বাড়ীর পাশের একটি চা স্টলে চা পান করে রাত জাগা চোখের রোগ সারিয়ে নিলেন সূর্য্য তারপর হাটতে লাগলেন সোজা সমরদের বাসার দিকে।সমরদের বাসাটা তার বাসা হতে দশ পনের মিনিট পথের হাটার দূরত্ব।হাটছেন আনমনে নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ ভেবে।গত রাতে তার মা তাকে সংসারি হতে ওয়াদা করিয়েছেন যদিও তার মত ছিল না তবুও মায়ের কথা সে কেমন করে না রাখেন,মায়ের অবাধ্য হবেন অমন সন্তান সে নয় তাছাড়া জন্মের পর হতেই সে মাকে দেখেছেন সীমাহীন কষ্টের মাঝে দিন রাত একটি প্রাইভেট অফিসে পরিশ্রম করে সংসারটাকে টিকিয়ে রেখেছেন।পরে মায়ের আশ্রিয়তার রেখে যাওয়া বিষয় সম্পত্তিকে সংসার উন্নয়নে কাজে লাগান সেই মায়ের কথার অবাধ্য!কখনোই না,….।যতক্ষণ হাটছেন ততক্ষনই ঘরে ফেলে আসা মেয়েটির মুখচ্ছবি চোখে ভাসছে।তার সামনে দিয়েই গণ জাগরন মঞ্চের আনন্দ মিছিল যাচ্ছে মতিউর রহমান নিজামীর ফাসি পর রিভিউ আবেদনের পরিপেক্ষিতে,সে দিকে কোন খেয়াল নেই তার আনমনে হেটেই চলছেন হঠাৎ থেমে পিছু ফিরে বুঝতে পারলেন,সমরদের বাড়ীর পথ রেখে অন্য পথে হাটছেন।এমনি হয় অনেক সময় বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গিয়ে ফিরে মনে করতে খুব সময় লেগে যায়।নাহ্ সে আর পিছু হাটবেন না বরং ফোন দেয়া যাক।
-হেলো,সমর…।
-হ্যা,,,,
-কি করিস বাসায়?
-আমি বাসায় নই,
-তাহলে!
-রমনার বটমুলে তোর হবু ভাবীকে নিয়ে একটু আড্ডা দিচ্ছি,
-ওকে আমিও আসছি…।
মোবাইলের লাইন কাটতে না কাটতেই আবারও এক অচেনা নম্বরের রিং এলো।
-হেলো,অলাইকুম সালাম….কে বলছেন প্লিজ?
-বললেও চিনবেন না,শুধু বলবো আপনাদের বাসায় যে মেয়েটি আছেন তার সম্পর্কে কিছু জানেন কি না?মানে কি তার পরিচয়…/
-দেখুন নিজের খেয়ে পরের মহিষ তাড়ানোটা আমার পছন্দ নয় তা ছাড়া আপনি এক অচেনা ব্যাক্তি তাই প্রশ্নেই উঠে না আপনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত কোন কথা সেয়ার করা,সরি…..।বলে লাইনটা কেটে দিল স্বয়ং সূর্য্য তবে মনের ভিতরটায় খটকা লাগে,,,সত্যিইতো যাকে তার মা জীবন সাথী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তার সম্পর্কে সে কিছুইতো জানেন না…..পরক্ষণে আবারো সে তার মায়ের প্রতি বিস্বাস এনে ভাবেন যা হবার তা হবে,মা তো তার ছেলের অমঙ্গল চাইবেন না।
তবুও আজকে তার মনটা কেমন যেন বিস্বাস অবিস্বাস ভাল মন্দ দ্বন্দের মাঝে ছটফট করছে।এভাবে সে কখনোই ভাবেননি,জীবনকে ছেড়ে দিয়েছিলেন দেশ মার্তৃকার তরে।দেশের মমতায় নিজেকে সংসারি হতেও দেয়নি তার পাষান্ড মন।তবে আজ কেনো বার বার এক স্পর্শকাতর বন্ধনে জড়াতে চাচ্ছে মন।উত্তর,হয়তো এটাই পৃথিবীর নিয়ম নশ্বর জীবনের ধারা।
ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে হেটেই যাচ্ছেন সূর্য্য।জীবন জীবিকারা এ রাস্তাগুলোকেও দোকান পাট বানিয়ে দখল করে রেখেছেন ফুটপাতের রাজারা তেমনি কতগুলো চায়ের দোকানের পাস দিয়ে যেতেই অভির সাথে দেখা সে তার আরো কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে চা পান করছিলেন।
-কি ব্যাপার কোথায় হতে এলি,এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?
-তুই এখানে কি করিস?তোর তো আজ কোর্ট ছিল,যাসনি?
-কোর্ট থেকেইতো এলাম?
-মামলার কি খবর?
-আর বলিস না বিচারকের তুলনায় মামলা অনেক,কোনটা রেখে কোনটা শেষ করবে তাতে বিচারকদের হিমসিম খেতে হয়।….যা-ই আছেন তাও আবার দল ভিত্তিক।
-যখন যে সরকার তখন তার কথা কয় এ দেশের কোর্টকাচারি।বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুফল কখনোই আমরা পাইনি আর পাবো বলেও মনে হয় না।
-সব সরকারতো এক নয় চাচা।
উপরোক্ত উক্তির উত্তরে সূর্য্য তার জবাব দেন।মুরব্বি যেন সুযোগ পেয়ে কথা বলার জন্য বসলেন তাদের পাশে।
-কোনটা শেষ হয়েছে বলেনতো….সাগর-রুনি থেকে শুরু করে রানা প্লাজা,বিশ্বজিৎ হত্যা,আপনাদের মতো মুক্তমনা অভিজিৎ,রাজিব,নিলয় কিংবাবিদেশীদের হত্যা কোনটা শেষ করতে পেরেছেন।আগের মামলাগুলোতো ঝুলে আছে তার উপর তনুদেরমতো নতুন নতুন মামলার সৃষ্টি হচ্ছে।
-সব ঠিক হয়ে যাবে ,একটু সময়তো লাগবেই চাচা।
-কত বছর,সেই কবে থেকে মুক্তি যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে ৪৬টি বছর লাগিয়েও এখনো শেষ করতে গড়িমসি করছেন।আর কবে শেষ করবেন “আমরা যারা যুদ্ধ করেছি তাদের বিয়োগ ঘটলে!।
-সরকার চেষ্টা করছেন যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা যায় তাছাড়া যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়টি বড় স্পর্শকাতর এটাকে তরিগড়ি করে শেষ করা ঠিক নয়।তবে সরকার সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন দেশকে স্বাবলম্ভি করতে অর্থনিতীর দিকে অর্থনিতীর চাকা যত সচল হবে ততই দেশ থেকে অপরাধ কমে যাবে বলে মনে করেন সরকার।
পাশেই বসা ছিলেন শাহবাগ চত্বরের নিয়মিত আন্দোলনকারি নাম না জানা এক যুবক সে উকি দিয়ে একটু জোরে শব্দ করেই বললেন।
-কি বললেন ভাই…অর্থনিতী!তা আমরা শক্ত করব রক্ত মাংস পানি করে আর আপনেরা তা জোয়ার আসরে ক্যাসিনোতেব্যাবহার করবেন।অবাক লাগে দেশের রিজার্ভ ফান্ডের টাকা চুরি হয়ে যায় তাও কি ভাবা যায়!ও… এই টাকাতো কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে কিংবা বিশেষ কোন জন কল্যায়নে ব্যাবহার করতেন,,,,গরীবের টাকা তা খোয়া গেলে কার কি যায় আসে,তাই না!
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন বা দেখছি ঠিক আছে,এক বারও কি এর নিরাপত্তার কথা ভেবে দেখেছি আমরা…….।এই যে আমাদের মোবাইল সিমের নিবন্ধনে আঙ্গুলির ছাপ নিচ্ছেন সরকার ব্যাক্তিগত তথ্যাদি বিলিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন ভিনদেশীদের এর কুফল যে আমারা পাবোনা তার বা গ্যারান্টি কি?অথচ আমাদের ভোটার আইডি কার্ডটিকে মুডিফাই না করে ফেলে রেখেছেন অকেজু করে।বিশ্বের সর্বত্রই এই আইডি কার্ড দিয়েই সব কাজই হচ্ছে।অঙ্গুলি ছাপের অপব্যাবহার হলে ৩০০কোটি টাকা জরিমানা তার অর্থ কি দাড়ায়!এর অপব্যাবহারের ভয় রয়েই গেল,নয় কি?।
তাদের কারো কোন কথার জোরালো ভাবে অভি সূর্য্যরা উত্তর দিতে পারলেন না।শুধু এই টুকুই বললেন যে…..।যাই হোক শুক্কুর আলহামদুলিল্লাহ যে অন্তত হরতাল নামক সন্ত্রাস থেকে আপাতত মুক্ত আছে দেশের মানুষ।.. বলে ওরা চা ষ্টল হতে প্রস্থান নিলেন।
কর্মসংস্থান বৃদ্ধি,পদ্মা সেতু,ফ্লাই ওভার সহ অর্থনিতীর দিক দিয়ে দেশ এক দিকে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির দিকে তেমনি মানবতার বিপর্যয়ও বেড়েছে আশংকা হারে।বিশেষ করে নারীও শিশু নির্যাতন হত্যা চলছে অহরহ।
বয়বৃদ্ধ নেতাদের উচিত উঠতি যুবকদের নেতৃত্বে সুযোগ করে দেয়া যাতে নতুন প্রজন্মরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে সচল রাখতে পারেন।
-যাই বলিস গত দিনে বাশখালীতে যে ঘটনা ঘটল তাও দুঃখজন।ওরা হাটতে হাটতেই কথাগুলো বললেন।এর মধ্যে ফোনে যোগাযোগ করে সমর তাদের সাথে মিলিত হয়ে পাবলিক লাইব্রেরিতে চা পান করে একচোট সাহিত্যিক আড্ডা দিয়ে বেরিয়ে পড়েন যার যার বাড়ীর উদ্দ্যেশ্যে।
বাসায় এসে সূর্য্য যেন কথা হারিয়ে ফেললেন সে কারো সাথেই তেমন কোন কথা বলছেন না,খাটে বালিশ মুড়ো দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছেন।নন্দীনি,মেয়েটি বেশ কয়েক বার জানতে চেয়েছেন কি হয়েছে তার সে কোন উত্তর দেননি।অবশেষে নন্দীনি মায়ের নিকট রান্না ঘরে গিয়ে কাদো নয়নে হাত পা গুটিয়ে দাড়িয়ে রইলেন…তাতে মা বেশ কয়েক বার লক্ষ্য করলেন তারপর মার তার সুন্দর মুখটির উপর লক্ষ্য করে দেখতে পেলেন তার দুচোখের জল টলটল করছে।
-কি রে নন্দীনি সূর্য্যের সাথে ঝগড়া হয়েছে?
মাথা নেড়ে না করে সে।
-তবে?
মা তার কোন উত্তর না পেয়ে সে নিজেই সূর্য্যে ঘরে প্রবেশ করেন।অন্য সব সময়ের মতো আজ সূর্য্য মাকে ঘরে ঢুকতে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসেন নি,মা এবার ডাকছেন তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না।যখন গায়ে হাত দিয়ে ঝাকি দিয়ে তাকে ডাকলেন তখন সে এক প্রকার অনিহা ভাব নিয়ে নন্দিনীর বিষয়ে দু একটি কথা বললেন সূর্য্য….. তাতে মা রেগে যান বলতে থাকেন মেয়েটির ইতিহাস।
-আমিতো বলেছিলাম সব কিছুই জানতে পারবি তবে এখন যখন বাধ্য করলি তবে শুন…..
মেয়েটির জন্ম অ্যামেরিকায় তার মায়ের জন্ম এদেশে ১৯৭১ এ…
সর্বত্রই যুদ্ধের সমাপ্তি,চারদিকে আনন্দ উল্লাস,জয় বাংলার শব্দে মুখরিত বাংলার আকাশ-জমিন।দীর্ঘ নয়টি মাসের রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে কেউ হারিয়েছেন তার মাকে কেউ বা ভাই বোন আত্মীয় স্বজনদের।যুদ্ধাস্থ ধ্বংসস্তুুবের মাঝে অনেকে খোজে বেড়াচ্ছেন তার রক্তের আত্মীয় স্বজনদের।কেউ পেয়ে আনন্দের অশ্রু ঝড়াচ্ছেন কেউ বা না পাওয়ার যন্ত্রনায় রক্তাক্ত মাটিতে লুটোপুটি খেয়ে বিলাপ করে স্রষ্টার দরবারে হাত তুলে অভিশাপ দিচ্ছেন শত্রুদের।আর যারা কেবলি ধর্ষিত নারী বীরাঙ্গনা তাদের শব্দহীন মুখবয় বেয়ে অঝর ধারায় ঝর্নার ন্যায় ক্রমাগত নয় মাসের পাষবিক শারিরীক নির্যাতনের জল প্রবাহিত হচ্ছে…এ এক অন্য রকম দৃশ্য এ এক অন্য রকম অনুভুতি।কারো মা ভাই নেই হয়তো তাতেও দুঃখ নেই সে স্বাধীনতা পেয়েছে,পেয়েছেন স্বাধীন সার্বোভৌমত্ব একটি স্বদেশ কিন্তু এদেরতো সব থেকেও যেন কিছুই নেই,বেচে থাকা যেন এক একটি জিন্দা লাশ…..।
চোখে জল এসে পড়ে মায়ের,নন্দিনী ঘরের ওপাশে আড় পেতে সবই শুনছেন আর চোখের জলে বুক বাসাচ্ছেন,সূর্য্য ক্রমাগত নিস্তব্ধ-বাকরুদ্ধ।নন্দিনীর নানী সে দিন তার মাকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন লোকজনের কটু কথা আর পাড়ার নেতারা জোড়পূর্বক তার শিশু মাকে দত্তক দেন নয়ওয়ের এক এনজিওকে সেখান থেকে আমেরিকার সন্তাহীন এক ধনাঢ্য ব্যাবসায়িকের ঘরে লালিত পালিত হন।তারপর…
চলবে..
লেখাটিসোনেলা ব্লগ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে
ছবি:অনলাইন হতে সংগৃহীত
কৃতজ্ঞ:বিভিন্ন অনলাইন বাংলা পত্রিকা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:০৩