টেষ্ট ক্রিকেট অনেকটা ক্লাসিক ধ্রুপদী সংগীতের মতো। বুঝলে বিরাট সমঝদার না বুঝলেও প্রকাশ না করা চাই। পাছে আঁতলামীর সুযোগ যদি নষ্ট হয়ে যায়! টি-টোয়েন্টি টাইপ মানুষের সাথে টেষ্টকে গুলানো হলো কি হতে পারে এ সংক্রান্ত একটি গল্প মনে পরলো।
ড্যানী ভাই আমাদের এক জিগরি দোস্তের বড় ভাই। আমাদের সাথেও কঠিন খাতির। অনেকটা বন্ধুর মতো। প্রচন্ড প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর একজন মানুষ। কঠিন স্মার্ট এবং ফ্যাশেনবেল । অলটাইম ফিট-ফাট। এ ব্যাপারে উনার থিউরী- কখন কোন মেয়ের চোখে পরে যান ঠিক নাই। তাই নো রিস্ক।
একবার আমাদের ধানমুন্ডির ভারতীয় হাইকমিশনারের মিলনায়তনে এক ক্লাসিক সংগীত শিল্পীর পরিবেশনা হবে। ভারতীয় হাইকমিশনের এই সাংস্কৃতিক উইংএ আমাদের এক বড় ভাই চাকরী করেন। আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের ডাক দিলেন, “চলে আসো ব্যাপক ললনার সমাগম হবে।”
ড্যানী ভাইও শুনে কঠিন মাঞ্জা মেরে মাথায় জেল দিয়ে চুল খাড়া, টাইট ফিটিং ঝকমকে কালো পার্টি শার্ট, কালো প্যান্ট, চকচকে লেদারের জুতো পরে হাজির। মানে পুরা ডিস্কো পার্টি সাজ। যেহেতু ক্লাসিক সংগীতের আমন্ত্রণ মূলক অনুষ্ঠান। সবাই পাঞ্জাবী-পায়জামা, মেয়েরা শাড়ি, মানে ধ্রুপদি অনুষ্ঠানের আবহ আর কি। বিপদ ঘটলো যখন ন্ড্যানী ভাই এই পোষাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত। চরম বিব্রতকর অবস্থা। যেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাজে টেষ্ট ক্রিকেট খেলতে উপস্থিত।
অবস্থা প্রাথমিক চরমে গেলো যখন মিলনায়তন পুরা ভরে যাবার কারনে ড্যানী ভাইয়ের জন্য কোন সিট খালি পাওয়া গেলো না। পরবর্তী দৃশ্যঃ ড্যানী ভাই স্টেজের এক কোনায় বসে আছেন আমাদের আয়োজক বড় ভাইয়ের সাহায্যে। এ কেবল ড্যানী ভাই বলেই সম্ভব।সাড়া অঙ্গে চকচকে জামা-কাপড়। স্টেজে উনার উপস্থিতি সিরিয়াস দর্শকদের ব্যাপক ভ্রুকুটির জন্ম এবং আমাদের মতো ফিচেল দর্শকদের ব্যাপক আমোদ বিলাচ্ছে। “আআ-উউ-তেরে কেটে ধিননা” ইতাদি বোলে ক্লাসিক সংগীত চলছে। সমঝদাররা মাঝে মাঝে হাটুতে হাতের বাড়ি দিয়ে তাল ঠুকছেন। মুখে “বহত খুব, কেয়ামত” ইত্যাদি বোল চলছে। ড্যানী ভাই চকমকে সুরতে পুরা অডিয়েন্সকে নিজে দিকে ইতিমধ্যেই আকৃষ্ট করে রেখেছেন। উনি চিন্তা করলেন আমিও তো ক্লাসিক বুঝি এইটা বুঝানো দরকার। তাই ত্যাক্ত হয়ে এক পর্যায়ে উনিও তাল মেলালেন মুখে “বহত খুব, কেয়ামত” ইত্যাদি বোলের দ্বারা। ব্যাপারটার মধ্যে টাইমিং এর ব্যাপার আছে। কখন বলার কথা এবং কখন চুপ থাকার কথা জানতে সত্যিকারের ক্লাসিক সংগীতের এলেম দরকার। পুরা হল চুপ এই অবস্থায় ড্যানী ভাইয়ের বে-টাইমের বোল মুখে “বহত খুব, কেয়ামত” ইত্যাদি শুনে মনে হলো হলে বোমা ফুটেছে। অবস্থা চুরান্ত বেগতিক।
মনে হলো ধরিত্রী ফাক হয়ে যাক। কিন্তু ধরিত্রি অনড়। আমরা চিপা দিয়ে কেটে পরলাম। এক সন্ধ্যার জন্য যথেষ্ঠ হয়েছে। পিছনে ড্যানী ভাই তার চকমকে গেটাপ এক হল ভর্তি মানুষের রক্তচক্ষু নিয়ে বসে রইলেন। আমরা চলে আসার সময় শুনতে পাচ্ছিলাম গায়কেরঃ “পিয়া ঘার আয়ে…ও ও ও মেরে পিয়া ঘার আয়ে…” মনে হলো ঘর আসলেই আমাদের ডাকছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:৩৯