somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দে জা ভু

০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম ভেঙ্গে বৃষ্টি আমাকে দেখে ধড়ফড় করে উঠল, দূরে সরে গেল। হেসে দিয়ে বললাম, কি হয়েছে? কিছুক্ষন সময় নিল নিজেকে সামলে নিতে, তারপর বলল, ও খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছে আমি নাকি গতকাল মারা গিয়েছি। এবং স্বপ্ন টা সত্যির মত সত্যি ছিল।
ওর হাতটা টেনে নিয়ে বললাম, তা মারা যাওয়ার পরে কি কান্না কাটি কিছু করছিলা, নাকি স্টার জলসা দেখছিলা? আমার এই স্বস্তা রসিকতা বৃষ্টিকে আরও বেশি সিরিয়াস বানিয়ে দিল, ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে গেল, আমি গেলাম ভয় পেয়ে, ওকে এভাবে কখনও দেখিনি। যতটা পারলাম হাসি প্রসস্থ করে ওকে বললাম, আচ্ছা তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো, আজ নাস্তা আমি বানাচ্ছি। ভেবেছিলাম, অনেক কিছু বলবে, কিন্তু ও চুপচাপ ওয়াশ রুম এ চলে গেল।
আমি আলু কাটছিলাম, ও হঠাত দৌড়ে এসে বলল, তোমার কি হাত কেটে গেছে? আমি আবাক হয়ে বললাম, কই নাতো! ও ফ্যকাশে মুখে কিচেন থেকে চলে গেল। গরম কড়াইতে পেয়াজ দিতে যেয়ে তেলের ছিটায় আমার হাত পুড়ে গেল, যতখানি পোড়ার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। আমি হাত চেপে বৃষ্টির কাছে গেলাম, ও আবার আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, হাত কেটে গেছে? আমি বললাম, না পুড়ে গেছে।

দুজনেই বের হওয়ার জন্য রেডি হলাম। আমি সাদা শার্ট পরেছি, এটা দেখে বলল, তুমি সাদা শার্ট পরেছ! মনে হল, ভুত দেখেছে। বললাম, তুমি এমন অদ্ভুত আচরন করছ কেন! ও ফ্যাকাসে হেসে বলল, তোমাকে ভালো লাগছে। কিন্তু সাদা শার্ট এ কফির দাগ লাগলে নষ্ট হয়ে যাবে, তাই বললাম। শুনে বললাম, কফির দাগ কেন লাগবে!
দুজনে বের হলাম, ও আমার হাত ধরে রাখল, অনেক দিন এমন করেনা, বেশি বেশি ভালোবাসাটা আগে ছিল, দিন দিন কেমন যেন কাট খোট্টা হয়ে যাচ্ছে, ক্লাস আর শিক্ষকতা নিয়ে পড়ে থাকে। আমিও প্রচন্ড ব্যাস্ত থাকি।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাটছি, ও বলল, সামনে তাকিয়ে হাটো, না হলে ......... কথা শেষ হওয়ার আগেই এক লোক দৌড়ে আসল, ধাক্কা লেগে আমি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম, ওকে ধরে সামলে নিলাম। ও প্রচন্ড আতকে উঠল, মনে হল, মানুষের সাথে না, আমি ট্রাক এর সাথে ধাক্কা খেয়েছি। দেখলাম, ও কাপছে। ওকে দাড় করালাম, জিজ্ঞেস করলাম, এমন করছ কেন, এভরিথিং ওকে? ও বলল, আচ্ছা স্বপ্ন কি এত সত্যি হতে পারে! যাই হচ্ছে আমার কাছে মনে হচ্ছে সব আমি আগেই দেখেছি। আমি ওর দিকে তাকালাম, ও মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, ওমন তাকিয়ো না, এটা দেজা ভু না, আমি জানি দেজা ভু কি। আমি বললাম, আচ্ছা ঠিকাছে, লেটস বি লজিক্যাল, যেহেতু যা হচ্ছে তুমি আগেই দেখেছো, তাহলে যা হবে তাও দেখেছো। এরপর কি হবে বল, আমরা অবজার্ভ করব, যদি তাই হয় তাহলে ব্যাপারটা আরও সিরিয়াসলি নেব, এখনতো এত আপসেট হওয়ার কিছু নেই।
ও বলল, এরপর তুমি অফিস এ যাবে, আমি ক্ল্যাস এ।
বললাম, এইটাতো প্রতিদিন ই হয়।
ও ভ্রু কুচকে বলল, তারপর আমার ফোন টা পড়ে গিয়ে ডিস্প্লে ফেটে যাবে।
আচ্ছা যদি তাই হয়, তাহলে লেটস ওয়েট ফর দ্যা মোবাইল টু বি ব্রোকেন।
অফিস এ গিয়ে দেখলাম, বৃষ্টির থিসিস পেপার ভুলে আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে আসছি, পাঠানোর মত কাউকে না পেয়ে নিজেই গেলাম তড়িঘড়ি করে। এবার খেলাম, বস এর সাথে ধাক্কা, তার হাতে কফি ছিল, পুরোটাই আমার শার্ট এ লেগে গেল। আবাক হওয়ার তেমন সময় ছিলনা, চলে গেলাম বৃষ্টির ভার্সিটিতে, গিয়ে দেখলাম, ও ডিন এর রুমে ওর হাতে থিসিস পেপার, পরে খেয়াল করলাম আমার কাছে পুরোনো টা।
আমি নীরবে চলে আসলাম, ডিসটার্ব হবে বলে।
দুপুরের দিকে, বৃষ্টি আমার অফিস এ চলে আসছে। বনলতার মত সেজেগুজে। বলল, ১০ মিনিটের ভেতর বের হতে হবে, কাজ থাকলে সেরে ফেল। হাতে অনেক কাজ, কিন্তু ওকে কিছুই বললাম, না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম, ফোন এর ডিসপ্লে কি ফেটেছে না কি ফাটবে? আমি কি আর কিছু দিন বাচব নাকি আজই শেষ?
ও হেসে বলল, তাড়াতাড়ি কর।
আমরা বের হলাম, সারাটা বিকেল ঘুরলাম, বৃষ্টি আমার হাত যতখানি সময় পারল ধরে রাখল। একটু আবাক হলাম, কিন্তু প্রশ্নগুলো উপভোগ দিয়ে ঢেকে রাখলাম। যেই কারনেই হচ্ছে, হচ্ছেতো এইটাই বড় কথা। অনেক দিন পরে আমরা এভাবে সময় কাটাচ্ছি। গতানুগতিক জীবনের বাইরে এসে। বৃষ্টি অনেক কথা বলল, বেশশির ভাগই ছোট বেলার গল্প, বিয়ের আগে প্রায় সবই শুনেছি, একাধিকবার শুনেছি, আজ আবার শুনলাম। সন্ধ্যের দিকে ফেরার পথে ও বলল, আমি ভেবেছিলাম, তুমি আমার ভার্সিটিতে আসবা! আমি বললাম, গিয়েছিলাম তো, কেন গিয়েছিলাম তাও বললাম। সব শুনে ও আমাকে শক্ত করে ধরে রাখল, মায়ার শক্ত বাধন।
সামনের দিকে তাকালাম, দেখলাম, আমাদের ক্যাব এর দিকে একটা ট্র্যাক ছুটে আসছে, এরপর সব অন্ধকার হয়ে আসল।
চোখ খুলে দেখলাম, হসপিটাল এর কেবিনে সবাই আসছে, বৃষ্টির মা কাদছে, আমার বাবা-মা কাদছে।

বৃষ্টিহিন ঘরে একা বসে আছি। হঠাত ওর ব্যাগ এর দিকে চোখ পড়ল, হসপিটাল থেকে আমাদের জিনিষ পত্র গুলো দিয়ে দিয়েছিল। ব্যাগ খুলে দেখলাম, মোবাইল, আইপ্যাড এবং আরও কিছু ভঙ্গুর জিনিষ পত্র আছে, শুধু মোবাইল এর ডিসপ্লেটা ফেটে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×