গেল বছরের শেষদিকে কোন একদিন মেয়েটি সংসদ ভবনের ক্রিসেন্ট লেকের আশপাশে ঘুরছিল। দেখতে রূপসী, রুচিশীল। পেশা পতিতাবৃত্তি কি না বোঝাই মুশকিল? বিধ্বস্ত জীবন থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাচতে, প্রকৃতির সৌর্ন্দয্যে ক্ষণিকের প্রেমে পড়তেই সেই রাস্তায় আমার যাতায়াত.।
দেখলাম, মেয়েটি একজনের সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠে চলে গেল। পরদিন সেই একই মেয়েটিকে দেখলাম, একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে চলে যাচ্ছে। আমিও পিছু নিলাম। দেখলাম, উদ্যানের ঘাসগুলো এবার তার শয্যা।
দৃশ্যটি মেয়েটি সর্ম্পকে একটু গভীরে জানার রহস্য সৃষ্টি
করল আমার মধ্যে। যে মেয়ে গতকাল কোন ধনীর বেডরুমে রাত কাটিয়েছে। সে কিনা আজ ঘাসে শয্যা পেতেছে। জানার প্রবল সাধ জাগল আমার। লোকটি চলে যাওয়ার পর কাছে ডাকলাম মেয়েটিকে। ও ভেবেছে শরীরের জন্যই হয়তো ডেকেছি।
জিজ্ঞেস করলাম, নাম কি,থাকো কোথায়,কে কে আছে ??মেয়েটির জবাব,সময় নষ্ট করতেছেন ক্যান। যা করার,তাড়াতাড়ি করেন।
বললাম, আমি তো কিছু করব না ।
তাইলে ডাকছেন ক্যান?
তোমার সাথে গল্প করার জন্য।
বেশ্যার লগে আবার গপ্প কিয়ের ? মেয়েটি রাগ হয়ে চলে গেলো...
পরদিন আবার গেলাম সে পথ দিয়ে। মেয়েটির সঙ্গে দেখাও হয়ে গেলো। কিন্তু আমাকে কোন পাত্তাই দিলো না। বলল,আইজকাও গপ্প করতে আইছেন? ক্যান,সাথে ওইটা নাই? দেইখা তো সুপুরুষ মনে অয়। ইচ্ছা করলে আসেন,নইলে ভাগেন।
আমি হাল ছাড়ার মানুষ নই।বসে রইলাম। হঠাৎ কাছে এসে মেয়েটি জানতে চাইল, আমি তার সাথে গল্প করতে এসেছি কি না? বললাম, হ্যা। আপনে তো আজব মানুষ! গপ্প করার জন্য এইখানে আসি নাই। পেট বাঁচানোর দায়ে। বললাম, যদি এজন্য তোমাকে টাকা দেই, কোন সমস্যা আছে? টাকা দেওন লাগবে না, গল্প শুনতে চলেন। এরপর দুজন হাঁটতে হাঁটতে উদ্যানের ভেতরে বেঞ্চে বসে পড়ি।
কি বলবেন,দ্রুত বলেন, টাইম নাই! বললাম, তোমার জীবনের গল্প শুনবো, কি গল্প শুনবেন? সবার তো একই গল্প। এই পেশার মাইয়াগুলা সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হইছে, প্রেমিকের কাছে,ভাগ্যের কাছে, সংসারের কাছে কিংবা জীবনের কাছে।
তাহলে তুমি কার কাছে? আস্তে আস্তে মেয়েটি সহজ সাবলীল হয়ে উঠছিল। অতপর জীবনের গল্প বলে গেল অবিরত....
জন্মের পরপরই ভাগ্য মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করেছে, বয়স ১২ না পেরুতেই মা-বাবার মৃত্যু। বাবা-মায়ের স্মৃতি তার কাছে বহুকাল আগে দেখা কোন ধূসর স্বপ্নের মতো। চাচার কাছে বেড়ে ওঠে মেয়েটি। স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয় মেয়েটি। সর্বনাশ ঘটে তখনই। কোন এক অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় সুদর্শন এক যুবকের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। কিন্তু মেয়েটি ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিল। না জেনেই বিবাহিত লোকটির বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয় মেয়েটি। অতপর চট্টগ্রামে এক ব্যাচেলর বন্ধুর বাসায়...।
চট্টগ্রামে গিয়ে বিয়ে করার কথা ছিলো তাদের। তা আর হলো না। অথচ রাত কাটতে লাগলো একসঙ্গে। চার-পাঁচদিন পর বিনা নোটিশে উধাও হয়ে যায় যুবকটি।এরপর তার জীবনে নতুন অধ্যায়ের শুরু; সে রাতে কয়েকজন অচেনা পুরুষ সারারাত তাকে পুতুলের মতো ব্যবহার করেছিলো ইচ্ছেমতো ।এভাবে কয়েক রাত ...।
জীবন আসলে অনেকটা খেলার মত । যা কিছু ঘটার ,খুব সহজেই ঘটে যায় ।এরপর এ হাত থেকে ও হাত ঘুরে এক সময় ঠাই মেলে রাজধানীর কোন এক রেসিডেন্সিয়াল হোটেলে।সেটাও বন্ধ হয়ে গেলে পার্কই তার একমাত্র বাণিজ্য কেন্দ্র।
শুনলেন তো গল্প,এবার চলে যান।
বললাম, মানুষের জীবনের গল্প তো কখনো শেষ হয় না,মেয়ে..!
সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্য রাত ক্রমেই ঘনিয়ে আসতে থাকে, হঠাৎ কিছু না বলে মেয়েটি দ্রুত চলে যায়....।
এরপর সেইপথে তাকে বহুদিন খুঁজে বেড়িয়েছি আমি। কোথাও আর কখনো দেখা পাইনি তার....।
ব্যস্ত এই শহরে চা্ইনিজ পণ্যের মতই পতিতারাও অনেক সস্তা,অনেক সহজলভ্য। সন্ধ্যার পর পুরো রাজধানী জুড়ে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।এসব মেয়েদের খদ্দেরদেরও রয়েছে নানা বৈচিত্রতা। কিশোর-তরুণ-যুবক থেকে সত্তরের ঘরে পা রাখা বৃদ্ধরাও হুমড়ি খেয়ে পরে সস্তার এ পণ্য ক্রয় করতে। এমনও অনেক তরুণদের দেখা মেলে । যাদের বয়স আঠারোর কোটা পার হয়নি। যাদের কাছে মেয়েদের শরীর এখনো বিশাল রহস্য।
জীবন কতটা বিভীষিকাময়!!কত বীভৎস আমাদের চারপাশের বাস্তবতা!! হয়ত জীবন এতটা জটিল না হলেও পারতো! একটু সহজ-সরল-সুন্দর হলে কি এমন ক্ষতি হতো.... ???