somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার শিশু আপনার ভবিষ্যৎ: পর্ব-৩

১৮ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাসির মাহমুদ
************
শিশুর বেড়ে ওঠার প্রথম পর্ব অর্থাৎ প্রথম সাত বছরে, শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্যে বৈজ্ঞানিক ও রাসূল(সাঃ) নির্দেশিত প্রতিপালন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। শিশুর জীবনের প্রথম সাত বছর হলো, স্বাধীনতার চর্চার কাল। এ সময়টা শিশুর সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষ ও বিকাশ লাভ করে। এ সময়টাতে তাই বাবা-মায়ের সচেতনতা খুবই জরুরী। শিশুর প্রতিভার উন্মেষকালে পিতা-মাতার করণীয় সম্পর্কে খানিকটা নজর দেওয়া যাক।
যে শিশু তার চারপাশের পরিবেশকে মুক্ত-স্বাধীন ও শান্তিময় মনে করে এবং যা চায় তা-ই পায়, সেই শিশুর ব্রেইন বা মেধার উন্মেষ স্বাভাবিক গতিতেই ঘটবে, সেই সাথে সে তার সাধ্যমতো স্বাভাবিক এই মেধার আত্ম-প্রকাশ ঘটাতে চাইবে। কারণ হলো সে তার ব্যক্তিত্ব ও মেধার বিকাশের পথে কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়নি। ভবিষ্যতেও তার জ্ঞান-বুদ্ধি, মেধা ও সৃষ্টিশীলতায় এই অবাধ পরিবেশের প্রভাব পড়বে। পক্ষান্তরে, শিশু যদি তার পরিপার্শ্বকে মুক্ত ও স্বাধীন না পায়, তার শিশুসুলভ চাহিদাগুলো যদি না মেটে, অর্থাৎ তার চাহিদা পূরণের পথে যদি কোন রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার মেধা বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এ অবস্থায় শিশুর সুপ্ত প্রতিভাগুলো ধবংস হয়ে যাবে এবং তার প্রতিভার উন্মেষ বা বিকাশের আর কোন অবকাশই থাকবে না। এ ধরণের শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়ে এবং তারমধ্যে আর কোন সৃষ্টিশীলতাই অবশিষ্ট থাকে না।
একটি শিশু তার প্রথম সাত বছর বয়সে ভাবে, বাবা-মায়ের কাছে সে যা চাইবে, তাই পাবে। অর্থাৎ বাবা-মা তার চাহিদাগুলোকে প্রশ্নহীনভাবে বাস্তবায়ন করবে। সেজন্যে এ সময়টায় বাবা-মায়ের প্রতি শিশুর বিশ্বাস থাকে অগাধ। বাবা-মাকে সে তার বন্ধু, সহযোগী এবং তার একান্ত আশ্রয় মনে করে। তাদেরকে সে নিরাপদ মনে করে এবং সেজন্যেই তাদেরকে সে ভীষণ ভালোবাসে। শিশু যখন বড় হয় তখনও সে বাবা-মায়ের ভালোবাসার কথা ভোলে না। বাবা-মা তাকে যে কী পরিমাণ ভালোবাসতো, আদর-যত্ন করত, সে তা উপলদ্ধি করে এবং তাদের ভালোবাসার কাছে যে ঋণী সে তা অনুভব করে। বড়ো হয়ে তাই এই সন্তান বাবা-মায়ের কথা বেশ মনযোগের সাথে শোনে। তাদের দিক-নির্দেশনা, তাদের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে সে লাভবান হয়। যে কোন জটিল ও বিরুপ পরিস্থিতিতে বাবা-মাকেই সে আপন ভাবে এবং তাদের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ করে। তাদেরকেই নিজের একান্ত পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করে। সন্তান যেহেতু বাবা-মায়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করে, সেহেতু বাবা-মায়ের সকল যুক্তি ও পরামর্শ আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে। তাদের যথাযথ আনুগত্য করে এবং সর্বাবস্থায় তাদের নির্দেশ মেনে চলে। শিশু জীবনের প্রথম পর্বে বাবা-মায়ের আচরণগত ত্রুটিই যুব সমাজের অধিকাংশ সমস্যার জন্য দায়ী। বাবা-মা, সন্তানের আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলোর প্রতি কোন রকম মনযোগ না দেয়ার কারণে সন্তান ও বাবা-মায়ের প্রতি আস্থাহীনতায় ভোগে। আর বাবা-মায়ের প্রতি সন্তান যদি আস্থা-বিশ্বাস, নির্ভরতা স্থাপন করতে না পারে, তাহলেই বাবা-মায়ের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দুরত্ব সন্তানকে বিপথগামী করে তোলে। এ আলোচনায় নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে, সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্বে বাবা-মাকে কতোটা সচেতন থাকতে হবে। সন্তানের বিপথগামীতা এবং বাবা-মায়ের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য কিন্তু তারা নিজেরাই দায়ী। ফলে সন্তানকে ভালবাসতে হবে। তার আত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলো পূরণের ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। তার বেড়ে ওঠার যথার্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, শিশুর ভবিষ্যত যে পিতা-মাতার ওপরই নির্ভর করে-তা মনে প্রাণে উপলদ্ধি করতে হবে।
আসরের এ পর্যায়ে, শিশুর বিকাশের প্রাথমিক পর্ব অর্থাৎ সাত বছরে বাবা-মায়ের কর্তব্যগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। আসলে শিশুদের সমস্যাগুলো বাবা-মায়েরই সৃষ্টি। তাই শিশুর সমস্যা এড়াতে বাবা-মায়ের উচিত-
(১) সন্তানের জন্যে একটা সময় নির্দিষ্ট করা। তার সমস্যা, তার জিজ্ঞাসা, তার কৌতূহলের যথাযথ উত্তর দেয়া।
(২) তার বেড়ে ওঠার জন্যে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সন্তানের চাহিদাগুলো পূরণে সচেষ্ট হওয়া।
(৩) শিশুর ওপর খবরদারী করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এটা করো না, ওটা ধরো না, এটা করো, সেটা ধরো-এসব করা ঠিক নয়। তারচে বরং এসব কথা যাতে বলতে না হয়, সে ব্যাপারে আগেই সচেতন থাকা উচিত। এসব করা হলে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
(৪) শিশুর জন্যে যেসব জিনিসপত্র ক্ষতিকর ও ভয়াবহ, সেসব জিনিস তার হাতের নাগালে রাখা অনুচিত। অন্যথায় শিশু যদি ঐসব জিনিস দিয়ে কোন জরুরী কিছু নষ্ট করে, তাহলে ঐসব জিনিস নষ্ট করার জন্যে শিশুকে কোনভাবেই দোষারোপ করা যাবে না। অর্থাৎ তার ওপর রাগ দেখানো যাবে না।
(৫) বাবা-মায়ের উচিত বাসায় তাদের জরুরী জিনিসগুলো যথাযথ জায়গায় রাখা। ছুরি-চাকু বা এ ধরণের ধারালো জিনিসগুলো, বিষাক্ত ঔষধপত্র, কীট নাশক জাতীয় জিনিস, কাঁচের জিনিসপত্র, দামী তৈজসপত্র, জরুরী কাগজপত্র প্রভৃতি শিশুর হাতের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
(৬) শিশু যখন জেগে থাকে, তখন এমন কোন জিনিস বের করা বা মেরামত করার জন্যে খোলা ঠিক নয়, যার ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ হারালে বা নষ্ট হলে পুরো জিনিসটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যকথায় শিশু এসব যন্ত্রপাতি নষ্ট করলে তার ওপর রেগে যাওয়া ঠিক নয়। কারণ শিশু এ সময়টায় কৌতূহলী হবে-এটাই স্বাভাবিক। তার কৌতূহল থেকে তাকে নিবৃত্ত করা যাবে না। অর্থাৎ এ দিকে এসো না, এটা ধরো না-এরকম বলা যাবে না। পরিবারে যদি স্কুলগামী কোন সন্তান থাকে, তাহলে তার বই-পুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা-উপকরণ এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে শিশু সেগুলো ধরতে না পারে, নষ্ট করতে না পারে। মায়ের যদি সেলাই কাজের অভ্যাস থাকে, তাহলে তা করতে হবে শিশু যখন ঘুমোয় তখন, অথবা এমন কোন জায়গায় যেখানে শিশুর উপস্থিতির সম্ভাবনা নেই। আর সুঁই-সূতা-ব্লেড ইত্যাদি রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্বে।
ধরা যাক, বহু সতর্কতার পরও শিশু ব্লেড বা ছুরি-চাকু জাতীয় কিছু একটা হাতে নিল। এ অবস্থায় কী করতে হবে? না, কোন অবস্থাতেই চীৎকার চেঁচামেচি করা যাবে না, বরং তার সামনে এমন অন্য একটা জিনিস এনে হাজির করতে হবে, যাতে শিশুর মনযোগ সেদিকে যায় এবং সুযোগমতো ঐ ভয়ানক বস্তুটি তার হাত থেকে সরিয়ে নেয়া যায়। এমন ভাবে নিতে হবে যাতে শিশুটি একদম টের না পায়।
বাবা-মায়ের এতো সতর্কতার কারণ হলো, এ সময়টা শিশুর পরিপূর্ণ স্বাধীনতার পর্ব। তার যা খুশী তা-ই করবে সে। তাকে আদেশ দেয়া যাবেনা, বারণও করা যাবে না। শিশুর মেধা বিকাশের স্বার্থে বাবা-মা ভালোবেসে, আদর করে এটুকু ছাড় দেবেন-এটাই প্রত্যাশা।*
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×