কথা সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা ঘটকের দেশের মতুয়া সংখ্যালঘুদের উপর নির্মিত হরিবল চলচ্চিত্রটি সম্ভবত অচিরেই মুক্তি পাবে।নির্মাতা রেজা ঘটকের সাথে আমার ফেইসবুকের বন্ধুত্ব বেশ পুরনো।পরিচয়টা হয়েছিলো আরেক কথা সাহিত্যক প্রকাশক ও সংগঠক নীল সাধু’র সামাজিক স্বেচ্ছা সেবক “এক রঙ্গা এক ঘুড়ি’ সংগঠনের এক ঢাকা বই মেলার স্টলে। দারুণ অমায়িক তার কথা বার্তা তার আতিথ্যতা।তার নির্মিত সর্বোশেষ চলচ্চিত্র “হরিবল”। আনিসুজ্জামান নিবেদিত ও বলেশ্বর ফিল্মস প্রযোজিত-এ ছবি’র কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য করেছেন নির্মাতা রেজা ঘটক নিজেই। তার ফেইসবুক আইডিতে চলচ্চিত্রটির সুটিং নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের সুটিং এর চিন্ময় চক্রবর্তীর স্থির চিত্র,এর টেকনিক্যাল বিষয় এবং গল্পের বিষয়াদি উঠে আসত।তখন হতেই আমার ধারণা ছিলো সংখ্যা লঘুদের উপর নির্মিত এরকম একটা বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র সময়ের প্রয়োজন ছিলো।
চলচ্চিত্রটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নির্যাতীত এক সংখ্যালঘু নারীর সত্য ঘটনার উপর নির্মিত।একজন তরুণ নির্মাতা “মুক্তিযুদ্ধের” একটি সিনেমা নির্মাণ করতে বলেশ্বর জনপদের একটি গ্রামে যান।সেই গ্রামেই খুজেঁ পান এক নিপীড়িত সংখ্যালঘু প্রান্তিক পরিবার।যেন এক গল্পের ভিতর অন্য আরেক নতুন গল্প।মুক্তিযুদ্ধ এবং সংখ্যালঘু নিপীড়িত প্রান্তিক পরিবার এই দুই গল্পের সমান্তরালে খুব উপজীব্য করেই নির্মাতা নির্মান করলেন হরিবল চলচ্চিত্রটি।গ্রামের কৃষ্টি কালচার ও ঐতিহয্য খুব রিয়েল ভাবেই ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন নির্মাতা রেজা ঘটক।
নির্মাতা রেজা ঘটক চলচ্চিত্রটিতে যে সব বিষয় ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেছেন তা হল-তার মতে…
হরিরল” একটি কৃষক পরিবারে রিয়েল গল্প যে পরিবারটি গ্রামপঞ্চায়েত হতে ন্যায় বিচার পায়নি।পরিবারটি সামাজিক ভাবে নৃগৃহের স্বীকার হয়েছেন।
ফারাক্কা বাঁধের পর পদ্মা নদী এবং এর শাখা ও উপনদীগুলো যেভাবে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে, এই পরিবারটির দশাও ঠিক তেমনি দেখানো হয়েছে।চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে একটি পরিবারের দুটি শিশু সন্তান যখন জলে ডুবে মারা যায় তখন পরিবারটি কীভাবে ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যায়।
হরিবোল” চলচ্চিত্রে পানি সংকটকে বেশ উপভোগ্য ভাবে হাইলাইট করা হয়েছে।
হরিবোল” চলচ্চিত্রে মৌলিক গ্রামকে দেখানোর মাধ্যমে গ্রামীণ সহজ-সরল মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে চিত্রায়িত করা হয়েছে।এ ছাড়াও ‘হরিবোল’ চলচ্চিত্রে বলেশ্বর জনপদকে হাইলাইট করা হয়েছে।
‘হরিবোল’ চলচ্চিত্রটিতে “মতুয়া” সম্প্রদায়কে বেশ হাইলাইট করা হয়েছে।
হরিবল” নদী,পরিবেশ বিষয়ক গল্প।
হরিবল” চলচ্চিত্রটি ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা প্রবাহের সাথে সংযুক্ত করেছেন নির্মাতা বেশ উপভোগ্য করে। চলচ্চিত্রটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পরবর্তী বলেশ্বর জনপদের যে রকম আতংককে ছিলো তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
নির্মাতা রেজাঘটক চলচ্চিত্রটির নির্মান নিয়ে বলেন, সিনেমাটি তৈরী করতে আমার প্রায় তিন বছর লাগল।ছবিতে আমি দুটি গল্পকে সমান্তরাল ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছি।মুক্তিযুদ্ধের গল্পের সাথে স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর একটি সংখ্যালঘু প্রান্তিক পরিবারের ওপর নেমে আসা প্রচলিত সমাজের অত্যাচার-নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।বড় ক্যানভাসে “হরিবল” চলচ্চিত্রটি জনপদের প্রতিনিধিত্ব করে-বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সহযোদ্ধা মাতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর এটি একটি বিশেষায়িত চলচ্চিত্র”।
তিনি আরো বলেন, হরিবোল’ চলচ্চিত্রে শেষ পর্যন্ত চিরন্তন প্রেমেরই জয়গান করা হয়েছে।চলচ্চিত্রে মানবিক প্রেমকে ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন দুটি গল্পকে একটি গল্পে আমি এ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্মে আনার চেষ্টা করেছি। আর অন্য গল্পটি নন-লিনিয়ার ফর্মে বলেছি। এ দেশের চলচ্চিত্রে একই সিনেমায় এভাবে দুটি সমান্তরাল গল্প দেখানো যদিও চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি এই চ্যালেঞ্জটি ইনটেনশনালি নিতে চেয়েছি।কারণ আমার সিনেমায় গল্প বলার ঢংটি অন্যদের থেকে অবশ্যই একটু আলাদা। একবিংশ শতকের দর্শক অবশ্যই নতুনত্বকে স্বাগত জানাবেন বলেই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
চলচ্চিত্রটিতে মিউজিক কম্পোজে আছেন অংশুমান।তিনি নিজেই তিনটি গান লিখেছেন চলচ্চিত্রটিতে যার মধ্যে একটি গান গেয়েছেন- বাউল সফি ম-ল,একটি তিনি নিজে এবং অন্যটি একঝাকঁ তরুণ শিল্পী।চলচ্চিত্রে লালন সাইজিঁর একটি গান আছে।আরো একটি গান আছে ভবা পাগলার,গানটি গেয়েছেন সাত্যকি ব্যানার্জি।চিত্রগ্রহণে ছিলেন মোস্তাফিজ ইসলাম, সেলিম হায়দার, জাহিদ হাসান, প্রণব দাস ও রেজা ঘটক।
যারা অভিনয় করেছেন তারা হলেন-হরিবল”চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সিনেমা বানাতে আসা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাজী ফয়সল।প্রান্তিক পরিবারের কর্তা নিতাই চরিত্রে অভিনয় করেছেন-ইকতারুল ইসলাম আর তারঁ স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৃপ্তি সরেন।এ ছাড়া নিতাইয়ের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাঙা’র চরিত্রে-এমরান হোসেন ও হরি চেয়ারম্যানের চরিত্রে সেলিম হায়দার।পারুর ভাই পল্টুর চরিত্রে আছেন প্রবন দাস,নিতাই এর বন্ধুর চরিত্রে আছেন লিয়াকত লিকু।ঝড়ু পাগলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান সহ প্রমুখ।
সিনেমাটি সেন্সরে গিয়েছে,নির্মাতা রেজা ঘটক আশা করছেন “হরিবল” সিনেমাটি সেন্সর হতে সফল ভাবে ফিরে এলেই এ বছরের আসছে নভেন্বর ডিসেম্বরে সিনেমাটি মুক্তি দিবেন।
সিনেমা জীবনের কথা বলে।সিনেমা সামাজিক অবক্ষয়কে খুব বাস্তব সম্মত ভাবে তুলে ধরতে বহুল প্রচারে একমাত্র মাধ্যম।বাংলা সিনেমার এমন আকাল সময়ে এমন বাস্তব ধর্মী সিনেমা নিঃসন্দেহে হল বিমুখ দর্শকদের হল মুখী করবে এটাই প্রত্যাশা।
সিনেমাটির সাফল্য কামনা করছি।
———————–
প্রথম প্রকাশ:সোনেলা ব্লগ
তথ্য ও ছবি:
নির্মাতার ফেইসবুক ওয়াল
প্রথম আলো,দৈনিক জনকণ্ঠ
ও অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮