somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'টিউশনি', একটি স্বপ্নের করুণ মৃত্যু…./:)/:)

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক স্বপ্ন ছিল অষ্টাদশী সোনিয়ার, স্বপ্নগুলো বাস্তবে রুপ নেওয়ার আগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । পদ্মার পাড়ের ছোট্ট গ্রামে শিশু থেকে কৈশোর এমনকি যৌবনের কিছু দিন কেটেছে মেয়েটির, সবুজ ঘাস আর চরের বালুতে।ছোটবেলায় পদ্মার ঘোলা পানিতে কত সাঁতার কেটেছে সে।মাঝে মাঝে গভীর রাতে টিনের ঘরে কুপির আলোতে শুয়ে ভাবনার জালে হারিয়ে যেত মেয়েটি।

প্রায়ই তার ইচ্ছে করতো কোন এক ভোরে ফড়িং অথবা প্রজাপতি হয়ে বারান্দার গ্রিলগুলোকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়তে। পায়ের নীচে শক্ত মাটি নেই ,তাতে কি?? না চাইতেই আসবে এক টুকরো মেঘের নৌকা , ভাসিয়ে নিয়ে যাবে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, সমুদ্র থেকে মরুভূমিতে, পাহাড় থেকে অরণ্যে। আর কত কি!! অপেক্ষার দিনগুনে সময় কেটে যেত তার।

স্বপ্ন পুরণে কলেজের চৌহদ্দী পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে মেয়েটি। নতুন পরিবেশ, নতুন স্বপ্ন। সহস্র মেধাবীদের মধ্যে নিজেকে একজন ভাবতে তার ভাল লাগে। কত আশা তার.., বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে চাকুরী, বাবা মায়ের মুখে একটু হাসি। বাবা মায়েরও গর্বের শেষ নেই, মেয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্রী, পাড়ার সব মানুষের মুখে মুখে তার নাম। এলাকার মানুষগুলোও যেন তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। কেননা, মেয়েটি তাদের গ্রামের মুখ উজ্জল করবে।

কিন্তু দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সোনিয়ার পক্ষে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা, খাওয়া-,আসা-যাওয়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়। বিভাগের বড় আপার সহায়তায় হল নেত্রীর বদৌলতে একটি রুমে জায়গা জুটে যায়। ব্যস্ত আর স্বার্থপর এই শহরে তার মাথা গোজার ঠাঁই হয়ে গেল।কিন্তু খাওয়া-পড়ার খরচের জন্য তো অর্থের দরকার। পরিবারের পক্ষে এ টাকা দেয়া সম্ভব নয়, তাই টিউশনিই একমাত্র ভরসা মেয়েটির..

একদিন বড় আপার সহায়তায় হলের উদীয়মান নেত্রীর কাছ থেকে এলো টিউশনির প্রতিশ্রুতি। সোনিয়া খুশিতে আত্মহারা, এবার বুজি পরিবার থেকে আর খরচ আনতে হবে না, ভালভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যাবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকে তার অতটা খারাপ লাগে নি, যতটা না সে কৈশোরে লোকমুখে শুনেছে।ঢাকা শহরকে তার ততটা কঠিন, নির্মম আর নিসঙ্গ মনে হয়নি, যতটা তার কাছে দৃশ্যমান মনে হয়েছিল।

তারপর......

একদিন নেত্রী জানাল, রাতে তার টিউশনি ফাইনাল হয়ে যাবে।সন্ধ্যায় গাড়ি এসে তাকে নিয়ে যাবে , মাসে অনেক টাকা। একা যেতে মেয়েটির মন চাচ্ছে না। তবুও নেত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাসে গাড়িতে উঠে রওনা দিল অজানা গন্তব্যে। কিন্তু বিধি বাম!!! যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে না গিয়ে গাড়ি থামল ব্যস্ত শহরের অদূরে কোন এক নির্জন বহুতল ভবনের কাছে, তারপর এক নি:শব্দ,জনশূণ্য ফ্লাটে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে পাশবিক নির্যাতন। এরপর হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো পাঁচ হাজার টাকা।একটি নরপিশাচ পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে চাইলো তার বহু বছর ধরে লালিত স্বপ্ন ।কত সস্তা একটি স্বপ্নের মূল্য....?? হিংস্র বাঘের থাবায় বিদির্ণ, জর্জরিত মেয়েটির শরীর যেন ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে।অতপর তাকে নামিয়ে দেয়া হলো হলের অদূরে।

এরপর...........................

ক্রমশই মেয়েটির স্বপ্নগুলো দু:স্বপ্নে হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে লাগল। মানসিক, শারীরিক ক্ষত মুছতে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে গেল একটি বছর। একটি টিউশনি কেড়ে নিল তার সব স্বপ্নকে,করুণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল তার উজ্জল ভবিষ্যতকে ....

একদিন খুব ভোরবেলায় ঘুম ভেঙ্গে গেল মেয়েটির। জানালার পর্দা, ভোরের বাতাসে নৌকার পাল হয়ে যেন উড়ছে।চেনা শহরের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরের আকাশে উড়তে লাগলো সে।বুভুক্ষের মত দেখতে লাগলো ভোরের এই অপার্থিব রূপ, তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস...।

জীবনে বেচে থাকতে হয় হয়ত স্বপ্নকে ঘিরে।কিন্তু স্বপ্নগুলো কখনও কখনও বড় স্বার্থপর হয়ে যায়, বুঝতে চায় না স্বপ্নদ্রষ্টাকে।তবুও স্বপ্নরা কখনো মরে না, ক্লান্ত হলে একটু ঘুমিয়ে পড়ে….
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:১৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের পহেলা বৈশাখ! এবার ১৪৩২।

লিখেছেন নাজনীন১, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:১৬


বাঙলা বা ইংরেজি যেকোন নববর্ষই আমাদের জন্য আনন্দের ইংরেজি অবশ্য বছরের শেষ রাতটা সবাই অনেক আনন্দ করে। সে হিসেবে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাধারণতঃ দিনের বেলায়।

যদিও এবার জমকালো বৈশাখী লেজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

লীগের মাস্তানদের নির্যাতনে বিসিএস ক্যাডার পরিবার অসহায়, একঘরে হয়ে আছি!

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:৩১


যে পরিবারটি আমাদের জীবনকে নরক বানানো শুরু করেছে, সেটি সুমন রায়ের পরিবার। দেখুন তাদেরই কিছু পাগলামি ও অপকর্মের প্রমাণ যা ক্যামেরায় ধরা পড়লো। ক্যামেরা না থাকলে বা অগোচরে কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×