somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের অকাল প্রয়াত রনধির স্যার আর কিছু কথা।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ সকালে কলেজে যেতে দেরি হয়ে গেল। ১০.৩০ এ যাওয়ার কথা, ১১টা বেজে গেছে।থিয়েটারের মুহিনুর ভাই বলেছিল আজ থেকে মঞ্চ নাটকের দৃশ্যগুলা run-through করে যাওয়ার চেষ্টা করবো, তাই দেরি হয়ে যাওয়ায় একটু ভয়ে ছিলাম। কলেজে প্রবেশ করেই দেখলাম থিয়েটারের সবাই অডিটোরিয়ামের সিরিতে বসে আছে। কাছে গিয়ে একটারে জিজ্ঞেশ করলাম ‘কি রে এখনও খুলে নি?’।বলল আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার মারা গেছেন তাই আমাদের নাট্য কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য স্থগিত থাকবে। আমরা ফ্রেন্ডসদের সভাব যে কারো বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেশ করলেই মজা করে বলি ‘মরে গেছে’, তাই ভাবলাম হয়ত ফাজলামি করছে। কিন্তু আস্তে আস্তে বুযতে পারলাম কথাটা সত্য।
আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার প্রফেসর রনধির রায় আদ্য সকাল ১০.৩০ মি এ আমাদের চিরতরে ছেরে চলে গেছেন ।
গতকালও এই সময় অফিস করেছেন, আজ নেই। উনি আমাদের কলেজ এ নতুন ছিলেন, খুব বেশিদিন উনাকে পাই নি।যতোটুক দেখেছি খুব নিরব প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।তবু কয়েকদিন আগে ছাত্র ও ব্যবসায়িদের মধ্যে একটা ঘটনায় বলে উঠেছিলেন ‘ আমার কলেজের ছেলেদের গায়ে একটা ছুয়া লাগলে কলেজের সামনের প্রত্যেকটা দোকানে আগুন জলবে’।
খুব বেশি বলবো না, উনার সম্পর্কে একজন মানুষের উক্তি- ‘ভালো মানুষেরা বেশিদিন থাকে না’।

এখন মূল কথায় আসি, দুপুর ১টায় স্যারএর মরদেহ কলেজ প্রাঙ্গনে নিয়ে আসা হলো। সবাই উনাকে ঘিরে ভির করেছে। মাইকে একজন শিক্ষক বলছেন এখন পুস্প অর্পন করবে কলেজ কতৃপক্ষ, তারপর অফিস কর্মচারিবৃন্দ , তখনি একজন শিক্ষক এসে বললেন ‘এরপর বলেন প্রানিবিদ্যা বিভাগ’, আরেকজন এসে বললেন ‘বলেন গনিত বিভাগ’ (এখানে মাইকে কারো নাম বলার কোন প্রয়োজনই নেই),আরেকজন ছাত্রলীগ নেতা এসে বললেন – ‘আপনাকে কখন থেকে বলছি আপনি ছাত্রলীগ এর নাম বলবেন, আপনি কি পাইছেন?’। স্যার বললেন ‘ডিপার্টমেন্ট গুলা’। ‘কিসের ডিপার্টমেন্ট, আমাদের দল ক্ষমতায়’(মনে হচ্ছিলো না উনি কোন শিক্ষকের সাথে কথা বলছেন),তারপরও একজনের পর আরেকজন শিক্ষক এসে এসে বলে যাচ্ছেন অমুখ বিভাগ-তমুক ডিপার্টমেন্ট এর নাম বলুন।
স্যারএর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে গেলাম আমরা কলেজ থিয়েটারের সদস্যরা,কাছে যেতেই ভির ঠেলে দু-তিন জন শিক্ষক ফুল হাতে এগিয়ে গেলেন, তাদের মধ্যে একজনকে ঠিক চিন্তাম না আগে, উনি হাতে ক্যমেরা নিয়ে বলছেন – ‘এই একটু দাড়ান,এই কেউ ক্যমেরাটা নিয়ে ছবি তোল’ , মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, একজন কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম উনি কে, নিচু স্বরে বলল ডিপার্টমেন্ট হেড।

আমি অবাক হলাম, ছাত্রদের অনেকেই মন খারাপ করে দাড়িয়েছিলো, কিন্তু খুব কম শিক্ষকই দেখলাম মন খারাপ, বেশিরভাগই ফুল দেয়া কিনবা মাইকে নিজেদের নাম বলানোয় ব্যাস্ত ছিলেন’।আসলেই কি উনারা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন?

আসলে আমি জানি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রদের ব্যবহার এর এসব দৃশ্য স্বাভাবিক আমাদের দেশে।কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হয় কিভাবে শিক্ষিত মানুষ, কিভাবে শিক্ষক এমন মূহুর্তেও লোক দেখানো নিয়ে ব্যস্ত হতে পারেন।
আপনি যদি বলেন এই কয়েকজন শিক্ষিত না, তাহলে বলুন কতটুকু পড়ালেখা করার পর একজন মানুষ শিক্ষিত হয়?

( অকাল প্রয়াত আমাদের মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অদ্যক্ষ প্রফেসর রনধির রায় স্যার এর বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করছি।)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লায় দেছে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



আল্লায় দেছে। কথাটার মানে হচ্ছে- আল্লাহ দিয়েছেন।
হ্যা আল্লাহ আমাদের সব দেন। এই দুনিয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×