা কোরিয়ানদের তুলনায় আমরা বলতে গেলে সবচেয়ে সংখ্যালগিষ্ঠ কমিউনিটি। অথচ অামাদের এ ছোট্ট কমিউনিটিতে কম করে কয়েকশ দল আছে। আওয়ামী, বিএনপি, খুলনা উত্তর, খুলনা দক্ষিন, খুলনা আওয়ামী, খুলনা বিএনপি, খুলনা ডিইউ, খুলনা সিইউ, খুলনা বুয়েটিক, খুলনা ধলা, খুলনা কালা............ শত শত দল। সবাই নেতা হতে চায়। এই নেতা হওয়ার জন্য দলাদলি, গুতোগুতির কোন শেষ নেই। এবং এই বলির পাঠা এখানে যারা নতুন আসে তারা। আর এ দলাদলি চরমে উঠে যখন কোন দেশীয় বিশিষ্ট নেতারা বিদেশে আসেন। সবাই তাকে একান্ত আপন করে রাখতে চান। তাই অন্য কোন দলকে কাছে ঘেষতে দেন না। এবং এটি হাস্যকর অবস্থায় পড়ে কারন আমরা তখন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় নেমে পরি। একদল পক্ষে থাকে অন্যদল বিপক্ষে থাকে। লোকাল পত্র পত্রিকায় নেতাজ্বির ফুলের মালা আর বাঁশের নিউজে আমাদের জীবন ত্রাহি ত্রাহি। এবার বুঝেন ঠেলা, বিদেশী যারা আমাদেরকে চিনে না বা জানে না তারা কিভাবে আমাদের এ দলাদলিকে মূল্যায়ন করবে? আমাদেরকে মূল্যায়ন করবে?? আমাদেরকে দেশকে মূল্যায়ন করবে???
এবার একটু তাকান নিজেদের সাবকন্টিনেন্ট অন্যান্য দেশের দিকে... সাদা চামড়া বাদ দেন!! যতই তারা দলাদলি লাঠালাঠি করুক নিজেদের মধ্যে কিন্তু দেশের প্রশ্নে সবাই এক হয়ে যায়। কেউই বলতে পারবে না ওদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে তাকে বিপক্ষে স্লোগান দিয়েছে বা নেগেটিভলি তাকে উপস্থাপন করেছে??? না করেনি, আমি অন্তত এ পর্যন্ত দেখিনি।
কাক ও ময়ুরের পুচ্ছ: ব্যাক্তিগত ঘটনা শেয়ার করি। কানাডায় তখন নতুন। কাজেই পরিচিত কাউকে খুঁজে বের করে কথা বলি। সেরকমই একজন এর ফোন নাম্বার পাওয়ার পর কল দিলাম। এবং উনি ফোন পেয়েই খুব দেখা করার জন্য আগ্রহী হলেন। খুব খুশি হয়ে আধা ঘন্টার মধ্যে উনার জন্য রকমারী নাস্তা তৈরী করলাম। যথারীতি উনার বউসহ বাসায় এসেই ঠিক মতো বসলেন না, নাস্তা খাওয়া তো দূরে থাক। যতক্ষন ছিলেন উনি এবং উনার ইন্টার পাশ বউ আমাদেরকে কিভাবে কানাডিয়ান হওয়া যায় তার উপদেশ দিতে থাকলেন........।
বলুন ক্যানাডা, নট কানাডা

এভাবে নাস্তা বানিয়ে বসে থাকে শুধু বাঙ্গালীরাই ক্যানাডিয়ানরা নয়

আমার গাড়িটা দেখেছেন এবার লেটেস্ট মডেলটাই কিনলাম.... তিন নাম্বার গাড়িতো.

একবার উনার বাসায় গিয়েছিলাম ল্যাপটপে উইন্ডজ লোড করতে। কারন দেশের আনা সিডিগুলো কাজ করছিল না। বাসায় এক কাপ চাতো দূরে থাক ঠিকমতো বসতেও বললেন না আর বার বার বলতে লাগলেন অরিজিনাল উইন্ডজ ভার্সন কিনতে হলে আমাকে কতো ডলার পে করতে হতো....। আমার তখন ছাইরা দে মা কান্দা অবস্থা। ক্যানাডিয়ানর কালচার বলে কথা!!!!! কাজটা করে আসার সময় উনি দয়া করে উনার গাড়িতে লিফ্ট দিলেন। আমার ছেলেটা একটু সিক ছিল বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে ঠিকভাবে গাড়ির দরজা বন্ধ করেনি বলে তিনি আমাকে উপদেশ দিলেন, ছেলেকে ম্যানারর্স শেখাবেন নতুবা ক্যানাডায় চলতে পারবে না। তখন উনাকে বাংলাদেশী ভদ্রতায় কিছু বলতে পারি নাই যে, ভাইজান দেশে আমার ছেলের গাড়ির দরজা বন্ধ করতে হয় নাই। কারন ওর জন্য রাখা এ্যাসিসটেন্ট আর ড্রাইভারই দরজা খুলে দিতো ও বন্ধ করে দিত। শুধু ম্যানারর্স নয় এখানে আমার ছেলে স্কুলের টিচার্স এ্যাপ্রিসিয়েশান এওয়ার্ড পেয়েছে। পুরো স্কুলের বেস্ট একজনকেই বেছে নেয় টিচাররা, আমার ছেলেই সেই সিলেকটেড ওয়ান....। আমি জানি এটি কেন তারা করে... কারন দেশে তারা দেশে ছিল নুন আনতে পানতা ফুরানো অবস্থা!! লেক্সাস গাড়ি স্বপ্নেও তারা দেখতো না। কানাডায় এসে গাড়ি বাড়ি করে নিজেকে বিশাল কিছু ভাবতে শুরু করেছে। তাই সবার দেশের অবস্থান নিজের মতই ভাবে। আর এ সব নব্য প্রবাসী ধনীরা সবসময়ই তার সম্পদ দেখাতে চায় আর বোঝাতে চায় তারা কত ধনী এখানে। তবে এটা খুব হাস্যকর কারন যে এখানে যে কেউই বাড়ি বা গাড়ি কিনতে পারে মূহুর্তে শুধুমাত্র দরকার মাসিক মোটামুটি একটা আয়। এখনকার সবকিছুই মর্টগেজ এর মাধ্যমে কেনা।
আবার কিছু দেশী ভাই বোনরা আছেন যারা এখানে এসে স্লিভলেস গেন্জি আর হাফপেন্ট পড়ে আধা খেঁচড়া ইংরেজীতে কথা বলে ভাবেন তারাতো পাক্কা কানাডয়িান....





গাইডেন্স : কানাডায় আর যাই হোক দেশীয় কেউই আপনাকে সঠিক গাইডেন্স দিবে না। বা বলা যায় গাইডেন্স দেবার রিস্ক কেউ নেয় না। কারন অবশ্য সোজা, এখানে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে যে পরিমান কষ্ট করতে হয় তার ধৈর্য্য অনেকেরই থাকে না। মাঝ পথে সে ব্যার্থতার দায়ভার কেউই নিতে চায় না। এবার আসেন অন্যান্য দেশের কথা, বিশেষ করে ইন্ডিয়া বা চায়না। বিশাল কমিউনিটি ওদের। নতুনদের জন্য থাকা খাওয়া জব গাইডেন্স.... এমন কিছু নেই যে ওরা ব্যবস্থা করে না। বিশেষ করে পান্জাবীরা। ওদের কমিউনিটিতে বিশাল ফান্ড থাকে নতুনদের হেল্প করার জন্য। পুরান প্রত্যেকই চাঁদা দেয়। আবার নতুনরা যখন পুরোন হবে তখন তারাও শুরু করবে চাঁদা দেয়া। এমন ও দেখেছি ইন্ডিয়ান ছেলেপেলে ওয়ান ওয়ের টিকেট, এক সিমেস্টারের ফি জমা দিয়ে আর পরিচিত কারো ফোন নাম্বার জোগাড় করে ভগবানের নাম নিয়ে কানাডায় চলে আসে। এক বেলা খাবারের টাকা পকেটে নিয়ে ঠিকই সার্ভাইব করে যায়। কারন খুব সোজা। ওদের কমিউনিটি ওদেরকে পথহারা হতে দেয় না। আর আমরা!!!!!!!!!! বছরে একটা ঈদ তাও আমরা একেক দল একেকদিন পালন করি। কেউ সৈাদী মানে, কেউ কানাডা মানে, কেউ বাংলাদেশ মানে........... হাহাহা সে এক আজিব অবস্থা। অথচ ভারতীয়রা বিশাল করে পূজো পালন করে যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হাজির হয়ে নাচানাচি করে। কোন দলাদলি নেই, গ্রপিং নেই.......।
আরো আছে, একজন যদি কোনক্রমে একটা অফিসে ঢুকতে পারে তাহলে তাদের চৈাদ্দ গোষ্ঠি ওখানে ঢুকে পরে। আর আমরা কোনভাবে উপরে উঠতে পারলে নীচের দিকে তাকাতে ভুলে যাই। এমন কি একই অফিসে দেশি ভাই বোন থাকলে পরিচয় দিতে ও লজ্জা পায়।




কিপ্টামী ম্যানার্স: আবারো পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করি। একটা ট্রেনিং করছিলাম। আমরা ছয়জন বাঙ্গালী সহ ক্লাসে প্রায় ৩২ জন বিভিন্ন দেশের। ক্লাস শেষে টিচার নিজ হাতে বানানো কেক সহ বিভিন্ন স্ন্যাক্স এর আয়োজন করলো। অবশ্যই প্রতিটি আইটেমই লিমিটেড ছিল সবার জন্য। দেখা গেল সব দেশের আপু ভাইরা একপিস করে নিলেও আমার দেশী দুইজন আপু ২/৩ পিস করে খেয়েও টিস্যু দিয়ে আরো কিছু ব্যাগে ভরছে






বাঙ্গালী চরিত : আপনি বাড়ি কিনবেন, বা গাড়ি কিনবেন, বা ছোট্ট একটা টিভি কিনবেন অথবা ব্যাংকে কোন কাজে যাবেন....। ইংরেজী কম জানেন বা বুঝেন বলে কিংবা দেশীয় ভালোবাসায় সাধারনত বাঙ্গালী কাউকেই খুজেঁ বের করলেন। দেশী ভাই হিসেবে আপনি ভাবলেন সেই সবচেয়ে ভালো করবে আপনার কিন্তু দেখা গেল বাঁশটা সেই আপনেরেই দিচ্ছে পথ্থমে। তার লাভ/প্রমোশন/কমিশন এর প্রাকটিসটা আপনার উপ্রেই করবে......। আপনার টাকায় আপনাকে কলা মূলা বুঝায়ে ছাড়বে.....




আরো কিছু আছে ....... যেমন বাংলা দোকানগুলো...... । কানাডায় কাস্টমার গ্রিটিংস মারাত্বক সেনসিটিভ। সবাই হেসে কথা বলে। কিন্তু বাংলা দোকানগুলোতে ঢুকলে আর কাস্টমার সার্ভিসের আপুদের বিহেব দেখলে মনে হয় ছুইটা পালাই। মনে করে আমরা দোকানে কিনতে আসি নাই ভিক্ষা করতে আসছি। কিন্তু মজার ব্যাপার হইলো যখনই সাদা চামড়ার কোন কাস্টমার দেখে অমনি আপুগুলা গলে গলে পরে যায়, তাদের বিহেব পাল্টে যায় মূহুর্তে। যেন তাহাদের জীবন ধন্য করছে এরা.........
-
-
-
-
আচ্ছা শুধু নেগেটিভ কথা বল্লাম এতক্ষন... এবার একটু পজিটিভ বলি। আমি যাদের কথা বলেছি তারা সংখ্যায় নগণ্য। ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশী। শুধু সমস্যা এক বালতি দুধে এক ফোটা চনাই দুধকে নস্ট করতে যথেস্ট। তাই ভালো কিছুর উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায় ওই এক ফোটার জন্য। প্লিজ দেশী ভাই আপুরা, আসুন না অন্তত বিদেশে এসে দেশকে পজিটিভলি রিপ্রেজেন্ট করি। নিজেদের মধ্যে মারামারি বন্ধ করি। দেশের প্রশ্নে সবাই এক হই। একটু কম্প্রোমাইজ, ভিন্ন মতকে একটু রেসপেক্ট, পাবলিকলি অন্যকে অপমানের চেস্টা না করা......... সেটা কি খুব বেশী কিছু!!!!!!!!
আজ এটুকুই ... আরো কিছু চরিত্র নিয়ে আসবো ভবিষ্যতে

সক্কলে ভালো থাইকেন.............
বাকি পর্ব যদি পড়তে চান.........
আমার নিকটতম প্রবাসী প্রতিবেশীরা
জীবন যেখানে যেমন: আমার প্রবাসী বান্ধবীরা
জীবন যেখান যেমন, প্রবাস জীবনের ডায়রী.............. আমার ইহুদি সহকর্মী, দি লাঞ্চিয়ন লেডি
জীবন যেখানে যেমন ......... বিদেশী বিড়ম্বনা-২ ...... মাইনাস ৪০



জীবন যেখানে যেমন, আমার প্রবাস জীবনের ডায়রী,............ বিদেশী বিড়ম্বনা !!!
জীবন যেখানে যেমন...................আমার প্রবাসী ঈদ

জীবন যেখানে যেমন......আসেন এই গরমে একটু নায়াগ্রা ঘুরে আসি.....
জীবন এখানে যেমন ............. আমার প্রবাস জীবনের ডায়রী...ছাড় ছাড় ছাড়


জীবন এখানে যেমন ......... আমার প্রবাসী জীবনের ডায়রী
আসেন টরেন্টো বিখ্যাত সান্টা ক্লজ প্যারেড দেখি