somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুঁই সুতো

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরোনো দিনের কিছু কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ করেই। সুঁইয়ে সুতো গাথতে গাথতে মনে পড়ে গেল কথাগুলো।

একদম ছোট থাকতে মোটামুটি জমিদারি হালতে দিন কাটাতাম। যখন নার্সারিতে পড়তাম তখনকার কিছু দৃশ্য ঝাপসা ঝাপসা মনে আছে। ময়মনসিংহ শহরে থাকতাম। বাবা ছিলেন রোডস এন্ড হাইওয়েজের ইঞ্জিনিয়ার। যে জায়গায় থাকতাম তার নাম ছিল সাহেব কোয়ার্টার।পাজেরো গাড়ি করে শিশু কাননে পড়তে যেতাম। কিন্ডারগার্ডেনের তাবৎ ছেলে মেয়ে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমি গাড়ি থেকে নামা মাত্রই এক দঙ্গল ছেলে গাড়ির বাম্পার, পা দানি তে চড়ে লাফালাফি করতো। আমি চিৎকার করে বলতাম অই নামো সব নামো এইটা আমার গাড়ি।

১৯৯২ সালের পর থেকে বেশ বড় একটা সময় নিদারুন অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলো আমাদের পরিবার। রোডস এন্ড হাইওয়েজের মত একটা জায়গায় বাবার মত সৎ মানুষদের টিকে থাকা ছিল যুদ্ধের মত। প্রমোশন না কিসের জন্য একটা এক্সাম হয়েছিল বাবা আর এক আংকেল ছাড়া সবাই ফেল মারেন। যারা ফেল মেরেছিলো টাকা পয়সা খাইয়ে বাবার প্রমোশন আটকে দেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমা ইত্যাদি কারনে দীর্ঘ ৫-৬ বছর বাবার চাকরি ছিলো না। যদিও পড়ে চাকরি ফিরে পান এবং ক্ষতিপূরন বাবদ মোটা অংকের টাকা পান যেটা হাসিনার আগের আমলের শেয়ার বাজারে বানের জলে ভেসে গিয়েছিলো।

দারিদ্রের মধ্য দিয়ে কাটানো সময় টুকু আমি কখনো ভুলবো না। কিভাবে দিন কাটাতাম তা নিয়ে কিছু সাধাসিধে কথা বলি। ফার্মগেটের জাহানারা গার্ডেনের দুই বেডের ছোট্ট একটা বাসায় ভাড়া থাকতাম আমরা। একরুমে বাবা মা আরেক রুমে গাদাগাদি করে আমরা ৪ ভাই। বাবার চাকরি ছিলোনা বলে মা ছাত্রী পড়িয়ে সংসার চালাতেন। আমাদের পরিবারে কিছু আঘোষিত নিয়ম ছিল। যেমন, কোন কিছু চাইলে অবশ্যই তা পাওয়া যাবে না। তাই বাবা মায়ের কাছে মুখ ফুটে কিছু চাইতাম না। স্কুলের সাদা ইউনিফর্মটা যখন সাদা থেকে হলুদ হয়ে কালচে টাইপের হয়ে যেত উপায় না দেখে বাবা নুতন আরেকটা কিনে দিতেন। ঈদে খালা নানুরা যা দিতেন ওটাই প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ছিলো। বাবা মায়ের কাছে কিছু চাইবার প্রয়োজনও বোধ করতাম না। দুপুরে কিংবা রাতের খাবারে গরুর গোস্ত রান্না হলে তরকারি নেবার নিয়ম ছিল দুই টুকরো আলু আর দুই টুকরো গোস্ত (মোটেও প্রমাণ সাইযের টুকরো নয়) আর মুরগি হলে এক টুকরো মুরগি আর দু টুকরো আলু। ডিমের তরকারি রান্না হত প্রায়ই। কখনো গোটা ডিম খাইনি। অর্ধেক করে খেতাম। একদিন টিফিন নিয়ে গিয়েছিলাম দুটো পাউরুটি আর আধখানা ডিম। কয়েকজন সহপাঠী বেশ ঠাট্টা করেছিলো দেখে। ছেলেপেলেরা দেখতাম প্রত্যেক সাবজেক্টের জন্য একটা টিচারের কাছে পড়তো ক্লাস সিক্স থেকেই। আমি প্রথম পড়া শুরু করি ক্লাস নাইনে থাকতে। ততদিনে অবশ্য আবার সচ্ছলতা ফিরে আসা শুরু করেছিলো। এত কিছুর মধ্যে আজ যেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লো সবচেয়ে বেশি তা হলো সুঁইসুতোর কাহিনী। সেলাইয়ের ঘটনা। ঐ সময় না ধুমিয়ে সেলাই করতাম। অবশ্যই কারুকার্যের জন্য না। সেটা কিভাবে করে জানিও না। বাবা মা শিখিয়ে দিয়েছিলেন অল্প ছিড়ে ফেটে গেলেই জামা কাপড় ফেলনা হয়ে যায়না। আমি সেটা বুঝে দিনরাত সেলাই করতাম। ছোট থাকা অবস্থায় কি কারণে জানি জামা কাপড় ছিড়তো বেশি। দুদিন পরপর এই প্যান্টের সেলাই খুলে যায় আবার হঠাৎ ওই জামা ফুটো হয়ে গেলো। কাজ চালানোর মত সেলাই পারতাম। নেহায়েত আমার সাধ্যের বাইরে চলে গেলে মায়ের কাছে নিয়ে যেতাম উনি সেলাই করে দিতেন। প্যান্টের সাথে পাল্লা দিয়ে সেলাই করতাম স্কুল ব্যাগ। অকারনেই স্কুল ব্যাগ গুলো ছিড়ে যেতো। সেলাই করতাম তিন চার পাঁচবার করে।

আজ অনেকদিন বাদে কি মনে করে অনেকগুলো ফেলে রাখা প্যান্ট সেলাই করলাম। হালকা ছেড়া কিছু প্যান্ট বহুদিন ধরেই পড়ে ছিলো। সেলাই করতে করতে মনে পড়ে গেলো পুরোনো দিনের সেই সুইসুতোর দিনের কথা।
আমার কষ্টের দিনগুলো আমাকে শিখিয়েছিলো অনেক কিছু। ভুলে যেতে বসলেও প্রবৃত্তির কারণে কিছু জিনিস চলে আসে আগের মত। এখনো গোস্তের তরকারি নিতে গিয়ে দুটোর জায়গায় যখন ৪-৫ টূকরো নিয়ে নেই কিংবা আলু নিয়ে ফেলি অনেকগুলো, প্রায়ই মনে পড়ে যায় দু টুকরো আলু আর গোস্তের টুকরোর কথা। জুতো কিংবা স্যান্ডেল ছিড়ে গেলে ফেলে না দিয়ে রাবার গাম কিংবা সুপারগ্লু দিয়ে দীর্ঘজীবি করার প্রচেষ্টা চালাই। ডিমের তরকারি পেলে ছুরি দিয়ে কেটে আদ্ধেক ডিম খাই।

সবার সবদিন সমান যায় না। বাবা সৎ অফিসার ছিলেন বলে চাকরি ফিরে পাবার পরও যে খুব প্রাচুর্যে দিন কাটিয়েছি তা না। কিন্তু অসচ্ছলতা দূর হয়েছিল। আর বাবা রিটার‍য়ার করার পর চিত্র আরো পালটে গেলো। ভালো ভালো কোম্পানি থেকে অফার পেলেন। মোটা মাইনের চাকরি করেন এখন। বড় ভাই কামাই করেন। আমি যা কামাই করি তাতে আমার ভালই চলে যায়। সুন্দর ছিমছাম চলছে সব। আগের মত সুঁইসুতো নিয়ে ঘনঘন বসা লাগেনা আর...
২২টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×