আচ্ছা প্রথমেই একটা বিষয় আপনাদেরকে কনফার্ম করে রাখি যে এই বাড়িটিতে এক ইঞ্চিও কংক্রিট ব্যাবহার করা হয়নি। পুরোটাই স্টিল স্ট্রাকচার। কলাম, বিম, ফ্লোর স্ট্রাকচার সহ পুরো বাড়িটির বেইজ সুদ্ধ স্টিলের তৈরি। ফ্লোর তৈরির জন্য সরাসরি স্টিলের সেকশনের উপরে কাঠের ফ্রেম বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা কংক্রিট ছারা কিছুই বোঝেননা তাদেরকে বলছি আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ২০টির উপরে স্টিল ইন্ডাস্ট্রি আছে যারা আপনার বাড়িটির প্রত্যেকটা অংশ তাদের বিশাল ফ্যাক্টরিতে ঢালাই করে মাত্র তির চার মাসের মধ্যে পুরো বাড়ি বানিয়ে দিতে পারবে।
বাড়িটি একটু লম্বা মতন করে বানানো হয়েছে। সম্ভবত মুল রাস্তার সাথে সংযোগ রাখা আবার সমুদ্রের কাছাকাছি থাকারও একটা প্রচেস্ট রাখার চেস্টা করা হয়েছে। আবার বাজেটের মধ্যেও রাখা হয়েছে। মাটি ধরে রাখার জন্য পাহারের ঢালে তৈরি রিটেইনিং ওয়ালটিই বাউন্ডারি ওয়াল হিসবে ব্যাবহার করা হয়েছে। রিটেইনিং ওয়াল মুলত মাটি ঠেস দিয়ে ধরে রাখার জন্য নির্মান করা হয়। সেটিকেই একটু ডিজাইন করা হয়েছে। এছারা এটি এইক বাড়ির জন্য পার্শ্ব ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে।
বাড়িতে ঢুকতেই আপনার চোখে পরবে মুল সিড়িটি। এর কারন হচ্ছে সিড়ি টি সামনের দিকে নিয়ে গেলে চমৎকার সামুদ্রিক দৃশ্যটির কিছুটা ঢেকে যেতে পারে । তাই সিড়িটিকে প্রথমেই নির্মান করা হয়েছে। বাড়ির প্রত্যেকটা বাহিরের দেয়াল গ্লাসের হওয়াতে চোখ এর দৃস্টি যতদুর যেতে ততদুর পর্যন্ত দেখা যায়। একটি সিড়ি চলে গেছে নিচ তলায় যেখানে খাবার ঘর এবং কিচেন রয়েছে। দ্বিতিয় তলায় রয়েছে বেডরুমগুলো। একেবারে ছাদে রয়েছে সুইমিং পুল। কোন রকম ইট, বালু, সিমেন্ট, কাঠ-বাশ ছারা শুধু স্টিলের কলাম আর এলুমিনিয়ামের শিট দিয়ে কি অসাধারন একটা ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। ফ্লোর এর কাঠগুলো ছারা কাঠও খুবই কম।
বামের সিড়িটি দিয়ে নিচ তলায় চলে আসলে এখানে রয়েছে ফ্যামিলি লিভিং এবং ডাইনিং রুমটি। আসলে রুমটি একেবারে খোলামেলা রাখা হয়েছে যাতে বসবাস কারি তার প্রয়োজন মাফিক এটি ব্যবহার করতে পারেন। যদি আগত গেস্টদেরকে খাবারের জন্য নিচে নিয়ে আসার প্রয়োজন হয় তবে সোফাতে বসতে পারে। খাবারের জন্য ডাইনিং এর বসতে পারে। কিন্তু যেখানেই বসেন সমুদ্রের অসাধারন দৃশ্য আর সামুদ্রিক নোনা বাতাস তাদেরকে ছুয়ে যাবেই।
ড্রইংরুমের সামনে রয়েছে আরো বিস্তর যায়গা। এখানে রয়েছে বসার ব্যাবস্থা। একটু খেয়াল করলে দেখবেন একেবারে সামনে ছোট একটা ইনফিনিটি পুল রয়েছে। শুধু সাধারন বিকেল না বৃস্টিতে ভেজার জন্য এধরনের একটা খোলা বারান্দার কোন তুলনা হয় না এক কথায়। আর একটা মজার বিষয় হচ্ছে বাড়িটি সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ খরচ করবে। কারন এখানে কোন ফ্যান বা লাইটের প্রয়োজন নেই। অন্তত দিনে বেলায় তো কোন লাইটের দরকার মোটেই পরে না চাদনি রাতে তো কেউ ইচ্ছে করেই লাইট জ্বালাবে না। কারন এই ধরনের একটা গ্লাস হাউসে চাদের মলিন আলো কেউই লাইট জ্বালিয়ে নস্ট করতে চাবে না।
ডাইনিং টেবিলটির সোজা পেছনেই রয়েছে কিচেন। কিচেনেরা পেছনের দেয়ালটি একটি আয়না দিয়ে সাজানো হয়েছে। যাতে সুমদ্রের দৃশ্যটি খুব সহজেই সেই আয়নাতে ধরা পরে। এচারা কিচেনটি খুবই খোলা মেলা রাখা হয়েছে যাতে রান্নার সময়ও সমুদ্রের অসাধারন দৃশ্য মিস না হয়।
এটি হচ্ছে মুল ড্রইং রুম। এখানে এসে গেস্টরা অপেক্ষা করতে পারবে।অনেকেই বলে ফেলেন এই ধরনের গ্লাসের বাড়িগুলোতে প্রাইভেসি থাকে না। তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে এইবার গ্লাসের দিকে তাকান। খুবসাধারন একটা পর্দা এবং সিস্টেমটাও খুবই সাধারন। এই পর্দগুলোর আর একটা সুবিধা হচ্ছে এগুলো ভিতর দিয়ে ভিজিবল কিন্তু বাইরে দিয়ে কিছুই দেখা যাবে না।
পুরো বাড়ির সিলিংটা করা হয়েছে খুবই সাধারন কাঠের দ্বারা। তবে এটার একটা কারন হচ্ছে সমুদ্রের নোনা বাতাস সিলিংএর এই কাঠের সাথে মিলেমিশে ঘরটির আদ্রতা এবং পরিবেশ চমৎকার ভাবে কন্ট্রোল রাখবে। তাই কাঠের মধ্যে যে গ্রুপ গুলো করা হয়েছে তার মাঝে মাঝে কিছুটা ফাটা রাখা হয় যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। এছারা লাইটিংও করা হয়েছে কাঠের ডিজাইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই।
এই বেডরুমগুলো সম্পর্কে আসলে মুখে কিছু বলে বা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। সারাদিন পরিশ্রমের পরে আপনার বিছিনায় গা এলিয়েদিয়ে সামনে দিকে যদি বিশাল সুমদ্রটা চোখে পরে সাথে সমুদ্রে বাতামে গা জুরিয়ে যায় তবে সে সেটা আসলে বলে বুঝানোর কিছুই থাকে না। বেডরুমটির চার পাশে লম্বা বারান্দা রয়েছে। বিকালে হাটাহাটি করা বা সন্ধার পরে এখানে টেবিল পেতে বসে আড্ডা দেওয়াটা হবে জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।
এত কিছুতেও যদি আপনার মন ভরে তবে একেবারে উপরে ছাদে রয়েছে আপনার জন্য আশ্চর্য। বিশাল একটা সুইমিংপুল। পুলটি মুলত সাতারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। তাই এত প্রসস্ত করা হয়নি। এই সব সুইমিং পুলের সবেচেয় বড় সুবিধা হচ্ছে এগুলোতে সাতার কাটাযাবে ইচ্ছে মতন কিন্তু স্থান এবং পানির অপচয় কম হবে। পারপাশে রয়েছে বিশাল লম্বা লবি। চাইলে সকালের জগিং বা বৈকালিক হাটার কাজটাও সেরে ফেলতে পারেন এখানেই।
এই ছবিগুলো দেখলে বুঝবেন পুরো বাড়িটার আসল ডিজাইন এবং স্ট্রাকচারটি।
এখন প্রথমেই আপনার মুখ থেকে যেই কথাটি আসতে পারে এটা আমাদের দেশে বানানো অসম্ভব। কারন এই ধরনের উপকুল আমরা পাবো কোথায়। মাই ডিয়ার ব্রাদার এন্ড সিস্টারস আমাদের আছে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সি বিচ। আমাদের আছে কুয়াকাটা, আমাদের আছে খুলনার সুন্দরবন এলাকা। বিশেষ করে কক্সবাজারে বিস্তর এলাকা আছে এরকম পাহারি উপকুল। সুধু একটু চোখখুলে তাকালেই এই ধরনের একটা বাড়ি নির্মান করার জন্য হাজার হাজার স্পট পাওয়া যাবে। শুধু ইচ্ছার অভাব বলতে পারেন।
আগের দুই পর্ব পরতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
অসাধারন কিছু বাড়ির ডিজাইন (পর্ব-২)
অসাধারন কিছু বাড়ির ডিজাইন (পর্ব-১)