অনেক দিন পর আজ সবুজ গ্রামে। সকাল ৬টা বাজে। দারুন একটা ভোর। অনেকদিন এমন ভোর দেখি না। ঢাকা শহরে ক্লান্ত শান্ত সর্বস্বান্ত হয়ে রাতে ঘুমিয়ে যাই সেজন্য সকাল ৯টার আগে উঠতে পারি না। অথচ পাখির কোলাহলে অনেক দিন পর ভোর দেখলাম। আমি মনে করতে পারি না, শেষ কবে ঢাকাতে এমন পাখির কোলাহলে ভোরে উঠে গেছি। আমাদের এই কংক্রিটের জঙ্গলে আজকাল পাখিরা ডাকতে ভয় পায়। সেজন্য আমাদের পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে না। আমাদের সনতলা গ্রামের প্রধান বৈশিষ্ট্য এই বুলবুলি আর শালিক পাখির বিরামহীন ডাকাডাকি। যখন পাখিরা বুঝতে পারলো আমার আলসেমি চলছে তখন টিনের চালে ডানা ঝাপটানোর শব্দ করে আবার জানান দিল,"ভোর হয়েছে"। আমি আলসেমি ছেড়ে উঠলাম। জানালা পর্দা খুলতে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো রোদ। আমি বিমোহিত। সকালের নাস্তা সেরে বেড়িয়ে পড়লাম।
আমাদের এই গ্রামটা খুব বড় নয়। ঘন্টা চার পাঁচেক হেঁটে নিলে পুরো গ্রাম দেখা শেষ হয়ে যায়। তবে পুরোপুরি গ্রামটাকে উপভোগ করতে চার পাঁচদিন সময় লেগে যায়। এখানকার গ্রামবাসীর প্রধান জীবিকা হচ্ছে কৃষিকাজ, মৎসশিকার এবং অন্যান্য। করতোয়া নদী অববাহিকায় অবস্থিত। যাত্রী পরিবহনে প্রধান বাহন ভ্যান গাড়ী এবং নসিমন করিমন। সনতলা গ্রামবাসীরা খুবই অতিথিপরায়ন। তারা সারটিক্ষন গল্পগুজবে মাটিয়ে রাখে। সারাটা গ্রাম জুড়ে সবুজ মাঠ, স্কুল প্রাঙ্গন জুড়ে খেলার মাঠ। পাকা সড়ক। প্রতিটি একতলা টিনের বাড়ী।
নানীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিটি আমার নানী আমার দূর সম্পর্কে মামা নিকট দান করে দিয়েছিলেন। জীবদ্দোশায় আমার নানীর ইচ্ছাগুলো উনার ডায়রিতে লিখেছিলেন, তাতে উনি লিখেছিলেন, এখানে একটা ছোট কুটির থাকবে যার নাম হবে,"রৌদ্রছায়া"। নানী মারা যাওয়ার পর আমি উনার লেখালেখির খাতাগুলো আমার কাছে রেখে দিয়েছি। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি তার ইচ্ছাগুলোর কথা। পরবর্তী আমার মা সেই মামার নিকট সেই জমিটি ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে সেখানে একটা ছোট বাড়ী বানানো হয়, যার নাম," রৌদ্রছায়া"। আমরা প্রচন্ড নানুকে আপিন ডাকতাম। বিলম্বিত হলেও উনার একটু দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আমরা পূরণ করে খুবই আনন্দিত ছিলাম।
৫ই অক্টোবর,২০১২
-------------------------------------------------------------------------------------
লেখালেখি ৩৬৫ প্রজেক্ট ১১৪/৩৬৫
(বিলম্বে আপলোডের জন্যে দু:খিত।)