সীমা ইসলাম। ছাত্রলীগ নেত্রী। নির্যাতিত নেত্রী। আপনি এ ব্লগে আমার লেখা পড়বেন কিনা জানিনা। তবু আপনার উদ্দেশ্যে আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে হল।
প্রতিদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় অনেক অনেক হেডলাইনের মত ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় আপনার সককর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের ছবি দেখে থমকে যাই। খবরের ভিতরে যা লেখা আছে তার থেকে ভয়াবহ বর্ণনা ছবিটিতেই দেখা যাচ্ছে। আপনাকে এভাবে নির্যাতনের দৃশ্য দেখে আমার শৈশবকালীন এবং ছাত্রাবস্থার কিছু কথা মনে পড়ে গেল।
--- পাড়ায় মুরগী চুরির ঘটনায় মামাদের বিশাল বড় বাড়ীর সামনে একটি সালিশ বসে। মুরগী চুরির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে বলে এক দরিদ্র নারীকে সামনে আনা হল। জেরা আর সাক্ষী-সাবুদে মহিলাটি দোষ স্বীকার করল।
--আর যায় কোথায়। নদীর ঘাটে বস্তিতে বসবাসকারী অদু, অজা, ইমদুরা কয়েকজন ঝাপিয়ে পড়ে মহিলার উপর। উপর্যুপরি কিল, ঘুষি, লাথি চলল এক অবলা নারীর উপর। রিকশা চালানো কিংবা নৌকা চালানোর মত কষ্টসাধ্য কাজ করে করে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত অদু, অজার হাতের পেশী ফুলে উঠেছে। সেই শক্তিকে বলিয়ান অসম সাহসী(!) এই মুর্খ পুরুষরা শত শত মানুষের সামনে একজন অবলা নারীর উপর চালালো কঠোর নির্যাতন।
-- যারা সালিশে বসেছিলেন তারা বাধা দেয়া সত্ত্বেও বিচার করতে বাধছেনা এই সুপুরুষদের। অতঃপর তারা মানে মানে সরে পড়েন। মহিলাটির আর্তচিৎকার আর কান্না দেখে পাড়ার মহিলারা বেরিয়ে এলেন। কত অনুনয় বিনয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এক একটি কিল পিঠে পড়ছে আর মহিলাটির দূর্বল শরীর বেঁকে যাচ্ছে ধনুকের মত। কি ভয়াবহ দৃশ্য। এক একটি লাথি পড়ছে একজন কোমলমতি মায়ের উপর আর সে ছিটকে পড়ছে কয়েক ফুট দুরে। যৌবন প্রাপ্তির রুদ্র আনন্দে যুবলীগের এই অশিক্ষিত কর্মীরা চালিয়ে গেল তাদের তান্ডব। অবশেষে হয়রান হয়ে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে চলে গেল আড্ডাখানায়।
-নির্যাতিত মহিলাটি পা ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে কোন মতে উঠে দাঁড়াল। অতঃপর অভিশাপ দিতে দিতে খুঁড়িয়ে হেটে চলে গেল। আমার শৈশবে দেখা সেই ভয়াবহ চিত্রটি আমাকে আজও খুবই পীড়া দেয়।
--সীমা, আমরা আপনার কাছে, আপনাকে এবং সেই দরিদ্র মহিলাকে নির্যাতনের জন্য ক্ষমা প্রার্থী। আমরা এই সভ্য সমাজে নির্যাতনের দৃশ্য উপভোগ করেছি। আপনাদেরকে বাঁচাতে পারিনি।
-সীমা ইসলাম, আমার দেখা দরিদ্র মহিলাকে যারা নির্যাতন করেছিল তারাও মানুষ ছিল, কিন্তু ছিল মুর্খ- সভ্যতার আলো তারা পায়নি। কিন্তু আপনাকে একই ভাবে যারা আহত করল, রক্তাক্ত করল তারা উচ্চশিক্ষিত। আমরা আমাদের শিক্ষার দৈন্যতার জন্য আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
-সীমা ইসলাম, আমার জেলা ফরিদপুরে আমার সহপাঠী ও বন্ধু রাজেন্দ্র কলেজের এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা বিটু প্রতিবছর জসিম পল্লী মেলায় মেয়েদের উড়না টেনে নিত। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার সহকর্মীরা আপনাকে প্রকাশ্যে আঘাত করেছে। ছাত্ররাজনীতির প্রচন্ড সমর্থক হিসেবে আমি, এই রাজনীতির দৈন্যতার জন্য আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
-বোন সীমা, আপনাকে আহত করার ছবি দেখে, আপনার কান্না জড়িত ছবি দেখে আমার নিজের বোনের কথা মনে পড়ে যায়। কি নিদারুন আঘাত আপনাকে সইতে হয়েছে! আপনার মত হালকা পাতলা গড়নের আমার বোনের উপর এ নির্যাতনের চ্রিত্র আমি কল্পনাতেও আনতে পারিনা। এ আঘাত আপনি ভুলতে পারবেন না কোনদিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিতরাও পারবেনা তা ভূলতে। আমরা একজন ভাই হিসেবে, একজন নাগরিক হিসেবে, রাজনৈতিক সচেতন হিসেবে আপনার কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রাথী।
-সীমা, আপনি এক অসময়ে এই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। একজন নারী হিসেবে আপনার প্রতি এ নির্যাতন সরকারের কোন সংস্থা প্রতিরোধ করেনি, মানবাধিকারের এই সূবর্ণ সময়ে কোন নারী সংগঠন তার প্রতিবাদ করেনি, কোন টিভি চ্যানেল বা কোন আইনজীবী টকশোতে অংশ নেয়নি, নারী নীতির প্রস্তাবকরা আপনার অধিকারের জন্য একটি বর্ণও উচ্চারন করেননি।। এরকম অদ্ভূত রকমের হজম শক্তির জন্য আমরা আপনার কাছে করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী।
বোন সীমা আপনি এঘটনা হয়তো ভুলতে পারবেন না। কেননা আপনাকে এখন যে ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা আমি আন্দাজ করতে পারিঃ
-- আপনাকে আপনার পরিবার থেকে প্রচন্ড চাপ দেয়া হবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করনতে।
-- আপনার আত্মীঅয় স্বজন প্রশ্ন করবে কেন এভাবে রাজনীেতেতে জড়িয়ে পড়লে এবং নিজ কর্মীদের হাতে অপমানিত হলে?
-- আপনার দলের বিপক্ষ শক্তি আপনার দূর্বলতার সুযোগে আপনার বিরুদ্ধে নৈতিকতা বিরোধী অপবাদ আরোপ করতে পারে। আমিও ছাত্রজীবনে দেখেছি কিভাএব দলীয় কর্মীরাই চাত সংসদের মহিলা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করছে। আপনার নেত্রী মতিয়া চৌধুরীকেও এরুপ অপবাদ দেয়া হয়েছিল। বেচারী রাগে দুঃখে, অপমানে দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
-- দুলের মুরুব্বীরা এ ঘটনা ভুলে যেয়ে আবার এক হতে বলবে এবং আপনাকে হয়তো তাদের সাথেই হাত হাত রেখেই মানববন্ধনে অংশ নিতে বলবে যারা আপনাকে পিটিয়ছে। এ ধরনের অবস্থায় আপনার মনের অবস্থা যে কেউ অনুমান করতে পারবে।
--আপনার সংসার হলে আপনার সন্তান এ ছবি দেখে আপনাকে প্রশ্ন করবে কেন নিজ দলের কর্মীরা এ ঘটনা ঘটালো এবং কেন সেই দলের কর্মী আছেন? আপনার জন্য এটা অত্যন্ত বিব্রতকর হবে।
সীমা ইসলাম, এভাবে আপনি সবসময়ই রাগে , দুঃখে, অপমানে ফেটে পড়বেন আর নিভৃেত কাদবেন। কিন্তু কাদঁলেই কি সমাধান হবে। এজন্য আপনার প্রতি কিছু পরামর্শ থাকলঃ
-- মুলদলের কর্মসূচীতে আপনি এবং আপনার সহকর্মীরা নিয়মিত অংশ নেন এবং তাতে নির্যাাতনকারীদের বিচারের দাবীতে ফেষ্টুন বহন করুন।
-- আপনার কোন বক্তব্য এখন আপনার দলের বিরুদ্ধে যাতে না যা সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং শুধুমাত্র ঘৃণ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কথা বলুন।
-- আপনি সবসময় ছাত্রী কর্মীদেরকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করবেন। এরাই আপনার বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রচারনার বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
-- আপনি ই্ত্তফেকা বা প্রথম আলোসহ অন্য পত্রিকায় সম্পাদকদের সাথে দেখা করুন এবং তাদেরকে নির্যাতনবারীদের ছবি প্রচার করতে বলুন। বিশেষ করে প্রথম আলো ও ডেইলী স্টারকে প্রশ্ন করুন অন্যান্য ছোট খাটো বিষয়ে যেভাবে তারা সিন্ডিকেটেড নিউজ প্রচার করে, আপনার
্যাপারে তারা নিশ্চুপ কনে?
-- আপনি নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করুন এবং প্রশ্ন করুন আর কত নির্যাতনের স্বীকার হলে এটা নারী নির্যাতন বলে তাদের কাছে গৃহীত হবে?
-- আপনি মানবাধিকার কর্মীদের কাছে যান এবং তাদেরকে বলুন কিভাবে নির্যাতিত হলে আপনার মানবাধিকার লং্ঘনের ব্যাপারে তারা কথা বলবে।
--আপনি টিভি চ্যানেলগুলো ফোন করুন এবং বলুন আর কিভাবে নির্যাতিত হলে তারা টকশো আয়োজন করবে।
-- আপনার পরিবারকে ধৈর্য্য ধারন করতে বুলন এবং বলুন নির্যাতনকারীদের ভয়ে পিছুটান দিলে, আন্দোলন বন্ধ করণে একদিন তারা ঘরে ঢুকে নির্যাতন করে যাবে।
সীমা ইসলাম, আপনার প্রতি সহমর্মিতা আর সহানুভূতি থেকেই এগুলেঅ বললাম। কেননা ইয়াসমীন, রাহেলা, বাঁধনদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে। আপনাকেও প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনকারীদের শাস্তি হোক শুধু এ প্রত্যাশা নয় এর জন্য যাতে আমরা প্রচেষ্টাও নিতে পারি সেটা এখন সময়ের দাবী।
- বোন সীমা, আপনার সুস্থ্যতা কামনা করছি।
সেই সাথে এই ব্লগের সহব্লগার ফয়সাল নোই, মানবী, আমীরুজ্জামান এবং অন্যান্যদেরকে সীমার বিষয় নিয়ে তার মানবাধিাকার লং্ঘনের ব্যাপেরে কিছু করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।