সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেওয়া কেন বেআইনি, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী হবে না, সরকারকে তার কারণ জানাতে বলেছে হাইকোর্ট। ১৯৮৮ সালে বিশিষ্ট নাগরিকদের করা একটি রিট আবেদনে বুধবার বিচারপতি এএইএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেয়। আগামী ১৬ জুন এর রিটের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হবে। তার আগেই জাতীয় সংসদের স্পিকার ও আইন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে হবে।
এইচএম এরশাদের আমলে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেওয়া হয়, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বর্তমানে সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটি যে সুপারিশ তৈরি করেছে, তাতে অবশ্য রাষ্ট্রধর্মের এ বিষয়টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়নি, বামপন্থী দল এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামসহ অনেক সংগঠন রাষ্ট্রধর্মের বিধান বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। এ রিট আবেদনের শুনানিতে আইনজ্ঞ হিসেবে ১২ জনের বক্তব্য শুনবে আদালত। নিয়োগ পাওয়া অ্যামিকাস কিউরি হলেন- টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, এম আমীর উল ইসলাম, রফিক-উল হক, মাহমুদুল ইসলাম, ড. এম জহির, ফিদা এম কামাল, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এএফএম মেসবাহ উদ্দিন ও আব্দুল মতিন খসরু। রিট আবেদনকারীরা হলেন- বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুর্শিদ, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্ত, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বদরুদ্দীন উমর, ফয়েজ আহমেদ, ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। রিট আবেদনের সময় আরো পাঁচ জন বাদি থাকলেও তারা মারা গেছেন। তারা হলেন- কবি সুফিয়া কামাল, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, বিচারপতি কেএম সোবহান, ব্যরিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও শিল্পী কলিম শরাফী। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সুব্রত চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮৮ সালের ৯ জুন অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম এবং হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। "ওই সময় করা এক রিটে উচ্চ আদালত বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত অবৈধ করলেও রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি থেকে যায়। আমরা আশা করেছিলাম, ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক সরকার এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু কেউ তা করেনি।" সংবিধান সংশোধনের চলমান প্রক্রিয়াও রাষ্ট্রধর্মের বিধানটি রেখে দেওয়ার সুপারিশ এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি করায় সংক্ষুব্ধ হয়ে বাদিরা রিট আবেদনটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন বলে সুব্রত জানান। মূল রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বহু ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ বাস করে। এটা সংবিধানের মূল স্তম্ভে বলা হয়েছে। এখানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে অন্যান্য ধর্মকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের অভিন্ন জাতীয়তার প্রতি ধ্বংসাত্মক।
আদালতে ফয়েজ আহমেদ অন্য জীবিত আবেদনকারীদের পক্ষে হলফনামার মাধ্যমে সম্পূরক আবেদন জমা দেন। হলফনামায় বলা হয়, পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের আলোকে আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। আদি সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়েছে। এটার সঙ্গে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মুল আদর্শকে নস্যাৎ করা হয়েছে বলে এতে বলা হয়।
আপনারা এর পক্ষে একমত আছেন?