পর্ব-২
কলকাতার সেই ট্যাক্সি (সবগুল ট্যাক্সিই দেখতে নতুন নতুন লাগতো)
টিভি দেখতে দেখতে ১০.৩০ বেজে গেছে। ভাবলাম এবার খাওয়া দরকার। চোখ ব্যাথা করছিল ঘুমিয়ে যেতে হবে তাড়াতাড়ি।
হোটেলের ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলাম, আশেপাশে মুসলিম হোটেল কোনটা ভাল হবে খাওয়ার জন্য? জবাবে উনি বললেন, আরাফাতে খেতে পারেন মোটামুটি ভাল আছে এছাড়া "মেজবান"ও আছে। বের হয়ে যেতেই উনি আবার ডাক দিল "বীফ খাবেন তো? কথাটা উনি চুপি চুপি বলাতে একটু লজ্জা পেলাম যে দুটোর বললেন বীফ পাবো? হ্যা পাবেন কোয়ি বাত নেহি......
আরাফাত হোটেল
তখনও পর্যন্ত একা ফিল করি নাই, কিন্তু খেতে যাওয়ার সময় কেমন জানি জানি একা একা লাগছিল। অচেনা শহর আজকে প্রথমদিন আরো ৬টা দিন কিভাবে যাবে। আরাফাত হোটেলে গিয়ে বসলাম (বাংলাদেশি দেখলে ওরা কিভাবে যেন বুঝে যায়) ওয়েটারকে বললাম খাবার কি আছে? অনেক কিছুর নাম বললো, এতো কিছুর দরকার নাই ভাত দাও আর বীফ হবে?
হ্যা হবে... গরু, ভাত, ডাল... খাওয়া শেষ ... বিল হয়েছে ৬০ রুপী
ওয়েটারকে ১০ রুপী দিয়ে হোটেল চলে আসলাম ( একটা কথা না বললেই নয়, ওরা খুচরা দিতে চায়না , ওদের কাছেই যতই ভাংতি থাকুক না কেন... যেমন ১০ রুপী নিয়ে ৪-৫ রুপীর কিছু কেনা যাবেনা। ৪-৫ রুপীর কিছু কিনলেও অবশ্যই তাকে ভাংতি দিতে হবে)
অনেক কিছু চিন্তা করতে করতে ঘুম দিলাম, সকাল ৯টায় ফোন আসাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাড়াতাড়ি করে উঠলাম "ফেয়ারলি প্যালেস" যেতে হবে আগ্রার টিকেট কাটতে।
আরাফাত হোটেল হালিম আর রুটি দিয়ে নাস্তা সেড়ে নিলাম।
ওই দিন ছিল শনিবার আমি রবিবার রাতের টিকেট কাটবো। আবারো গেলাম মোবাইল দোকানের ওই দাদার কাছে "দাদা ফেয়ারলি যাবো কিভাবে?
দাদার জবাব "ট্যাক্সি করে যেতে পারেন" বাসেও যাওয়া যায়।
জিজ্ঞেস করলাম কতদুর? বলল- কাছেই খুব একটা দূরে নাহ
তাহলে ট্যাক্সি নিবোনা বাসে কিভাবে যাওয়া যায় সেটা বলেন?
এখান থেকে হাটতে হাটতে "ওয়েলিংটন" যাবেন, ওখান থেকেই ফেয়ারলির বাস যায়, আগে জিজ্ঞেস করে উঠবেন কিন্তু।
মোবাইল দোকানের দাদার ছবি
হাটা দিলাম "ওয়েলিংটন" থেকে বাস ধরে ফেয়ারলি চলে গেলাম।
এবার শুরু হল যন্ত্রনা "সিরিয়ালে আমি অনেক পিছিয়ে
কিন্তু আশেপাশে বাংলাদেশী দেখে মন্তা ভরে গেল।
প্রায় ২ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর আমার সিরিয়াল আসলো
যাওয়ার টিকেট পেয়ে গেলাম কিন্তু আসার টিকেট পেলাম না। উনারা বললেন আসার সময় ততকাল করে নিতে (ততকাল টিকেটের ব্যাপারটা আমার মাথায় এখনো ভালভাবে কাজ করেনা) পরের দিন রাতে ১১.৩০ এ ট্রেন
ফেয়ারলি আসার পথে বাস থেকে "মিলিনিয়াম পার্ক" দেখেছিলাম
ভাবলাম পার্কটা যেহেতু কাছাকাছি, একটু ঘুরে আসি
কিন্তু ওখান থেকে বের হওয়ার সময় কে যেন বলল "হাওড়া ব্রীজ, হাওড়া ষ্টেশন নাকি পাশেই। তো আগে হাওড়া ব্রীজ দেখে আসি তারপর পার্ক দেখবো।
আমি ছিলাম একা। আমার ছবি যে তুলবে এমন একটা মানুষ নাই।
হাওড়া ব্রীজের নিচে ফুলের বাজার
হাওড়া ব্রীজ ( যদিও ছবি তোলা নিষেধ, কিন্তু এটা জানার আগেই তুলে ফেলেছি)
এখানে ছবি তোলা নিয়ে একটা মজার ঘটনা ছিল। পরের পর্বে লিখবো
হাওড়া ষ্টেশন
মানুষের সামনে ছবি তুলতে কেন জানি লজ্জা লাগে
হাওড়া ব্রীজ, হাওড়া ষ্টেশন সব ঘুরে আসলাম
ব্রীজের পাশে লঞ্ছ ঘাট দেখাতে, লঞ্ছে উঠার খুব ইচ্ছা জাগলো (লঞ্ছ বলা চলেনা, ছোট খাটো স্টিমার বলা যেতে পারে)
লঞ্ছ দিয়ে এপার থেকে ওইপার যাওয়া যায়।
লঞ্ছ ঘাট থেকে হাওড়া ব্রীজের ছবি
ওইপার যাওয়ার সময় দূরে আরেকটা ব্রীজ দেখা যাচ্ছিল ( নামটা ভুলে গেছি) বিদ্যাসাগর ব্রীজ না এই জাতিয় কিছু একটা
ওখানে নাকি ফলের দাম অনেক সস্তা হোটেলে ফেরার পথে কিছু আপেল, আঙ্গুর, ডালিম, বড়ই কিনে নিলাম দুপুরের খাবারটা হয়ে যাবে।
হোটেলে ফিরে ঘুম দিলাম। সন্ধায় গেলাম নিউ মার্কেট কিছু কেনাকাটা করতে... ঘুরে ঘুরে দেখলাম। জিনিসপত্রের দাম কমই বলা চলে।
যা কেনার মোটামুটি শেষ করে নিলাম।
৯টায় রুমে ফিরলাম। আবারো আরাফাতে গেলাম কিন্তু আজকে খাবারের ম্যেনু চেঞ্জ করতে হবে। গতকাল খাওয়ার আগে আলুর ভর্তার একটা ডিস দেখেছিলাম। দেখতে খুব ভাল লাগছিল। মাংস আর ভাল লাগেনা (ঢাকাতেও একটানা ১৫ দিন মাংস খেয়েছি)
আজকের খাবার আলু ভর্তা, ডাল, ভাত। আজকে মনে হয় খেয়ে একটু শান্তি পেলাম (ওদের খাবার আমার কাছে ভাল লাগেনা, খাবারে কোন টেস্ট নাই। কেমন জানি মনে হয় কোন মসলা ছাড়া রান্না করা)
রাতে ঘুম দিলাম পরেরদিন আগ্রা
পরেরদিন এক বাংলাদেশীর সাথে পরিচয় হয়েছিল
আগামী পর্বে লিখবো
সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। ভূল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।