আচ্ছা একটা(একজন না বলে একটা বলে সম্বোধন করাই শ্রেয়) বেকার কি স্বপ্ন দেখে?
উত্তরঃ বেকারের স্বপ্ন দেখতে হয় না। দেখলেও মনে থাকেনা অথবা খুবই নিম্ন মানের স্বপ্ন যেগুলো মনে রেখে মস্তিস্কের নিউরন ক্ষয় করবার বিলাসিতা!! একমাত্র একটা বেকারেরই আছে।
কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছিনা। এত্ত এত্ত কথা জমে আছে ভেতরে। চানাচুরের প্যাকেটে ছোট্ট ছিদ্র করলে যেমন সব চানাচুর এসে মুখে জমা হয়ে থাকে, বের হয় না আমার অবস্থাও এখন এরকম। অনেক কথা জমে আছে, অনেক অনেক বেশী কথা। বের হচ্ছে না।
একটা বেকারের জীবনে দুটো পর্যায়, লাইট ফ্যানের সুইচের মত। আশাহত হওয়া, আবার নুতন আশার বীজ বোনা অথবা নুতন আশার বীজ বোনা এবং আশাহত হওয়া।
এবার নিজের কথায় আসি। আমি একটা বেকার। দিনকাল খুব একটা খারাপ কাটে তা বলবনা আবার এটাও ঠিক এমন কিছু কিছু দিন সম্মুখে এসে হাজির হয় এবং আমাকে এমনভাবে উপর্যুপরি বলৎ** করে যে ধৈর্য্যের সীমা ছিঁড়ে ফুড়ে বেড়িয়ে যায়।
এত কথা না বলে আমার স্বপ্ন দেখা এবং যথারীতি স্বপ্নভঙ্গের উদাহরন দিলে হয় পোস্টটা কিছুটা পাঠযোগ্য হবে। তাই দেই……..
পার্ট ওয়ান (স্বপ্ন বোনার পার্ট)
সময়ঃ চাকরির ইন্টারভিউ দেবার আগ মুহুর্ত
এই পর্যায়টা কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী এবং দিনকে দিন অবাস্তব রূপ ধারন করছে। বারবার ছ্যাকা খেয়েও স্বপ্ন দেখার মাত্রা কিছু মাত্র হ্রাস পাচ্ছেনা বরং নুতন করে যখনই স্বপ্ন দেখার সাধ যাগে তখনই cumilitive sum এর মত আগের অক্ষত স্বপ্নের সাথে নুতন স্বপ্ন যোগ করে নিচ্ছি সাফল্যের সহিত।
অল্প কিছুদিনের জন্য এক জায়গায় লেকচারার ছিলাম। একমাস গাধা পিটিয়ে(পড়ুন গাধা কর্তৃক গাধা পিটায়িত হয়েছে) যৎসামান্য কিছু টাকা পেয়েছিলাম যা আজো ব্যাংকে পড়ে আছে। টাকার পরিমানটা এতই অল্প যে তোলার সাহস হায়নি। জানি যে নুতন কোন চাকরি না পেয়ে টাকাটা তুললে ফুড়ুৎ করে শেষ হয়ে যাবে। ইচ্ছে ছিল নুতন কোন চাকরি পেলে টাকাটা তুলব এবং কোন কোন খাতে খরচ করব তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরন নিম্নে দেয়া হলঃ
আমার আব্বার এক কলিগ হাসি মুখে বহুদিন যাবৎ আমার যাবতীয় কাগজ পত্র সত্যায়িত করে দিচ্ছেন। আঙ্কেলকে অনেক জ্বালিয়েছি এবং জ্বালিয়ে যাচ্ছি। সময়ে আসময়ে যখনই কাগজপত্র সত্যায়িত করবার দরকার হয়েছে ওনার কাছে নিয়ে গিয়েছি। কখনো আঙ্কেলের মুখ থেকে হাসি সরতে দেখিনি। খুব ইচ্ছে হয় চাকরি পেলেই মিষ্টি নিয়ে অঙ্কেলের বাড়ি দৌড় দেই। হয়ে ওঠে না…….
নানুর বাসায় মিষ্টি নিয়ে গেলে নানু অস্বাভাবিক রকম খুশি হয়ে উঠবেন। একটা কথা বহুল ভাবে প্রচলিত “স্নেহ ভালবাসা এগুলো উর্ধ্বগামী নহে নিম্নগামী”। কথাটা ১০০ ভাগ সত্য এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। নাতি নাতনীদের অল্প স্বল্প সাফল্যে নানুমনিকে অনেক বেশী পরিমান উচ্ছসিত হতে বহুবার দেখেছি এবং অবাক হয়েছি। চাকরী পেয়ে মিষ্টি নিয়ে গেলে নানু যে কি পরিমান খুশি হবেন তা চিন্তা করে অনেকবার আমোদিত হয়েছি শিহরিত হয়েছি কিন্তু দুঃখজনকভাবে চিন্তাটা ভাবনার জগৎ ভেদ করে বাস্তবতার মুখ দেখতে পারলনা আজ অবধি।
টাকার পরিমান খুব অল্প বিধায় আমার পরিবারের কাউকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখবার সাহস হয়নি। ইচ্ছা ছিল চাকরি পেলে প্রথম মাসের বেতন দিয়ে সবাইকে নিয়ে ভাল কোন জায়গায় জম্পেশ খানাপিনা অথবা সবাইকে কিছু না কিছু গিফট কিনে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনেক দিন ধরে সস্তা bic রেজার দিয়ে শেভ করে আসছি। আজ অবধি আফটার শেভ লোশন ইউজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। Gillette Mach III দিয়ে শেভ করার ইচ্ছা বহুদিনের। ঠিক করে রেখেছি চাকরি পেলেই রেজার আর ভাল দেখে একটা আফটার শেভ লোশন কিনে ফেলব। কেনা আর হয় না।
শার্টগুলো সবই পুরোনো হয়ে যাচ্ছে। নুতন যেগুলো আছে ওগুলো পোলাপাইন মার্কা। অফিসে পরে যাবার যোগ্য না। সস্তায় হলেও দু তিনটে শার্ট কেনার ইচ্ছে ছিল।
মোবাইলের স্ক্রিন পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ঠিক করাবার টাকা নেই। কে ফোন দিচ্ছে কিছুই বুঝতে পারিনা। আবাল বৃদ্ধ বণিতা যেই ফোন দিচ্ছে রিসিভ করে সালাম ঠুকছি। বন্ধুরা অবাক হয়ে বলে কিরে আমার নাম্বার তোর সেল-এ সেভ করা নাই??
বেশি টাকা লাগবেনা ঠিক করতে। তাও ঠিক করা হয় না।
এবার আসি চাকরির প্রথম মাসের বেতন পেলে তা দিয়ে কি করব সেই সম্পর্কীয় স্বপ্ন।
আম্মা আর আব্বার হাতে বেতনের কিছু টাকা তুলে দিতাম। অনেক খুশি হতেন কোন সন্দেহ নেই। আমার এক ফ্রেন্ড প্রথম বেতনের কিছু টাকা মা কে আর কিছু বাবাকে দেওয়াতে ওনারা নাকি সাঙ্ঘাতিক খুশি হয়েছেন। ঘটনা দেখে আমিও স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নের পাখিরা ডানা মেলে উড়ে যায়।
ওকে ভাল কিছু কখনই কিনে দেয়া হয়নি। অল্পস্বল্প জমিয়ে টমিয়ে মাঝে মধ্যে নিম্নমানের যা দিতাম তা পেয়েই অসম্ভব খুশি হত বেচারী। প্রথম মাসের বেতন দিয়ে না হলেও দ্বিতীয় মাসের বেতন দিয়ে কিছু একটা দেবার ইচ্ছে বহুদিনের।
আমি না চাইলেও খেঁকো বন্ধু বাহিনীকে খাওয়াতে হবে। আমি যেহেতু অন্যদের কাছ থেকে খাওয়া, দাওয়াত ইত্যাদি আদায় করতে সিদ্ধহস্ত, তাই ওরাও আমাকে ছেড়ে দেবে এমনটা ভাবা নিতান্তই অমূলক। সেজন্য কিছু পয়সা অবশ্যই বরাদ্দ রাখতে হবে।
মাসে মাসে ইন্টারনেটের বিলের জন্য আব্বার কাছ থেকে টাকা নিতে হবে না ভাবতেই ভাল লাগে। যদিও আমি নির্লজ্জের মত আব্বার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাই, সত্য বলতে কি পড়া লেখা শেষ করবার পর বেকার যুবকের বাবার কাছে হাত পাতা মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। স্রেফ বাবা, মা বলেই সহ্য করছে, দিয়ে যাচ্ছে। অন্য কেউ হলে খবরই ছিল।
হেডফোনের একটা কান নষ্ট হয়ে আছে ৩-৪ মাস যাবৎ। কিনে ফেলতাম।
ইত্যাদি ইত্যাদি………
অতঃপর ইন্টারভিউ প্রদান এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আগমন।
পার্ট টু (নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ)ঃ
যদিও আমি নির্ঝর নই তবুও বারংবার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। এই পর্যায়টা খুবই সংক্ষিপ্ত। তেড়েফুড়ে এসে হাজির হয়। এর সামনেই আমার সমস্ত স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে। বেশী কিছু আর বলবার নেই……
ঘুমাতে যাবার সময় ঘুম আসেনা কয়েকদিন। মনে পড়তে থাকে ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্নকর্তা কর্তৃক কিভাবে মানুষ থেকে গদর্ভ-এ পরিণত হয়েছিলাম। কিভাবে প্রশ্নকর্তা আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছেন যে আমার মাথাটা হয় নিরেট নাহয় পুরোই ফাঁপা নাহয় গো-চোনায় পরিপূর্ন। ভুলে যাই যে ছাত্র জীবনে একটা কোডও কপি করিনি যা একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টুডেন্টের জন্য মোটামুটি দুঃসাধ্য। ভুলে যাই বেশীর ভাগ গ্রুপ প্রজেক্ট গুলো একাই করে ফেলতাম। ওগুলো ভুলে গিয়েছি, মনে নেই…………
ফেডাপ হলে মাইলের পর মাইল হাঁটার একটা পুরোনো অভ্যাস ছিল। শালার যে গরম পরসে তাও করতে পারতেসিনা। ধুর!!!!
নাম কৃতজ্ঞতাঃ ৯০০-৪-ই
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৫