১। ইসলাম।
২। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ।
৩। জাতীয়তাবাদ।
এই তিন বিশ্বাষের(ধর্মের) পার্থীরা আপনার কাছে আসবে তাদের আদর্শের পক্ষে সাক্ষ(ভোট) চাইতে।
আসুন আগে একে এক জেনে নিই।
জাতীয়তাবাদ কি।
“জাতীয়তাবাদ, একটি কুফরী মতবাদ”
প্রথমেই জানা দরকার জাতীয়তাবাদ কি।
জাতীয়তাবাদ হচ্ছে পরিবার, গোত্র, সমাজ কিংবা দেশপ্রীতি। কেমন প্রীতি ? উত্তর হচ্ছে, যে প্রীতির কারণে তাদের অন্যায়কে অন্যদের অন্যায়ের চেয়ে ছোট করে দেখা হয় এবং ভালো কাজকে অন্যের ভালো কাজের চেয়ে বড় করে দেখা হয়। তাদেরকে অন্যায় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয় এবং অন্যদের চেয়ে নিজেদেরকে উত্তম মনে করে অহংকার করা হয়। যে কারণে আমরা কাওকে ইন্ডিয়ান কিংবা পাকিস্তানী বলে গালি দেই, যে কারণে দেহের কালো রং কে খারাপ চোখে দেখা হয়, যে কারণে আমার দেশের মাটি সোনার চাইতে খাঁটি বলি, সর্বোপরি যে কারণে আমরা মুসলিমরা আজ এক হতে পারিনা। বলি, ও তো রোহিঙ্গা, ও তো ফিলিস্তিনি ইত্যাদি।
.
আইয়ামে তাশরীক্বের ২য় দিনের ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে জনগন ! নিশ্চয় তোমাদের পালনকর্তা মাত্র একজন। তোমাদের পিতাও মাত্র একজন। মনে রেখ ! আরবের জন্য অনারবের ওপর, অনারবের জন্য আরবের ওপর, লালের জন্য কালোর ওপর এবং কালোর জন্য লালের ওপর কোনরূপ প্রাধান্য নেই একমাত্র তাকওয়া ব্যতীত। নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু।” (বায়হাক্কীঃ ৫১৩৭, আহমাদঃ ২৩৫৩৬)
.
যারা দেশপ্রেমের নামে আস্ফালন করলেন আর জাতীয়তাবাদের নেশায় টইটুম্বুর হয়ে মাতলামি করলেন তাদের উচিৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর এই হাদিসগুলোকে স্মরণ করা।
.
০১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে জাতীয়তাবাদের জাহেলী আহ্বানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্থান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (ছাড়তে চাইছে না)। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এবং এ কথাটি লুকিয়ে রেখো না অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোন লজ্জা বা অস্বস্তিবোধ কোরো না। (মুসনাদে আহমাদঃ ২১২৩৩, ২১২৩৬)
.
০২. যদি কেও জাহেলিয়াতের যুগের মত তার পূর্বপুরুষ-বংশ নিয়ে অহংকার করে তবে তাকে বলো, সে যেন তার পিতার জননেন্দ্রিয় কামড়ে ধরে পড়ে আছে, এবং কোন রূপক শব্দ ব্যবহার কোরোনা (শ্রুতিকটু শব্দের পরিবর্তে কোমলতর শব্দের ব্যবহার কোরোনা) (মিশকাতঃ ৪৮২৮)
.
০৩. জাতীয়তাবাদের উপর যে মৃত্যুবরণ করে, জাতীয়তাবাদের দিকে যে আহ্বান করে এবং জাতীয়তাবাদের জন্য যে হত্যা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাঊদ)
.
০৪. জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ এবং দেশপ্রেমের সম্পর্কে বলেন, “এগুলো ত্যাগ করো, এগুলো তো পঁচে গেছে।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
‘‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’’ কি?
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ একটি নতুন মতবাদ। এটি একটি ভ্রান্ত আন্দোলন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করা, দুনিয়া ও দুনিয়ার মজা নিয়ে মেতে থাকা। আখেরাতকে ভুলে গিয়ে, অথবা আখেরাতকে উপেক্ষা করে পার্থিব জীবনকে মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা। পরকালের আমলের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করা ও গুরুত্ব না দেয়া। ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ব্যক্তির ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের এ হাদিসটি হুবহু মিলে যায়- “দিনার ও দিরহামের পূজারি ধ্বংস হোক। ধ্বংস হোক কারুকাজের পোশাক ও মখমলের বিলাসী। যদি তাকে কিছু দেওয়া হয় সন্তুষ্ট থাকে; আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। সে মুখ থুবড়ে পড়ুক অথবা মাথা থুবড়ে পড়ুক। সে কাটা বিদ্ধ হলে কেউ তা তুলতে না পারুক।”[সহিহ বুখারি (২৮৮৭]
উল্লেখিত বিশেষণের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও পড়বে যারা ইসলামের কোন একটি কথা বা কাজকে সমালোচনার পাত্র বানায়। যে ব্যক্তি ইসলামী শরিয়াকে বাদ দিয়ে মানবরচিত আইনে শাসন পরিচালনা করে সেই ধর্মনিরপেক্ষ। যে ব্যক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয় যেমন- ব্যভিচার, মদ, গান-বাজনা, সুদী কারবার ইত্যাদিকে বৈধ বিবেচনা করে এবং বিশ্বাস করে যে, এগুলো থেকে বারণ করা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও ব্যক্তিগত স্বার্থে বাধা দেয়ার নামান্তর সে ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ। যে ব্যক্তি শরয়ি দণ্ডবিধি যেমন- হত্যার শাস্তি, পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুর শাস্তি, ব্যভিচারী ও মদ্যপের উপর বেত্রাঘাতের শাস্তি, চোর ও ডাকাতের হাত কাটার শাস্তি কায়েমে বাধা দেয় অথবা অসম্মতি প্রকাশ করে, অথবা দাবী করে এসব দণ্ডবিধি যুগপোযুগী নয়, এগুলো নিষ্ঠুর ও জঘন্য তাহলে বুঝতে হবে সে ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ।
তাদের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম হচ্ছে: আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন: “তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই।” [সূরা বাকারা, আয়াত: ৮৫]
সুতরাং যে ব্যক্তি যে বিধানগুলো তার মনঃপুত হয় যেমন পারিবারিক আইন, কিছু কিছু ইবাদত সেগুলো মানে আর যেগুলো তার মনঃপুত হয় না সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে সেও এ আয়াতের বিধানের মধ্যে পড়বে। একই প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি দুনিয়াতেই তাদেরকে তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং এতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হবে না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছু নেই।” [সূরা হুদ, আয়াত: ১৫-১৬]
ধর্মনিরপেক্ষাবাদীদের টার্গেট হলো- দুনিয়া কামাই করা, দুনিয়ার মজা উপভোগ করা। এমনকি ইসলামে সেটা হারাম হলেও, কোন ফরজ ইবাদত পালনে প্রতিবন্ধক হলেও। তাই তারা এ আয়াতের হুমকির অধীনে পড়বে এবং এই আয়াতের অধীনেও পড়বে “যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা অতিসত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১৮] এ অর্থবোধক অন্যান্য আয়াত ও হাদিসগুলো তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে।
আল্লাহই ভাল জানেন।
ইসলাম কি?
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা
প্রচলিত অর্থে ধর্ম বলতে যেটা বোঝানো হয় ইসলাম মোটেও তা নয়। ইসলাম হলো দীন তথা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা (Complete code of life). ব্যক্তিগত জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে সেটা যেমন ইসলামে বলা আছে ঠিক তেমনি জাতীয় জীবনে অর্থনীতি, সমরনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, শ্রমব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্ত কিছুর মৌলিক নীতিমালা ঠিক করে দেওয়া আছে এই দীনে। এ কারণেই মহান আল্লাহ বলেছেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।” (সুরা মায়েদা- ৩)। . এই দীনটি পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হলে এর ফল হিসাবে সমাজে নেমে আসবে অবারিত শান্তি (ইসলাম)। আর যদি এটি আংশিকভাবে কেবল পালন করা হয় তবে সেই শান্তি কখনোই আসবে না। কাজেই আংশিক ইসলাম কখনোই ইসলাম নয়। আংশিকভাবে (শুধু ব্যক্তিজীবনে অথবা শুধু জাতীয় জীবনে অথবা শুধু সমরনীতিতে) ইসলাম মানার অর্থ হলো শেরক করা। এটা যারা করবে তাদের দুনিয়ার জীবনে থাকবে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা আর আখেরাতে থাকবে কঠিন শাস্তি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেছেন- “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান করো? সুতারং তোমদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা এবং কেয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে।“ (সুরা আল বাকারা: ৮৫) . আজ পৃথিবীর সর্বত্র এই আংশিক ইসলাম মেনে শেরক করা হচ্ছে, এ কারণে মহান আল্লাহও মুসলিম নামক এই জাতির উপর লাঞ্ছনা, গঞ্জনা দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তোমাদের আখেরাতেও কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। তবু এই জাতির অধিকাংশ মানুষই নির্বিকার। দীন হিসাবে ইসলামকে সামগ্রিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করার তেমন কোনো প্রচেষ্টা নেই।
শেষকথা-
ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের পক্ষে প্রার্থী থাকার পরে'ও মুসলমানদের মধ্যে যারা বুঝে-শুনে গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইত্যাদি আদর্শ বাস্তবায়নের পক্ষে সমর্থন (ভোট) দিবেন, "আপনার দাড়ি থাকতে পারে, আপনার পান্জাবী থাকতে পারে, আপনার টুপি থাকতে পারে, আপনার পাগড়ী থাকতে পারে কিন্তু আপনার ঈমান থাকবেনা!
আসুন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আদর্শের পক্ষের প্রতীক হাতপাখার স্লোগান তুলি,
"জিতলে'ও হাতপাখা-হারলে'ও হাতপাখা!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৭