ঠিক চার বছর আগে ২০১২
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ
ছিল পাকিস্তান। প্রথমবার ফাইনালে উঠে শেষ
পর্যন্ত ২ রানে হেরে গিয়েছিল টাইগাররা। এতে
কেঁদেছিল গোটা দেশ।
এর মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে। আজ আবার
যখন বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে তখন পাকিস্তানের
প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সাম্প্রতিক বহু জয়ে টাইগাররা
আজ উজ্জীবিত। আজ জিতলে ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে
যাবে বাংলাদেশের। আর এশিয়া কাপ টি-
টোয়েন্টির চলতি আসর থেকে বাদ পড়বে
পাকিস্তান।
তাই দুই দলের জন্য চলতি আসরে টিকে থাকার
লড়াই। বলা চলে ফাইনালের আগেই ফাইনালের
আমেজ।
২০১৪ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরমেটে ৩২০ রান
করেও হেরে যায়। কিন্তু ২০১৫ সালে বদলে যাওয়া
বাংলাদেশের সামনে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে
হোয়াইটওয়াশ হয় তারা। শুধু তাই নয়, একমাত্র টি-
টোয়েন্টি ম্যাচে হারিয়েও টাইগাররা
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয় পায়।
সেই হিসেবে আফ্রিদির দলের জন্য এই লড়াইটি হবে
প্রতিশোধেরই। যদিও ক্রিকেটে প্রতিশোধ শব্দটা
কোনো দলই মানতে রাজি নয়।
গতকাল বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন
মুর্তজাও হোয়াইটওয়াশের স্মৃতিকে বড় করে দেখতে
চাইলেন না। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন
প্রতিটি ম্যাচেই তারা নামেন জয়ের জন্য। আজও
মিরপুর শেরে বাংলা মাঠে নামবে জয়ের জন্যই।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেয়িামের
ইনডোরের সামনে অনুশীলনের আগে মাশরাফির
বক্তব্য ছিল এরকম: ‘আমার মনে হয় না, ওই সিরিজের
ফল এবার কোনো সাহায্য করবে। কারণ এটি নতুন
দিন, নতুন খেলা, নতুন টুর্নামেন্ট। আগে কী হয়েছে
তা না ভেবে, আজ কতটা ভালো করতে পারি, তা
নিয়ে আমরা ভাবছি।’
অনুশীলন শেষে কোচ হাতুরাসিংহের জবাব: ‘সেটি
তো এক বছর আগের কথা, তাই না? আসলে অত দিন
আগে আমরা কী করেছি না করেছি, তার চেয়ে
বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এখন আমরা কী করব।’
তবে তারা যাই বলনু না কেন আজ পাকিস্তানের
বিপক্ষে জিতলেই তো ফাইনাল! হেরে গেলেও
সুযোগ থাকবে। কিন্তু হারার আগে হারার কথা কেন
ভাববে বাংলাদেশ। তাও যদি পাকিস্তান সেই
আগের মতো অজেয়-অধরা থাকত, সেটি ভিন্ন কথা।
গত বছরের সেই অদম্য পারফরম্যান্সের
ধারাবাহিকতায় আজ তাই জয় ভিন্ন কিছু ভাবছে না
মাশরাফির দল।
টি-টোয়েন্টি ফরমেটে বাংলাদেশ-পাকিস্তান
প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৭ সালে। এরপর ২০১৫
সাল পর্যন্ত খেলে ৮টি ম্যাচ। শেষ ম্যাচটি ছিল
গেল বছর মিরপুর মাঠে।
এমনিতে এশিয়া কাপের আগের ভাবনায়
বাংলাদেশের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা উচ্চারিত
হয়নি জোরেশোরে। ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি যে!
আর এতে বাংলাদেশের সীমিত সামর্থ্যের সূত্র
ধরেই ওই নিরাশার হাওয়া। প্রথম ম্যাচে ভারতের
কাছে যাচ্ছেতাই হার ওই নিরাশাকেই দেয়
অনুমোদন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাত্র
১৩৩ রানে থেমে যায় টাইগার বাহিনী।
তবে এরপরই ঘুর দাঁড়ায় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল!
শুরুতে অল্প পুঁজি নিয়ে আমিরাতকে বড় ব্যবধানে
হারায়। পরের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের
মতো টি-টোয়েন্টি জিতে নেয়। তাই টগবগে
আত্মবিশ্বাস নিয়েই তাই আজ পাকিস্তানের
মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
আত্মবিশ্বাসের সেই সৌরভে একটাই কাঁটা—
ইনজুরির কারণে মুস্তাফিজুর রহমানের ছিটকে
যাওয়া। আবার বাড়তি সৌরভ নিয়ে তামিম
ইকবালেরও তো প্রত্যাবর্তন।
মাশরাফি পরোক্ষে মেনে নেন তা, ‘তামিমের না
থাকা ছিল আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর
ব্যাপার। সব ফরম্যাটে সে বাংলাদেশের সেরা
ব্যাটসম্যান। তামিম অনেক দিন ধরে খেলছে, সে
অনেক অভিজ্ঞ। তবে মুস্তাফিজের না থাকা
আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। ও যেটা দলের জন্য দেয়,
সেটা সব সময়ই দলের জন্য অসাধারণ কিছু। এটা
প্রমাণিত বিষয়।’
মুস্তাফিজ না থাকায় আজ হয়তো আর চার পেসার
নিয়ে খেলবে না বাংলাদেশ। একাদশে ঢুকতে
পারেন বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি।
তবে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙলেও জয়ের
ধারাবাহিকতা ভাঙবে না বলেই আশাবাদ
বাংলাদেশ। আমিরাত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ
দুটির ধারাবাহিকতা দেখানোর প্রত্যয় মাশরাফির,
‘আমাদের সামনে আসলেই ফাইনাল খেলার খুব
ভালো সুযোগ আছে।
সর্বশেষ দুটি ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, সেভাবে
খেলতে পারলে অবশ্যই সুযোগ কাজে লাগানো
যাবে। কিছু ভুলও অবশ্য ছিল। কিন্তু আমরা
প্রয়োজনের সময় দরকারি কাজ করতে পেরেছি
বলেই ম্যাচ দুটি জিততে পেরেছি।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্য পরিকল্পনার
ঠিকঠাক প্রয়োগের ওপর জোর দেন তিনি, ‘এই
ম্যাচে যারা জিতবে তাদেরই ফাইনাল খেলার
সুযোগ বেড়ে যাবে। সুতরাং এখানে আমাদের
প্রতিটি জায়গায়ই সুযোগ আছে। প্রতিপক্ষেরও
সুযোগ আছে। তারা একবার টি-টোয়েন্টির
চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এ ছাড়া তাদের অনেক
খেলোয়াড় বিভিন্ন জায়গায় টি-টোয়েন্টি খেলে।
তবে আমরা যদি ওদের দিকে না তাকিয়ে আমাদের
পরিকল্পনাগুলো ঠিকঠাক প্রয়োগ করি, আমার মনে
হয় আমাদের সব সুযোগই আছে।’
সুযোগের আরেকটি বড় জায়গা সম্ভবত উইকেট।
এমনিতে এশিয়া কাপের উইকেট দেখে চমকে
গেছেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা। ঘাস-গতি-বাউন্সে
যেন উপমহাদেশের ২২ গজ নয় এটি। টুর্নামেন্ট
এগোতে থাকায় সপ্রাণ উইকেটের সতেজতা কমেছে
অনেকটা। মোহাম্মদ আমিরের নেতৃত্বাধীন
পাকিস্তানের দুরন্ত পেস বোলিং সামলাতে তাই
আর অতটা ঝামেলা হওয়ার কথা নয় বাংলাদেশের।
মাশরাফি অবশ্য সরাসরি কিছু না বলে ওই
নিজেদের কাজে মনোযোগ দেওয়া কথাই পুনর্ব্যক্ত
করেন, ‘এখন উইকেটে খুব বেশি ঘাস থাকছে না। আর
পাকিস্তানের বিপক্ষে কোন উইকেটে খেলা হবে,
তা জানি না। তবে আমরা ওদিকে চিন্তা না করে
নিজেদের কাজ গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
কোচ হাতুরাসিংহেরও প্রায় অভিন্ন উচ্চারণ,
‘উইকেট ক্রমশ শক্ত হচ্ছে। এতগুলো ম্যাচ টানা
খেলার পর সেটি সতেজ থাকার আশা করা যায় না।
এটি আমাদের সাহায্য করবে কি না, জানি না।
উইকেটে গতি থাকলে তাও কিন্তু আমাদের সাহায্য
করে।’ ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে
যেমন দ্রুতগতির পিচে খেলেছি। আমাদের তাই
অভিযোগ না করে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে
হবে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছরের সিরিজ নিয়ে
প্রশ্নে কোচ-অধিনায়কের একই উত্তর। উইকেট নিয়ে
প্রশ্নেও উত্তরের অভিন্ন মোহনায় তারা। এবার
হাতুরাসিংহের পরিকল্পনার বাস্তবায়নটা আজ যদি
মাশরাফির নেতৃত্বে ১১ ক্রিকেট সৈনিক করতে
পারেন, তাহলেই কেল্লাফতে!
পাকিস্তানকে হারিয়ে তখন এশিয়া কাপের
ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ। আর এটা দেখার জন্যই
তো উদগ্রীব পুরো দেশ
ফেজবুকে সকল খেলা ধুলা খবর ও স্কোর জানতে
এই পেজে লাইক দিন ৷
আমাদের ফেজবুক পেজে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের ফেজবুক পেজে এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫