somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

☀তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধিত) আইন ২০১৩ ☀ বর্তমান পরিস্থিতি ☀ কিছু বাস্তবতা ☀ কিছু সাবধানতা ☀

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



♣"তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধিত) আইন ২০১৩" সম্পর্কে বিস্তারিতঃ♣

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৪ থেকে ৬৫ ধারা পর্যন্ত কোন কোন কর্মকাণ্ড অপরাধ তার কিছু বর্ণনা:

৫৪ ধারায় বলা হয়েছেঃ

(১) যদি কোন ব্যক্তি কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মালিক বা জিম্মাদারের অনুমতি ব্যতিরেকে-

(ক) তার ফাইলে রক্ষিত তথ্য বিনষ্ট করার বা ফাইল থেকে তথ্য উদ্ধার বা সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে ঐ কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে সহায়তা করেন;

(খ) কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে কোন উপাত্ত, উপাত্ত-ভাণ্ডার বা তথ্য বা তার উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা স্থানান্তরযোগ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থায় রক্ষিত বা জমাকৃত তথ্য (removable storage medium) বা উপাত্তসহ ঐ কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোন উপাত্তের অনুলিপি বা অংশ বিশেষ সংগ্রহ করেন;

(গ) কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন ধরনের কম্পিউটার সংক্রামক বা দূষক বা কম্পিউটার ভাইরাস প্রবেশ করান বা প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন;

(ঘ) ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, উপাত্ত, কম্পিউটারের উপাত্ত-ভাণ্ডারের ক্ষতিসাধন করেন বা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেন বা ঐ কম্পিউটার, সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে রক্ষিত অন্য কোন প্রোগ্রামের ক্ষতি সাধন করেন বা করার চেষ্টা করেন;

(ঙ) ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন বা করার চেষ্টা করেন;

(চ) কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কোন বৈধ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন উপায়ে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করেন বা করার চেষ্টা করেন;

৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, কোন কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহূত কম্পিউটার সোর্স কোড, গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করেন, বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে ঐ কোড, প্রোগ্রাম, সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন এবং ঐ সোর্স কোডটি যদি আপাততঃ বলবত্ অন্য কোন আইন দ্বারা সংরক্ষণযোগ্য বা রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য হয়, তাহলে তাহার এই কাজ হবে একটি অপরাধ।

৫৭ ধারায় বলা আছে,

(১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সমপ্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ কাজে আগ্রহী হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কাজ হবে একটি অপরাধ।

ধারাগুলোর ব্যাখ্যা ও কিছু বিশ্লেষণঃ

আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটারে তার অনুমতি ব্যাতিরেকে প্রবেশ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে সহায়তা করেন তাহলে আপনার ৭ থেকে ১৪ বছরের জেল হতে পারে। শুধু তাই নয় এই অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আপনি জামিনও পাবেন না। এমনকি বিনা পরোয়ানায় পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারবে। ২০১৩ সালে সংশোধিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এ এই বিধান করা হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি বিপজ্জনক আইন বলে অভিহিত করেছেন।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর মাধ্যমে তরুণ সমাজকে একটি ভীতিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। এই আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে ৫৭ ধারা। এই ধারাকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যার কারণে ইন্টারনেটের যে কোন কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সংবাদপত্রের অনলাইনে বা ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে বা ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশ বা সম্প্রচার করা কোন কিছু মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলে একই দণ্ড হবে। আপনার বিরুদ্ধে যদি মিথ্যা অভিযোগও হয় তবু মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপনার জামিন মিলছে না।

বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন পাস হয়। সে সময় এই আইনে সর্বনিম্ন কারাদণ্ডের সময়সীমা ছিল না। ফলে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী যে কোন ধরনের দণ্ড প্রদানের ক্ষমতা আদালতের ছিলো। কিন্তু ২০১৩ সালে সংশোধিত এই আইনে যে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সাজা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত বছর। ২০০৬ সালের মূল আইনে আদালতের ওপর জামিনের ক্ষমতা ন্যস্ত ছিলো। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী আদালত যে কোন পর্যায়ে আসামিকে জামিন দিতে পারত। কিন্তু ২০১৩ সালের আইনে এই আইনের অধীনে অপরাধসূমহ অজামিনযোগ্য এবং আমলযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আপনি যদি বৃদ্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিংবা নির্দোষও হন তাহলে মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন মিলছে না। এছাড়া অপরাধ আমলযোগ্য হওয়ায় আদালতের পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে।

কিছু অনলাইন প্রতিক্রিয়া ( DW.DE থেকে):

☀আরিফ জেবতিক লিখেছিলেন, ‘‘এ আইনে গুরুত্বপূর্ণ যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেটি হচ্ছে এ অপরাধে এখন পুলিশ পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে৷ পুলিশের গ্রেফতার-বাণিজ্য সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা জানেন পুলিশের এ ক্ষমতা দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের উপর কত বড় ঝুঁকির সুযোগ তৈরি করবে৷''
জেবতিকের শেষ লাইনটি ছিল এরকম, ‘‘এ বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারে অপ্রয়োজনীয় কড়াকড়ির এ আইন আমাদের ইতিহাসে আরেকটি ‘কালো আইন'-এর নমুনা হিসেবেই চিহ্নিত হবে ভবিষ্যতে৷''
এখন যখন বিলটি পাস হলো তখন জেবতিক তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তি আইন পাস হয়েছে৷ ৫৭ ধারা বলবৎ৷ দারোগা বাবু চাইলেই আপনাকে গারদে পুরে ফেলতে পারবেন অজামিনযোগ্য ধারায়৷''
মোবাশ্বার হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই বিল একটা পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে: বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ যারাই সরকারে থাকুক না কেন তাদের সমালোচনা করো না৷''

☀আজাদ মাস্টার লিখেছেন, ‘‘যা বুঝলাম বাংলাদেশের মধ্যে থেকে অনলাইনে বাংলায় স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ চর্চার কবর খুড়া হলো৷'' সাইফুর রহমান ইমতিয়াজ লিখেছেন, ‘‘ভাই বিদেশ যাইতে মুঞ্চায়৷ দেশে থাইকা আর কিছু কওয়ার অবস্থা নাই৷ কোন সময় পুলিশ বাবাজীরা আবার শ্বশুরবাড়ির দাওয়াত দেয়৷''

☀লিংকন হুসেইন আইনের কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ধুর এত ভয় পাইলে চলবে? জাল ভোট দিলে ২ বছরের জেল!! কিন্তু বাস্তবে ২ দিনেও জেল হয় না৷ এইটা বাংলাদেশ, কোন আইনটা কার্যকর হয়েছে একটু বলবেন?''


এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম এর বিশ্লেষণ ও মতামতঃ (Reference: দৈনিক ইত্তেফাক , ১১ই অক্টোবর , ২০১৩)

☀ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মূল সমস্যা (প্রতিবন্ধকতা) হচ্ছে ৫৭ ধারা। এই আইনে অপরাধ সংঘটনের যে বর্ণনা দেয়া আছে তাতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অর্থাত্ ৫৭ ধারায় এমনভাবে অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেমন ইন্টারনেটে যে কোন কর্মকাণ্ডকেই এই আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েই আছে। এরকম একটি আইনে এতদিন যে রক্ষাকবচ (সেফগার্ড) ছিল এই সরকারের আনীত সংশোধনীর ফলে সেটিও উঠে গেছে। অর্থাত্ এতদিন মামলা করতে হলে সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হতো। এখন আর অনুমতির প্রয়োজন লাগবে না।

☀ব্যারিস্টার তানজীব বলেন, মানুষের বাক স্বাধীনতার জায়গাটি সংবিধানে যেটিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সেই অধিকার হরণ হয়েছে চরমভাবে। এই আইন আপনাকে ইন্টারনেটে ব্লগিং বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে বারণ করছে না। কিন্তু যখন আপনি একাজগুলো করতে যাবেন তখনই আপনার মনে এক ধরনের ভীতি কাজ করবে। ওই ভীতি কাজ করা বা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করাটাই তো বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী। বাক স্বাধীনতার মত যেসব মৌলিক অধিকার আছে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার মধ্যে কি ধরনের ভীতি কাজ করছে। আমি তো মনে করি এই আইনে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে। যা আমাদের বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। যেহেতু বাক স্বাধীনতা খর্ব করছে সেহেতু আইনটি সংবিধান বিরোধী। এক কথায় যদি বলি তাহলে এই আইনের ৫৭ ধারা সংবিধান বিরোধী। এই সংবিধান বিরোধী আইনে পুলিশকে দেয়া হয়েছে ব্যাপক ক্ষমতা। যা মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করবে।

☀সংবিধানে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। এখন বর্তমান আইনানুযায়ী সংবাদপত্রের অনলাইনে মিথ্যা কোন কিছু প্রকাশ করা হলে ন্যূনতম সাজা হবে ৭ বছর।

☀ব্যারিস্টার তানজীব বলেন, আগের আইনে সর্বোচ্চ সাজার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কিন্তু ন্যূনতম সাজার বিষয়টি ছিলো না। কারণ জুতা চুরির জন্য তো কারো ফাঁসি হতে পারে না! চুরির অপরাধের জন্য যে সাজা সেই সাজাই তার প্রাপ্য হবে। কিন্তু এখন যদি আপনি বলেন, ফেসবুকে আপনার দেয়া স্ট্যাটাসের ফলে কারো মানহানি হয়েছে তাহলে মানহানির পরিমাণ অনুযায়ী সেই পরিমাণ শাস্তি হতে পারত। মানহানি কতটুকু হয়েছে সেটি তো আদালতের বিচার্য বিষয়। কিন্তু এই আইনে ন্যূনতম সাজা ৭ বছর উল্লেখ করে দিয়ে কোর্টের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে। কারণ কাউকে যদি সাজা দিতে হয়, তাহলে তাকে ৭ বছর সাজা দিতে হবে। ন্যূনতম সাজার বিধান করে নাগরিকদের এক ধরনের অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংশোধনীতে আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য এই আইন। কিন্তু আইনে শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে কিভাবে আপনি এর ব্যবহারকে বৃদ্ধি করবেন? কিভাবে জনগণকে ডিজিটালাইজেশনে উত্সাহিত করবেন? যখন ইন্টারনেট ব্লগিং বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে শাস্তি হবে, তখন কেউ কি আর দ্বিগুণ উত্সাহ নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন?

☀ব্যারিস্টার তানজীব বলেন, সিলেকটিভ অ্যাপলিকেশন অব ল এর তৈরি হয়েছে এই সংশোধনীর ফলে। কারণ আপনার যাকে পছন্দ হলো না তাকে ধরলেন এবং সাজার ব্যবস্থা করলেন আর যাকে পছন্দ হল তাকে ধরলেন না— এতে করে আপনি রিপ্রেশনের জন্য আইনটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেন। কিন্তু আইনের আসল উদ্দেশ্য কখনোই এটি হওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে জনগণের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। যা গণতন্ত্রের জন্য কখনো শুভ ফল বয়ে আনতে পারে না। মনে হচ্ছে সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে সরকারের মধ্যেই কিছু কিছু লোক এমন সব পদক্ষেপ নেয়াচ্ছে যেগুলো আসলেই জনবিরোধী।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তরুণ প্রজন্ম। আইনে সংশোধনী এনে এই প্রজন্মকে ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। অর্থাত্ একটি প্রজন্মকে আপনার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। এই আইন দিয়ে তো কোন কিছু অর্জন করতে পারবেন না। কিন্তু জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করলেন। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট এম আসাদুজ্জামান বলেন, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার সমাজ বিনির্মাণে এই আইন একটি বড় বাধা হয়ে দেখা দেবে। পুলিশকে যে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাতে পুলিশকে আরো বেপরোয়া করবে। পুলিশ চাইলে যে কাউকেই এই আইনে মামলা দিয়ে দীর্ঘকাল কারাগারে রাখতে পারবে।

☀☀সামহয়্যারইন ব্লগের পরিচালক সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস বলেন, ৫৭ ধারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, তাই অবশ্যই এই ধারা বাতিল করা প্রয়োজন (Reference: প্রথম আলো Tue, 01 Oct 2013 03:10:18 +0600)


----------------- ♣আমার কিছু কথা♣ -------------


এই আইন নিয়ে সবার মনোভাব স্পষ্ট ।

আমি বরং একটি সিনেমার গল্প বলিঃ

মাঠে ফুটবল খেলা চলছিলো। খেলোয়াড় মাত্র ২২ জন কিন্তু দর্শক হাজার। দুই দল অনেক ফাউল করে খেলছে কিন্তু তাতে খেলা থেমে নেই। হঠাৎ মাঠে একটি অদৃশ্য মানুষ প্রবেশ করল। সে অদৃশ্যতার আড়ালে থেকেই একবার এই দলের খেলোয়াড় কে আঘাত দেয় তো আরেকবার ঐ দলের খেলোয়াড়কে কে। অদৃশ্য কাউকে তো দেখা যায়না, দুইদলের খেলোয়াড়রা পরস্পরদের সন্দেহ করে বসল। তাতে নির্বিরোধী দর্শকরাও কিভাবে জানি জড়িয়ে গেলো, হয়তো গ্যালারিতেও কিছু কারসাজি হয়েছে। খেলাতো পন্ড হলই,শুরু হল মারামারি।




আমি এই অদৃশ্য শক্তিকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। কারন এই শক্তি শুধু আগুন লাগাতে জানে। কখনো গার্মেন্টসে, কখনো অনলাইনে। তার কাজ শুধু ফ্যাসাদ লাগানো আর সবাইকে তাতে জড়ানো।



অদৃশ্য শক্তির কাজ পথের মাঝে নানা বিভ্রান্তিকর বাইপাস করে তাতে মানুষের মনকে বিভ্রান্ত করে সরিয়ে নেয়া। তাই যখন ন্যায় বিচার নিয়ে জনগনের আবেগ এক হয়েছিল, তখন আমাদের ঘাড় বাঁকিয়ে দেখানো হয় আস্তিক-নাস্তিক প্রসঙ্গ।



মতিঝিলের ঘটনায় প্রমানিত তথ্য আর প্রচারিত তথ্যে আমরা আসমান জমিন ফারাক খুঁজে পাই , মন ও মস্তিস্ক হয়ে যায় দুদিকে যেতে ব্যাস্ত।



রামুর ঘটনাটা তো পুরোটাই করা হল ফেসবুকের সাহায্যে।



মাতৃভূমি ও ধর্ম, আমাদের কাছে সবচেয়ে সংবেদনশীল। গ্যালারিতে বসে থাকা সাধারন মানুষদের এই সবচেয়ে সংবেদনশীল পয়েন্টগুলো নিয়েই খুব সুক্ষ ভাবে বাধ্য করা হয় উত্তেজিত হতে। আমরা উত্তেজিত হই। উত্তেজিত হয়ে ভুল করি। অন্যায় ও ফ্যাসাদ দুর করতে যেয়ে নিজেরাই অন্যায় ও ফ্যাসাদে জড়িয়ে পরি। অদৃশ্য শক্তি আড়ালে হাসে, যখন না বুঝে শেষ পর্যন্ত আমরা তার পথে পা ফেলে দেই।

রামুর ঘটনাটা মনে করে দেখুন, ফেসবুকে ছড়াল একজন, দোষ পরল আরেকজনের। জজ মিয়ার কাহিনী মনে করে দেখুন। না জানি কত মানুষ বিনামুল্যে চড়ামূল্য দেয় নিজের জীবনের। কি দুর্ভাগ্য তাদের।

বর্তমান সময়ে যেকোনো বড় বড় ষড়যন্ত্র সফল করতে ব্যাবহার করা হয় অনলাইন। তাই আসুন আমরা কিছুটা সাবধান হই। আমরা যেন বলির পাঁঠা না হই বা আমাদের যেন ফ্যাসাদ ছড়াতে ব্যাবহার করা না হয়।



স্যার আমরা তাদের ব্যাপারে কিই বা বলতে পারি। বরং যার যার জায়গা থেকে সাবধান থাকি। কি আর করা।

সামনে গুরুত্বপূর্ণ সময় আসছে। সম্ভাবনা থেকে যায় যে অনলাইনে কোনো পক্ষ (বা অদৃশ্য পক্ষ) নানা রিউমার ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করতে পারে।তাই সবসময় সচেতন থাকা ভালো।

***************************************************

তাই নিচে কিছু পয়েন্ট লিখলাম, যদি কিছু পছন্দ হয় নিয়ে যেতে পারেন।

পয়েন্টগুলোর সারমর্ম হল বাঁধ ভাঙার আওয়াজে মুখরিত থাকুন। কিন্তু বাস্তবতার সাপেক্ষে মুখ, কি বোর্ড এবং আবেগ নিয়ে সতর্ক হন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শানিত বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করুন।

☀ আমাদের সবার facebook কেই কমবেশী ফেক একাউন্ট / অপরিচিত বন্ধু এড হয়ে আছে। কে জানে তার মাঝে হয়তো এমন কিছু একাউন্ট আছে যা বিশেষ দিনে হঠাৎ ফ্যাসাদ ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফ্রেন্ড লিস্ট টা আরেকবার চেক করুন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।

☀ আপনার facebook wall এ যেন বিশ্বস্ত কেউ ছাড়া অন্য কেউ পোস্ট দিতে না পারে সে অনুযায়ী সেটিংস চেঞ্জ করতে পারেন। ট্যাগিং নিয়ে সাবধান হন। password ও log in security নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।

অনলাইনে আপনি যা বলতে চান অবশ্যই বলুন। কিন্তু আপনি বললেন একটা আর কেউ সেটা ঘুরিয়ে ফেলল আরেক দিকে, এরকম যেন না হয়। তাহলে আপনি কিন্তু বিপক্ষ মতের লোক দিয়ে ব্যবহৃত হয়ে গেলেন। তাই প্রতিটা অক্ষর ও শব্দ বুঝেশুনে টাইপ করুন।

☀ জাস্ট হুজোগে পরে / ‘সবাই দিচ্ছে আমিও দেই” মানসিকতায় কোন কমেন্ট বা পোস্ট দিবেন না।যেখানে দরকার সেখানে অবশ্যই করবেন, তবে যা করবেন সম্পূর্ণ বুঝে শুনে দায়িত্ব নিয়ে করবেন।

☀ ব্লগে সেই কথাটা সবসময় মনে রাখবেন, “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন”। আপনাকে রাগানোই অনেকের Assignment, সেজন্য হয়তো অনেকে টাকাও পাচ্ছে। তাই আগে মস্তিস্ক খাটান পরে আবেগ, কেমন? আপনার কমেন্ট / প্রতিউত্তর / প্রতিপোস্ট এ যেন শুধু সচেতনতা ছড়ায়। কেউ যেন ফ্যাসাদ ছড়ানোর সুযোগ না পায় সেদিকে দয়া করে খেয়াল রাখবেন।

একটি পরিকল্পিত ক্যাচাল পোষ্টে দেয়া একজনের কমেন্ট খুব পছন্দ হয়েছে। সেটা নিচে দিয়ে দিলাম।



আসুন সবাই জুথবদ্ধ থাকি। আইনের অপব্যাবহার হওয়াটা একটা বাস্তবতা, বৃটিশ আমল থেকেই হয়ে আসছে। আমাদের কেউ এর শিকার হলে যেন সবাই পাশে এসে দাড়াই, সবাই মানসিক ভাবে তৈরি থাকুন।

☀ আপনার কোন বন্ধু অনলাইনে কোন কিছু ভুল করে ফেললে / কোন ফাঁদে পা ফেললে / কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে অজানা থাকলে তাকে সাথে সাথে সঠিক পথ দেখাতে ভুলবেন না। এটা আমাদের অনেক বড় বড় ফ্যাসাদ থেকে বাঁচাবে।

♣♣ মনে রাখবেন, যে বীর, তাকে কৌশলের ফাঁদে ফেলা হয়। যে যুক্তিবাদী, তাকে গুজব ছড়িয়ে পরাস্ত করা হয়। সামনের দিনগুলো গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । দেশের মঙ্গল কামনা করি। আপনাদের নিরাপত্তা কামনা করি।

☀সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শানিত বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করব।

☀নিজের মতামত সঠিক শব্দে ও অক্ষরে তুলে ধরব, অযথা আপত্তিকর ভাষায় অনলাইনে কিছু লিখবনা।

☀আমরা কোন বিভ্রান্তি ছড়াবো না , ফ্যাসাদে জান-মালের ক্ষতি হয়।

☀কোন বিভ্রান্তি ছড়াতে জেনে- না জেনে ব্যাবহৃত হবোনা, পরে নিজেরাই আফসোস করব।

☀সবসময় সঠিক তথ্যটা জানার চেষ্টা করব, না বুঝে উত্তেজিত হয়ে ব্লাড প্রেশার ও কলরেস্টেরল বাড়াব না।

☀আবেগের আগে বিবেক ও মস্তিস্ক কাজে লাগাব, যেন আবেগ প্রতারিত না হয়।।





আসুন চোখ কান খোলা রাখি। সবাইকে শুভ কামনা..............
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×