somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কারণে আমি মুরতাদ, কাফের

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধরেন প্রসঙ্গটা- নারী।
আপনি হাদীস দেখাইলেন- ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম। আমি কইলাম, ব্যাখ্যায় ভুল আছে, নারী নেতৃত্ব হারাম না।
আপনি কইলেন- নারীর মাথার চুলের অগ্রভাগ থাইকা পায়ের পাতা পর্যন্ত কিচ্ছু দেখানো যাবে না, নারী জোরে কথা বলতে পারবে না, নারী দ্রুত হাঁটতে পারবে না, নারী হাসতে পারবে না, এমনকি নারী পরিবার-সমাজ-দেশ-বিশ্ব নিয়া ভাবতেও পারবে না। তার কাজ ঘর-দোর পরিষ্কার করা, আসবাব গোছ-গাছ করা, রান্নাবান্না করা, কাঁথা সেলাই করা আর সন্তান জন্মদান ও লালনপালন করা। আমি কইলাম- না, নারী তার স্বাভাবিক প্রকাশমান অঙ্গ খোলা রাইখা যে কোনো কাজ করতে পারবে, যে কারও সামনে যাইতে পারবে। সে হাসতে পারবে, সে দৌড়াইতে পারবে, সে চিন্তা করতে পারবে ও মতামত প্রদান করতে পারবে।
আমি ইসলামের ইতিহাস থাইকা তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্তও দেখাইলাম। কোর’আন-হাদীস থাইকা রেফারেন্স ও অকাট্য যুক্তিও দিলাম।
আপনি এইবার কোর’আন ছাইড়া শরীয়তের বইয়ে আঙ্গুল রাইখা কইলেন- এই দেখেন, লেখা রইছে নারী ঘরের বাইরে যাইতে পারবে না। আমি রসুলের জীবনী থাইকা দেখাইলাম- নারী ঘরের বাইরে যাইতে পারবে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে।
আপনি এইবার হাদীসের বই থাইকা ব্যাপক খোঁজাখুজি কইরা একখান হাদীস বার করলেন। এই যে দেখেন- নারী হইল শয়তান, নারীর সারা শরীর জুইড়া খালি শয়তান আর শয়তান। নারী তেতুলের মত, তেতুলের মত, তেতুলের মত। কাজেই নারী থাইকা সাবধান। আমি কইলাম- যুগে যুগে যত নবী-রসুল আসছেন সবাই নারীর গর্ভ থাইকাই জন্মলাভ করছেন। পুষ্প ছাড়া বৃক্ষ যেমন, নারী ছাড়া পৃথিবী তেমন। মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত- এইটা রসুলের কথা। রসুল নারীকে অবজ্ঞা করেন নাই। নারীকে ভালোবাসছেন। সৃষ্টিগতভাবে নারী হইল শান্তির প্রতীক। আল্লাহর রসুল নারীকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত বইলা ঘোষণা করছেন।
ইত্যাকার নানান তর্ক-বিতর্ক শেষ হইল। যেহেতু আপনার মতামত আমি গ্রহণ করলাম না, যেহেতু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলল না, যেহেতু আমার ব্যাখ্যা আপনার পছন্দ হইল না, যেহেতু আপনি যেইটারে ইসলাম বলতেছেন সেইটারে আমি ইসলাম বলতেছি না, সুতরাং এইবার আপনি এক সুন্দর পরিকল্পনা করলেন। মসজিদের মিম্বারে দাঁড়ায়া, ওয়াজ মাহফিলের মাইক্রোফোন কাঁপায়া ফতোয়া দিয়া দিলেন- আমি মুরতাদ হয়ে গেছি, আমি কাফের হয়ে গেছি, আমি খ্রিস্টান হয়ে গেছি, আমি হইলাম ইসলামের দুশমন, আমি ইহুদির দালাল, আমি ইসলামবিরোধী কথা বইলা মানুষের ঈমান-আকীদা নষ্ট কইরা ফালাইতাছি, আমারে থামানো দরকার, তাওহীদী জনতার প্রতিরোধ দরকার, বাংলার মুসলমানের মাটি থাইকা আমারে উচ্ছেদ করণ দরকার, আমারে আগুন দিয়া জ্বালাই দেওযা দরকার, আমারে জবাই করা দরকার।
অতঃপর আমারে মাইরা, জ্বালাইয়া-পুড়াইয়া ভস্ম কইরা, আমার ছাইয়ের উপর আপনারা ‘ইসলামের’ কালো পতাকা উড়াইলেন। সাংবাদিকরা কইল- আহা! তরতাজা একখান মানুষ মাইরা ফালাইলো গো! কিন্তু ওই ব্যাডাও তো কম আছিল না, ইসলাম লইয়া বিভ্রান্তি ছড়াইত, হুজুর বলছে সে নাকি ইসলামবিরোধী কথাবার্তা কইতো। ওর ইসলামবিরোধী কথা শুইনা ধর্মভীরু মানুষ সহ্য করবার পারে নাই। দোষ তো ওরই। সুশীলরা কইল- দোষঘাট যাই হোক, তাই বইলা মানুষ খুন? এ তো মানা যায় না বাপু। তুমি তারে দু-চারটা চর-থাপ্পর দিতে পারতা, শাসায়া দিতে পারতা, অনুভূতিতে আঘাত পাইয়া মামলাও করতে পারতা, তাই বইলা খুন করবা নাকি? কাজটা কিন্তু একটু খারাপই হইছে।
অতঃপর আপনার প্রতি জনতার শ্রদ্ধা আরও একগুণ বাইড়া গেল। আপনি যে সত্যি সত্যিই ইসলাম রক্ষা ও বাতিল নির্মূল কইরা জনতার ঈমান-আকীদা রক্ষা কইরা চলতেছেন তা আবারও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হইল। আপনি আরও বেশি বেশি দান-দক্ষিণা পাইতে থাকলেন এবং নতুন কোনো কাফের-মুরতাদের সন্ধান করতে লাগলেন।

আচ্ছা, আমারে কি ভুতে কামড়াইছিল?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×