ছবি - biographybd.com
১০ ই আগস্ট ২০২৪
১। মধুর বচন -'' শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন নি,তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি কোনও অন্যায় করেননি'' - যুবরাজ সজীব ওয়াজেদ জয়। লিংক - https://dailyinqilab.com/national/news/677288
গতকাল ১০ ই আগস্ট রয়টার্সকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে যুবরাজ সজীব ওয়াজেদ দাবি করেছেন, বাংলাদেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা কোন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেননি,তাই তিনিই এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী । - ক্ষমতাহারা হওয়ার পর পাগল পাগল লাগে -- ,মেয়াদোত্তীর্ণ গাঁজার (ক্ষমতার) পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
এ দাবীর মাধ্যমে তিনি শেখ হাসিনাকে শুধু বৈধ প্রধানমন্ত্রীই দাবী করেন নি, সাথে সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রশ্নে তিনি উচচ আদালতে আইনি লড়াইয়ের ইংগিত দিয়েছিলেন বলেই মনে করা হয়।অনেকেই মনে করেন, তার এ ইংগিতের পরপরই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ফুল কোর্ট সভা ডাকেন, যেখানে হয়ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষনা করা হতো এবং শেখ হাসিনাকেই এখনো বাংলাদেশের বৈধ শাসক বলে রায় দেয়া হতো। যা পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরর পদক্ষেপের ফলে রহিত হয় এবং প্রধান বিচারপতি সহ সুপ্রীম কোর্টের সব বিচারপতি পদত্যাগে বাধ্য হয়।
১১ ই আগস্ট ২০২৪
যুবরাজের আমমা মহামহিম হাসিনা ছেলের কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আজ ১১ ই আগস্ট বলেছেন,''আমি পদত্যাগ করেছি''।
লিংক - Click This Link
৯ আগস্ট ২০২৪
২। মধুর বচন - ৯০ দিনের মধ্যে তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের ঘোষণা দিলে দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা - যুবরাজ সজীব ওয়াজেদ জয়। লিংক - Click This Link
৩। মধুর বচন - আমি রাজনীতিতে যোগ দিতে প্রস্তুত - যুবরাজ সজীব ওয়াজেদ জয়।
৮ আগস্ট ২০২৪
৪। মধুর বচন - আমাদের কেউ ভাবেনি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার উৎখাতে গড়াবে - পীরানে পীর সজীব ওয়াজেদ।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ছেলে ও সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, কোটা আন্দোলন যে সরকার উৎখাতের দিকে গড়াবে, সেটি তারা কেউ ধারণাই করতে পারেননি।লিংক - Click This Link
৭ আগস্ট ২০২৪
৫। মধুর বচন - শেখ হাসিনা কোনও দেশের কাছে এখনও আশ্রয় চাননি। আপাতত তিনি দিল্লিতেই থাকবেন কিছুদিন - পীরানে পীর সজীব ওয়াজেদ। ( সত্যি ইত্যবসরে পুরো দুনিয়া থেকে প্রত্যাখানের যে খবর পাওয়া যাচছে তা সবই মিছা, শুধু পীরজাদা যা বলছেন তাই সাচচা)।
৬। মধুর বচন - শেখ হাসিনা মরে যাননি, আমরা কোথাও যাইনি - সত্যবাদী জয় (আসলেই উনারা দেশ ছেড়ে কোথাও যায়নি, উনাদের প্রেতাত্মারাই গিয়েছেন )
৭ । মধুর বচন - "আমাদের সব সাংসদ-মন্ত্রীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমি ভারত সরকারের সহায়তা চাইব"। - - পীরানে পীর সজীব ওয়াজেদ। ( ভয়াবহ ব্যাপার।সরাসরি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্থক্ষেপ করার জন্য দাদাদের আমন্ত্রণ ,ক্ষমতাহারা হয়ে পাগল হয়ে গেছে,দু দিনেই) লিংক - Click This Link
৬ আগস্ট ২০২৪
৮।মধুর বচন - '' বাংলাদেশের রাজনীতিতে উনি (শেখ হাসিনা) আর ফিরবেন না,তিনি হতাশ'' । - পীরানে পীর সজীব ওয়াজেদ।
৯। মধুর বচন - My mother will not return to politics - Sajeeb Wazed Joy - লিংক - Click This Link
পাঁচই আগস্ট পদত্যাগ করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাবার পর থেকেই শেখ হাসিনা কোথায় ‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’ বা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন সে বিষয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়।এদিকে সেদিনই ভারতের প্রশাসকরা জানিয়েছিলেন সামান্য সময়ের জন্য তিনি ভারতে থাকবেন। তারপর তিনি উড়াল দেবেন বৃটেন তথা ইংল্যান্ডের লক্ষ্যে। একদিকে ইংল্যান্ড তাহাকে আশ্রয় দিতে রাজী হয়নি এবং অন্যদিকে পূর্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমেরিকার ভিসাও আমেরিকা দ্রুতগতিতে বাতিল করার কারনে তাদের পদাংক অনুসরন করার কারনে পুরো ইউরোপ-কানাডা কিংবা পুরো উন্নত বিশ্বেই মহামহিমের যাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।এদিকে দাদারা তাদের দেশে দীর্ঘমেয়াদে দিদিকে না চাওয়ার কারনে তারপর শুনা যায় সৌদি আরব কিংবা বেলারুশের কথা। তবে সৌদি আরব পীরজাদিকে জায়গা দিবেনা এটা মনে হয় নিশ্চিত হয়েই পীরজাদা জয় বলেন যে," তাহার মাতা শেখ হাসিনা কোনও দেশের কাছে এখনও আশ্রয় চাননি। আপাতত তিনি দিল্লিতেই থাকবেন কিছুদিন"।
- "ক্ষমতার মধু না থাকলে,সবাই পর হয়ে যায় "।
মিথ্যা,মিথ্যা আর মিথ্যা। আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার বিগত শাসনামল শুধু মিথ্যার বেসাতি।
শেখ হাসিনার গত প্রায় ১৬ বছরের শাসনকালে মুজিব বন্দনা, তার পরিবারের প্রশংসা ও আত্মঅহমিকার প্রচারণা বাদ দিলে আওয়ামী সরকারের বাকী যা থাকে তা হলো প্রতিনিয়ত সরকারের মিথ্যাচার,অর্থ পাচার,সীমাহীন দূর্নীতি, ইতিহাস বিকৃতি, অদক্ষতা, সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করন-ধবংস সহ বিচার বিভাগকেও দলীয়করন,পরমত অসহিষ্ণুতা তথা অসংবেদনশীলতা ও অক্ষমতা। তাদের প্রতিনিয়ত বলা সীমাহীন মিথ্যা শুধু যে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-উন্নয়ন সহ যে কোন ব্যাপারে দেশের মাঝেই সীমিত ছিলনা বরং দেশের বাইরের যে কোন ঘটনাকেও অবললিলায় মিথ্যাকে সত্যের সাথে প্রলেপ মিশিয়ে যেভাবে উপস্থাপন করত তাতে মানুষ কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যেত। যদিও প্রতিনিয়ত তাদের বলা এ মিথ্যা জনগনের নিকট দৃষ্ঠিকটুভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। তারপরও সব কিছু জেনে-বুঝেও আমজনতা ঠুটোজগন্নাথ হয়েছিল শুধু হয়রানী ও প্রতিহিসংসার ভয়ে। কারন, দেশের কথায় আছে, "বাঘে ছুলে ১৮ ঘা ,আর হাসিনা ছুলে হিসাব ছাড়া ঘা" - তথা গুম-হামলা-মামলায় জীবন-পরিবার সংসার বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়া। তাদের অপশাসন এমন এক জায়গায় পৌছেছিল যে, মানুষের মোটামুটি স্বীকৃত সবগুলি মানবাধিকার উধাও হয়ে গিয়েছিল সমাজ থেকে । এমনকি মরার পরে যে জানাযার নামাজ তথা মৃতের মাগফেরাতের জন্য যে প্রসেস তারও অধিকার বঞ্চিত ছিল মানুষ। আর এসবের সমষ্ঠিই তথাকথিত আওয়ামী উন্নয়ন।
তাদের সে মিথ্যা ও ঘৃণ্য কার্যকলাপের কারনেই আওয়ামীলীগ একটি গালি হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। মানুষের মনে আজ তাদের প্রতি সীমাহীন ঘৃণা। তাইতো অক্ষম মানুষ আজ কাউকে খারাপ কাজ করতে দেখলে বলে উঠে, "তুমি মানুষ না, তুমি আওয়ামীলীগ"।
গত ৩৬ শে জুলাই ২০২৪ (৫ ই আগস্ট ২০২৪) দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন গণ আন্দোলনের ফলে পদত্যাগের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। সাথে সাথে পালিয়েছেন তার মিথ্যার দোসর ওবায়দুল কাদের গং। তারা পালিয়েছেন কিন্তু মিথ্যা বলা তাদের এখনো বন্ধ হয়নি। ক্ষমতাহারা শেখ হাসিনার সুযোগ্য যুবরাজ আমেরিকায় বসে মিথ্যার দোকান খুলে বসেছেন এবং প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় মিথ্যার একেক বোমা ছুড়ে মারছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা সংবাদমাধ্যমে। যার ফলে জনগণ প্রতিনিয়ত বিমোহিত-পরিচিত হচছে আওয়ামী মিথ্যার সাথে এবং বুঝতে পারছে/ভাবতে বাধ্য হচছে ক্ষমতায় থেকে তাদের বলা সীমাহীন মিথ্যা সম্পর্কে । আর মনে মনে বলছে,"তোমরা আসলেই মানুষ না, তোমরা আওয়ামীলীগ"।
আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা ও তাহার সভা-পারিষদ এখনো তাদের ক্ষমতাহানী মেনে নিতে পারেনি কিংবা পারবেনও না । কারন - তারা সবাই মিথ্যার উপরে ছিল বিগত ১৫ বছর এবং এখনো সেই মিথ্যার ঘোর থেকে বের হতে পারেনি। তারা দেশে আওয়ামীলীগ বনাম দেশদ্রোহী তথা রাজাকার ( আওয়ামী বিরোধী সবাই রাজাকার/দেশদ্রোহী) এ তত্ত্ব সামনে রেখে এগিয়ে গেছে একেবারেই নিজেদের ক্ষমটার স্বার্থে যেখানে দেশপ্রেম মূখ্য বিষয় ছিলনা। ছিল তাদের ঘৃণ্য স্বার্থের। তারা এটাও তারা ভূলে গিয়েছিল যে আওয়ামী বিরোধীতা মানেই দেশদ্রোহীতা নয়।
ঘটনাক্রম ৫ই জুন ২০২৪, - হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কোটা বাতিল করে সরকারের দেয়া ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, সেটিকে খারিজ করে দেয় (সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনভাবেই হাইকোর্ট এ আদেশ দিতনা। বরাবরের মতই কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তাদের ইচছা চরিতার্থ করার প্রক্রিয়া অনুসরন), তখন কারো ধারণাই ছিলো না যে পরের দুই মাসের মধ্যে সেটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটবে এবং এই ছোট ঘটনা শেষ পর্যন্ত লৌহমানবী শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের টানা শাসন অবসানের দিকে নিয়ে যাবে এবং প্রায় ১৬ বছর ধরে কঠোরভাবে বিরোধী দলকে দমন করে একটানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে শেষ পর্যন্ত গোপনে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করবে। আর সেই সরকার পতনের কারনে এর সুবিধাভোগীরা অনেকেই এখনো ঘোরের মাঝে আছেন এবং মানতে পারছেন না তাদের এই ক্ষমতাহারা।
তারপরেও আসুন এক নজরে একবার দেখি আওয়ামী সরকারের পতনের পিছনে কিসব কারন অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে।
আপাত খুবই ছোট একটি ব্যাপার নিয়ে পুরো পরিস্থিতি কীভাবে এবং কেন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছালো, যাতে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটির বিরুদ্ধে এভাবে রাজপথে নেমে আসলো এবং কেন ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হলো?
আওয়ামীলীগের পতনের কারন সম্পর্কে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,'' আওয়ামী ঘরানার লোকজন ও বিভিন্ন সংগঠন মিলে দিনের পর দিন সরকারকে নানা অযৌক্তিক অন্যায় কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে যে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেছে, সেই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন পরে সবার জন্য ধ্বংসের কারণ হয়েছে''।
১। জনগনের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ - ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে,এরপর থেকে আর দলটি ক্ষমতা থেকে বের হতে চায়নি। ছলে বলে কৌশলে ক্ষমটায় থাকার জন্য এমন কোন ঘৃণ্য কাজ বাদ রাখেনি যা করা সম্ভব তাদের পক্ষে। এ কাজে তারা পুলিশ সহ আইন-শাসন-বিচার বিভাগকে নোংরা ভাবে ব্যবহার করেছে।দেশের বেশিরভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছিল । এর ফলে মানুষের একটা স্ফুলিংগের দরকার ছিল। সেটাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছে যাতে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়েছে।
২। ভোটাধিকার হরন ও মতপ্রকাশের অধিকার রুদ্ধ - ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশে বাস্তবিক অর্থে আর কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এই সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুইটি হয়েছে অনেকটা একতরফা নির্বাচন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিলেও সেখানে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ছিল, যে নির্বাচনকে ‘রাতের নির্বাচন’ বলেও অনেকে বর্ণনা করেন।২০২৪ সালের নির্বাচন হয়েছে আমি-ডামি নির্বাচন।আওয়ামীলীগ জোরজবরদস্তি করে দেশে কতৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং জনগণের কোন রায় তারা নেয়নি। ফলে জনগণের সমর্থনও ছিল না তাদের পেছনে।
৩। মানবাধিকার হরণ ও ভয়ের সংষ্কৃতি - ২০২৪ এর শুরুতেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক অভিযোগ করেছিলেন যে, মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে। যেখানে রাজনৈতিক শুধু প্রতিপক্ষ নয়, বিরোধী গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিরুদ্ধ মত দমন করা হয়েছে কঠোর হাতে। বিরোধী গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, দখল নেয়া হয়েছে অথবা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে।সামাজিক মাধ্যমেও শেখ হাসিনা কিংবা শেখ মুজিব বিরোধী বক্তব্য পোস্ট করার জের ধরে মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দমনের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিট অ্যাক্টের মতো আইন করা হয়েছে। সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়ার জের ধরে মাসের পর মাস ধরে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।বছরের পর বছর বিরোধীদের ধরে নিয়ে হয় গুম করে দেয়া হয়েছে না হলে আটকে রাখা হয়েছে।এসব কারনে, মানুষের মধ্যে দিনে দিনে সরকারের প্রতি বা আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ দানা বেধেছে। ফলে মানুষ যে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে সময় পার করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতেই ছাত্র-গণআন্দোলনে সবাই নেমে এসেছিল।
৪। পুলিশ ও প্রশাসন নির্ভর একটি দল - বিভিন্ন দেশের ইতিহাসেও দেখা গেছে, জোর করে ক্ষমতায় থাকা দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এক সময় আমলা, প্রশাসন বা পুলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। টানা বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে এক সময়ের আওয়ামীলীগ মাঠের রাজনৈতিক দল হলেও দলটির নেতা-কর্মীরা জনগণের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল দলটি। বিশেষ করে দলটি পুরোপুরি প্রশাসন ও আমলানির্ভর হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি গ্রামেগঞ্জে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নামে, আওয়ামী লীগের নামে তাদের নেতাকর্মীরা যা করেছে, তাতে মানুষের ক্ষোভ জমতে জমতে এমন একটা অবস্থায় গেছে, এবার শুধু সেটার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। গুলিতে যখন অনেক মানুষ মারা গেছে, তখন তাদের গুলিতে মৃত্যুর ভয়ও চলে গেছে।
লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ যেমন বলছেন,'' রাষ্ট্র আর দল একাকার হয়ে গিয়েছিল। দেশে এক ব্যক্তির শাসন, এক পরিবারের শাসন ছিল। সেটা পুরো রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে। সেখানে ব্যবসায়ী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ , মিলিটারি সব মিলিয়ে ছিল। সেখানে চিড় ধরায় তার ক্ষমতা তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে''।
৫।'' দুর্নীতি আর বেগমপাড়া'' - আওয়ামী লীগের সরকারের দলীয় ইশতেহারে ও নেতাদের বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা ঘোষণা করে আসলেও গত তিন মেয়াদে এই দলের ছোট থেকে কেন্দ্রের বেশিরভাগ নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগরিটি (জিএফআই) হিসাবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সেই হিসাবে ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা।সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের মতো অনেক সরকারি সাবেক কর্মকর্তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ তৈরির খবর প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সরকারি অফিসে ঘুষ দেয়া যেন একটা স্বাভাবিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘’ এতো দুর্নীতি হয়েছে, যা আগে কখনো মানুষ দেখেনি। দুর্নীতি নিয়ে মানুষের ভয়, চক্ষুলজ্জাও উঠে গিয়েছিল। এসবের মধ্য দিয়ে তারা যে বিত্ত অর্জন করেছে, তা পাচার করে দিয়েছে। যেখানে মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছে, সেখানে নেতা-মন্ত্রীদের বিদেশে অঢেল সম্পদের তথ্য মানুষকে বিরক্ত আর ক্ষুব্ধ করেছে।’’
৬। অর্থনীতির দৈন্যদশা’র চাপ - বাংলাদেশের গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছুঁয়েছে। রাতারাতি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে সব কিছুর ওপরে। মানুষের সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে।সেই সঙ্গে র্রিজার্ভের ঘাটতি, দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার, ব্যাংকিংখাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দেশের গণমাধ্যমে।অথচ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে তাদের মধ্যে দিনে দিনে সরকার বিরোধী মনোভাব তৈরি করেছে।
আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদের সময় পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, টানেল, পায়রা বন্দর, পায়রা সেতু, রেল সংযোগের মতো বহু ব্যয়বহুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে।অন্যদিকে ব্যাঙ্কিংখাতে রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আবার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সর্বশ্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সেসবের জন্যও অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।এসবের বাইরে ভারত প্রতি সরকারের অতি নির্ভরতাও অনেকে পছন্দ করেনি ,কারণ গত কয়েক বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় সেগুলো ভারতের জন্য বেশি সুবিধাজনক বলে সমালোচনা রয়েছে। ভারতের ওপর তাদের নির্ভরতা, যেসব চুক্তি করেছে, দেখা গেছে সেসব ভারতের পক্ষে যাচ্ছে। ঋণ বাড়ছে। নানা কারণে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
৭। বাস্তবতা বুঝতে না পারা - সারা দেশ যে কিভাবে কখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলে গেছে তা শেখ হাসিনা ও তার ধামাধরা পারিষদরা বুঝতেই পারেনি। আর তাইতো সর্বদা যে কোন ছোট খাট ব্যাপারেও সীমাহীন বলপ্রয়োগকারী আওয়ামীলীগ কোটা সংস্কারের দাবীও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রুখতে চেয়েছিলেন।যদিও কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া একটি সাধারন আন্দোলনে কেন সরকার গুলি-গ্রেফতারের মতো বলপ্রয়োগের পথে গেল, তা অনেককে বিস্মিত করেছে। কোটা নিয়ে শেখ হাসিনার করা, '' মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে''? এ মন্তব্যের জবাবে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ,''তুমি কে, আমি কে- রাজাকার রাজাকার'' স্লোগান দিয়ে যখন পথে নেমে আসে, তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগ দেবে।
এটা পরিষ্কার ছিলো যে, প্রথম থেকেই এই আন্দোলন নিয়ে কোন আলোচনার আগ্রহ বা নমনীয়তা দেখায়নি আওয়ামী লীগ। বরং আগের সব আন্দোলনের মতো শক্ত হাতে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে।আর তাইতো প্রথমে নিজেদের ছাত্র বাহিনীকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, সেখানে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের দিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার পুলিশের গুলি করার ভিডিও থাকার পরেও পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়েছে, নিরীহ এক শিক্ষার্থীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।ছয়জন সমন্বয়ককে হাসপাতাল ও বাড়ি থেকে ধরে এনে কোন কারণ না দেখিয়েই দিনের পর দিন গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিবৃতি আদায় করা হয়েছে।পুলিশ, বিজিবি ও দলীয় বন্দুকধারীদের গুলি করার ছবি ভিডিও থাকার পরেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও নেতারা ক্রমাগত অসত্য বক্তব্য দিয়ে গেছেন, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন, আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েছেন।এমনকি 'পুলিশের পোশাক পরে সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে’ এমন কথাও বলা হয়েছে সরকারি মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। ইন্টারনেট বন্ধ করা নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে।এসব কিছুই মানুষের ভেতর ক্ষোভ তৈরি করেছে,তাদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে কিন্তু এই বাস্তবতা বুঝতে পারেননি হাসিনা।
লিংক - Click This Link
যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করেছে,এখন তারাই ক্ষমতাহীন হয়ে মিথ্যার মাধ্যমে ক্ষমতার সময়ে করা অনিয়ম-দূর্নীতিকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে সারা দেশ-দুনিয়াকে মিথ্যা প্রমাণ করে। এজন্যই আসলে মানুষ যথার্থই বলে, '' ওরা মানুষ নয়, ওরা আওয়ামীলীগ''।
- কারন - মানুষ আর আওয়ামীলীগ কখনো এক হতে পারেনা।
সর্বশেষ - ১১ ই আগস্ট ২০২৪ মহামহিম হুজুরে আলা শেখ হাসিনা বলেছেন, @ যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্ট মার্টিন না দেয়ায় ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে - শেখ হাসিনা । লিংক - Click This Link
যা সত্য থেকে যোজন যোজন দূরে। মিথ্যা মিথ্যা আর মিথ্যা।
তথ্যসূত্র - বিবিসি বাংলা ও দৈনিক সংবাদপত্র।
=========
পূর্ববর্তী পোস্ট
"মধুর বচন" - ৩) - "প্রধানমন্ত্রী(শেখ হাসিনা)'র বেহেশতে যাওয়ার হক আছে" এবং "আল্লাহ শেখ হাসিনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবেন, এটা যদি মনে না করেন ইমান চলে যাবে"। লিংক - Click This Link
" মধুর বচন " - ২ - রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে কষ্ট দিয়ে আর সমাবেশ করতে দেয়া হবে না - ওবায়দুল কাদের ও বাস্তবতা।
Click This Link
" মধুর বচন " - ১ - আহা কি চমতকার দেখা গেল- Click This Link