গস্পেল অফ বারনাবাস নিয়ে আমি প্রথম জানতে পারি এক ব্লগে , তারপর জানার জন্য উইকি পড়ি, ব্লগের সাহায্যে আরও কিছু তথ্য জানতে পারি,তার আঙ্গিকে লেখার চেষ্টা করছি। নিজের ভাষা দিয়ে আবার কোথাও তাদের ভাষা অবিকৃত রেখেছি।
এই সিরিজ টা আব্দুল্লাহ বিন মাহমুদ ভাই (বুয়েট) এর ব্লগ এর কিছু লেখা পরে অনুপ্রানিত হয়ে লেখা হয়েছে ।
তাওরাত বা কুরআন যেমন সরাসরি কিতাব বা পুস্তক আকারে নাযিল হয়েছিল, বাইবেল কিন্তু পুস্তক আকারে নাযিল হয়নি। বাইবেল বিভিন্ন ব্যক্তি কর্তৃক ঈসা(আ) এর বানী আকারে সম্পাদিত । যেমন - mark, Matthew, John হল বর্ণনাকারীর নাম ।
তাদের নামনুসারে পরবর্তীতে এই গস্পেল গুলোর নামকরণ করা হয় gospel of mark, gospel of metthew, gospel of John এরকমই আরেক জন বর্ণনাকারী ছিলেন বারনাবাস তার নাম নামনুসারে রাখা হয় gospel of Barnabas , যেটা আজকের টপিক।
মূল কথায় আসি, বার-নাবীয়া থেকেই বারনাবাস শব্দের উৎপত্তি।
ঈসা(আ) এর ১২ জন ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিল বলে কথিত আছে যাদের খ্রিস্টানরা 12apostle বলে থাকে। gospel of barnabas যিনি বর্ণনা করেন তিনি সেই 12 apostle এর মধ্যে অন্যতম, তিনি ঈসা(আ) খুব ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন। তিনি বনী-ইসরায়েল (ইহুদী) বংশদ্ভুত ছিলেন। প্রথম দিকের খ্রিষ্ট ধর্মেরপ্রচারক এবং শিক্ষক ছিলেন তিনি।
ancient bible
শুরু করা যাক ২০০০ বছর আগের ইসরায়েলর নবী ঈসার জন্ম থেকে ক্রুশের ঘটনা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব কাহিনী. পড়তে ইনশাল্লাহ ভাল লাগবে। আছে ঈসা(আ)এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী ,সঙ্গে আছে বিশ্বাসীদের কাহিনী। সিরিজের এক জায়গায় পাবেন, আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে পাওয়া ঈসা (আ) এর ছবি। আর শেষে গিয়ে রয়েছে একটা সম্ভাব্য চমক।
শুরু করা যাক তাহলে।
ইসলামের সাথে সবচেয়ে বেশি মিল কোন ধর্মের সেটার উত্তর আসলে হবে ইহুদি ধর্ম, আর এরপরই আসবে খ্রিস্টান ধর্ম। ঈসা (আ) এর ঊর্ধ্ব-আরোহণ আর আমাদের মুহাম্মাদ (স) এর দুনিয়া আগমনের মাঝে আনুমানিক ৫৪০ বা ৫৭৫ বছরের যে গ্যাপ, এ গ্যাপে আর কোন নবী আসেননি... তাই আমাদের নিকটতম রাসুল ছিলেন (হলেন) ঈসা (আ)।
প্রথমে কিছু বিষয় জেনে নেয়া যাক। ঈসা (আ) এর মাতৃভাষা ছিল আরামায়িক, এটা হিব্রুর একটা উপভাষার মত বলা যায়। ঈসা (আ) এর নামের আসল উচ্চারণ হল ইয়েশুয়া ( יְהוֹשֻׁעַ), কিন্তু আরবিতে এটা উচ্চারণ করা সম্ভব না কারণ “এ” উচ্চারণ নেই, তাই কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে নামটা আরব দেশে হয়ে যায় ঈসা। ইয়েশুয়া শব্দের অর্থ "ঈশ্বরই নাজাতদাতা”; যাই হোক, ইয়েশুয়া নামটা ল্যাটিন ভাষায় প্রবেশ করে “ইসাস” (Iesus) নামে। উল্লেখ্য, রোমান বা গ্রিক পুরুষদের নামের শেষে ল্যাটিন ভাষায়“আস” বা “ইস” থাকতো... (আপোলনিয়াস, পারসিয়াস, পন্টিয়াস, জুলিয়াস ইত্যাদি) ইয়েশুয়ার নামের সাথে অ্যাড হল “আস”; আর এরপরে নামের শুরুতে I or Y ভাওয়েল থাকলে সেটা J ব্যঞ্জনে পরিণত করা হত। (যেমন, ইয়াকুব—জ্যাকব) সেভাবে ইসাস হয়ে গেল জিসাস, Jesus… আর, বাংলায় যীশু।
কুরআনে ঈসা (আ) এর অনুসারীদের "খ্রিস্টান" বলা হয়নি। বলা হয়েছে নাসারা। মানে কী? আসলে, প্রাথমিক সময়ে ঈসা (আ) এর আমলে, তাঁর অনুসারীদের কে নাসারা ডাকা হত। কারণ ঈসা (আ) এর গ্রামের নাম ছিল নাসরাত (Nazareth)। তাই তাদের বলা হত নাসারা (Nazarene)।
বিশ্বের কোটি কোটি খ্রিস্টান যেভাবে যীশুকে বিশ্বাস করে তাদের সাথে আমাদের বিশ্বাস বেশ ভিন্ন। আমরা মুসলিমরা তাদের মত যীশুকে ঈশ্বর ভাবি না, এটাও বিশ্বাস করি না যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র। কেউ যদি তাকে ঈশ্বর পুত্র বিশ্বাস রাখে তাহলে সে সরাসরি কুরআন অস্বীকার করলো। কুরআনে আছে “তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কারো কাছ থেকে জন্ম নেননি”(সুরা-ইখলাস-৩/৪)
আমাদের বিশ্বাস তিনি আল্লাহ্র একজন নবী এবং রাসুল, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হননি, তিনি আবার আসবেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ্।
যাক, বাইবেল বলতে পারিভাষিকভাবে যে আসমানি কিতাব মিন করা হয় সেটার কোন লিখিত অস্তিত্ব নেই আগেই বলেছিলাম। ঈসা (আ) মুখে যা বলে গেছেন সাহাবীরা সেসব লিখেছেন জীবনীর মত করে, অতঃপর ঈসা ইহা করিলেন, এরপর ঈসা উহা বলিলেন... এভাবে। এগুলোই বর্তমানে ইঞ্জিল নামে পরিচিত। ইংলিশে gospel.
যীশুর জন্ম থেকে শুরু করে তাঁর তথাকথিত ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু আর পুনর্জীবিত হওয়া নিয়ে যে কাহিনী খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে সেটা মুলত বাইবেল থেকে নেয়া। ম্যাথিউ, মারক, লুক আর জন এর লিখা এ জীবনীগুলো পড়লেই বোঝা যায় তারা নিজেরাই একমত না আসলে কী হয়েছিল...
Gospel of Matthew
Gospel of Mark
Gospel of Luke
Gospel of John
আমাদের মুসলিমদের বিশ্বাস এসেছে কুরআন থেকে... কুরআন-এ যীশুর যে কাহিনী বর্ণিত রয়েছে সেটার সাথে খ্রিস্টানদের কাহিনীর কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। তবে, অনেক মিল আছে বারনাবাস নামে একজন সাহাবীর লিখা একটি gospel এ… GOSPEL OF BARNABAS.
বারনাবাস এর আসল নাম ইউসুফ। কিন্তু, ঈসা(আ) এর প্রতি তাঁর অটল ভক্তির কারণে অন্যান্য সাহাবীরা তাঁকে বারনাবাস ডাকত। আরামায়িকে “বার নাবিয়া”। “ইবনে নবী” অর্থাৎ নবীপুত্র।
বলা হয়ে থাকে, ৪৭৮ সালে সম্রাট জেনোর ৪র্থ বর্ষে বারনাবাস এর কবর আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে তাঁর নিজের হাতে লিখা এ বাইবেল এর একটি কপি পাওয়া যায়। তবে এর আগে থেকেই অন্যান্য কপির মাধ্যমে বারনাবাসের বাইবেল পরিচিত ছিল। তবে, নিষিদ্ধ ছিল।
৩৮২ সালে ক্যাথলিক চার্চ এ গস্পেলটি নিষিদ্ধ করে। কেন? কারণ, এখানে স্পষ্টভাবে মুহাম্মাদ (স) এর কথা বলা আছে। যিনি হবেন শেষ নবী।
ভ্যাটিকান এর নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় এখনও দেখতে পাওয়া যায় এ ইঞ্জিলের নাম।
বলা হয়, এখানে আছে ক্রুশের ঘটনার আসল বিবরন, আসলে কে মারা যায় ক্রুশে ঈসার পরিবর্তে ? বিশ্বাসঘাতকতার কারনে কোন সাহাবীর চেহারা ঈসার মত করে দেওয়া হয়েছিল ??কীভাবে? এরপর কী হল? বিস্তারিত রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতার এক অবাক করা কাহিনী। অনেকে "দা ভিঞ্চি কোড" পড়ে মেরি মাগডালিন (Mary Magdalene) সম্পর্কে জানতে চান, আসলে উনি কে... এখানে খুব বিস্তারিতই আছে তাঁর কথা...
তবে এটা ঠিক, কুরআন একমাত্র প্রাচীন গ্রন্থ যেটা এখনও সম্পূর্ণ অবিকৃত এবং কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এইভাবেই থাকবে ইনশাআল্লাহ্, আল্লাহ্ নিজেই এই ওয়াদা করেছেন যে তিনি নিজেই কুরআন কে সংরক্ষন করবেন বিকৃতির হাত থেকে। তাই, আমি বলব না, এ বাইবেল অবিকৃত। এই সুদীর্ঘ ২০০০ বছরে এটা অনেক হাতে হাতে ঘুরেছে। অনেক অনুবাদ হয়েছে... তাই এটা বিকৃত হয়ে গিয়েছে অনেকটাই .আমি এটার মধ্যে বেশ কিছু মধ্যযুগীয় প্রভাব পড়েছি... এটা সম্ভবত তখনকার অনুবাদকদের কারণে হয়েছে... এটাও যে সম্পূর্ণ অবিকৃত তা বলা যাবে না, এতেও মধ্যযুগে বিকৃত করার প্রভাব দেখা যাই। তবে, ইসলামের সাথে উল্লেখযোগ্য অংশ মিল পাওয়া যায় এ ইঞ্জিলে। [ তাই আমার atheist friendদের বলছি,আপনারা এটা ধারাবাহিক গল্প/উপন্যাস হিসেবে পড়ে যেতে পারেন, কারণ এটা বিশ্বাসকরা আপনাদের কাজ না ]
আমি বারনাবাসের ইঞ্জিল এর সিলেক্টেড বেশ কিছু পার্ট বাংলায় ধারবাহিকভাবে দিব... যে পার্টগুলো নিয়েই মানুষ বেশি জানতে চায়... অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি বাংলায় ইসলামিক পরিভাষা ইউজ করেছি...
কোন ধর্মগ্রন্থে নবীর নামের সাথে "(আ)" থাকে না, এ বইয়েও ছিল না। তাই অনুবাদেও লিখলাম না।
আজকে প্রথম পার্ট দিলাম...
। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সূচনাঃ দুনিয়াতে আল্লাহর প্রেরিত নতুন একজন নবী ঈসা মসীহ। তাঁর সাহাবী বারনাবাস এর বর্ণনা থেকে সংগৃহীত।
আমি বারনাবাস। মসীহ নামে পরিচিত ঈসা নাসারার সাহাবী, এ দুনিয়ার শান্তি প্রিয় সবার উদ্দেশ্যে লিখছি... পরম করুনাময় মহান আল্লাহ তাঁর নবী ঈসা মসীহকে কিছু দিন আগে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছিলেন। তিনি অনেক মুজেজা দেখিয়েছেন আর শিখিয়েছেন অনেক কিছু। কিন্তু এখন অনেকেই শয়তানের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে ধার্মিকতার আড়ালে চরম অধার্মিক ধর্মকথা প্রচার করছে। তারা বলছে ঈসা ছিলেন ঈশ্বরপুত্র, বাতিল করছে খৎনা-প্রথা চিরদিনের জন্য আর অনুমতি দিচ্ছে সকল হারাম খাদ্য খাওয়ার। আমার দুর্ভাগ্য, আমার প্রিয় বন্ধু পল (Saint Paul) এদের অন্তর্গত। হযরত ঈসার সাথে থাকাকালীন আমি যা দেখেছি ও শুনেছি তার ভিত্তিতে আমি এ লেখা লিখছি, যেন তোমরা শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে পার আর আল্লাহর আজাবে না পড়। আমার এ লেখা যেন চিরদিন তোমাদের পথ দেখায়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তোমাদের সাথে থাকুন আর শয়তান ও সকল কুপ্রবৃত্তি থেকে তোমাদের রক্ষা করুন। আমিন।
অধ্যায় ১- ঈসার জন্ম-সংবাদ দিতে মরিয়মের কাছে ফেরেশতা জিবরাঈল।
ইয়াহুদা (Judah)বংশে দাউদের (David) বংশধারায় মরিয়ম (Mary)নামের একজন কুমারী ছিলেন। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাঈল (Gabriel)তাঁর কাছে এলেন। কুমারী মরিয়ম দিনকাল কাটাতেন নামাজ-রোজা করে। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে কেউ কখনও কোন অপবাদ দিতে পারেনি। একদিন তিনি একা একা তাঁর কক্ষে ছিলেন। তখন ফেরেশতা জিবরাঈল ঢুকে সালাম দিলেন এবং বললেন, “আল্লাহ তোমার সাথে থাকুন, হে মরিয়ম!”
মরিয়ম ফেরেশতাকে দেখে ভয় পেলেন, কিন্তু ফেরেশতা তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন, “ভয় পেয়ো না, মরিয়ম। কারণ আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা তুমি। তিনি তোমাকে পছন্দ করেছেন একজন নবীর মা হবার জন্য, যাকে আল্লাহ বনি ইসরাইলের মঙ্গলের জন্য প্রেরণ করবেন।” কুমারী উত্তর দিলেন, “আমার কী করে সন্তান হবে, যখন কোন পুরুষকে স্পর্শ পর্যন্ত করিনি?” ফেরেশতা উত্তর দিলেন, “মরিয়ম আল্লাহ যেখানে পিতামাতা ছাড়া মানুষ (আদম) সৃষ্টি করেছেন, সেখানে কেন তিনি শুধু পিতা ছাড়া সন্তান দিতে পারবেন না? তাঁর কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই।” মরিয়ম বললেন, “জানি, আল্লাহ সবই পারেন। তাঁর ইচ্ছাই সম্পন্ন হোক।” ফেরেশতা বললেন, “এখন সেই নবীকে গর্ভে ধারণ কর, তাঁর নাম রাখবে ‘ঈসা’; তাঁকে মদ, নেশা পানীয় আর হারাম মাংশ থেকে বিরত রাখবে, কারণ তিনি আল্লাহর এক পবিত্র বান্দা।” মরিয়ম বললেন, “তাই হোক।”
Hebrew bible
ফেরেশতা চলে গেলেন। মরিয়ম আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, “হে মহান আল্লাহ! আমার সমস্ত দেহ-মন শুধু তোমারই জন্য। তুমি আমার রক্ষাকর্তা । তুমি তোমার এ নগণ্য বান্দাকে এত উচ্চ মর্যাদা দিয়েছ যে ভবিষ্যতে সকল জাতিতে আমার নাম প্রশংসিত হবে। সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমার!! তোমার করুণা সবার প্রতি...”
[to be continued...]
দ্যা লস্ট গস্পেল (The Lost Gospel) -২
রেফারেন্স : গসপেল অফ বারনাবাস
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:০১