☯☯
সন্ধ্যা ৭ টা।
মিসির আলি সাহেব বারান্দায় বসে আছেন। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে রিনিঝিনি শব্দ হচ্ছে। মিসির আলি সাহেব সেই শব্দ মোহাবিষ্টের মত শুনছেন। বৃষ্টির শব্দের সাথে বেঙের ঘোঁত ঘোঁত ডাকের শব্দ কেমন যেন একটা মায়াবি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তারকাছে মনে হচ্ছে তিনি এই পৃথিবীর কেউ না। অন্য কোন এক গ্রহের মানুষ-যেখানে আছে শুধু বৃষ্টির শব্দ, বেঙের ডাক আর মিসির আলী।
তার এক হাতে একটা বেনসন সিগারেট অন্য হাতে এক কাপ লাল চা। বৃষ্টির সময় দুধ চা খেতে ভাল লাগে না তার, মিসির আলির মতে বৃষ্টির সময় খেতে হয় আদা দেওয়া লাল চা। বৃষ্টি আর আদার চায়ের কম্বিনেশান তার কাছে অতুলনীয় মনে হয়।
☯☯ বর্ষা কাল। মিসির সাহেব ঢাকায় ছিলেন। হটাৎ মনে হল এই বৃষ্টির সময় গ্রামে যাওয়া যাক, টিনের ঘরে শুয়ে কিছু দিন বৃষ্টির শব্দ শুনা যাক। জীবনে অনেক স্বপ্ন থাকে কিছু বড় কিছু ছোট। বড় আশা হয়ত পূর্ণ হয় না, তাই যতটা সম্ভব ছোট ছোট আশা পূর্ণ করা উচিৎ।
মিসির আলি নিজের এই ছোট আশা পূর্ণ করার জন্য এক গ্রামের বন্ধুর বাসায় এসে হাজির। বন্ধুটি গ্রামের চেয়ারম্যান। বিরাট সংসারি মানুষ। মিসির আলি আসায় খুব খুশি হয়েছেন বলা যায় একটু বেশি খুশি হয়েছেন। নানা ধরনের পাগলামি করে এই জ্ঞানি বন্ধুটিকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
গতকাল গঞ্জ থেকে এক জাদুকর নিয়ে হাজির। ঐ আনাড়ি হাতের জাদু দেখে মিসির আলি মুগ্ধ হবার চেয়ে বিরক্তই বেশি হলেন। কারন ওর জাদুর বেশির ভাগ মিসির আলি ধরতে পেরেছেন। তবুও তিনি কিছু বলেন নাই। উনি মুগ্ধ নয়নেই জাদু দেখলেন এবং জাদু শেষে মৃদু হাত তালি দিলেন। হাত তালি পেয়ে ছোকরা জাদুকরের চোখ ভিজে গেল। এসে মিসির আলি সাহবের পা ধরে সালাম করে নিল। মিসির আলি পরম মমতায় তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কাল মিসির আলির চেয়ারম্যান বন্ধুটি বিশাল গান বাজনার আয়োজন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গঞ্জ থেকে শিল্পি আসবে।
মিসির আলি একটু বিরক্ত তো অবশ্যই। তিনি কিছু নির্জন সময় কাটাতে এসেছেন, গান বাজনা করতে নয়। উনি চেয়ারম্যান সাহেবকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, ফল হয়নি বরং তিনি উল্টা ভেবে বসে আছেন যে তার অথিতিয়তা এই জ্ঞানি বন্ধুটির ভাল লাগছে না। সেই জন্য বন্ধুকে আরও বেশি মুগ্ধ করার জন্য গান বাজনার আয়োজন করেছেন। তবে মিসির আলিকে তার বাগান বাড়ির একটা নির্জন টিনের এক দোচালা ঘরে থাকার বেবস্থা করে দিয়েছেন। বিরাট ফলের বাগানের মদ্ধে একটা টিনের ঘর। ঘরের সামনে একটা বারান্দা আছে, সেখানে একটা ইজি চেয়ারের বেবস্থা করে দিলেন বন্ধুর জন্য।
ফরমেশ খাটার জন্য আট নয় বছরের একটা ছেলে দিয়েছেন চেয়ারম্যান সাহেব। ছেলের নাম মতিন, এখন সে বারান্দায় মিসির আলির পাশে একটা মাদুর বিছিয়ে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। গ্রামের মানুষ খুব দ্রুত ঘুমাতে পারে, মিসির আলি ছেলেটিকে বলেছেন ঘুমিয়ে পড়তে কিন্তু সে ঘুমাবে না যতক্ষণ মিসির সাহবে না ঘুমান। অনেক বলেও কাজ হচ্ছে না। আপাতত সে হারিকেন সামনে নিয়ে ঝিমুচ্ছে। ছেলেটির মনে হয় ঝিমুতে খুব ভাল লাগে।
☯ ☯ মিসির আলির সিগারেট শেষ হয়ে গেল, তিনি আবার একটা সিগারেট ধরালেন। চায়ের খালি কাপটা মেঝেতে রাখলেন। তারপর ঘড়ি দেখেলেন, রাত ৮ টা। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। টিনের চালে শব্দ হচ্ছে অবিরত। মতিন ঘুমে বিছানায় কাত হয়ে ফোঁস ফোঁস করে ঘুমাচ্ছে। ঘুমান্ত মানুষের দিকে তাকাতে ভাল লাগে মিসির আলির। কারন সেই সময় মানুষের মুখ থেকে সকল দুশ্চিন্তা সরে গিয়ে স্বর্গীয় আবেশ চলে আসে। মিসির আলি পরম মমতায় তাকালেন মতিনের দিকে। পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা।
মিসির আলি ঠিক করলেন একে মিসির আলি ঢাকায় নিজের কাছে নিয়ে যাবে। তিনি ছেলেটিকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিবেন। তবে ছেলেটির পড়াশোনায় আগ্রহ একেবারে কম। গ্রামের স্কুলে যায় মাসে দুই তিন দিন, এখনো সে ক্লাস টুঁ পাশ দিতে পারে নাই। সে গত ৪ বছর ক্লাস টুঁ তে, এটা নিয়ে সে গর্বিত। তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়-“কিরে মতিন কোন ক্লাসে পড় তুমি??”
মতিন অনেক গর্ব করে উত্তর দেয় “ কেলাশ টুঁতে পড়ি”!!
সে ফেল করবে তবু স্কুল ছাড়বে না, আবার স্কুলে নিয়মিত যাবেও না।
☯☯ মিসির আলি চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবেন এমন সময় বারান্দায় একজন লোক এসে ঢুকল।
মুখে দাড়ি গোঁফের জংগল, ময়লা আধা ছেঁড়া একটা সার্ট আর লুঙ্গি। কাঁদে একটা ঝোলা। মাথায় বাব্ এই সময় অন্য কেউ হলে ভয় পেত কিন্তু মিসির আলি পেলেন না, তিনি যা হলেন একটু অবাক হলেন।
মিসির আলি বললেন- “আপনি কে??”
লোকটা কথার জবাব না দিয়ে লম্বা চুল ঝাড়তে লাগলো। লোকটির দিকে তাকিয়ে মিসির আলি অনুমান করে নিলেন লোকটি একজন পাগল কিংবা ভবঘুরে। লোকটি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে।
মিসির আলি তার চেয়ারের পাশ থেকে একটা গামছা লোকটিকে দিল। এই গামছা চেয়ারম্যান দিয়েছিলেনল মিসির আলিকে। চেয়ারম্যান বলেন- গ্রামে আসলে গামছা ব্যাবহার করতে হয়, তোয়ালে করতে হয় শহরে!
লোকটি অবাক চক্ষে কিছুক্ষণ তাকিয়ে গামছাটা নিয়ে মাথা মুছল। তারপর কিছু জিজ্ঞাস না করেই গামছা সটান পরে ফেলল। মিসির আলী কিচ্ছু বললেন না।
তারপর লোকটা তার ভেজা থলি থেকে একটা আধ পোড়া বিড়ি বের করে ধরাল।
মিসির আলী কিছু বললেন না, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন লোকটির দিকে।
বিড়িতে একটা টান দিয়ে লোকটি বলতে শুরু করল- "কেমন আছেন স্যার?"
"আমি তো ঠিক আপনাকে চিনতে পারছি না, ইদানিং ভুলে যাওয়া রোগে ধরেছে আমায়"- মিসির আলী মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন।
লোকটি বলল- আমি কিন্তু আপনার একজন প্রিয় ছাত্র ছিলাম স্যার, একটা কারনে আজ আমার এই অবস্থা, আপনাকে খুজেতে খুজতে আমি শেষ। আজ আপনাকে পেয়েছি- আশা করছি আমার কথা শুনবেন।
মিসির আলীর একটু অবাক লাগলো, তার কোন প্রিয় ছাত্র পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে!!
লোকটি বলা শুরু করল- "স্যার আমার নাম ইউনুস, আমি একটা খুন করেছি। আজ আপনকে সেই কথা বলব স্যার, সেই খুনের ঘটনার পর থেকে আজ আমার এই অবস্থা।
(শেষ )
================================
লেখকের কথা-
☯☯ এই লেখাটা শুরু করছিলাম বিশ্বকাপ খেলা শুরুর আগে কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাবার পর আর লিখতে বসতে ইচ্ছে করছে না বিধায় লেখাটা এখানেই শেষ! (এই মাসে পোস্ট দেই নাই বেশি- তাই অসম্পূর্ণ লেখাটাই পোস্ট করে দিলাম)
☯☯ আমি যানি মিসির আলীর মত চরিত্র নিয়ে লেখা আমার কম্ম না, তবুও একটা ট্রাই করলাম।
☯☯ এই লেখাটা এডিট করি নাই, একেবারে প্রথম যা লিখচি তাই দিয়া দিলাম, এডিট করলে হয়ত আরও একটু ভাল হত, তবে বিশকাপের জন্য এত সময় নাই হাতে!
ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:১১