পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো হ্রদ এবং মহাসাগরের গহীনে নিমজ্জিত সাতটি প্রাচীন সভ্যতা। ধারনা করা হয় ভূমিকম্প কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে হাজার হাজার বছরের পুরানো এই সভ্যতাগুলো জলের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ের উত্থানশীল প্রযুক্তির প্রবর্তনের ফলে দুর্ঘটনার কবলে নিমজ্জিত এই সাতটি আদিম সভ্যতা পুনরায় আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যা নতুন করে অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
ক্লিওপেট্রার আলেকজান্দ্রিয়া, মিশরঃ
আলেকজান্দ্রিয়া, আলেকজান্ডার গ্রেট শহরে ক্লিওপেট্রার রাজকীয় আবাসের ধ্বংসাবশেষ। প্রায় ১৬০০ বছর আগে হস্তনির্মিত মূর্তি ও ক্লিওপেট্রার প্রাসাদের অন্যান্য অংশ ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রের মধ্যে নিমজ্জিত হয়। প্রাচীন মিশরীয় শাসক ক্লিওপেট্রার আলেকজান্দ্রিয়া তার অস্তিত্ব নিয়ে এক কিংবদন্তী। ১৯৯৮ সালে আধুনিক আলেকজান্দ্রিয়ার ধ্বংসাবশেষ জুড়ে ক্লিওপেট্রার মূর্তি, মন্দির ও স্খলিতচরণ এবং একটি প্রাসাদের ভিত্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। সুবিশাল পাথর মিনার এবং দৈনন্দিন বস্তুও আবিষ্কৃত হয়েছে।
পোর্ট রয়েল, জ্যামাইকাঃ
বিজ্ঞানীদের একটি দল ইউকাটান চ্যানেলে মেগালিথিক ধ্বংসাবশেষ অন্বেষণ করেছেন। তারা সমুদ্রের তীর বরাবর ব্যাপক শহুরে পরিবেশের প্রমাণ পেয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন যে, এই সব প্রাচীন আমেরিকান বিখ্যাত সংস্কৃতির অধ্যুষিত সভ্যতা। প্রশান্ত গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রপথে জলদস্যুদের একটি দলের প্রিয় শহর হিসাবে এর পূর্ণবিকাশ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ণ ও পাপিষ্ঠ শহর হিসেবে এর পরিচয় ছিল। পোর্ট রয়েল, জ্যামাইকা তার মদ্য, তার পতিতা এবং তার সব রাত্রিকালীন বিনোদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৬৯২ সালের জুনে একটি আনুমানিক প্রায় ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প দ্বারা এই শহর বিধ্বস্ত হয় এবং এতে প্রায় ২০০০ জন নিহত হয়।
দ্বারকা ক্যামবে, ভারত উপসাগরঃ
প্রায় ৯৫০০ বছরের পুরনো সুবিশাল শহরের জ্যামিতিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে সমুদ্রের গভীরে কালো অক্ষত আর্কিটেকচার এবং মানব দেহাবশেষ নিমজ্জিত অবস্থায় আছে। এই অঞ্চলের মানব সভ্যতার ইতিহাস পুনর্বিচার করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সমুদ্র গভীরের এই সভ্যতাটি হলো হিন্দু দেবতা কৃষ্ণর অন্তর্গত গোল্ডেন সিটি দ্বারকা। ভারতে সাত প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম উপকূলবর্তী প্রাচীন দ্বারকা গোমতী নদীর তীরে নির্মিত একটি পরিকল্পিত শহর ছিল। কিন্তু মহাভারত ও পুরাণ গ্রন্থ অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত সমুদ্রের মধ্যে নিমজ্জিত হয়। কথিত আছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণর সোনা, রূপা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি প্রায় ৭০০০০ প্রাসাদের সঙ্গে নির্মিত একটি সুন্দর এবং সমৃদ্ধ শহর ছিল দ্বারকা।
ইয়নাগুনি জিমার পিরামিড, জাপানঃ
বিশ বছর আগে কিছু ডুব ট্যুর গাইড দ্বারা এটি আবিষ্কৃত হয়েছে। জাপান উপকূলের কাছাকাছি এই রহস্যময় পিরামিড বন্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর কাঠামো পূর্ব অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতির অনুপলব্ধ যাতে ট্যারাফরমিং প্রক্রিয়ায় বেডরক হতে উৎকীর্ণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু এলাকায় অদ্ভুত জ্যামিতিক গঠনের ত্রিভুজ আকৃতির পাকা টুকরো পাথর পাওয়া গেছে। সমুদ্র তল থেকে ২৫০ ফুট গভীরে স্তুপীকৃত পাথর মূর্তি পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয় ভূমিকম্পের প্রভাবে এটি নিমজ্জিত হয়।
ওয়ান ফায়ায়ো, থাইল্যান্ডঃ
এটি সম্ভবত প্রায় ৫০০ বছর বয়সী একটি থাই মন্দির যা ফায়ায়ো হ্রদের নীচে ডুবে যায়। সাম্প্রতিক কালে প্রায় কোটি ডলার খরচ করে মন্দিরের পুনরূদ্ধারের পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ধ্বংসাবশেষ অনেক অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে। সেই থেকে যৌক্তিক ভাবেই ধারনা করা হচ্ছে যে, হ্রদের নীচে আসলে প্রায় ৭০ বছর আগে ইচ্ছাকৃতভাবে এই অদ্ভুত কাজটি করা হয়েছে। এখন এটিকে মাছের জন্য একটি বাসস্থান হিসাবে পরিবেশন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অ্যাটলান্টিস, এন্টার্কটিকাঃ
ইস্তানবুলের একটি যাদুঘরের অধ্যক্ষ এই অসাধারণ আবিষ্কার করেছেন। গ্যাজেলের চামড়ায় একটি প্রাচীন মানচিত্র পরীক্ষা করে তিনি এন্টার্কটিকায় একটি পর্বত চেইনের অবস্থান চিহ্নিত করেছেন। বস্তুত এই মানচিত্র বিস্ময়কর ভাবে প্রমাণ করে, এন্টার্কটিকা মহাদেশের অ্যাটলান্টিসে হারিয়ে যাওয়া মানুষের অলীক কোন সভ্যতার টুকরো ইতিহাস। যে চেষ্টা এবং দাবি প্রমাণ করতে সাম্প্রতিক সময়ের আবিষ্কারের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় ভূমধ্য সাগর থেকে অ্যাটলান্টিস পর্যন্ত অবস্থিত এন্টার্কটিকার অধীনে জমিতে সোনার প্রযুক্তি। যা প্রাচীন মানচিত্রকারদের দ্বারা ব্যবহৃত ম্যাপিং সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কুইয়ান্ডাও লেক লায়ন সিটি, চীনঃ
অন্তত যতক্ষণ বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনীয় ডুবো ধ্বংসাবশেষ হতে পারে চীনের নিমজ্জিত লায়ন সিটি তার অন্যতম। ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে ১৯৫০ সালে প্লাবিত একটি এলাকা, যা প্রায় ৮৫-১৩১ হাজার ফুট দ্বীপ কুইয়ান্ডাও লেক পৃষ্ঠের তলদেশে অবস্থিত হয়। লায়ন সিটি, শি চেং পূর্ব হান রাজবংশের সময় নির্মিত হয়েছিল। সাংহাই ভিত্তিক একটি ডুব অপারেটর ২০০১ সালে এই নিমজ্জিত শহর আবিষ্কার করে। এটি এখন একটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে গেছে যা প্রায় পুরোপুরি সংরক্ষিত ধ্বংসাবশেষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৭