সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনা করার সময় বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিজ। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি-বিষয়ক পরবর্তী আন্ডার সেক্রেটারি টম শ্যাননের কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করবে কিনা?
তিনি যে জবাব দেন তা সংক্ষেপে এই যে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষিত বাংলাদেশের একমাত্র সন্ত্রাসী সংগঠন হচ্ছে হরকাতুল জিহাদ-ই-ইসলামী বা হুজি। এ ছাড়া অন্য কোনো সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, কাউকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সময় আইনি বাধ্যবাধকতা ও সংজ্ঞা মেনেই তা করা হয়। কাজেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তালিকায় বিএনপি নেই।
অর্থাৎ বিএনপি'র ২০১৩ সালের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্ত্রাস বলে মনেই হলো না। ২০১৫ সালে পেট্রল বোমাবাজী চালিয়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে প্রায় শ'খানেক তরতাজা জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনা মোটেও সন্ত্রাসী কর্ম নয়। এসব বোমাবাজী ও হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে প্রায় কয়েক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করলো যারা, তাদের কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসী হামলা নয়। যারা এসব করেছে তাদেরকে সন্ত্রাসী বলার মতো কোনো যুক্তি খুজে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে মানুষ মারার অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতায় বিএনপির পদচুম্বনের যোগ্যতাও যাদের নেই, সেই হরকাতুল জিহাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অনেক উপাদান ও আইনী বাধ্যবাধকতা খুজে পাচ্ছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, ওটা সন্ত্রাসী সংগঠন।
কিছুদিন আগে জনৈক ব্যক্তির লেখায় পড়েছিলাম যে, পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী হামলার সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। যেমন- কেউ ব্যস্ত রাস্তা, পার্ক, রেস্টুরেন্ট বা স্টেডিয়ামে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালিয়ে দশ-বিশটা নিরপরাধ মানুষ মারলেই যে সেটা সন্ত্রাসী কর্ম হয়ে যাবে ব্যাপারটা তা নয়। এখানে একটি সূত্র তিনি উল্লেখ করেছেন যার প্রয়োগ করে আপনি হামলার ধরন দেখেই বুঝে যাবেন কোনটা সন্ত্রাসী হামলা আর কোনটা স্বাভাবিক হামলা।
১। হামলাকারী যদি খ্রিস্টান হয় তাহলে বুঝতে হবে হামলাকারীর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। তার কোনো অপরাধ নেই। কারণ, খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে না।
২। হামলাকারী যদি নিগ্র বা কালো হয় তাহলে বুঝতে হবে সে বর্ণবাদী। অশ্বেতাঙ্গদের উপর শ্বেতাঙ্গদের নির্বিচার বৈষম্য ও বঞ্চনা দেখে সে মাথা ঠিক রাখতে পারে নাই। ওটা কোনো ব্যাপার না।
৩। হামলাকারী যদি মুসলিম হয় তাহলে সে আমেরিকান-ইউরোপীয়ান যেখানকারই হোক না কেন সেটা সন্ত্রাসী হামলা। সাথে এটাও ধরে নিতে হবে যে, হামলাকারী হামলা চালানোর ঠিক আগ মুহূর্তে 'আল্লাহু আকবার' ক্রুসেডারদের ধ্বংস হোক' সিরিয়ার প্রতিশোধ নিলাম' ইত্যাদি স্লোগান উচ্চারণ করেছিল। অনেকেই তা শুনেছে।
হরকাতুল জিহাদ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ইসলামের নাম করে তাই ওরা সন্ত্রাসী, কিন্তু বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে গণতন্ত্রের নাম করে, তাই ওরা মডারেট। উগ্রভাব দেখিয়েছে তো কী হয়েছে? তারা একটু উগ্র মডারেট- এই আর কী।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫