somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমরা যারা চুমুর বিরোধিতা করো

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিজ্ঞানমনস্কতার সাথে চুমু খাওয়ার কী সম্পর্ক থাকতে পারে এবং প্রকাশ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে বসে বা শুয়ে পুলিশকে দেখিয়ে দেখিয়ে চুমু খাওয়াতে বাধা দিলে বিজ্ঞানচর্চার ঠিক কোন জায়গায় বিঘ্ন ঘটতে পারে তা নিয়ে অনেক ভেবেছি। পরে বুঝলাম হুদা-হুদিই টাইম নষ্ট করছি। বিজ্ঞানের সাথে চুমুর জাহেরী বা বাতেনি কোনো প্রকার সম্পর্কই নাই। সম্পর্ক আছে আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা ও মুক্তচিন্তার সাথে। কিছুদিন আগ পর্যন্তও কে সমকামিতাকে সমর্থন করে কে করে না- এর ভিত্তিতে আধুনিকতার মানদন্ড নির্দিষ্ট হতো। এবার যোগ হলো- কে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া সমর্থন করে আর কে করে না এই প্রশ্নটিও। খুবই ভালো প্রশ্ন। যুগোপযোগী প্রশ্ন।
আমাদের প্রগতিশীল-মুক্তমনা সমাজ একটু একটু করে এগোচ্ছেন। বাংলাদেশের মাটিতে একটি পাবলিক প্লেসে পুলিশের সামনে দাড়িয়ে চুমু খাওয়া যায়, অন্তত এই ডাক দিয়ে ইভেন্ট খোলা যায়- এটুকুই যথেষ্ট। মানুষ এটুকু বিশ্বাস করুক। কাউকে আসতে হবে না। চুমু খাওয়া লাগবে না। খালি জানুক যে, চুমু খাওয়ার ডাক দেওয়া যায় এবং সাড়া ফেলা যায়। গোড়াবাদীরা নার্ভাস হয়ে মাথায় হাত দিক। বসে পড়ুক। তারপর বলুক- হায় আল্লাহ! হায় ভগবান! এও কি দেখার বাকি ছিল?
শাম্মি হকরা, অনন্য আজাদরা জানে কীভাবে মানুষের চিন্তায়-চেতনায় প্রভাব ফেলতে হয়। ব্লগ, ফেসবুক, বই-পুস্তকের দৌড় কতদূর সেটাও তারা জানে। আমি মনে করি, হুমায়ুন আজাদের একটি প্রথাবিরোধী বইয়ের তুলনায় অনন্য আজাদের প্রথা ভাঙ্গার এমন একটি প্র্যাকটিক্যাল উদ্যোগ বেশি কার্যকরী হবে।
হা-ভাতে পাবলিককে যে কোনো জিনিস খাওয়ানো যায়। পাবলিক প্রথম দিন একটু ক্ষোভ দেখাবে, হয়তো মারতে যাবে, হা-হুতাশ করবে, দেশ গেল দেশ গেল বলে চিৎকার পাড়বে, দ্বিতীয় দিনে চিৎকারের আওয়াজ এমনিতেই কমে আসবে, তৃতীয় দিনে অভিশাপ দিবে, চতুর্থ দিনে বাকা চোখে তাকাবে, ভ্রু কুচকাবে, পঞ্চম দিনে বিষয়টাকে মাথা থেকে আউট করে দিবে, দোষ দিতে হলেও সরকারকে দিবে। এক সময় বেহায়া শাম্মি হকরা উদ্যান ছেড়ে রাস্তায় নামবে, আর হায়াওয়ালারা নিঃশঙ্কচে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। পুলিশ দেখবে, পাবলিক দেখবে, আপনি দেখবেন, আমিও দেখব। থিউরি নয়, সমাজকে বাস্তবে গিলে খাওয়ানো হবে আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা, সমকামিতা থেকে চুমুকামিতা- সব।
আসলে প্রগতিশীল মুক্তমনা আধুনিকতাবাদীরা সঠিক পথেই এগোচ্ছে, তারা তাদের লক্ষ্য জানে। প্রথাবিরোধী প্রগতিশীলতার আলটিমেট চাওয়া একটাই- অবাধ যৌনতা, যেখানে কোনো প্রথা থাকবে না, বাধা থাকবে না, নিয়ম-নীতি থাকবে না, বৈধ-অবৈধের সীমানাপ্রাচীর থাকবে না। প্রবৃত্তিই হবে আইন। সমাজ হবে বাধাহীন।
সমস্যা হইল তখন যখন একদল লোক এসব কিছু না জেনে না বুঝে হুদাহুদিই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো নাচতে লাগলো। কিছুদিন আগে দেখলাম প্রোফাইল পিকে পাইকারীহারে রংধনুর ছবি লাগানোর ধুম পড়ে গেল, চারদিকে খালি আধুনিক আর আধুনিক, সবাই মুক্তমনা হয়ে গেছে। আর এখন এদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ চুমুকামিতার বিরোধিতা আরম্ভ করেছে। আধুনিকতারও একটা মার্জিন থাকা দরকার- এ কথা তারা আগে কোনোদিন কোনোখানে বলেন নাই, এখন বলছেন। তারা আধুনিকতার একটা বাঙালি সংস্করণ চান।
এই যে এরা মার্জিনের কথা বলছেন, এই মার্জিনের চিন্তা-ভাবনাটাই তো মান্ধাতার আমলের গুহাবাসীদের ধ্যান-ধারণা বা মধ্যযুগীয় ধারণা, সে কথা তারা জানেন না? ইউরোপ আধুনিকতা-প্রগতিশীলতা ও মুক্তচিন্তার জনক। প্রথাবিরোধিতাও সেখানকার প্রোডাক্ট। ইউরোপ কোন মানদণ্ড মেনে এসব করেছে? এখন কোন মানদণ্ড মানছে? একটা মানদণ্ড তারা মানে সেটা হচ্ছে জনসাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা। মানুষ যা চাইবে তা বৈধ, মানুষ যা অস্বীকার করবে তা অবৈধ। নৈতিকতার বালাই নাই। অথচ আমাদের এখানে মার্জিনের কথা আসছে নৈতিকতার ধুয়া তুলে।
নৈতিকতা কোনো ধ্রুব বিষয় নয়, আপেক্ষিক। এক সময় দাসপ্রথা নৈতিকভাবে স্বীকৃত ছিল। আজ নৈতিকভাবে অস্বীকৃত। সনাতন ধর্মীদের জন্য গরুর গোস্ত খাওয়া নৈতিকভাবে নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত, মুসলমানদের কুরবানির গরুর গোস্ত খাওয়া নৈতিকভাবে সিদ্ধই কেবল নয়, সওয়াবের কাজ। ইউরোপের অনেক দেশে সমকামিতা নৈতিকভাবে ও আইনগতভাবে বৈধ, আমাদের দেশে অবৈধ ও ঘৃণিত।
প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটাও তাই। ইউরোপে সেটা কোনো বিষয়ই নয়, রাস্তাঘাটে চুমু খাওয়া তো সাধারণ ব্যাপার, মেয়েরা বুক খুলে রেখে রাস্তায় শত শত মানুষের সামনে মিছিল করছে- এমন ভিডিও ও ইমেজ অনলাইনের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। ওগুলো দেখে ওখানকার মানুষ নাক সিটকায় না, ভ্রু কুচকায় না। বাঙালি মেয়েদের বুকের ওপর থেকে এক মুহূর্ত ওড়না সরে গেলেই বাঙালি ছেলেদের যেভাবে আদীম প্রবৃত্তি জাগ্রত হয় তাদের তেমন হয় না। কেননা ওগুলো দেখে দেখে তারা অভ্যস্ত।
প্রকাশ্যে চুমুর বিরোধিতা করবে ধর্মবিশ্বাসীরা, মৌলবাদীরা। কারণ তাদের নৈতিকতার ভিত্তি ধর্ম। ধর্মে নিষিদ্ধ এমন কোনো কাজ হতে দেখলে তাদের নৈতিকতায় বাধে। সম্ভব হলে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে, সম্ভব না হলে মনে মনে ঘৃণা করে। তাদের এ ঘৃণাবোধে কোনো ভণ্ডামী নেই, কৃত্রিমতা নেই। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনিও চুমুর বিরোধিতা করুন, প্রকাশ্যে হোক আর গোপনে হোক, অবিবাহিত নারী-পুরুষের মেলামেশার বিরোধিতা করুন, আমার কোনো কথা নেই। কিন্তু আপনারা যারা নিজেদের সেক্যুলার দাবি করছেন, প্রগতিশীল মুক্তমনার ভেক ধরে আছেন তারা কেন বিরোধিতা করছেন?
ইউরোপের উন্নত দেশগুলোকে আপনারা উন্নয়নের মডেল হিসেবে নিয়েছেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শিক্ষাব্যবস্থা- সর্বত্রই ইউরোপকে গুরু মেনেছেন, ইউরোপীয় সভ্যতার পায়ে দু'বেলা মাথা ঠুকছেন, ইউরোপের মতোই ধর্মকে অবাঞ্ছিত করে রেখেছেন অথচ ইউরোপের অতি আধুনিক ও মুক্তমনা ছেলে-মেয়েদের মতো আপনার ছেলে-মেয়েগুলো যখন একটু প্রকাশ্যে চুমু খেতে চাচ্ছে- আপনাদের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে, নৈতিকতায় সাংঘাতিক আঘাত লাগছে। এই দ্বিচারিতা কেন? আপনার এই নৈতিকতার ভিত্তি কী? এরকম দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ নন- এতটুকুই?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×