হ্যালো!
হ্যালো!!
হ্যালো!!!
রিক্সাওয়ালাকে নিজের দিকে তাকাতে বাধ্য করতে কয়েক বার হ্যালো হ্যালো বলার পরও তিনি শুনছেন না।রিক্সাওয়ালা সোজা রিক্সা থামালেন এক অফিসের দরজায়।রিক্সায় আরোহী ভদ্রলোক অবাক!তার গন্তব্যের বিপরীতে চলে আসায় অনেকটা রাগ হয়েই বললেন।
-আরে বেটা তোরে একটা চড় দিতে মন চায় বুঝলি,তুই যাবি আমার অফিসে আর তুই এলি এদিকে।
-স্যার,রাগ কইরেন না…সময় শেষ তাই আজই কিনতে হবে।
-মানে!
-মানে স্যার নমিনেসন পেপার।আমি ইলেকসনে খারাইমু।
ভদ্রলোক এবার হার্টফেল করার অবস্থা।বলে কি বেটা!।ভদ্রলোকের মুখভঙ্গি দেখে রিক্সাওয়ালাও একহাত নিলেন।
-কেন স্যার!আমরা কি মানুষ না এ দেশের জনগণ না?
-তা কেনো!আমি ভাবছি ইলেকসন করতে হলেতো সামান্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে তাছাড়া নমিনেসন পেপার কিনতে আর জমা দিতে কম করে হলেও পচিশ ত্রিশ হাজার টাকা লাগবে।
-কোন সমস্যা নাই স্যার,আমি মেট্ট্রিক পাস আর টাকা! আমার আরো দুটো ব্যাটারী রিক্সা আছে ওগুলা বিক্রি কইরা দিমু।
-এর পর তুমি চলবে কি করে?
-কি যে কন স্যার,আমি পাস করলে কি আর এগুলা চালামু!
-আগেতো পাস করবি তারপর না হয় ভাববি।
-কেন? এ দেশে এতো এতো চোর মাস্তান পাস করতে পারলে আমি পারমু না কেন? হুনছি আমাগো খেলোয়ার মাশরাফি,হিরো আলমও নাকি নির্বাচন করব আমি হেগো থেকে কম কিসে?পরিশ্রম করে খাই হুম।তাছাড়া আর কত কাল এমন গরিবী হালে থাকমু কন?পাস যদি নাই করতে পারি তবে ইলেকসন খারানোর কারনে এলাকায় মানষে আমারে এমপি সাব কইয়া ডাকবো তাতেই আমি কোটিপতি হইয়া যামু।বুঝলেন স্যার,আস্তে আস্তে কই-এদেশে রাতরাতি কোটিপতি হইতে রাজনিতীই হইল এহন উত্তম জায়গা।দেহেন না এহন রাজনিতী কে না করে বলেন!দেশের সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দুই এহন রাজনিতীর কাতারে।
ভদ্রলোক ভাবলেন এর সাথে তর্কে পারা যাবে না।এ দিকে অফিসের সময়ও যায় যায়।
-ঠিক আছে ঠিক আছে,এই নাও তোমার ভাড়া।
রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোকের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন।
-ছি ছি স্যার লজ্জা দিয়েন না,ভাড়া লাগবে না শুধু দোয়া চাই।
এ কথা বলে রিক্সাওয়ালা রিক্সার চাকায় লক করে নমিনেসন পেপার কিনতে দিলেন দৌড়।ভদ্রলোকটি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।আর ভাবেন হায়রে রাজনিতী তুই এখন কোন পর্যায়ে চলে গেলি।না আছে বংশপরায়নপর রাজনীতির অভিজ্ঞতা না আছে শিক্ষা আর জনপ্রিয়তার আলো।ইচ্ছে হলেই,যে কেউ নেতা হতে চায়,হয়েও যায়।
অফিশিয়াল ব্যাগটি হাতে নিয়ে মাথা নীচু করে কিছুটা হেটেই যাচ্ছিলেন তার অফিসের দিকে।হঠাৎ সামনে এসে দাড়ালেন তার এক সহকর্মী।
-আরে স্যার যে,হেটে হেটে কি অফিসে যাচ্ছেন?
-আরে না ভাই রিক্সায় আসছিলাম হঠাৎ রিক্সাওয়ালার সাধ জাগল নেতা হবার।সে অনেক কথা।চলুন ঐ চা দোকানটায় একটু চা পান করে রেষ্ট নিয়ে নেই।
ব্যাস্ত শহরে আজ কাল মানুষের ঢল।আসছে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন।তাই নমিনেসন পেপার কিনতে মানুষের জোয়ার।নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে তেমন কঠিন কোন নিয়ম নীতি না থাকায় দিন দিন বাড়ছে নেতা বা প্রার্থীর সংখ্যা।কখনো দেখা যায় একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী,দেবর-ভাবীর নমিনেসন নেয়া এবং নির্বাচনী লড়াই।আজব মানুষ আমরা কোন একটা সেক্টর বা উৎসতে প্রফিটেবল দেখলে যেন আমরাই হ্যামিলনের বাশিঁর সূরে মেতে উঠি।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতেই সেই দোকানে দল বল নিয়ে হাজির হলেন এক নির্বাচনী প্রার্থী।মার্কার কাগজটি জনে জনে বিলি করছেন তার কর্মীরা আর সে নিজে যখন, যেখানে যাকেই পাচ্ছেন বুকে বুক লাগিয়ে দোয়া ও দাওয়া চাচ্ছেন।ঠিক সেই সময় সেখানে হঠাৎ উদয় হলেন এক উড়নচন্ডী পাগলের।পাগলের শরিরের অবস্থার কথা বর্ননা নাই বা দিলাম তার শরির হতে নির্গত দুগন্ধ যেন আমাদের রাস্তাঘাটে ফেলে দেয়া পচা ডাষ্টের চেয়েও অসহনীয়।সেই পাগল আচমকা প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকেন…যাবে যাবেগো এবার যাবেগো ইত্যাদি পাগলের যা প্রলাপ।
বেচারা প্রার্থী!নিজেকে খিচ মেরে সংযত রেখে পাগলের আলিঙ্গনকে স্বাগত জানালেন।তৎক্ষনাত তার কর্মীরা এসে পাগলটিকে ধীরে ধীরে নেতার কাছ হতে সরালেন।নেতার শরিরে জামা পুরোটাই ময়লা আর পাগলের মুখের লোল পড়ে নষ্ট হয়ে গেল।চায়ের দোকানে আর সবাইকে সালাম দিয়ে তড়িৎ তিনি চলে গেলেন তার দলবল নিয়ে।দোকানদারও কিছুটা স্বস্তি পেলেন।সেই দোকানেই বসা দুজন লোকাল বাসিন্দা বলাবলি করছেন।
১ম জন-শালায় একটা ভন্ড!গত বারও এ ভাবে ভোট ভিক্ষা চাইয়া এলাকায় কোন কাম করে নাই খালি নিজের পকেট ভরেছে।
২য় জন-তাতো হবেই!দেখতে হবে না ওর বংশ পরিচয়!ওর জাত খান্দান!ও’তো নন মেট্ট্রিক,ট্রাকের হেলপারি করত।দিন আনতো দিন খেতো।মায় করত বেশ্যাগিরি বাবা করত কুলিগিরি…ও আর কত ভালা হইব!ট্রাকষ্টেসনের সদস্য হইয়া কিছু টাকা কামাইছিলো!সেই টাকার গরমের নির্বাচনে দাড়াইয়া টাকা উড়াইয়া পাস করছিলো।এই বার কি করবে?
পাশেই বসে চা পান করছিলেন ভদ্রলোক ও তার সহকর্মী।লোকাল বাসিন্দাদের এমন তর্কে যেন কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তার মন।এক সময় তর্কের সাথে তাল মিলালেন।মাঝে মধ্যে তার সহকর্মীও দু একটা কথা বলে ফেললেন।
-হ্যালো!ভাইজানরা কি এখানকার লোকাল পাবলিক?
-হ’ভাই।
-আচ্ছা,এই যে তর্ক করছেন দুজনে,এখানে কি আমি কিছু কথা বলতে পারি?যদি অনুমতি দেন।
লোক দুটো খুব উৎফুল্ল ভাব নিয়ে অনুমতি দিলেন।
-জি জি বলেন।
-আপনাদের কথায় বুঝতে পারলাম তিনি মানে ঐ যে কিছুক্ষণ আগে একজন নির্বাচন প্রার্থী এসেছিলেন ভোট চাইতে।তিনি সাবেক সাংসদ ছিলেন তাইতো?
১ম জন- জি,এমপি ছিলেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে,তো তিনি এমপিতে পাস করলেন কি ভাবে?আপনারা মানে জনগণ কি তাকে ভোট দিয়ে পাস করান নাই?নাকি সে ভোট ছিনতাই করে সন্ত্রাসী কায়দায় এমপি হয়েছেন?
২য় জন-না,না,সে ভোট পেয়েই পাস করেছিলো।
-তাহলে তার এমপি হওয়াতে তার দোষটি কোথায়?আপনি আমরাইতো তাদেরকে ভোট দেই তাই না?যদি আমরা আমাদের দেখবালের প্রতিনিধি নির্বাচনে সঠিক যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে বেছে নিতে না পারি তবে তার এমপি হওয়ার পরবর্তী অপকর্মের দায় কার?নিশ্চয় আমাদের?
১ম জন মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললেন।
-এবার আসি আপনার শেষের কথায়।আমাদের দেশে প্রতি পাচ বছর অন্তর অন্তর আমরা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেই।ভোট দেয়া একটি পবিত্র দায়ীত্ব এবং মৌলিক অধিকার।এখন আপনি আমি যদি সেই পবিত্র ভোটটিকে অপবিত্র করি টাকা খেয়ে তবে দোষ কার?আমি আমার কর্মফল ভোগ করব এটাই চিরন্তন সত্য,তাই নয় কি?সেতো আপনাকে আমাকে টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলল এ অবস্থায় তার কাছ থেকে কি আর কোন সুবিদা আশা করতে পারি?সেতো ভোটে পাস করে তার লগ্নি তুলবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?।
তর্ক করা দুজনেই একদম বোবা হয়ে গেলেন। এবার ভদ্রলোকটির সহকর্মী বললেন।
-আর ঐ যে বললেন বংশ পরিচয়!।ভাল এবং যোগ্য নেতা হতে হলে ভাল কোন বংশ পরিচয় লাগে না।জগতে এ রকম বহু উদাহরণ আছে যারা মুচির ঘরে জন্মেও সমাজ সেবায় জীবন দিয়েছেন,হয়েছেন জগৎ বিখ্যাত।তাইতো গুণিজনেরা বলে গেছেন”জন্ম হোক যথা তথায় কর্ম হোক ভাল”।
আর একটা কথা মনে রাখবেন,যে দেশের রাজনৈতীক নেতারা কেবল মাত্র তাদের স্বার্থ সম্বলিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া কি ভাবে হবে তা ঠিক করতেই পার করে দিয়েছেন দীর্ঘ ৪০/৪৫টি বছর সে দেশের জনগণ হয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে আমাদের ভবিষৎ ভাল করার নেতা নির্বাচনে।শুধু অন্যের দোষ নয় নিজেকেও মাঝে মধ্যে আয়নায় দেখতে হবে নিজের চেহারাটা কেমন।তাই আসছে নির্বাচনে সঠিক নেতা নির্বাচনেই দেশ ও দশের উন্নয়ণ ঘটবে নতুবা আমরা যেই আছি সেই থেকেও পিছিয়ে পড়ব বহুগুণ দূরে।
তর্ক কারীদের মুখ বন্ধ-মাথা নত।শুধু মুখে বলে যাচ্ছেন,জি জি….স্যার।
অসমাপ্ত
ছবি:অনলাইন সংগ্রীহিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২