যা লিখতে চেয়েছিলাম তা লেখা হয়নি। যা চাইনি সেটা লিখে ফেলেছি। লেখাটি কাউকে মনোযোগ দিয়ে পরতে হবে এমন কোন কথা নেই। এটি কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ কথা নয়। মন না চাইলে পড়বেন না। তবে কথাগুলো কিন্তু ছেলেখেলা করে লেখা হয়নি।
একজন ব্যক্তি তিনি আস্তিক না নাস্তিক সে ব্যাপারে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিবেন। তাছাড়া হুমায়ূন আহমেদ নাস্তিক ছিলেন নাকি আস্তিক সেটা জরুরী নয়। যারা নাস্তিক তারা ভেবে নিতে পারেন তিনি নাস্তিক ছিলেন, আর যারা আস্তিক তারাও ভেবে নিতে পারেন তিনি আস্তিক ছিলেন। উৎসাহী কেউ বিষয়টা খুঁজে দেখতে পারেন তিনি কোথাও জানিয়ে গেছেন কিনা তাঁর নাস্তিক/আস্তিক স্ট্যাটাস সম্বন্ধে। তবে আমার মনে হয় এক্ষেত্রে দুটো উত্তরই পাওয়া যাবে। তিনি যদি এটিকে জরুরী মনে করেন তাহলে জানিয়ে যাবেন, মনে না করলে জানাবেন না। তবে আমার এটিকে কখনোই কোন জরুরী বিষয় মনে হয় না।
সব মানুষজনের মধ্যেই দুটো চরিত্র দেখা যায় বা বলা যেতে পারে দুটো সত্ত্বা দেখা যায়। একটি চেতন মন আরেকটি অবচেতন মন। মানুষের স্বাভাবিক ধর্মই হচ্ছে কোন কিছু স্বচক্ষে দেখে বিশ্বাস করা। মানুষ যখন কোন কিছু স্বচক্ষে দেখে না তখন তাঁর মধ্যে একটি দ্বিধা থাকে, কখনো সে বিশ্বাস করতে চায় কখনো না। তবে মানব মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি কোন কিছুকে না দেখেও সে বিশ্বাস করতে পারে সে জন্য মস্তিষ্ককে পর্যাপ্ত পরিমাণে কমান্ড দিতে হয়। ছোট বেলা থেকেই যাকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে বলা হচ্ছে দীর্ঘ দিনের কমান্ডের ফলে সে স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করবে। আবার মানব মস্তিষ্ক কিছু কিছু ব্যাপার তাঁর নিজের সুরক্ষার জন্য বিশ্বাস করতে চায়, আবার কোন কোন ব্যাপারের ক্ষেত্রে বিশ্বাস করতে চায় না। একটি পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার জন্য মস্তিষ্ক কখনো কখনো ঠিক করে দেয় তাঁর নিজের সুরক্ষার জন্য কোনটি তাঁর বিশ্বাস করা উচিত। যেমন – আপনি পরিবেশের কারণে বিশ্বাস করেন খাবার ধুয়ে খাওয়া উচিত কেউ কেউ তা করে না। একটি মজার ব্যাপার হল যারা বিশ্বাস করেন না যে এটি ধুয়ে খাওয়া উচিত, তারা যদি ধুয়ে নাও খান তাদের কোন ক্ষতি হয় না। আর যারা বিশ্বাস করেন যে ধুয়ে খাওয়া উচিত তারা না ধুয়ে খেলে সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘদিন কেউ যদি ধ্যানের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করেন তবে এক সময় তিনি পুরোপুরি স্রষ্টাকে বিশ্বাস করবেন। এজন্যই প্রতিটি ধর্মেই উপাসনার কথা বলা আছে এবং প্রায় সবগুলো ধর্মেই উপাসনার মূল বিষয়টি হল ধ্যান। প্রথমত সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে গেলে আপনাকে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করতে হবে। ধ্যান শুধু সৃষ্টিকর্তার উপাসনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটিকে যেকোন কাজের শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং এর শক্তি অকল্পনীয়। তবে আমাদের সমাজে আমরা অনেকেই আছি যারা সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস করি কিন্তু তাঁর উপাসনা করি না। সেক্ষেত্রে পরিবেশ আমাদের উপর অনেকটা প্রভাব ফেলে। মূলত সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস হল একটি চর্চা। এমনও হতে পারে একটি জীবনের বহুবার আপনাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি কি সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস করেন? আপনি হয়তো উত্তর দিয়েছেন, হ্যাঁ। সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করার পেছনে এটিরও একটি প্রভাব মস্তিস্কে রয়েছে।
আমরা প্রতিটি মানুষই কিন্তু কিছু না কিছুর চর্চা করি। আপনি হয়তো উপাসনা করেন না কিন্তু প্রচুর বই পড়তে ভালবাসেন বা অন্য কাজ করতে ভালবাসেন। কিছু কিছু কাজে মনোযোগ খুব দরকার হয়, সেক্ষেত্রে অনেকেই উপাসনা বা ধ্যান করেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই কল্পনাতে বিশ্বাস করে অশরীরী, অজাগতিক কিছুর প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি হয় বা সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন। আবার কেউ কেউ যখন সৃষ্টিকর্তার উপাসনা থেকে দূরে সরে যায় আর তাঁর প্রতিদিনের কাজগুলোর উপর নির্ভর করে তার প্রভাবে তাঁর সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস নাও থাকতে পারে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসে পরিবার অনেক বড় ভূমিকা পালন করে তবে ব্যতিক্রমও দেখা যায়। আসল ব্যাপারটি হচ্ছে এরকম আমাদের একটি মন বলে সে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে কিন্তু অন্যটি বলে না। কিন্তু মনকে কিছু মানুষ বোঝাতে চায় তাঁর সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস করা উচিত বা সে করে, সাধারণ আস্তিকদের ক্ষেত্রে এরকমটি হয়। তবে যারা নিয়মিত উপাসনা করেন তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস গভীর হয়।
আমাদের মনের একটি দিক যেমন সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে তেমনি অন্য দিকটি অবিশ্বাস করে। দুটো দিকই প্রচণ্ড শক্তিশালী, যারা মাঝামাঝি থাকেন তারা সেটা অনুভব করতে পারেন না। যে ব্যক্তি প্রচণ্ড ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন তাঁর অবচেতন মন প্রচণ্ড ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস করে। তেমনি যে ব্যক্তি প্রচণ্ড ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে অবিশ্বাস করেন তাঁর অবচেতন মন প্রচণ্ড ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে।
মানুষের একটি দিক খুবই যুক্তিবাদী অন্যদিকটি বিশ্বাসী। ধর্মে যুক্তির চেয়ে বিশ্বাসকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে যুক্তির পথে এগিয়ে মানুষ এক সময় হেরে যায় তখন তাঁকে বিশ্বাসের আশ্রয় নিতে হয়। যারা চরম নাস্তিক তাদের একটি অংশ সৃষ্টিকর্তাতে চরম বিশ্বাসী। কারণ তারা যুক্তিতে বিশ্বাসী, যুক্তিতে যেমন প্রমাণ করা যায় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই তেমনি প্রমাণ করা যায় সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে। কিন্তু তারা নাস্তিক কারণ তারা এটিই বিশ্বাস করতে চায় যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই। আসলে মূল ব্যাপারটি এরকমই।
জীবনের স্বাভাবিক ধারায় কিছু কিছু মানুষের ব্রেইনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস প্রোগ্রাম হয়ে যায়। তখন তাঁকে যত যুক্তিই দেওয়া হোক আর যত নাস্তিকের বইই পরতে দেওয়া হোক সে তাঁর বিশ্বাস থেকে সাধারণত নড়ে না। এক্ষেত্রে মনের বিশ্বাসের অংশটি ঐ যুক্তিগুলোকে প্রতিরোধ করে দেয়। আবার কারো কারো ব্রেইনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিশ্বাস প্রোগ্রাম হয়ে যায়। তখন তাঁকে যত ধর্মের কথাই বলা হোক তাঁর মনের যুক্তির অংশটি তা প্রতিরোধ করে দেয়। এ ধরনের মানুষজন খুব আত্মবিশ্বাসী হয়। নিজের উপর তাদের খুব আস্থা থাকে।
আবার কেউ কেউ দ্বিধার মধ্যে থাকে। সেক্ষেত্রে তাঁর উপর পরিবেশ প্রভাব ফেলে। বই পরে নাস্তিক বা আস্তিক হয়ে যাওয়াও এরই মধ্যে পরে। এধরনের লোকজনের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে। তারা নিজের উপর আস্থা রাখতে পারেন না।
তবে যত কঠিন নাস্তিকই হোক সে যখন মৃত্যু ভয়ের খুব কাছাকাছি চলে যায় তখন তাঁর মধ্যে সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রবল বিশ্বাস জন্মে। এক্ষেত্রে তাঁর মস্তিষ্ক তাঁকে সান্ত্বনা দিতে চায় অর্থাৎ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করে তাঁর সুরক্ষার একটি উপায় আছে।
একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখতে পারেন নাস্তিকদের অধিকাংশই যুবক বা মধ্য বয়স্ক। প্রবীণ নাস্তিক খুব কমই দেখা যায়।
জীবনের একটি অংশে কিছু কিছু মানুষ নাস্তিক হয়ে যায় আবার কিছু কিছু মানুষ আস্তিক হয়ে পড়ে। দুটোকেই মনোবিজ্ঞানে একধরণের সমস্যা মনে করা হয়।
তবে শেষ কথা হচ্ছে যুক্তিবাদী নাস্তিকদের আর বিশ্বাসী আস্তিকদের অবস্থান খুব দূরে নয়।
আরিফ হোসেন সাঈদ, ২৯ জুলাই ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৩:৪৪