এক গ্লাস আদা-জল নিয়ে সুয্যিমামা জাগার আগেই
মফিজ পড়তে বসেছে। বিসিএস ক্যাডার হবে-এ তার
আজন্ম স্বপ্ন। এলাকায় অলরেডি তার নামই হয়ে
গেছে ‘ক্যাডার মফিজ’। প্রিলিমিনারী পরীক্ষায়
অকৃতকার্যতায় হ্যাট্রিক করার পর চতুর্থবারে সে
পাশ করেছে। সামনে লিখিত পরীক্ষা। সেজন্য
আদা-জল খেয়ে পড়ালেখা শুরু!
পরীক্ষার ভুবনে প্রেম গদ্যময়। তাই মফিজ তার
প্রেমকে ফ্রেমবন্দী করে, হৃদয়ে পাথর বেঁধে
লেখাপড়ায় মন দিয়েছে। কত্ত কিছু জানার আছে!
‘মুক্তবাজার’ যে মুক্তোর বাজার নয়; আমাদের
দেশের ‘গোল্ডেন ভিলেজ’ যে গোল্ডের ভিলেজ
নয়, গাঁজা উৎপাদনের গ্রাম; ‘এগপ্ল্যান্ট’ যে ডিমের
গাছ নয়-এসব তো মফিজ আগে জানত না।
তবে মাঝেমাঝে পড়ার প্রেশারে অভিমানী সুরে
সে গেয়ে ওঠে, ‘এত পড়া সইব কেমন করে?’ তখন
ভাবে, প্রশ্নপত্র ‘ফাঁস’ না হয়ে যদি ‘গুম’ হওয়ার
রীতি থাকত, তবে কতই না ভালো হতো! দাগী
আসামিরাও কারাগার থেকে মুক্তি পায়; অথচ
পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা থেকে মুক্তি নেই!
পরীক্ষার হলে গেলেই মফিজের মনে হয় কেউ যেন
তার ব্রেন ফরম্যাট করে ফেলেছে। সেসময় সে কিছুই
মনে করতে পারে না। একদিকে মাথা হালকা হয়,
আর অন্যদিকে তলপেট ভারী হয়ে আসে! আজ প্রথম
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখে বেচারা আরও
একবার টের পেল, ‘পারা আর না পারার মধ্যে যোজন
যোজন দূর’!
এদিকে পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা পড়তেই মফিজকে প্রকৃতি
ডাকাডাকি শুরু করেছে। তবে বেচারা আজ
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; শারীরিক সমস্যা সে শারীরিকভাবেই
মোকাবিলা করবে। কিন্তু শেষমেশ পেরে উঠল না।
দৌড়াল টয়লেটের দিকে। এই পরীক্ষাকেন্দ্রে
একটিমাত্র টয়লেট এবং সেই টয়লেটের রয়েছে সুন্দর
একটি নাম: ‘প্রসাধনী’। সপ্তাহব্যাপী চলা লিখিত
পরীক্ষার মোট সময়ের এক-তৃতীয়াংশই মফিজ এই
প্রসাধনী কক্ষে কাটাল!
ঘটনা ঘটল শেষ পরীক্ষার দিন। বলা প্রয়োজন,
ইতিমধ্যে মফিজের প্রেমিকা তার বাবার কাছে
ধরা খেয়েছে। ভদ্রলোক মফিজের বৃত্তান্ত নিয়ে
একদিন মফিজদের এলাকায় চলে এলেন। এক
কিশোরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘অ্যাই ছেলে, মফিজ
নামে কেউ থাকে এখানে?’
ছেলেটি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানাল, ‘জি
আঙ্কেল, থাকেন। ক্যাডার মফিজ ভাইকে এই
এলাকার সবাই চেনে।’
‘ক্যাডার!’
‘জি। উনি একজন সম্মানিত ক্যাডার। ওই তো উনি
আসছেন।’
মফিজ শেষ লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিল।
আগেও দূর থেকে দেখেছে বলে হবু শ্বশুরকে চিনতে
তার কষ্ট হলো না। বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ফিরছে-
এটা গর্বের সঙ্গে বলার জন্যই ভাবাবেগে সে
প্রেমিকার বাবার দিকে দৌড়ানো শুরু করল।
এলাকার ক্যাডার তার দিকে ছুটে আসছে দেখে
ভদ্রলোকও হঠাৎ হতচকিত হয়ে উল্টো ঘুরে দৌড়
দিলেন। পথের মানুষজন চেয়ে চেয়ে দেখল, ‘নীল
আকাশের নিচে দুজন রাস্তায় চলেছে দৌড়িয়ে’!
এই ‘ক্যাডার’ বিষয়ক ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে সময়
লেগে গেল প্রায় এক মাস। কিছুদিন হলো মফিজের
সঙ্গে তার হবু শ্বশুরের সম্পর্কোন্নয়ন হয়েছে।
তিনিও নাকি বিসিএস ক্যাডার হতে
চেয়েছিলেন। পড়াশোনার প্রতি ছেলের আগ্রহ
দেখে তিনি বেশ খুশি। তবে মফিজের সিক্সথ
সেন্স বলছে, এবারও সে ক্যাডার হতে পারবে না।
তাই এরপরের বিসিএস পরীক্ষার জন্য লবঙ্গ-জল
খেয়ে সে পড়াশুনায় লেগেছে। মফিজের জন্য
শুভকামনা।