প্রবাসীরা অমানুষিক পরিশ্রম করে এদেশে টাকা পাঠান তাদের প্রিয়জনদের একটু সুখের জন্য। মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করেন তারা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রোদে পুড়ে বা রাতে কনকনে শীতের মধ্যে কাজ করছেন। লোকালয় থেকে শত শত মাইল দুরে ১৫-২০ দিনের খাবার নিয়ে একজন বা দুইজন করে রাখালের কাজ করছেন। ভাবতে পারেন! কারও সাথে কোন যোগাযোগ থাকেনা। ১৫-২০ দিন পর মালিকপক্ষ খাবার ও বাড়ির খবরাখবর, চিঠি-পত্র দিয়ে আসে। মহিলাদের জন্য রয়েছে আরো সমস্যা।
ইউরোপে যারা অবৈধভাবে কাজ করছেন তারা সবসময় গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগেন। টাকা পাঠাতে পারেনা বৈধ উপায়ে। ফলে অবৈধ উপায়ে পাঠানো টাকা যদি কোন রকম খোয়া যায় নালিশও করা যাবে না কারো কাছে। ইটালীসহ দক্ষিণ ইউরোপে আবার মাফিয়াদের জ্বালা।
আমেরিকায় একই অবস্থা। মদখোর হিস্পানী বা সন্ত্রাসীদের টাকা না দেয়ায় গত কয়েকবছরে অনেক বাংলাদেশী গুলি খেয়েছেন। অনেকে জমি-জিরাত বিক্রি করে সেখানে যেয়ে আবার ডিপোর্টেশনের শিকার হয়েছেন।
আর আমাদের বাড়ীর কাছে মালয়েশিয়ায় 'আজরাইল ক্যাম্প'-এর কথা আমাদের সবারই জানা। এসব কষ্টের মধ্যেও তারা টাকা পাঠাচ্ছেন। তাদের টাকায় গ্রামে ঘর উঠছে, গরু-ছাগল কেনা হচ্ছে, ছোটবোনের বা মেয়ের বিয়ে দেয়া হচ্ছে, ছোট ভাই বা সন্তানের স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধ হচ্ছে, জমি কেনা হচ্ছে, বর্গা দেয়া হচ্ছে-এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
নিজেদের কষ্ট তারা মুখ বুজ সহ্য করছেন র্দীর্ঘদিন ধরে ভবিষ্যতের সুখের আশায়। তাদের আশায় আমরাও আশান্বিত হই। আর আমাদের অর্থমন্ত্রী-গভর্ণররা মুচকি হেসে আত্নতৃপ্তিতে ভুগছেন দেশের রিজার্ভ বাড়ছে বলে।
কিন্তু ধীরে ধীরে দির্ঘদিন ধরে যারা অল্প অল্প করে সঞ্চয় করেছেন কিছু সম্পদ সিডরের তান্ডবে তার সবই শেষ হয়ে গেছে। রাতেও যার সম্পদ ছিল লাখ লাখ টাকা সকালেই তার মূল্য শূণ্য। তার সাথে গেছে প্রিয় কতগুলো মুখ।
জানিনা মরুভূমির শূন্যদানে আমার সেই ভাই কোন খবর পেয়েছেন কিনা। জানিনা রাতের আকাশের তারার মাঝে তার একান্ত প্রিয় মানুষের হাসিমুখ খুঁজে ফেরেন কিনা। কে নেবে তার খবর? পাঁচ, দশ বা তারও বেশীদিন শ্রম দিয়ে যে আশ্রয় তারা গড়েছিলেন তার সবই গেছে- এখন চাকরী ছেড়ে আসলে তারা কোথায় দাঁড়াবেন। কে তাদের দেবে বীমার নিশ্চয়তা?
আমরা যারা তাদের শ্রম নিয়ে গর্ব করি তাদের কি কোন দায়িত্ব নেই? আমাদের সরকার কি পারেনা তাদের জন্য কোন ব্যবস্থা করতে? নাকি আসন্ন ঈদ মৌসুমেও আমরা আরো রিজার্ভ বৃদ্ধির আশায় থাকব?