গত ২৮শে জুলাই ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির উদ্বোধনী দিবসে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অপরাধ সম্পৃক্ততার একটা প্রামাণ্য প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। আর এ জন্য চাকুরী হারিয়েছেন প্রতিবেদক আবু সুফিয়ান। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি প্রথম দিবস থেকেই যুদ্ধাপরাধের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর।
প্রচারিত প্রতিবেদন সম্বন্ধে যা জানা যায়, 'উদ্বোধনী দিনে বস্তুনিষ্ঠ এবং সময়োপযোগী রিপোর্ট উপস্থাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল। প্রথম বুলেটিনে একমাত্র স্পেশাল রিপোর্ট চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধের সংশ্লিষ্ট অপরাধে বিচারাধীন একজন রাজনীতিবিদের উপর একটি বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট প্রচারিত হয়। রিপোর্টটি আবু সুফিয়ানের নির্দেশনা, পরিকল্পনা তত্বাবধানে করা হয়েছিল। রিপোর্টটিতে ভয়েস দিয়েছিলো ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে আসা অন্য এক রিপোর্টার। সেই রিপোর্টার এর পিতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। রিপোর্টে বলা হয়, আগামী এক মাসের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল এর প্রধান আবদুল হান্নান এর সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। রিপোর্ট প্রচারিত হবার পর সকল শ্রেনীর দর্শক শ্রোতার অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়ায়।'১
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অপরাধ বৃত্তান্তের দীর্ঘ এক ফিরিস্তি দিয়েছেন ব্লগার নিঝুম মজুমদার সাকা, একটি পশুর নাম শীর্ষক ধারাবাহিক অনুসন্ধানী ব্লগে।(ই-বুক হিসাবে পাওয়া যাবে এখানে আর তার ব্লগ পড়তে ভিজিট করুন এখানে ।) নিম্নে তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো। উল্লেখ্য যুদ্ধাপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাকা এখন বিচারাধীন।
১. এই সেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যার সিএসবি নামে টিভি চ্যানেল ছিলো, তিনিও ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা। অভিযোগ আছে সিএসবি এবং দিগন্ত চ্যানেল দুটিই পাকিস্থানী গুপ্তচর আইএসআই এর স্বার্থ দেখার জন্য চালু হয়েছিলো এবং এর লগ্নিকারীদের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে হেরোইন পাচার, দাউদ ইব্রাহিমের সাথে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে এবং জামায়াতে ইসলামীর কিছু কেন্দ্রীয় নেতার সম্পৃক্ততা এবং ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতার খবরও শোনা যায়। সেই ইসলামী ব্যাংক যার মাধ্যমেই জংগি সংগঠন হুজি-র কাছে বিপুল পরিমানে বিদেশি অর্থ এসেছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়েছিল। ব্যাংকটিকে এর জন্য জরিমানাও গুনতে হয়।
২. যে সাকা ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল চট্টগ্রামের শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ে পাকিস্থানী সৈন্যদের যোগসাজশে এর মালিক নুতন চন্দ্র সিংহ কে হত্যা করেছিলো। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর প্রায় ৪৭ জন অধ্যাপক সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিলেন কুণ্ডেশ্বরী ভবনে। এলাকায় জনদরদী হিসাবে প্রচন্ড জনপ্রিয় এই ৭০ বছরের বৃদ্ধের বুকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে সাকা তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলো।
৩. ১৩ ই এপ্রিল ওই একই সৈন্য বাহিনী নিয়ে সাকা ও তার দলবল গহিরার আরেক বিশিষ্ট অধিবাসী চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের বাড়ী গিয়ে তার উপর অকথ্য নির্যাতন চালায় তার ছেলে দয়াল হরি বিশ্বাস কে বের করে দিতে এবং চালের ড্রামে লুকায়িত হরি বিশ্বাস কে তার বাবার সামনেই বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
৪. এর দুদিন পর ১৫ এপ্রিল সাকা আবারও এক প্লাটুন পাক সৈন্য সহযোগে রাউজানে অভিযান চালায় ।
৫. নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পথেরহাটের আওয়ামী লীগ কর্মী হানিফের বাড়িতে ঢুকে তাকে হত্যা করে।
৬. জ্বালিয়ে দেয় জহুর আহমেদ চৌধুরীর জামাতা ও নোয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্পাদক ইজহারুল চৌধুরীর বসতবাড়ি।
৭. এছাড়াও ওই দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ভিপি আবদুর রব এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র ছাত্রলীগ নেতা খালেদকে ধরে এনে সাকার নির্দেশে হত্যা করা হয়।
৮. এরপর সাকার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী ঊনসত্তর পাড়ায় প্রবেশ করে ১৭০ জন নারী-পুরুষকে একটি পুকুর পাড়ে একত্রিত করে হত্যা করে। সাকা সঙ্গী সেনাদের জানিয়েছিলেন, এরা সবাই মালাউন এবং ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগে।
একজন তরুন নির্ভিক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান
সাংবাদিক আবু সুফিয়ান ইতিপূর্বে বেসরকারী টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনে থাকাকালীন বহুল আলোচিত আর্থ ফাউন্ডেশন নামক ভুয়া এনজিও’র হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও আত্মসাতের বিষয় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলোচিত হয়েছিলেন। কারন তখন আর্থ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন নিজেকে তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদ এবং বর্তমান সরকারের অনেক সহযোগী শিল্পী সাহিত্যিক, সচিব এবং বর্তমানে শাসকদলের অন্তত চারজন ক্ষমতাধর এমপি/মন্ত্রী জড়িত ছিলেন-তাদের সংশ্লিষ্টতার কথাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত সাহসের সাথে তুলে ধরেছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে আরো তিনজন রিপোর্টার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করেন। সেই রিপোর্টের জন্য তিনি অর্জন করেন আন্তর্জাতিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার। এছাড়াও তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মানিক মিয়া স্মৃতি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারও অর্জন করেন।
টিআইবি ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এওয়ার্ড-২০০৭
এই নির্ভিক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রচার করায় চাকুরী চ্যুত হলেন। আমরা যেমন একজন যুদ্ধাপরাধীকে মেনে নিতে পারি না, তেমনি মেনে নিতে পারিনা যুদ্ধপরাধীদের বাঁচানোর প্রচেষ্টা। যে প্রতিবাদী মানসিকতার ফলে আজ যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে - সেই সামাজিক প্রতিরোধ আমাদের বজায় রাখতে হবে।
এজন্য আগামী ৯ই তারিখ বিকেল ৫টায় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদী মানববন্ধন আয়োজন করা হয়েছে। সবাইকে অংশ নেবার আহবান জানাই।
পোস্ট পরিমার্জিত, ৮ই সেপ্টেম্বর, ৮টা ৫০ মি:।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:৪৬