সারাদিন রোজা রেখে ইফতারি করতে বসার সময় মাথা আউলায়া যায় খিদায়। হাতের কাছে যা পাই তা তো খেতে ইচ্ছা করেই যা না পাই তাও খেতে ইচ্ছা করে। গোগ্রাসে গিলি সব তখন। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় যা পাই মোটামোটি অনেক খাবারই কিনে নিয়ে আসি। একটা এড এর কথা মনে পড়ে গেলো, নো উমার ফর লালাচ। হে হে হে।
যাই হোক। ব্যাচেলর লাইফে ডিমের বিকল্প বুঝি নেই বললেই চলে। ঘরে তো আর বউ নেই যে সপ্তপদী রান্না হবে। খাবারে আলু তো থাকবেই সেই সাথে ডিমের একটা না একটা কিছু উপাদান থাকেই। মেসের খালারা আবার বেশীরভাগই ডিম এক্সপার্ট হয়ে থাকে।
খিচুড়ি ছিলো সেদিন, সেই সাথে একটু আগেই কিনে আনা ডিম। খালাকে বললাম ভাজি করে দিতে। উনি আমাদের ৪ জনের জন্য ৪ টা ডিম ভাজলো। ভেজে এনে বললো ৪ নম্বর ডিমটা খাইয়েন না। এইটা জানি কিরাম কিরাম লাগলো আমার কাছে। আমিও তাকায়া দেখলাম আসলেই তাই। ৪ নম্বর ডিমটার রঙ, শেপ, এমনকি পূরা অবয়বটাই একটু আলাদা। পুরাটাতে সমমিশ্রিত রঙ (ইউনিফর্ম কালার)। আমি অবাক হলাম। এরকম রঙের ডিমতো প্রায়ই খাই সকালের নাস্তায়, যেকোন হোটেলেই। কিন্তু এই ডিমটা একটু আলাদা। অনেক বেশী ফুলছে, সেই সাথে অনেক ভালো ভাজি হয়েছে। কিন্তু ভিতরটা একদম গলে যাওয়া মোমের মত নরম। হঠাত করেই চাইনিজ ডিমের কথা মনে পড়লো। আগের দিন পড়েছিলাম একটা ব্লগে, সেই সাথে কিছু ভিডিও দেখেছিলাম। বুকটা ছাঁৎ করে উঠলো। চাইনিজ ডিম না তো? খালাকে জিজ্ঞেস করলাম।
ডিমটা কেমন ছিলো ?
- ডিমের কুসুমটা ছেড়ে দেয়ার পরই মিশে গেছিলো সাদা অংশটার সাথে।
খোসা কেমন ছিলো?
-একদম আসল ডিমের মতই, কোন পার্থক্য নাই, তবে কেমন যেন একটু নরম।
উনি আবার এই ডিমটাকেও পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে সুন্দর করে ভেজে এনেছিলো। আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড বসলাম এটার পোস্টমর্টেম করতে। গন্ধ শুঁকলাম। দেখি ডিমের কোন গন্ধ নাই। এমনকি কোন বাজে গন্ধও নাই। তবে ফার্মেসীর ছাত্র হবার সুবাদে অনেক অনেক গন্ধই ল্যাবে নিতে হয়েছে। দেখি কেমন যেন একটা ক্যামিকেল টাইপ গন্ধ। প্রাথমিক পরীক্ষায় এটা নিশ্চিত হলাম যে ডিমটা নরমাল না। তারপর দেখলাম পুরা ডিমে একই ধরণের রঙ। আমরা সাধারণত যে ডিম খাই তাতে ছোপ ছোপ রঙ থাকে। এটা একদম সাদাটে ধরণের, হলদেটেই বলা যায়।
ব্লগে লেখা ছিলো এই ডিমটা বানাতে কিছু পলিমার ব্যবহার করা হয়। বাস্তবেও দেখলাম তাই। বাইরে একটা সুন্দর পলিমারের খোলস, কেউ দেখলে ভাববে বাহ। কি সুন্দর ভাজি হয়েছে। ভেতরের পদার্থটা অনেক নরম। গলে যাওয়া মোমের মত। কিন্তু এতো সুন্দর হয়েছে ডিমের শেপটা যে কি আর বলবো। আসল মুরগির ডিমও ফেল।
ব্লগে আবার লেখা ছিলো যে সিদ্ধ করলে তেমন একটা বোঝার উপায় নেই যে এটা আসল ডিম না। শুধু বাইরের খোলসটা একটু বড়। এটা আসলে কোন চোখে পড়ার মত পার্থক্যও না। কারণ অনেক ডিমেরই খোলস বড় থাকে।
ইফতারি খেতে বসে এই পোস্টমর্টেম করার পরে হাতটাও কেমন যেন গন্ধ গন্ধ লাগছিলো। আসল গন্ধই হোক কিংবা শুঁচিবায়ু, সেরাতে আর কিছুই খেতে পারলাম না। জঘন্য লাগলো। প্রতিজ্ঞা করলাম ডিম খাবো না আর কোনদিন।
পরিশিষ্ট, পোলট্রি শিল্প মনে হচ্ছে ধংস হয়ে যাবে। একটা ডিমের দাম ৭ টাকা কিংবা ৮ টাকা। এটাও যদি ক্যামিকেল দিয়া নকল বানায়ে বাজারে ছাড়া হয় তবে আসলে কিছুই বলার থাকেনা। এই ডিমের উৎপাদন খরচ নাকি ৩ টাকার মত। কিচ্ছু বলার নাই। ইউটিউব এর সেই ভিডিওতে একটা কমেন্ট দেখলাম, "YOU CHINESE FAKE THE FUKIN EGGS, WHEN YOU WILL FAKE THE MOON??"
এতো হতাশার মাঝেও হাসি পেলো।
আর একটা ব্যাপার, ১৬ টা ডিমের মাঝে ২ টা ছিলো চাইনিজ ডিম। কেউ বুঝতে পারারই কথা না যদি না সে আগে থেকে না জেনে থাকে এ ব্যাপারে। এভাবে ১৬টাতে ২ টা, কদিন পরে হয়তো ১৬ টাতে ৮ টা, একদিন ১৬ টা ডিমই খেতে হবে আমাদের চাইনিজ ডিম। রাগে ক্ষোভে মুরগি হয়তো কচুগাছে ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যা করতে চাইবে। সে দিন যেন আমাকে না দেখতে হয়।
আমি যেখান থেকে জেনেছিলামঃ
নকল ডিম হইতে সাবধান!
বাজারে ডিমের ভেজাল চলছে :p তাই আসল নকল ডিম চিনে নিন!!
অবিশ্বাস্য ও যুগান্তকারী আবিস্কার : কৃত্রিম ডিম, ‘চায়নার বিষাক্ত কৃত্রিম ডিম থেকে সাবধান’
ইউ টিউব ভিডিও দেখুন
জুলভার্ণ ভাইয়ের লেখা কিছু কথা...এবং এই পোস্ট পড়ে কিছুটা ভরসাও পেতে পারেন..শুরু করতে পারেন আবার ডিম খাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:৫১