ইরাকের যুদ্ধ আফগানিস্থানে নিয়ে আসতে ওবামার পরিকল্পনা - ভারতের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হওয়ার চেষ্টায় সাম্প্রতিক নয়া জোশ - পাকিস্তানের বর্তমান সরকার কতৃক যুদ্ধ ব্যবসায়ে অংশগ্রহনের আগ্রহ - দেশটির পারমানবিক অস্ত্রের অনিরাপত্তা - সবশেষে সাম্প্রতিক মুম্বই হামলায় পাকিস্তানের দিকে ভারতের অভিযোগের আঙ্গুল; এইসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম তখনই মন্তব্যটা কানে এল। বাবার সাথে ফোনে আলাপ হচ্ছিল। বাবারই মন্তব্য- পাকিস্তানের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। বোধ হয় তাই হবে। এখন যা অবস্থা তাতে মনে হয় রাষ্ট্র হিসেবে 'পাকিস্তান'-এর টিকে থাকার সম্ভাবনা যারপরআরনাই ধরনের কম। আমেরিকার কথিত 'সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের' ব্যবসায়িক অংশীদার হয়ে দেশটি তার রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের বিনাশের পথে অনেকদুর এগিয়েছে। মনে পড়ে গেল- কলেজে পড়ে আসা সেই কবিতাটির কথা। বাংলাদেশ। অমিয় কবিতায় বলছেন-
হত্যা-ব্যবসায়ী
বাংলাদেশ-ধ্বংস-কাব্যে জানে না পৌছল জাহান্নামে
এ জন্মেই
ভাবলাম পুরোটুকু তুলে দেই-
বাংলাদেশ
অমিয় চক্রবর্তী
কল্যানীর ধারাবাহী যে- মাধুরী বাংলা ভাষায়
গড়েছে আত্মীয় পল্লী, যমুনা-পদ্মার তীরে তীরে
রুপোলি জলের ধারে, আম-জাম-নারকেল ঘেরা
আমন ধানের ক্ষেতে শ্রুতিময় তারি অন্তর্লীন
বানী শোনো প্রাত্যহিক- বহু মিশ্র প্রাণের সংসারে
সেই বাংলাদেশে ছিল সহস্রের একটি কাহিনী
কোরানে পুরাণে শিল্পে, পালা-পার্বণের ঢাকে ঢোলে
আউল বাউল নাচে; পুণ্যাহের সানাই রঞ্জিত
রোদ্দুরে আকাশতলে দেখ কারা হাটে যায়, মাঝি
পাল তোলে, তাঁতি বোনে, খড়ে-ছাওয়া ঘরের আঙনে
মাঠে ঘাটে শ্রমসঙ্গী নানাজাতিধর্মের বসতি
চিরদিন বাংলাদেশ-
ওরা কারা বুনো দল ঢোকে
এরি মধ্যে ( থামাও, থামাও), স্বর্ণশ্যাম বুক ছিঁড়ে
অস্ত্র হাতে নামে সান্ত্রী কাপুরুষ, অধম রাষ্ট্রের
রক্ত পতাকা তোলে, কোটি মানুষের সমবায়ী
সভ্যতার ভাষা এরা রদ করবে ভাবে, মরু-পশু
মারীর অন্ধতা ঝড়ে হানে অসহায় নরনারী
অলভ্য জয়ের লোভে, জ্বালায় শহর, গ্রামে গ্রামে
প্রাচীন সংহতি ভেঙে ভগ্নস্তুপে দূরের উল্লুক
বাঁধে কেল্লা, (পারবে না, পারবে না,) পাপাশ্রয়ী পরজীবী
যতই লুন্ঠন করে শস্য পাট পণ্য, ঘরে ঘরে
ছড়ায় অমেয় শোক, ধর্মনাশ হত্যার ছায়ায়
ঘেরে আর্ত গৃহস্থালি, চতুর্গুন হিন্দু মুসলমান
বাংলার বাঙালি তত জানে জন্মমৃত্যুর বন্ধনে
অভিন্ন আপন সত্বা,
লক্ষ লক্ষ হা ঘরে দুর্গত
ঘৃণ্য যম-দূত-সেনা এড়িয়ে সীমান্তপারে ছোটে,
পথে পথে অনশনে অন্তিম যন্ত্রনা রোগে ত্রাসে
সহস্রের অবসান, হন্তারক বারুদে বন্দুকে
মূর্ছিত-মৃতের দেহ বিদ্ধ করে, হত্যা-ব্যাবসায়ী
বাংলাদেশ-ধ্বংস-কাব্যে জানে না পৌছল জাহান্নামে
এ জন্মেই;
বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে।
কবিতার বিশেষনগুলো গুলো খেয়াল করুন প্রিয় ব্লগার!
বুনো দল/সান্ত্রী কাপুরুষ/মরু-পশু/দূরের উল্লুক/পাপাশ্রয়ী পরজীবী/যম-দূত-সেনা
হত্যা-ব্যাবসায়ী । এইসবই কবি প্রয়োগ করেছিলেন পাকিস্তানী সেনাদের বিশেষায়িত করতে। যারা এখন নিজেদের দেশটাকে জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে।
আর যে বাংলাদেশ- কল্যানীর ধারাবাহী/মিশ্র প্রাণের সংসার/নানাজাতিধর্মের বসতি, সেই বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে। সমবায়ী সভ্যতার বাংলাদেশ।
*ছবি কৃতজ্ঞতা: উইকিমিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১১