( খসড়া )
দেরিতে হইলেও ব্যাখ্যা দিল গ্রামীণ। আশা করি প্রথম আলোর কল্যানে কাল এর একখানা বাংলা পড়ার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
যেনতেন প্রকারেন দুশমনকে-বিরুদ্ধমত-বিরুদ্ধবিষয়কে আক্রমন করার সুযোগ বাংলাব্লগজগত ছাড়তে পারে না। তা-ই দেখতেছি।
যার ফলে এমন একটা অন্তসারশুন্য প্রচারণা এই 'ইউনুস বিরোধী'রা আকড়ে ধরেছে। অথচ এই প্রচারণা নতুন কিছুই জানায় না।
গ্রামীণ যা ছিল; দারিদ্র বিমোচনের নামে ব্যবসা- দারিদ্র বিমোচনের নামে সামাজিক ব্যবসা করে কেবল নতুন কিছু ভোক্তা তৈরি করা- যারা ধারকর্জ করে ঘি খাবে!--- গ্রামীণ তা-ই আছে।
-------------------------------
মাইক্রো ক্রেডিটে দারিদ্র বিমোচন হচ্ছে না, কিম্বা এই ক্রেডিটের নামে ব্যবসা চলতেছে; এসব অনুসন্ধান মনে হয় এর আগে বাংলাদেশে হয় নাই ! এক আনু মোহাম্মদই ত অনেক লিখছে। নরওয়ের ও টিভি রিপোর্টেরও প্রধান বিষয় তা-ই। শুধু তথ্য আকারে তারা আদি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তহবিল স্থানান্তর করে অন্য একটা প্রতিষ্ঠান গড়ার তথ্য দিয়েছে প্রাসঙ্গিকভাবে। গ্রামীণ কল্যাণ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ইউনুস সামাজিক ব্যবসার কাজ শুরু করেন নানা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
সেই বিষয়টারে বিডি নিউজ গং লিখছে 'গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানোর অভিযোগ উঠেছে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে'। স্পষ্ট খবর জালিয়াতি। মনে হয় যেন ইউনুস টাকা সরাইয়া নিজের পকেটে ভরছে !
এই তহবিল স্থানান্তর ওই নরওয়েজিয়ান নিউজের প্রধান প্রসঙ্গ না। তারা আলোচনা করছে, দারিদ্র বিমোচনে এই মাইক্রো ক্রেডিটের অনিবার্য ব্যর্থতা নিয়া। অথচ বিডি নিউজ গং সেই সংবাদরে ম্যানিপুলেট কইরা কথিত টাকা 'সরানো'রে প্রধান কইরা তুলছে।
আরে ভাই, গ্রামীণের যাবতীয় কিছুর মালিক ত ইউনুস এবং অন্যান্য ছোট মালিকরাই। তো নিজের প্রতিষ্ঠানের মূলধন তো নিজেরই। প্রশ্ন হতে পারে বড়জোর এইটুকু যে, এই মূলধন গঠন ও স্থানান্তর দেশের ব্যবসাপাতির আইনসম্মত কি না।
এটা একটা ব্যবসা। ঋণের ব্যবসা। ফলে ব্যবসা চলে ব্যবসার মত। বর্তমান দুনিয়ার অর্থনীতিতে মানে বিশ্ব পুঁজির আদব কেতা হইল; ব্যবসার দরকারে আইন কানুন, আইন কানুনের দরকারে ব্যবসা না। বাংলাদেশের ব্যবসাপতি এনজিও ইত্যাদির আইন বিধান ফাকি দিয়া ইউনুস এক প্রতিষ্ঠানের তহবিল স্থানান্তর করে অন্য প্রতিষ্ঠান গড়ছেন। এতে করে তার 'ব্যবসা' খারাপ হইয়া যায় না হঠাৎ কইরা। যা ছিল তা-ই আছে। ঋণের ব্যবসা। যেই ব্যবসায়ের একমাত্র বিক্রয়যোগ্য পণ্য হইল 'দারিদ্র বিমোচন'।
যারা হালের চালু দুনিয়াদারীর ওপর রাজি খুশী, পুঁজির খোদায়ীর ওপর যাদের আপত্তি নাই, যারা দুনিয়ারে বাজার বইলা মাইনা নিছেন; সেই অধিকাংশ বাংলাদেশীরা এখন ইউনুসের নরওয়ে কেলেংকারীতে যে প্রতিক্রিয়া দেখাইতেছেন, সেটাই বরং বরাবরের মত লজ্জা ও আশংকার কথা। বাংলাদেশে অনেকানেক সক্রিয় মানুষই এর আগে মাইক্রো ক্রেডিটের নামে ব্যবসার বিষয়টা পরিস্কার করে দেখিয়েছেন। সেসবে এই প্রতিক্রিয়াশীলরা উল্টা সুশীল সেজেছেন। আর এখন সাদা চামড়াওয়ালারা যখন কইতেছেন, তখন এরা ঠিকই জ্বি হুজুর করছেন। অর্থাৎ নিজেদের ভালমন্দ যে নিজেরাই বোঝা সম্ভব, সেইটা বুঝার মত আক্কেলমান্দ এই ভেড়ার পাল এখনও হয় নাই। এদের এখনও সব 'উন্নত' বিষয়ের জন্য পশ্চিমের পানে তাকায়া থাকতে হয়।
(এই ইসুতে লজ্জার কিম্বা আশংকার কথা আরও হতে পারে অন্য বিষয়ে। সেইটা হইল, এক. বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অসততা। দুই. ব্যবসা-পাতিরে এই প্রতিক্রিয়াশীলেরা একটা নিষ্কলুষ বিষয় মনে করেন, ব্যবসার মধ্যে নৈতিকতা তালাশ করেন।)
প্রিয় পাঠক, তাড়াহুড়া এবং বেয়াদবী মার্জনা করবেন !
-----------------------
সংযোজন: ১
দরকারি তথ্য:
নতুন গ্রামীণ কল্যানে তহবিল স্থানান্তর কে যে 'সরানো' বলে ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে এই 'সরানোর' ডাক নাম হল 'এসপিভি' বা স্পেশাল পারপাস ভিয়েকল'। ব্যাংকিং-ফিনান্সিং-ইনভেস্টমেন্ট বিজনেসে এই এসপিভি বা 'বিশেষায়িত বিনিয়োগ' মাধ্যম হরহামেশা না হলেও প্রায়ই হয়। গ্রামীণে যা হইছিল তা সংক্ষেপে এমন; আগে গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যেই তার কর্মকর্তা কর্মচারীদের কল্যান তহবিল হিশাবে এই সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড বা এসএএফ তৈরি করা হয় তারপর এই এসএএফ থেকে এসপিভি কোম্পানি আকারে নতুন কোম্পানি তৈরি করা হয়।
কিন্তু এমন এসপিভি নিজে যেহেতু নন-প্রফিটেবল প্রতিষ্ঠান হতে বাধ্য, ফলে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে বানিজ্যিক উদ্যোগ আয়োজন করার সুযোগ নাই গ্রামীণ কল্যানের।
গ্রামীন কল্যানের কোন পরিচালকও এই উদ্যোগ থেকে টাকা আত্মসাত করার সুযোগ পাবেন না, কারন এই এসপিভিতে নগদ টাকা থাকে না। কারন স্থানান্তর করে আনা পুরো তহবিলটাই দিয়ে দেয়া হয়েছে আবার ওই গ্রামীণ ব্যাংকেই, অনির্ধারিত মেয়াদে এবং বিনা সুদে। এই এসপিভি কোম্পানির লাভ লোকসান বন্টনেরও সুযোগ নাই। পুরাটাই নির্দেশিত কল্যান তহবিলে ব্যবহার করতে হবে।
তো, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে খুটিনাটি অনিয়ম হইলেই দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে মাইক্রো ক্রেডিট বা সামাজিক ব্যবসা নতুন কইরা ব্যর্থ হইয়া যায় না। এমন অনিয়ম হইলেও ব্যর্থ ছিল, আছে। অনিয়ম না হইলেও এটা দারিদ্র বিমোচনের জন্য ছিলনা, ব্যবাসায়ী প্রতিষ্ঠান ছিল থাকবে।
আমার কথা বলার জায়গা হইল;
মাইক্রো ক্রেডিট বা সামাজিক ব্যবসা যে দারিদ্র বিমোচন করে না, উল্টা কেবল ক্যাপিটালের বাড় বাড়ন্তে তা দেয় আরও তৃণমূল পর্যায়ে; এইটা বাংলাদেশে এর আগে ও অনেকানেক লোকে অনেকানেক ভাবে তুইলা ধরছে। তো, তখন কেন অনেকেই এইটারে 'বামদের ইর্ষান্বিত হৈ চৈ' বইলা সুশীল সাজছেন। কারন এই অনেকেরা নিজেদের ভালমন্দের জন্য নরওয়েজিয়ানদের মতন অন্যান্য সাদা চামড়ার মুখের দিকে তাকায়া থাকেন।
দ্বিতীয় কথা; আনু মোহাম্মদ সহ বাকীরা যখন লিখছে তখন গ্রামীন বা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বা এদের কর্তাদের ব্যক্তিগত আক্রমন কইরা লেখে নাই। তারা বরং নিও লিবারাল ইকনমির এই মুখোশের- দারিদ্র বিমোচন ধারনার পর্যালোচনার জায়গা থেকে লেখছে যে এই ক্রেডিট শুধু ব্যবসাকে আরও তৃনমূলে নিয়া যায়। এরকম 'ঝামেলা' বাংলাদেশে মাইক্রো ক্রেডিটের সব কারবারীদের আছে। আছে পিকেএসএফের- যার সাবেক প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দিন সাহেব, আছে বসুন্ধরা গং-এর নিকটজন খালেকজ্জুমান সাহেবদেরও। কিন্তু এখন নিউজ ম্যানিপুলেট কইরা এরা বিষয়টারে ইউনুসের ব্যক্তিগত দুর্নিতীর বিষয় বানানোর তালে আছে। অথচ এরকম অনিয়ম বাংলাদেশে সব ব্যবসায়ীরই আছে। এইটা ইউনুসের ক্ষেত্রে বিশেষ না। ফলে, এইটা স্পষ্ট যে, এদের মাথাব্যথা মাইক্রো ক্রেডিট না। বরং অন্য কোনো স্বার্থে এরা ইউনুসের পাবলিক ইমেজ খাটো করার কাজে নামছে।
সতর্কীকরন:
ইউনুস সাহেবের ইমেজের ভারে আমরা কখনোউ ভারগ্রস্ত ছিলাম না। দারিদ্র বিমোচেনের মুখোশে একজন মাইক্রো ক্রেডিট ব্যবসায়ীর কোনো পজিটিভ ইমেজই আমরা দেখি নাই। ফলে বসুন্ধরা গং- এর এই প্রচারণা আমাদের কাছে কোনো আবেদন রাখেনা।
এবং আমরা তার কাছে আমাদের ইজ্জতের ইজারাও কখনো দেই নাই যে, তার এই 'টাকা সরানো'তে আমাদের ইজ্জত হানি হবে দুনিয়ায়। যারা ইজারা দিছল তারাই এখন চিৎকার করতেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:১৩