ফেলে আসা বছরে পাতায়া-ব্যাংককে পাঁচ দিন চার রাত ভ্রমণের সময়টুকু কোন ফাঁকে যেন কীভাবে ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়েছিল । আর রেখে গিয়েছিল পাত্তি কম থাকার কারণে বাড়তি কদিন ভ্রমণ এরেঞ্জ না করতে পারার দীর্ঘশ্বাস । এ দীর্ঘশ্বাস একদিন চাপা কান্নার মত অনুভূত হল যখন জানতে পারলাম আমাদের বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ব্যাংকক-পাতায়ার কিছু আকর্ষণীয় প্যাকেজ দিচ্ছে ।
যাইহোক, থাই এয়ারে করে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু রাত একটায়। ভোরে পৌঁছলাম সদা হাস্যের দেশে । Land of smiles এর বাংলা কী হবে? মুগ্ধতার শুরু ব্যাংকক সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টের ভেতরকার পরিবেশ ও আয়োজন দেখে ।
প্রথম দিন পাতায়ায় :
এয়ারপোর্ট থেকে বেরুবার মুখেই প্রিপেইড সিম কেনা হয়ে গেল মিনিট পাঁচেকের মধ্যে । নিয়ে নিলাম একটা ম্যাপও । তারপর টিকেট কেটে ব্যাংকক থেকে পাতায়ার উদ্দেশ্যে এসি বাসযোগে চারজনের যাত্রা শুরু। দুঘন্টার জার্নি প্রায় দেড়শ কিমি, ১২০ বাথ ভাড়া । এক বাথ প্রায় দুই টাকা পঞ্চাশ পয়সার সমান । পরিপাটি পথের দুধার দেখতে দেখতে ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হলাম।মাঝে কিছু ঝিমুনিও এল ।
পাতায়ায় নেমে এক ভারতীয় রেস্তোরায় চিকেন রাইস খেলাম, আর সাথে “ধরা”ও খেলাম –চারশ টাকার প্লেটে চিকেন খুঁজতে হল আতশি কাঁচ আর চিমটা দিয়ে। পাতায়ায় আমাদের হোটেলে সকালের নাস্তা ইনক্লুড ছিল না । পরদিন থেকে জনপ্রতি একশ বাথ দিয়ে এক জায়গায় বুফে ব্রেকফাস্ট সারলাম । সেখানে একেকজন চার পাঁচটা ডিম খেয়ে আড়াইশো টাকা উসুলের কুচেস্টা ছিল । ডিম পোচ আর মামলেট/ভাজি ছিল ক্যামন মিস্টি বা কিছুটা অদ্ভূত । বীফটাও তেমন জুতের লাগল না ।
পাতায়ায় উঠেছিলাম বীচসংলগ্ন একটা হোটেলে । রাস্তা পেরোলেই বীচ। ইউটিউবে বীচ ভিডিও যা দেখেছিলাম তা বাস্তবের সাথে মিলে কীনা তা দেখতে রুমে ঢুকামাত্র ব্যাগটা রেখেই দে ছুট । আরেহ ডট বাই ডট মিল ।
দুপুরে এক বাংলা আহারালয় খুঁজে বের করা হল । দামটা বেশি মনে হলেও পরে দেখলাম পরিমাণ যথেস্ট যা অনায়াসে ১:২ শেয়ার করে খাওয়া যায় । ভাল লেগেছিল রাস্তার ধারে সতেজ ফলের সমাহার । বিক্রেতাই ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের ব্যাপারে সচেতন । যেখানে সেখানে কাউকে ফেলতেও দেখা যায় না । চিকেন শর্মাটা সস্তাই মনে হল ।
আংশিক কেনাকাটা শেষে সন্ধ্যার পর দৌড় দিলাম ওই যে ‘হাঁটাহাঁটির রাস্তা’ না কি যেন একটা আছে না ! সন্ধ্যার পর এটি জেগে ওঠে । ভাই-বেরাদরেরা, অনুগ্রহ করিয়া সেখানে ছুডু পুলাপাইন নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়িয়েন না ।
ওয়াকিং স্ট্রীটে হাঁটতে তেমন ক্লান্তি লাগে না বলাই বাহুল্য ।
দ্বিতীয় দিনে কোহ লানে বিকেল পর্যন্ত :
লান দ্বীপে যাবার প্যাকেজ আগেরদিনই করে রাখা ছিল । প্যাকেজে দুপুরের খাবার সহ নানাবিধ আয়োজন আছে যেমন, প্যারাসেইলিং, স্নোরকেলিং, জেটস্কি, কলানৌকায় চড়ন্তিস, ডুব দিয়া জল খাওন্তিস থুক্কু জল খাওন্তিস না, জলের নীচের পৃথিবী দেখন্তিস (সি ওয়াকিং) ইত্যাদি । ১৫০০/১৭০০ বাথ হবে । টাকার পরিমাণ কমবেশি হবে উপরের কোন আইটেম আপনি নিলে বা না নিলে ।
নিজেকে পাখির মত উড়ার অভিজ্ঞতা দিতে চাইলে প্যারাসেইলিং। প্যারাসেইলিং এর একটি ছবি
পানি এত স্বচ্ছ যে তাতে গভীরতা সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হলাম আর নীচের বালু খুব কাছে দেখা যাচ্ছে ভেবে স্পীডবোট থেকে নামার জন্য স্টীলের সিঁড়ির শেষ ধাপটা ইগনোর করে একবারে পা ফেলে নামতে চাইলাম । আর ঝপাৎ করে পানিতে পড়ে দ্বীপে অভ্যর্থিত! আহা, জলে তো ভিজতামই ।
তৃতীয় দিনে ব্যাংকক :
পাতায়া থেকে ব্যাংককে এসি বাসে আসার নির্ধারিত বাস স্টেশন আছে । অন্যান্য রুটের বাসও আছে । ডিজিটাল ডিসপ্লে দেখে বুঝতে পারলাম -যে সময়টা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ঠিক সে সময়ে বাসগুলো ছাড়ল ।
বিদেশ ভ্রমণের একটা অপরিহার্য অংশ হচ্ছে কেনাকাটা । ট্রাভেল ব্যাগের ভিতর আরেকটা খালি ব্যাগ কি এমনি এমনি আনা হইসে ? উল্লেখ্য, পাতায়ায় নাইট বাজার বা থেপ্রাসিট মার্কেটে সস্তায় বিকিকিনি চলে। ব্যাংককে সস্তা একটা মার্কেট হচ্ছে চাতুচক উইকএন্ড মার্কেট । ফ্যান্সি ও ক্যাজুয়াল কাপড়ের জন্য যেতে পারেন প্রাতুনাম মার্কেট । আছে সেইরাম কিছু জাঁকালো মার্কেট । ব্যাংকক বিটিএস স্কাই ট্রেনের কথা না বল্লেই নয় । সুলভে এবং দ্রুতগতিতে আর উপর থেকে শহর দেখতে দেখতে যাওয়ার অনুভূতি দারুণ ।
চতুর্থ দিন:
বিশাল সিয়াম প্যারাগনে ঘুরলাম । আয়নাঘর আর তাতে প্রতিবিম্বের খেলা
এরপর গেলাম সিয়াম ডিসকভারির মাদাম তুসোর মোমের যাদুঘরে । প্রায় জীবন্ত মনে হয় সব কাজকারবার ।
আছে ভার্চুয়াল পেনাল্টি কিক নেয়ার আনন্দ । লক্ষ ঠিক করে কাল্পনিক বলে কিক করুন ।
মাইকেল জ্যাকসনের সাথেও নাচতে পারেন ।
এরপর সিয়াম প্যারাগনের ব্যাংকক সি লাইফ ওশন ওয়ার্ল্ডে । মায়াবি কাঁচঘেরা সামুদ্রিক মাছ আর তার পরিবেশ । অনন্য বৈচিত্রে সমৃদ্ধ । আছে পেঙ্গুইনের জন্য উপযোগী পরিবেশ
পঞ্চম দিন :
প্রাত্যহিক পৌন:পুনিক জীবন থেকে যে সাময়িক বিরতি নেয়া হয়েছিল, আজ তাতে যতিচ্ছেদের দিন, আজ ফিরবার দিন । ফিরবার সময় তো রাতে, হোটেল রুম ছেড়ে দিতে হবে দুপুর বারোটায় । তাই অবশিষ্ট সময়ের জন্য ৯০০ থাই বাথ দিয়ে একটা সিংগেল রুম নিয়ে তাতে আমাদের সব লাগেজ রেখে বেরিয়ে পড়লাম । প্রথমে গেলাম দুসিত এনিম্যাল থিম পার্কে । সুন্দর একটা লেকও রয়েছে সেখানে । লেকের ওই পারে দেখা যায় পার্লামেন্ট ভবন ।
এরপর গেলাম গ্র্যান্ড প্যালেসে, থাই রাজাদের একসময়কার অফিসিয়াল বাসভূম, এখন অবশ্য রাজকীয় অনুষ্ঠানাদি হয় । কিন্তু প্রাসাদের ভেতর ঢুকি নাই। টিকিটের দাম ৫০০ বাথ বা ১২৫০ টাকা । উল্লেখ্য, বিস্তৃত এই এরিয়ায় প্রাথমিক প্রবেশের সময় আইডি দেখাতে হবে
পাতায়া আর ব্যাংকক খুব বেশি দেখতে পারি নাই, কিন্তু যতটুকু দেখেছি, তার পুরোটাই এক নিটোল ঝকঝকে চিত্রকল্প । দুঃখের বিষয়, অনেকদিন বাদে ক্যামেরা ব্যবহার করে লক্ষ্য করা গেল যে, ব্যাটারি দুর্বল হয়ে গিয়েছিল । আর তাই, পুরো দিন ক্যামেরার সার্ভিস পাওয়া যায়নি ।
আরো কিছু ছবি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮