
সাকিব আল হাসান কী তাহলে ভুল খেলা খেলছেন? ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাকিবের সাক্ষাত্কারের ধারাবাহিকতায় প্রশ্নটা উঠতেই পারে। সাক্ষাত্কারে বিশ্বের অলরাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষে থাকা বাংলাদেশি এই ক্রিকেটার স্বীকার করেছেন—ক্রিকেট নয়, তাঁর বেশি ভালো লাগে ফুটবল। বর্তমানে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলা সাকিবের সাক্ষাত্কারটি প্রথম আলো ডটকমের পাঠকদের জন্য তুলো ধরা হলো:
* বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার রহস্য কী?
সাকিব: কঠোর পরিশ্রম, সঠিক কাজ ও দলের হয়ে অবদান রাখার চেষ্টা।
* কৈশোর জীবনের বড় একটা সময় আবাসিক স্কুলে কেটেছে। বাড়ি থেকে দূরে থাকার সুবিধা কী?
সাকিব: আপনি স্বাধীন হতে পারবেন। কারণ বাড়ি থেকে দূরে থাকলে অনেককিছুই নিজে নিজে করতে হয়। যদি বাড়িতে থাকেন, পরিবারের সদস্যরা সেগুলো করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
* আপনার মা-বাবা যখন ঢাকায় আপনার বাসায় বেড়াতে আসেন, কখনো কী তাঁদের রান্না করে খাইয়েছেন?
সাকিব: আমি শুধু ডিমের ওমলেট করতে পারি। আর এই কাজটাই সবচেয়ে ভালো পারি।
* এমন কিছু বলুন, যা আপনার সম্পর্কে কেউ জানে না।
সাকিব: আমার যা মনে আসে, তা-ই সব সময় বলি আমি। কখনো কখনো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই পারি না। আমি খুব বেশি আবেগপ্রবণ।
* বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় রাগ সামলাতে পারেননি, এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কী?
সাকিব: ২০১১ সালের বিশ্বকাপের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। আমার সমালোচনাকারী বাংলাদেশের সাবেক কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছিলাম আমি। ওই ঘটনার জন্য এখন অনুতাপ হয় আমার। ওই সময়টাতে মনে হয়েছিল, সঠিক কাজটাই করেছি। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, ভিন্নভাবে ভেবেছি আমি।
* পাঁচ উইকেট নাকি সেঞ্চুরি? কোনটা আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
সাকিব: চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যখন সাত উইকেট শিকার করেছিলাম। ভীষণ উত্তেজনায় ছিলাম। তবে পাঁচ উইকেট শিকারের চেয়ে একটি সেঞ্চুরিকেই ওপরে রাখি আমি। কারণ বোলিংয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয় না আমাকে, যেমনটা করতে হয় ব্যাটিংয়ে।
* ক্রিকেটের বাইরে কোনো শখ আছে কি?
সাকিব: ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল আমার কাছে বেশি ভালো লাগে, সত্যি বলছি। আমি ফুটবল-পাগল। ইউরোপীয় লিগের খেলা দেখতে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে বসে থাকি। বার্সেলোনার খেলা সব সময়ই দেখি। দলের হোটেলের টিভিতে ফুটবল দেখানো না হলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খবর রাখি। ন্যু ক্যাম্পে কখনো যাইনি। ওখানে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। আশা করছি, আগামী বছর বার্সা-রিয়ালের ম্যাচ দেখব।
*আপনার ডাক নাম ময়না। নামটি কে দিয়েছে?
সাকিব: আমি তখন হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে ছিলাম। বাংলাদেশ দলে আমার সিনিয়র সতীর্থ নাঈম ইসলাম বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে ‘ময়না’ বলে ডাকতে শুরু করে। আমার চেয়েও অবশ্য তামিম ইকবাল (পেটলা) ও মুশফিকুর রহিমের (বাটুল) ভালো ডাক নাম আছে।
* সম্প্রতি শেষ হওয়া এশিয়া কাপে আপনি ভাঁড়ের টুপি মাথায় দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
সাকিব: ফাইনালে ওঠার পর ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ ওটা ছুড়ে মেরেছিল। এর একটু পরই ছিল সংবাদ সম্মেলন। পরের ম্যাচে অনেক সমর্থক একই ধরনের টুপি মাথায় দিয়ে মাঠে এসেছিল।
* আপনি কি মনে করেন, ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশি সমর্থকেরাই সবচেয়ে আবেগী?
সাকিব: বাংলাদেশ ও ভারত—এই দুই দেশের সমর্থকেরাই ক্রিকেটবিশ্বে সবচেয়ে আবেগপ্রবণ।
* আপনার প্রতি গণমাধ্যমের কোন প্রশ্নটা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত?
সাকিব: কালকের ম্যাচে কী ঘটবে?
* কোন বিষয়টা আপনি শাহরুখ খানকে শেখাতে পারেন?
সাকিব: সম্ভবত আমি তাঁকে স্পিন বল করা শেখাতে পারি। শাহরুখের সামনে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই। তার সঙ্গে কী কথা বলব, ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।
* সমর্থকেরা রক্ত দিয়ে লিখে আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়—এটা কি ঠিক?
সাকিব: দু-একবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি মনে করি, ওই নারী অবশ্যই পাগল। একদিন আমি একটা রেস্টুরেন্টে ছিলাম। এক নারী-সমর্থক টিসুতে লিখে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি ওকে চিনি না, কখনো দেখিওনি।
* বাংলাদেশে গেলে পর্যটকদের কোন কাজটা অবশ্যই করা উচিত?
সাকিব: সর্ষে ইলিশের স্বাদ না নিয়ে ফিরবেন না।
* অলিম্পিকে কোন খেলার টিকিট কিনবেন?
সাকিব: ১০০ মিটার ফাইনাল। লন্ডন অলিম্পিকের টিকিট এখনো অবশ্য পাইনি। তবে সেখানে গেলে কেউ না কেউ আমাকে তা পেতে সহায়তা করবে।
(প্রথম আলো থেকে)