somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুরুতে মুচকি হাসি দিয়ে বেলাশেষে ভাগ্যের এ-কী রসিকতা

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সকালে প্রথমে রিকশাযোগে ধোলাইরপাড় থেকে নীলক্ষেত গিয়ে তারপর রিকশা বদলিয়ে আরো খানিক পথ অতিক্রম করে দিনব্যাপী এক সেমিনারে যোগ দেব এমনটাই ভেবেছিলাম । এলার্ম মোতাবেক সকালে উঠে দেখি মেঘলা রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত আকাশ থুক্কু মেঘলা আকাশ কাদাময় রাস্তাঘাট । আমার সাড়ে আটটায় পৌঁছানোর কথা, রিকশায় যাব দেখে ঘন্টা দেড়েক আগে সাতটায় বেরোব ভেবেছিলাম । কিন্তু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে রিকশায় মাথা খানিক নুইয়ে পলিথিন ঢেকে যাওয়া যে কথা আর সিএনজি তে যাওয়া আমার কাছে একই কথা – কারণ এইভাবে রিকশাতে গেলে আমি রিকশা চড়ার মজা পাইনা । সকালে ঘুম একবার ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম হয় না, আবার শখ করে রিকশায় চড়া হল না । যাইহোক, শেষমেষ সিএনজি অটোরিকশা সই । সিএনজিতে শুক্র শনিবারে সকালে আমার নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে ফাঁকা রাস্তায় আধঘন্টার মতন লাগে আর বিশ মিনিট গ্রেস পিরিয়ড এই ভেবে সাড়ে আটটার পঞ্চাশ মিনিট আগে বেরুলাম ।

এ কী ! স্ট্যান্ডে যেখানে একটু পর পর সিএনজি অটোরিকশা আসে, আজকে কোথায় ? গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে চালকেরা বউয়ের সাথে খুনসুটি খেলছে নাকি হে । রিকশায় গিয়ে দেরিতে পৌঁছানো ঠিক হবে না, তাছাড়া রিকশাও দেখছিনা । তথাকথিত সিটিং (আসলে লোকাল) বাসে ভেঙ্গে ভেঙ্গে একটা ফর্মাল প্রোগ্রামে যাব ? মন সায় দিল না । মিনিট পাঁচেক পর দুটি সিএনজি এল, কিন্তু না তারা যাবে না । ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে তারা সটকে পড়ল । ভাবতেছিলাম যদিও কোনমতে একটা পাই, উলটাপালটা ভাড়া গুনতে হবে মাফ নাই । এর মধ্যে হালকা ভারিক্কি কিন্তু সুশ্রী চেহারার একজন মহিলা দৃষ্টিসীমায় ধরা পড়লেন । আমি আড়চোখে চাইলাম কিন্তু আড়াআড়ি হল না , চোখাচোখি হয়ে গেল ।

একটু পরে আরেক সিএনজি অটোরিকশার টিকিটির দেখা মিলল । ব্যাটা টাইমিং ঠিক করতে পারল না । আমার আরেকটু সামনে থামল । আরেকজন মোটামতন ভদ্রলোক দামাদামি শুরু করলেন । ঢাকা কলেজ যাবেন । সিএনজিওলা দুইশ টাকা চাইল । আমি গেল সপ্তাহে বৃষ্টিহীন দিনে প্রায় একইরকম সময়ে একশ বিশ টাকায় গিয়েছিলাম । শেষমেষ দফারফা হল একশ পঞ্চাশে । চট করে লোকটিকে বল্লাম, ভাই শেয়ারে যাবেন ? “ নাহ ভাই আমার লোক আছে “ । আমি বল্লাম - ও (গলার ভেতরে কিন্তু অনেকক্ষণ দীর্ঘটান ছিল)।

তাকিয়ে দেখি সেই মহিলাটি উঠছেন । এরপর লোকটি উঠলেন । আমি উদাসভাবে পথের দিকে তাকালাম । হঠাত শুনি পেছন থেকে সেই ভদ্রলোক ডাকছেন – উঠুন ।

অত্যন্ত স্বল্প সময়ে ফ্রি রাস্তায় আমরা ঢাকা কলেজ । আমার আগে নেমেই লোকটি ভাড়া দিয়ে দিলেন । আমি উনাকে টাকা সাধতে গেলেই উনি আমার মানিব্যাগ চেপে ধরে রাখলেন, দিতে দিবেন না । বল্লেন – আমরা তো এম্নিতেই আসতাম । আমি বল্লাম তাতে কি, আমিও তো সিএনজিতে আসতাম । আমি দ্বিতীয়বার টাকা দেবার ট্রাই করেও ব্যর্থ হলাম, উনি আমার হাত ধরে রেখেছেন । তৃতীয়বার তাদের আন্তরিকতাকে আর অনুরোধের মুখোমুখি করলাম না ।

এরপর ভাবলাম হাতে সময় যখন আছে আর আসতে টাকাও যখন খরচ হল না, আর বাকি রাস্তা রিকশা নিয়ে লাভ কি । হাটতে হাটতে যাই, টাকা না খরচ করে এতদূর আসার নতুন রেকর্ড গড়ি । খানিক ঘেমে খানিক নেয়ে পৌঁছালাম । অনুষ্ঠান শুরু হল । বক্তা প্রচুর । বিকেলে আরেক পার্টির অনুষ্ঠান থাকায় রক্ষা । আরো দুইজনের বক্তৃতা ছাড়াই অনুষ্ঠান শেষ করে দিতে হল । নাইলে আরো একঘন্টার মামলা ছিল ।

আমার ডিভিশনের এক পিয়ন এসে বল্ল স্যার যামুগা ? “ যাবা না মানে ? এইখানে থাকলে কখন কোন্ বস কাজ ধরায় দিব ? তাত্তাড়ি যাও “ । আমি ভাবলাম একটু পরে নামি কারণ এর ওর সাথে দেখা হচ্ছিল । মজাও করছিলাম । বিকেলে আরেকটি অনুষ্ঠানের ব্যানার ইতিমধ্যে টাঙ্গিয়ে ফেলেছিল । যার সাথেই দেখা হচ্ছিল বল্লাম, ঐ ব্যানারটিকে ধন্যবাদ দিন । কেন ? এই জিজ্ঞাসায় বলছিলাম “কারণ এটার কারণেই তো ঘন্টাখানিক আগে মুক্তি পেলাম । “

বেশি মজা কপালে সইল না । দেরি করে নামার খেসারত দিতে হল । রিজিওনাল এক বস আমাকে পেয়ে ধরলেন আর বল্লেন যে কিছু জরুরী ডকুমেন্ট এক্ষুণি চেয়ারম্যানের বাসায় পৌঁছাতে হবে যার বাসা আমার অধীনের দুজন পিয়ন চিনে । যেই পিয়নকে চলে যেতে বলেছিলাম তাকে ফোন দিতে গিয়ে দেখি মোবাইলের চার্জ শেষ । অথচ সকালে আলসেমি করে মনে পড়া সত্ত্বেও চার্জ দেই নাই । তাড়াতাড়ি আরেক পিয়নের ফোন দিয়ে তাকে আসতে বল্লাম ।


মাথা ধরা কারণ সারাদিন প্রত্যেক বক্তার পর্যবেক্ষণ আর সাজেশন নোট করতে হয়েছে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজা অবস্থায় নীলক্ষেতে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম ঃ ধোলাইরপাড় যাবেন ? সে বলল যাব আর যে ভাড়া চাইল তা মূল ভাড়া থেকে দশ টাকা বেশি । দামাদামি না করে উঠে পড়লাম । বাসায় গিয়েই মাথা ধরার অসুধ খাব । রিকশা চলছে আমি আধো ঘুম আধো জাগরণে । এই ফাঁকে টিকাটুলি পুলিশ বক্সের বাঁ দিকের গলিতে ঢুকে জ্যামে আটকাতে সম্বিত ফিরল । আমি বল্লাম মেইন রোড ধরে গেলা না কেন ? রিকশাওলা বল্ল সর্টকাট আছে, আমিও জানি আছে এরকম একটা তবে ভাল চিনি না । কিছুক্ষণ পর তার সর্টকাট ভেজাইল্যা মনে হল । আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঠিক কইরা কওতো তোমার আসলে কোথায় ভাড়া ঠিক করসিলাম ? সে বল্ল - ক্যান, ধলপুর ।

আমার চিতকার দিতে ইচ্ছা করল ।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:৪৭
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×